অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে,অনেক চেষ্টা করে অবশেষে ইফতি পঞ্চমবারের মতো ইউনিভার্সিটির এক মেয়েকে পটাতে পারলো। এটা ইফতির পঞ্চম প্রেম হলেও সে সবসময় ভাবে,দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রেম বলে কিছু নাই।যতবারই প্রেম হোক না কেনো,সবই ইফতির কাছে প্রথম। ইফতির বাবা ইদ্রিস আলী সাহেব দই’য়ের ব্যবসা করেন।এলাকায় সবচেয়ে বড় দইয়ের দোকান তার।দই ছাড়া আর কোনো কিছু তিনি তার দোকানে রাখেন না।
ইদ্রিস আলীর পিতা মহাশয় ইন্তেকালের পূর্বে ছেলের হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করিয়েছেন “দইয়ের ব্যবসা তাদের সাত পুরুষের ব্যবসা,কখনো কোনো পরিস্থিতি’তে যেনো এটা ত্যাগ না করে’। ইদ্রিস আলী সাহেব চোখের জলে নিজ পিতাকে বিদায়কালে ওয়াদা করেছেন,তিনি পড়ালেখা আর করবেন না।আজ থেকেই দইয়ের ব্যবসা শুরু করবেন। ইফতি তার বাবার কাছে তেমন ঘেঁষে না।ইদ্রিস আলী সাহেব ছেলেকে দেখামাত্রই গম্ভীর মুখে বলেন-“পড়ালেখা আর করনের দরকার নাইগা,দই এর ব্যবসাতে লাইগা যাউ” ইফতি দইয়ের ব্যবসা তে লাগতে চায় না।তবে,সে যতবার ই নিত্য নতুন প্রেম করে বাপের দোকান থেকে বস্তায় বস্তায় দই চুরি করে প্রেমিকাদের দেয়।যদিও কোনো প্রেমিকা তার চিরস্থায়ী হয় না।
তবে এবারের টা সিরিয়াস।মেয়ের নাম নাঈমা।বহু ছেলে নাঈমার জন্য পাগল।কিন্তু, নাঈমা কাউকে পাত্তা দেয় না।ইফতি ও বহু দিন ছ্যাঁচড়ামি টাইপ কাজকর্ম করে অবশেষে পটাতে পেরেছে নাঈমা’কে। ইফতি প্রতিদিন নাঈমার জন্য গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে যায়। নাঈমা খুশি হয়ে ইফতি’কে বলে “তুমি এত ভালো কেনো বাবু,জানো আমি এর আগে কখনো কারো সাথে প্রেম করি নি,তুমিই আমার প্রথম” ইফতির দু’চোখ জলে ভরে এলো।কোনমতে চোখের জল মুছে বললো- বাবু আমিও কখনো প্রেম করি নাই।প্রেম কিভাবে করে জানতামই না।তোমাকে দেখার পর আমার পৃথিবী’টাই চেঞ্জ হয়ে গেছে। এভাবেই কেটে গেলো ক’মাস।একদিন ইফতি গোলাপ ফুল সারা তল্লাট খুঁজেও পেলো না। নাঈমা খুব রাগী গলায় বললো- গোলাপ ফুল আনো নাই ক্যান? ইফতি হতাশ কণ্ঠে বললো-বাবু,আজকে গোলাপ পাই নাই।একদিন না নিলে হয় না?
-না হয় না।এখন আমি মুখে কি দিবো? ইফতি চোখ গোল গোল করে বললো- গোলাপ ফুল কিভাবে মুখে দেয়?
-গোলাপ ফুল এবং দুধ ব্লেন্ড করে আমি প্রতিদিন মুখে দেই।নয়তো ত্বক এতো গোলাপী কি করে থাকবে।তুমি না,কোনো কাজের না।ধ্যত ইফতি মন ভার করে চিন্তা করতে লাগলো, সে এতদিন ভেবেছিলো নাঈমা গোলাপ গুলো যত্ন করে বইয়ের ভাঁজে রাখে। কিন্তু না,সে গোলাপ বেটে মুখে দেয়।
ইফতি নিজেকে নিজে এই ভেবে সান্ত্বনা দিলো, থাকুক।তার দেয়া গোলাপ তো নাঈমার মুখেই আছে।ব্যাপার না। ক’দিন পর নাঈমার খুব সর্দি-জ্বর লাগলো,গলা ভেঙ্গে গেলো।নাঈমা ইফতি কে ফোন দিয়ে বললো- শুনো,কাল আসার সময় আড়াইশ গ্রাম মধু এনো তো। ইফতি মনে মনে ভাবলো,যে করেই হোক মধু জোগাড় করতে হবে। মধু আর গরম পানি মিশিয়ে খেলে নাঈমার সর্দি কমবে। মধু জোগাড় করে দিলো ইফতি,একেবারে খাঁটি সুন্দরবনের মধু।তবুও নাঈমার ঠান্ডা কমলো না।ইফতি আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো- তোমার তো ঠান্ডা দেখি কমছেই না,ঔষধ খাওয়া স্বত্তেও। আচ্ছা,ডেইলী মধু আর গরম পানি মিশিয়ে খাচ্ছো তো?
