ইউটিউব ভিডিওটি

ইউটিউব ভিডিওটি

আব্বা ক’দিন থেকেই বলছেন তাকে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিতে। ইউটিউবে চ্যানেল খোলার বুদ্ধিটা যে তাকে কে দিল ভেবে পাচ্ছি না। অবসরে যাবার পর থেকে তাঁর একটার পর একটা উদ্ভাবনী কর্মচক্র চলছে তো চলছেই।

চাকরি থাকাকালীন আব্বা কখনো স্মার্ট ফোন কেনেন নি। বিদেশ থেকে ছোট মামা বেশ কয়বার আব্বার জন্যে দামী স্মার্টফোন পাঠালেও তিনি সেইসব আমাকে নয়তো আম্মাকে দিয়ে দিয়েছেন। সেইসব ফোন বহু আগেই দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। আব্বার সর্বদাই নোকিয়ার জাভা ফোন পছন্দের ছিল। অবসরে যাবার কিছুদিন পর আব্বা একদিন আমাকে ডেকে বললেন, “ভাল একটা স্মার্টফোনের দাম কেমন নিবেরে?”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
“হঠাৎ স্মার্ট ফোনের দাম জানতে চাচ্ছো? আম্মাকে দিবা নাকি?”
আব্বা বিরক্তমুখে বললেন,
“আরে নাহ, তোর মাকে তো মাস চারেক আগেই কিনে দিলাম।”
—”তাইলে কার জন্যে?”
আব্বা লজ্জা পেয়ে গেলেন। মুচকি হেসে বললেন, “আমার জন্যেই।”
—”হঠাৎ তুমি স্মার্ট ফোন নিবা? ব্যাপার টা কি?”
আব্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“সারাদিন একা একা কি আর সময় কাটেরে? স্মার্ট ফোন থাকলে তাও একটু ইউটিবি না ইউটুব আছে না ভিডিও গান, নাটক দেখা যায়, ওসব দেখে একটু সময় কাটাতাম এই আর কি।”
—”আচ্ছা ঠিক আছে অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসব।”

প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও পরে আব্বার কথা শুনে বেশ খারাপই লেগেছিল। আমাদের মহল্লায় না আছে কোন পার্ক না আছে হাঁটার মতন কোন জায়গা, চারিদিকে শুধু গাড়ি আর ধুলাবালি। আম্মা সারাদিন তাঁর ভাই-বোনদের সাথে ইন্টারনেটে কথা বলা, ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখে সেই সব রান্নার চেষ্টাতেই ব্যস্ত থাকে। আব্বার জন্যে সারাদিন একা একা বাসায় কাটানো টা সত্যি বেশ কষ্টের হয়ে গিয়েছিল। বাসায় যদিও নিপা আছে। তাঁর থাকা না থাকা একই কথা।

আমার চাকরি হবার পর আম্মা এই মেয়েকে কোন এক এতিমখানা থেকে জানি নিয়ে এসেছে। তাঁর মা-বাপ, আত্নীয়-স্বজন কারোই কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিপাকে বাসায় নিয়ে আসার পর আমার নামের সাথে মিলিয়ে আম্মা তাঁর নাম রেখেছে, ‘নিপা।’

নিপা যদিও এই বাড়িতে আসার পর আমার আদর যত্নের উপর ৭০শতাংশ ভাগ বসিয়ে দিয়েছে তবুও এ নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। তাঁর প্রতি আমি যথেষ্ট মায়া অনুভব করি কারণ আমার কোন ছোটা ভাই-বোন নাই তবে তাঁর আজগুবি কাণ্ডকারখানা দেখে প্রায়শই চাল সিদ্ধ হয়ে এলে হাড়ির পানি যেমন টগবগ করে আমার মেজাজও ঠিক তেমনই করে। করবেই না কেন? ক্লাস ফাইভের একটা মেয়ে স্টার জলসার কি বোঝে? সে স্কুলে যায় স্কুল থেকে এসেই রিমোট হাতে নিয়ে স্টার জলসার সিরিয়াল দেখতে বসে যায়, সিরিয়ালের মধ্যবর্তী সময় কোন এড দিলে সাথে সাথে চ্যানেল বদলে জি বাংলাতে দেয়। মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে কোন খেলা থাকলে তাকে আমার মাথার উপরে তুলে একটা আছাড় মারতে ইচ্ছা করে কিন্ত আম্মার ভয়ে ওরে কিছুই বলতে পারি না। নিপা হচ্ছে আম্মার আদুরে মেয়ে, তাকে কিছু বলতে গেলেই আম্মা আমার দিকে রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে তেড়ে আসে।

