বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আম্মু আমাকে এসে বলে যা দোকান থেকে দুধের প্যাকেট নিয়ে আই। এই একটা জিনিস আমাদের ঘরে তারাতারি শেষ হয়ে যায়। এক কেজির একটা ডানুর প্যাকেট আমাদের ঘরে এক সপ্তাহ যায়না, মাঝেমধ্যে ২দিনেই শেষ হয়ে যায়। আম্মু রাতে ডানুর পটে ডানু ভরা দেখলে সকালে সেই পট অর্ধেক হয়ে যায়। এইটা আম্মুর কাছে রহস্যজনক! এই নিয়ে আম্মুর চিন্তার শেষ নেই।
দোকানে যখন যাবো রুমে গিয়ে দেখে আসি জমানো চকলেট কয়টা হলো। এইতো ৫০টা চকলেট জমানো হয়ে গেছে! এই চকলেট জমানোটা আমার একটা নিনজা টেকনিক। বিল্ডিংয়ের নিচের দোকান থেকে যদি ৯টাকার কিছু আনি তাহলে তার কাছে আর এক টাকা ভাংতি থাকেনা, ১৯টাকা,২৯,৩৯,৪৯, থেকে শুরু করে যতো উপরে ৯আছে ততোটাকার বাজার করলে ওই দোকানদারের কাছে এক টাকা ভাংতি থাকেনা, ১টাকার বদলে একটা চকলেট দিয়ে দেয়। তো আজ এই ৫০টা জমানো চকলেট তাকে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবো। ছাতা নিয়ে বিল্ডিংয়ের নিচে নামতেই দেখি রহিম চাচা বসে আছে। আমাকে দেখে রহিম চাচা বলে, এইযে চ্যাম্প কোথায় যাচ্ছো? জবাবে আমি বলি, এইতো চাচা একটু দোকানে যাচ্ছি।
” আচ্ছা এই বৃষ্টিময় দিনে ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায় বলো তো? “
” এই বৃষ্টির শীতল বাতাসে গায়ে লাগে ঠান্ডা, খিচুড়ি ভুনা পেলে এখন জীবন হবে ঝাকানাকা! এই স্ট্যাটাস দিতে পারেন চাচা! “
” এইখানে বসে,বসে আমার জানি কি খেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু এক্সেক্টলি কি খেতে মন চাইছে ভেবে পাচ্ছিলাম না। তুমি মনে করিয়ে দিলে, আমার খিচুড়ি খেতেই মন চাচ্ছিলো! ফেসবুকে পোস্ট ডান, যাই এইবার তোমার চাচিকে গিয়ে খিচুড়ি রান্না করতে বলি। “ বিবাহিত হওয়ার এইটাই একটা সুবিধা যে যখন যেইটা খেতে ইচ্ছা করে বউকে গিয়ে বললেই বউ রান্না করে দেয়। একবার মাকে আমি বিয়ের কথা বলেছিলাম, ” তুমিতো আমাকে কোন নাস্তা বানিয়ে খাওয়াওনা আমার জন্য একটা বউ আনলেই হয়, তোমাকেও আর কষ্ট করতে হবেনা আমিও প্রতিদিন টেস্টি,টেস্টি নাস্তা খেতে পারবো। আম্মু জবাবে বলে, উপরের বিল্ডিংয়ের কাজের বুয়ার জন্য বিয়ের করার জন্য ছেলে দেখতেছে, তোর যদি এতোই নাস্তা খাওয়ার শখ থাকে তাহলে ওই মেয়েকে ঘরের বউ করে আনি? কি বলিস?
এরপর থেকেই আম্মুকে আর কোনদিন বিয়ের কথা বলার সাহস পাইনি। দোকানে গিয়ে দোকানি ভাইকে আগে বলি, ভাই ৫০টা টাকা মোবাইলে রিচার্জ দেনতো! রিচার্জ শেষে আমি টাকার জায়গায় ওই ৫০টা চকলেট দোকানিকে দিয়ে বলি, নেন ভাই এক টাকার জায়গায় যে চকলেট দিতেন ওইগুলো ৫০টা পূর্ণ হয়েছে মানে নেন রিচার্জের ৫০টাকা। দোকানি কিছু না বলে চকলেটগুলো নিলো কিন্তু তার মুখে আমি একটা রাগের চাপ দেখতে পেলাম।
দোকানিকে বললাম, একটা এক কেজিওয়ালা ডানুর প্যাকেট দেন! দোকানি জবাবে বলে, ডানু নাই। আমি দোকানের ভিতর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ডানুর প্যাকেট। দোকানিকে দেখিয়ে বলি, ওইতো ডানুর প্যাকেট! দোকানি জবাবে, ওইগুলো সব বিক্রি হয়ে গেছে। বুঝতে পেরেছি! চকলেট দিয়ে রিচার্জ করায় আর ও আমার কাছে কিছু বিক্রি করতে চাচ্ছে না। ব্যাপার না, একদিন ৫,১০হাজার টাকার বাজার সামনের দোকান থেকে করে এই দোকানের সামনে দিয়ে যাবো। তখন বলবে, ” কিরে মামা বাজার আমার দোকান থেকে নাওনি কেন?“ডানুর প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসছি, নিচে দেখলাম রহিম চাচা বসে,বসে খিচুড়ি ভুনা খাচ্ছে। আমাকে দেখে চাচা বলে,
” এইতো রাইহান! আচ্ছা এইবার বলো ফেসবুকে এখন কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়? “
” বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি ভুনা, খেতে কি মজা কি মজা! এই স্ট্যাটাস দিতে পারেন চাচা। “
” ওকে চ্যাম্প এখনি দিচ্ছি! “
রহিম চাচা আমাদের নিচের বিল্ডিংয়েই থাকে। কয়েকমাস আগেই উনাকে ফেসবুক আইডি খুলে দিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলাম! সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোন দিন নেই যে রহিম চাচা আমাকে এসে জিগ্যেস করেনি, রাইহান কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়? একবার এক বন্ধুর বোনের মেহদী রাত থেকে বাসায় ফিরতে লেইট হয়ে গেছিলো! বাসায় এসে আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম। রহিম চাচা রাত প্রায়ই ২টা বাজে আমাদের বাসায় এসে আমাকে ঘুম থেকে তুলে জিগ্যেস করে, “রাইহান কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়? আজ একটাও স্ট্যাটাস দিইনাই।“ আমি ঘুমের মধ্যে বিরক্ত হয়ে চাচাকে বলি, ” মধ্যরাতে মানুষকে ঘুম থেকে জাগানো ভালোনা,ভালোনা! “ রহিম চাচা আচ্ছা ধন্যবাদ বলে চলে যায়।
অন্য একবার চাচার হার্টের সমস্যার কারণে উনাকে মেডিকেল ভর্তি করা হয়। উনার স্ত্রী মানে আমার চাচি ফোন করে আমাকে বলে, তোমার চাচা তোমাকে খুঁজতেছে। একটু মেডিকেলে আসতে পারবে? অসুস্থ মানুষ কেন ডাকছে কে জানে! তারাতারি মেডিকেলে গিয়ে দেখি চাচার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। চাচা আমাকে একটা সাদা কাগজে লিখে দিলো, ” কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায় রাইহান? “
” অসুস্থ হলেই বুঝা যায় সুস্থতার মূল্য কতোটুকু! আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। এই স্ট্যাটাস দিয়ে দেন চাচা। “ ঘরে এসে আম্মুকে ডানু দিলাম! আম্মু ডানু হাতে নিয়ে বলে এই প্যাকেট কয়দিন যায় আল্লাহই জানে। কিছু একটাতো করতেই হবে! এইভাবে ২-১দিন পরপর ডানু শেষ হয়ে গেলে ডানু কিনতে,কিনতেইতো আমরা ফকির হয়ে যাবো। রাত প্রায়ই ১টা। আমি ছাড়া ঘরের বাকি সবাই ঘুমিয়ে গেছে! আমি আস্তে,আস্তে হেটে হেটে যাচ্ছি রান্নাঘরের দিকে। পুরানো অভ্যাস, ছোটবেলা থেকেই আমি মধ্যরাতে রান্নাঘরে যাই।
রান্নাঘরে গিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ডানুর রাখার জায়গায় হাত দিলাম। প্রতিদিনের মতো পটটি হাতে নিয়ে পটের মুখ খুলে এক মোট ডানু হাতে নিয়ে মুখে দিলাম! আজকের ডানুর টেস্টটা এইরকম কেন? মিষ্টি বা তেঁতু কিছুই লাগছেনা মুখে। আরেক মোট ডানু হাতে নিয়ে মুখে দিতেই বুঝলাম যে এইটাতো ডানুর টেস্ট না। রান্নাঘরের লাইট দিয়ে দেখি আমি এতক্ষণ যেইগুলো খাচ্ছিলাম ওইগুলো ডানু না ময়দা।
পুরো রান্নাঘর তন্নতন্ন করে ডানু খোঁজার পরেও ডানুর পটটা পেলাম না। আম্মু দিনে বলেছিলো কিছু একটা করতেই হবে! তার মানে আম্মু আসলেই কিছু একটা করেছে। ডানুর পটটা রান্নাঘর থেকে সরিয়ে রেখেছে।