নাঈমা বিরক্ত কণ্ঠে বলো- উফ! মধু কি খাবার জন্য নিছি নাকি।মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে মুখে দেই,যাতে মুখের ত্বক ব্রাইট থাকে।ত্বক কি আর এমনি এমনি সুন্দর থাকে।আজব! ইফতি আর কোনো কথা বললো না।চুপ করে থাকলো। নাঈমা সুস্থ হবার পরে আবার তুমুল প্রেম চলতে লাগলো।নাঈমা ইফতির জন্য ইলিশ বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে আসে।ইফতি খেতে খেতে বলে- বাহ! খুব চমৎকার রান্না করো তুমি। নাঈমা খুশি খুশি গলায় বললো- তোমার জন্যই তো বাবু…
-একটু শসা আর টমেটো হলে ভালো হতো।নেক্সট নিয়ে আসলে শসা নিয়ে আইসো তো। নাঈমা গম্ভীর কণ্ঠে বললো- এখন অফ সিজন,শসার দাম অনেক বেশী।মুখে দিতে হয় ডেইলী একটা।দাম কমলে নিয়ে আসবো। ইফতি দুঃখী কণ্ঠে বললো- শসা কি করে মুখে দেয়?
-শসা ব্লেন্ড করে ফ্রোজেন করে রাতে ঘুমানোর আগে দেই।দিনে তো আলু ব্লেন্ড করে দিতে হয়।পরে টমেটো ব্লেন্ড করে দেই।
ইফতি মনে মনে ভাবলো, সব খাবার জিনিস কি নাঈমা একাই মুখে দেয় নাকি সব মেয়েরাই দেয়! ইফতি আর নাঈমা কখনো রাতে ফোনে কথা বলে না।ইফতির মনে সন্দেহ হলো নাঈমার অন্য কোনো রিলেশন আছে কিনা।সে ভাবলো আজ রাত ৩ টার দিকে নাঈমার ফোনে কল দিয়ে দেখবে ফোন বিজি কিনা। তিনবারের সময় নাঈমা ইফতির কল রিসিভ করে বললো- রাত ৩ টার সময় কল দিচ্ছো কেনো? ইফতি তোতলাতে তোতলাতে বললো- ইয়ে মানে! কি করো? নাঈমা প্রচন্ড রেগে বললো- রাতে আমি অ্যালুভেরা জেল মেখে ঘুমাই,কথা বললে জেল টা ফেটে যায়। তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না আর,ধুর ইফতি কিছু বলার আগেই নাঈমা খট করে ফোনটা নামিয়ে রাখলো।
ক’দিন যোগাযোগ ছাড়া রইলো।ইফতির খুব কষ্ট হচ্ছিলো নাঈমা কে ছাড়া থাকতে। ইদ্রিস আলী সাহেব ছেলের ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। তিনি ছেলের কাছে এসে বললেন- দইয়ের ব্যবসাতে লাইগা যাউ,তোমারে দিয়া পড়ালেখা কিছু হইতো না। ইফতি বাবার সামনে থেকে ছুটে পালালো।সে দইয়ের ব্যবসাতে লাগতে চায় না। এরইমধ্যে,নাঈমা জানতে পারলো ইফতির বাবার দইয়ের ব্যবসা আছে। সে খুব খুশী খুশী ভঙ্গিতে ইফতির সাথে দিন তিনেক বাদে দেখা করতে আসলো।নাঈমা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো-এ ক’দিন তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি,তাই না বাবু? ইফতি অভিমানী কণ্ঠে বললো- খুউউউব…
-তুমি তো জানো ইফতি রাতে প্রথমে আমি পোলাওয়ের চাল বেটে মুখে দেই,পরে ঘুমানোর আগে এ্যালুভেরা জেল দেই।জানা সত্ত্বেও কল কেনো দিছিলা বাবু?
ইফতি ঢোঁক গিলে বললো-আরে এমনি।মনে পড়ছিলো তো হঠাৎ করে তাই। নাঈমা ইফতির একটা হাত ওর কোলের উপর তুলে বললো-শুনো না ইফতি খুব রোমান্টিক স্বরে বললো- বলো না নাঈমা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো- তোমার বাবার দইয়ের ব্যবসা আছে আমাকে বলো নাই ক্যান? দই মুখে দিলে মুখ ফর্সা হয়।এই দেখো না,দিনদিন রোদে পুড়ে ত্বক কত কালো হয়ে যাচ্ছে। তুমি কি চাও আমি কালো হই?
ইফতি এদিক-ওদিক মাথা নাড়লো,অর্থাৎ না। নাঈমা খুশী খুশী গলায় বললো- কাল থেকে দই নিয়ে আসবা ১ কাপ করে।কালো হলে তো পরে তোমার বাবা আর পছন্দ করবে না।একটু ব্রাইট ব্রাইট থাকতে হবে না? ইফতি উদাস ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো- বাদ যাবে না,একটু খানি সর্ষে দানাও,রুপচর্চা থেকে।