অফিস থেকে ফেরার সময় আব্বার জন্যে একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে নিয়ে আসলাম।
কিছুদিন আব্বাকে ছবি তোলা, ভিডিও করা, ফেসবুকে আইডি খুলে দেয়া, ফেসবুক চালাতে শেখানো এসব করতেই চলে গেল।
আব্বাকে ফেসবুকে আইডি খুলে দেবার পর থেকে তিনি আমার সাথে ম্যাসেঞ্জারেই যোগাযোগ করেন। এন্ড্রয়েড ফোন মোটামুটি ব্যবহার শিখেই তিনি বায়না ধরেছেন, তাকে ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলে দিতে হবে। রোজ অফিসে যাবার সময় একবার আবার অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর একবার করে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। অবশেষে সকালে অফিসে যাবার সময় বলেই দিলাম, “শোন, ইউটিউবে ভিডিও দেখতে চ্যানেল খোলা লাগে না, এমনিতেই ভিডিও দেখা যায়। ”

আব্বাকে দেখলাম মুখটা পেঁচার মতন কালো করে ফেলল। আমি অফিসে চলে গেলাম। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি আমার সাথে কোন কথা বললেন না। তাঁর ভাব-সাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ইউটিউবে চ্যানেল খুলে দেইনি জন্যে তিনি বেশ অভিমান করেছেন।
আমি আব্বার ঘরে গিয়ে তাঁর পাশে বসে ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলে দিয়ে বললাম, “এই যে তোমার ইউটিউব চ্যানেল, হইছে এইবার? মুখটা আর কালো করে রাইখো না।”
আব্বা লজ্জা পেয়ে বললেন, “আমিকি বলছি তোরে কিছু?”
—”নাহ বল নাই, কিন্তু মুখটা তো ঠিকই পেঁচার মতন কালো করে রাখছো।”
আব্বা আমার পাশে ঘেষে বসে বললেন, “আচ্ছা শোন না, এতে ভিডিও দিবো কিভাবে?”
—”কিসের ভিডিও দিবা?”
—”আহা দিবো না, জেনে রাখছি এই আর কি।”
—”দেইখো উলটা পালটা ভিডিও আপলোড দিয়ো না যেন।”
ভিডিও আপলোড করা শিখিয়ে দিয়ে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

কিছুদিন পরের কথা…
আব্বার ম্যালেরিয়া হয়েছে। কয়েকদিন থেকেই তিনি হাসপাতালে। আমাদের বাসায় তেমন মশা নাই, ঘরে যাতে মশা ঢুকতে না পারে সেইজন্যে জানালার চারপাশে আম্মা নেট লাগিয়েছে। তারপরও আব্বার ম্যালেরিয়া কি করে হলো বুঝতে পারছি না। একদিন হাসপাতাল থেকে আব্বাকে দেখে অফিসে যাওয়ার পর আমার কলিগ ইমতিয়াজ ভাই ডেকে বললেন, “নিরব ভাই, আপনি যাত্রাবাড়ী থাকেন না?”
—”হ্যাঁ, কেন?”
—”এইদিকে আসেন, একটা ভিডিও দেখে যান।”
ইমতিয়াজ ভাই একটা ভিডিও প্লে করে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। ভিডিও দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।
ভিডিওতে একজন লোক রাস্তার পাশে বসে আছে, তাঁর হাত-পায়ে হাজার খানেক মশা তাকে কামড়াচ্ছে। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলছেন,
“দেখুন দেখুন দেশের রাজধানীতে মশার প্রকপতা দেখুন, দেশ তো ভাই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে তারই একটা নমুনা দেখুন। সিটি কর্পোরেশন থেকে তো দুদিন পর পরই এসে মশার ঔষধ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মশাতো ভাই কমছে না।”

তিন মিনিটের ভিডিওর একদম শেষ অংশে ভিডিও ধারণকারীকে দেখার সৌভাগ্য হল। ভিডিও ধারণকারী মহোদয় আর কেউ নন তিনি আমার আব্বাজান।

আমি ইমতিয়াজ ভাইকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা চলে গেলাম হাসপাতালে। হাসপাতালে এসে আব্বার পাশে বসে তাঁর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম, “কি এইসব?”
আব্বা বেশ চিন্তিতমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কি হইছে রে?”
—”রাস্তার পাশে বইসা মশার কামড় খাইছো ভিডিও বানাইতে গিয়া। ম্যালেরিয়া কেন তোমার তো ডেঙ্গু হওয়া দরকার।”
আম্মাকে বেডের দিকে আসতে দেখে আব্বা চোখে ইশারা করে কিছু বলতে না বলল। আমি বললাম, “আর যদি এমন কিছু করো, বোঝাব তোমাক।”

হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পরই আব্বার শ্বাসকষ্টের সাথে ভীষণ সর্দি জ্বর এলো। আব্বাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরে এসে রাতের সংবাদ দেখছিলাম। নিউজ প্রেজেন্টার হঠাৎ-ই বলে উঠলেন, “ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি ১৫মিনিটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে তে দেখা যায়, একজন বয়স্ক ব্যক্তি সাদা কাপড় পরে রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সাদা কাপড় ধুলাবালিতে কালো হয়ে যায়, ভিডিও চলাকালীন পাঁচ মিনিট পর থেকে তিনি হাঁচি দিতে শুরু করেন। ভিডিওটিতে তিনি মূলত যাত্রাবাড়ী এলাকায় ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জনার চিত্র তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তিনি বলেন, অত্র এলাকায় সময় কাটানোর মতন কোন জায়গা নেই, বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই, পার্ক নেই, যার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভিডিওটি নিয়ে ইউটিউব এবং ফেসবুকে তুমুল তোলপাড় চলছে। এই পর্যন্ত ভিডিওটি ২ কোটি বার ভিউ হয়েছে। এই ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়রের সাথে কথা বললে তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় খুব শীঘ্রই বেশ কিছু খেলার মাঠ, এবং সকল বয়সের মানুষদের সময় কাটানোর জন্য একটা লেক স্থাপনের উদ্দ্যোগ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে অত্র এলাকাকে ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করার জন্য আমাদের পাশাপাশি জনগণ কেউ সচেতন থাকতে হবে।

সংবাদে সেই ব্যক্তির চেহারা দেখা গেল না। ভিডিও দেখতে ইউটিউবে ঢুকলাম। হোমপেজেই ভিডিওটা পেয়ে গেলাম, ভিডিওর টাইটেলে লেখা,
“দেখুন, ডিজিটাল দেশের রাজধানীর এ কি ভয়ংকর অবস্থা।”
ভিডিও প্লে করে দেখলাম, উক্ত ব্যক্তি আর কেউ নন তিনি আমারই জন্মদাতা পিতা। আব্বা আমার পাশের সোফাতেই বসা ছিলেন। তাঁর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম ঠিকই কিন্তু মনে মনে গর্ববোধও করলাম। আব্বার ভিডিওর কারণেই মেয়র সাহেবের টনক নড়েছে।

প্রায় দুইমাস খুব ভাল কাটল, আব্বা এরমধ্যে নতুন কোন ভিডিও পোস্ট করেন নি। ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক লেক বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। লেকের কাজ শেষ হলে বেশ ভালোই হবে অত্র এলাকার মানুষের একটা সময় কাটাবার ব্যবস্থা হবে।

কিছুদিন পর আব্বা নতুন আরেক কাণ্ড করে বসলেন। একদিন সন্ধ্যাবেলা তিনি ভেজা কাপড়ে বাড়ি ফিরলেন। আব্বাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার এই অবস্থা কেন?”
আব্বা ত্যাক্ত মুখে বললেন,
“আর বলিস না ড্রেনে পরে গেছিলাম।”
আমার বেশ সন্দেহ হল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
“সত্যি করে বল কি কইরা আসছো? ড্রেনে যে পড়নাই এইটা আমি ভাল করেই জানি।”
আব্বা আবারও বললেন,
“নারে ড্রেনেই পড়ছি, ঐ যে দেখছিস না মোড়ের ড্রেনের উপর কোন স্লাব নাই দেখছিস না? ঐখান দিয়ে আসার সময় পড়ে গেছি। আচ্ছা শোন, আমার মোবাইলটা তো ড্রেনের পানিতে নষ্ট হয়ে গেল, মেমরিকার্ড টা কি ভাল আছে?”
—”মেমরিকার্ড তো ভালই থাকার কথা।”
মোবাইল ফোন আমার হাতে দিয়ে আব্বা বলল, “দেখত একটু মেমরিকার্ডটা ঠিক আছে কিনা, আমি গোসল করে আসতেছি।”

আব্বার ফোন থেকে থেকে মেমরি কার্ড খুলে দেখলাম মেমরি কার্ড ঠিক আছে। বাথরুম থেকে ফিরে এসে আব্বা জিজ্ঞাস করলেন, “মেমরিকার্ড টা ঠিক আছেরে?”
—”হু, ঠিক আছে।”
—”নিরব, তোর মোবাইল টা আমাকে আজকের জন্য দিবি?”
—”কেন? কি করবা?”
—”না মানে একটা কাজ আছে।”
—”তুমি নতুন কোন কাহিনী করছ তাইনা? আমি জানতাম ড্রেনে তুমি পড়নাই, নিশ্চয়ই অন্য কোন কাহিনী আছে। বলে ফেল কি করছ?”
—”কিছু না রে, দিবি না তাহলে? আচ্ছা লাগবে না।”
মন খারাপ করে আব্বা উঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে শুরু করলেন। আব্বাকে নিয়ে আর পারি না, কি সব যে করে বেড়াচ্ছে, কবে কোন বিপত্তি ঘটে কে জানে।
রাতে ঘুমানোর আগে আব্বার ঘরে গিয়ে মোবাইল ফোন রেখে আসলাম।
পরের দিন সকাল থেকে আব্বার প্রচন্ড পেট খারাপ, সেই সাথে সারা শরীরে চুলকানি হয়েছে।

আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবার পর ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে রীতিমতো টাশকি খেলাম, চেম্বারে ঢুকতেই আব্বাকে দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন,
“স্যার আমি তো আপনার বিশাল বড় ফ্যান। গতকাল রাতে আপনার পোস্ট করা সর্বশেষ ভিডিওটা দেখলাম, শহরের নদী রক্ষা নিয়ে। সত্যি আপনি দেশ এবং দেশের জনগণের জন্য যা করছেন তা অবিশ্বাস্য। আমাদের হাসপাতালে আপনার চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রিতে করা হবে। প্লীজ স্যার না করবেন না।”

দু’দিনের মধ্যে আব্বার শীতলক্ষ্যা নদীর ভিডিও সাত কোটিবার ভিউ হয়ে গেল। হাসপাতালে আব্বার সাক্ষাৎকার নিতে সাংবাদিকদের ভিড় পরে গেছে।

বিভিন্ন চ্যানেলের পক্ষ থেকে আব্বাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আব্বা সংবাদ মাধ্যমে বললেন,
“চাকরির সুবাদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমার যাবার সুযোগ হয়েছে। প্রত্যেকটা উন্নত দেশ শহরের মধ্যে নদী থাকলে সেটাকে স্বর্গ রাজ্য বানিয়ে রেখেছে, যেসব দেশের শহরে কোন নদী নাই তাঁরা কৃত্রিম নদী বানিয়েছে। অথচ দেখুন আমাদের শহরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা নামের তিনটা নদী থাকলেও এসবের কি বেহাল অবস্থা। ময়লা-আবর্জনা, রাসায়নিক দ্রব্যে পরিপূর্ণ এসব নদীর জল। এসব নদীর জল এতটাই বিপদজনক যে কেউ যদি এসব নদীতে একবার নামে তাহলে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবে। আপনারা অবশ্যই আমার ভিডিও টা দেখেছেন। নদীতে নামার পর আমার সারা শরীর চুলকানিতে ভরে গেছে। নদীর পানি কতটা ক্ষতিকর তা জানার জন্য আমি এক ঢোক নদীর জলও পান করেছিলাম, তাতে আমার পেট খারাপ হয়ে বাজে অবস্থা, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। সরকার যদি এসব নদী রক্ষার্থে দ্রুত কোন পদক্ষেপ না নেয় তাহলে অচীরেই এসব নদী আমাদের জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে। দেশের সকল নদীই দেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।”
সংবাদ সম্মেলন শেষ হবার আগে দেশের সকল নদী বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষার্থে সারাদেশ ব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আব্বা।

সারা দেশে নদী রক্ষার্থে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। গণ আন্দোলনের রোষানলে পরে অবশেষে সরকার লিখিত দিয়েছে, একমাসের মধ্যে শহরের তিনটি নদীকে রক্ষার্থে কাজ শুরু করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য নদী সমূহকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

আব্বা এখন মোটামুটি সুস্থ। কিছুদিন আগে ইউনিসেফ থেকে আব্বাকে “দ্যা সেল্ফ এওয়ার ম্যান” উপাধি দেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর বাড়ি ফেরার সময় আব্বা আমাকে বললেন, “হ্যাঁরে নিরব ওয়াটার প্রুফ মোবাইল নাকি আছে?”
—”হু।”
—”দাম কেমন রে?”
—”কেন লাগবে তোমার?”
—”না মানে।”
—”বুঝেছি বুঝেছি, তোমার এখন ওয়াটার প্রুফ মোবাইল ফোন চাই।”
আব্বা কোন কথা বললেন না।
বাড়ি ফিরে আব্বাকে সনির ওয়াটার প্রুফ মোবাইল হাতে দিয়ে বললাম, “আমি আগেই বুঝতে পারছিলাম তোমার একটা ওয়াটার প্রুফ মোবাইল ফোন দরকার সেইজন্যে আগে থেকেই কিনে রাখছি। দরকার হলে ভিডিও করার জন্যে ফুল সেটাপ কিনে দিবো, কিন্তু শর্ত আছে।”
—”কি শর্ত রে?”
—”তোমাকে নিয়মিত এরকম ভিডিও বানাতে হবে। রাজী?”
আব্বা কিছু না বলে লাজুক একটা হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক সম্মতি জানালেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত