পার্কে বসে গার্লফ্রেন্ডের কাছে ১ হাজার টাকা ধার চেয়েছিলাম বলে তার বিনিময়ে দুইটা থাপ্পড় খেয়েছিলাম।
থাপ্পড় খেয়ে মুচকি হেসে দিয়ে বলেছিলাম,
সেদিন তো আমার সামনে লাখ টাকার আইফোন এক আছাড় দিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলে,আজ সামান্য এক হাজার টাকা ধার চেয়েছি বলে দুইটা থাপ্পড় দিলা। ঠিক আছে তোমাকে পরে না হয় এক হাজার টাকার যায়গায় আরো বেশি
দিতাম।দাও না আমায় এক হাজার টাকা! সত্যি বলেতেছি,তোমার টাকাটা আমি সময় মত ফিরিয়ে দিবো।
আমার গার্লফ্রেন্ডের জবাব ছিলো’তোর মত ভিখারির সাথে প্রেম করে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।তুই জানিস আমার বাবা আমার একাউন্টে কত টাকা রেখেছে?কত বড়লোক ঘরের সন্তান আমাকে প্রপোজ করে বসে আছে। তোকে ভালো বেসেছিলাম বলে তুই আমার কাছে টাকা চাবি? নাকি আমার বাবার টাকা দেখেছিস বলে প্রথমে অল্প চেয়ে নিবি!কই আজ পর্যন্ত তো তোর কাছে কিচ্ছুই চাইনি।
আমার গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনে বরাবরই অবাক হচ্ছি,তারপরের হেসে দিয়ে বললাম, থাক তোমার টাকা দিতে হবে না।আমি তো এমনিই চেয়েছিলাম পাগলি। আচ্ছা বলো কি খাবে তুমি?
সে বললো,কিছুই না,আমি এখানে আর এক মুহুর্তের জন্য থাকবো না। আমি যাচ্ছি! তাকে আটকিয়ে বললাম প্লিজ ১০ মিনিটের জন্য থাকো।আমি ওই দোকানটাতে যাবো আর আসবো।গার্লফ্রেন্ড বসলো আমি দোকানে গেলাম।দুইটা আইসক্রিম আর ছোট্ট একটা গিফট নিয়ে আসলাম রেপিং পেপার এবং সুন্দর করে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে।
ওর হাতে একটা আইসক্রিম দিয়ে আমি অন্যটা খুলে খেতে লাগলাম। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে গার্লফ্রেন্ড হাঁটা দিবে তখনই ওর হাতটা ধরে বললাম নিলা তোমার জন্য একটা গিফট আছে।বলতে পারো এটা গিফট না একটা লটারি।শোনো আজ থেকে ১৫ দিন পর এই প্যাকেটটা খুলবা।এখন যদি খোলো তাহলে গিফটটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভিতরে একটা কার্ড আছে ওই কার্ডে এমন কিছু আছে যেটা ৬ ঘন্টা পরে নষ্ট হয়ে যাবে।তাই তুমি ১৫ দিন পরে গিফটটা পেয়ে যাবা। আচ্ছা আজ আসি।আর শোনো আমি তোমার সাথে কবে কথা বলতে পারবো জানি না।তবে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সেখান থেকে চলে আসলাম। পার্ক থেকে বের হতে না হতেই প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আর এই বৃষ্টির সুবাদে ইচ্ছা মত কেঁদে নিলাম।যে কাঁদার পানি কেউই দেখতে পারে নাই।
বাসায় পৌঁছে গেলাম একে বারেই খালি হাতে। ছোট বোনের ছোট্ট চাওয়াটুকু পূরণ করতে পারলাম না। ঠিক তার পরের দিন আমার আদরের ছোট বোন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।বোনের লাশের পাশে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটা অপদার্থ কুলাঙ্গার ভাই হয়ে। আসলে আমার বোনটা সেদিন একটা পুতুল আবদার করেছিলো আর সামান্য কিছু চকলেট।ক্যান্সার রোগে
আক্রান্ত ছিলো আমার বোন। দেশের বড়বড় ডাক্তার দেখিয়েছি, অনেক টাকা খরচ করার পরেও বোনটাকে বাঁচাতে পারি নাই।আর পারিনাই বোনের ছোট্ট আবদারটুকু পালন করতে।বোন আমি আসলেই অপদার্থ কুলাঙ্গার ভাই তোর।বোনের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। আপনারা বিশ্বাস করেন আমার চোঁখের সামনে শুধু আমার বোনের সামান্য চাওয়াটুকুই ভেসে ওঠে।আমারও ইচ্ছা হয় বোনের সাথে চলে যেতে। পারলাম না বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা হয় বোন তোর জন্য।কিন্তু এই অপদার্থ কুলাঙ্গার ভাইয়ের তো তোর জন্য কান্না মানায় না। পারলাম না আমি বোনটার আবদার পূরণ করতে।
ঠিক ১৫ দিন পরে হয়তো আমার গার্লফ্রেন্ড এক্সাইটেড হয়ে গিফটের কাগজটা খুলেছে। সেই কাগজটা মাত্র কয়েক লাইনের লেখা ছিলো “আমার ছোট্ট বোনটা ক্যান্সার রোগী। আসার সময় একটা পুতুল আর চকলেট নিতে বলেছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করো
সেদিন আমার হাতে কোনো টাকা ছিলো না কারন গতকাল বোনের চিকিৎসা যাবত অনেক টাকা ডক্টরকে দিয়ে এসেছি। তোমার ভরসা করে মাত্র একটা হাজার টাকা ধার চেয়েছিলাম লজ্জা শরম ত্যাগ করে। হাহাহা তার বিনিময়ে পেলাম দুইটা থাপ্পড় আর
লাঞ্চিত কিছু বাক্য। আসলেই আমি অনেক ভিকারি। আমার কোটি কোটি টাকা হলেও ভিখারি থাকবো কারন বোনটার আবদার পূরণ করতে পারলাম না।”