জটিল একটা অংক করছিলাম। হঠাৎ আপুর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে পেছন দিকে তাকালাম।বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম আপু হুমায়ুন আহমেদের জয়জয়ন্তী বইটা পড়ে কাঁদছে।আপুটা খুব বেশী সেনসেটিভ। সামান্য দুঃখেই কেঁদে অস্থির হয়। আমি আপুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
– এমন ফেঁচফেঁচ করে কাঁদছ কেন আপু।কি হাস্যকর দেখাচ্ছে, এত বড় একজন মানুষ বইয়ের একটা চরিত্রের জন্য কাঁদছে। আপু বই থেকে মুখ তুলে একটা ধমক দিয়ে বলল,
– চুপ কর তুই।পাথর হৃদয়ের মানুষ তুই আবেগ অনুভূতি নেই বলেই এই কথা বলছিস।আজ পর্যন্ত কোন বই পড়ে কেঁদেছিস বলে তো মনে হয় না। আপুর কথা ঠিক।আমার সহজে কান্না পায় না।স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন বান্ধবীরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না।আমি হাজার চেষ্টা করেও চোখে এক ফোঁটা পানি আনতে পারি নি।কি একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম।সবাই কাঁদছে আর আমি মুখ হাসি হাসি করে দাঁড়িয়ে আছি। আপুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
– তোমার কথাটা একেবারে সঠিক নয়।বইয়ের কোন চরিত্রের জন্য কাঁদি নি তবে, ইইই র ম্যাথ করতে গিয়ে কেঁদেছিলাম এটা সত্যি। বলে দাঁত বের কর করে হাসলাম। এমন সময় মা রাতের খাবার খেতে ডাকলো।টেবিলে বসতেই বাবা বললেন,
– অরুকে সেদিন যে ছেলেপক্ষ দেখে গেল,তারা জানিয়েছে অরুকে তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে।সামনের মাসেই বিয়ের তারিখ ঠিক করতে চায়। আমি খুশী খুশী গলায় বললাম,
– সত্যি বাবা! অবশেষে সত্যি সত্যি ই আপুর বিয়ে হচ্ছে।আমি তাহলে পুরো রুমের দখলদারি একা পাবো।ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। আপু রেগে মেগে বলল,
– এক চড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো কিন্ত।কথা না বলে চুপচাপ খা। আমি খেতে খেতেই আপুকে বললাম,
– এখন থেকে ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার একার অধিকার থাকবে। আপু ক্ষেপে গিয়ে মার দিকে তাকিয়ে বলল,
– মা তোমার মেয়ে কিন্ত অনেক বেড়েছে।তুমি কিছু না বললে কিন্ত আমি ওকে সত্যি একটা চড় মারবো। মা আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
– এত যে খুশী হচ্ছিস,অরু চলে গেলে তুই ই বেশী কাঁদবি দেখিস। আমি মুখ ভেংচে বললাম,
– মোটেও না।কতদিন ধরে আপুর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম।অনেক অনেক আনন্দ করবো আপুর বিয়েতে।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবার পর থেকেই বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব ভাব এসে গেল।বাবা বাসায় নতুন করে রঙ করাচ্ছেন।মা পুরনো ফার্নিচার গুলো গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে হাতিল থেকে নতুন নতুন ফার্নিচার কিনে আনছেন।আমরা মহাধুমধামের সাথে বিয়ের শপিং করছি। এরমধ্যে একদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে নাফিস ভাইয়ার সাথে দেখা।নাফিস ভাইয়া অরু আপুর সাথে এক কলেজে পড়েছেন।নাফিস ভাইয়া আপুকে ভীষণ পছন্দ করতো।কিন্ত আপু তাকে সেভাবে পাত্তা দিতো না।হয়ত নাফিস ভাইয়া আপুকে যে চোখে দেখতো,আপু সেই চোখে দেখতো না। আমাকে দেখে রিকশা থামিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কিরে মিরু,কেমন আছিস? আমি হেসে জবাব দিলাম,
– ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– এইতো ভালো, অরু কেমন আছে?
– আপু ভালো আছে।আপুর তো বিয়ে সামনের মাসে। নাফিস ভাইয়া মনে হলো একটা ধাক্কা খেল। আমতা আমতা করে বলল,
– বি-বিয়ে? অরুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
– হ্যাঁ, কেন আপনি জানতেন না?আপুর সাথে কথা হয় না আপনার? নাফিস ভাইয়া দুর্বল ভঙ্গিতে হেসে বললেন,
– এতদিন চাকরি খুঁজেছি যাতে চাকরি হলে অরুকে বিয়ের কথা বলতে পারি।আজ যখন চাকরি হলো তখন শুনি অরুর ই বিয়ে। আমার নাফিস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া হলো। আমি অনেক আগে থেকে দেখে আসছি, নাফিস ভাইয়া আপুকে কতটা পছন্দ করতেন।কিন্ত আপু কেন যেন ভাইয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলত।আমার আপুর উপর ভীষণ রাগ হলো। বাসায় ফিরে আপুকে নাফিস ভাইয়ের কথা বললাম,
– তুমি তো নাফিস ভাইয়াকে বিয়ে করলেই পারতে আপু। আপু চোখ গরম করে উত্তর দিল,
– আমি নাফিসকে কেন বিয়ে করতে যাবো।
– নাফিস ভাইয়া অনেক ভালোবাসতো তোমাকে।
– কিন্ত আমি নাফিসকে শুধু একজন ভালো বন্ধু ভেবেছি।ওর প্রতি কোন রকম ভালোবাসা আমার কোন কালে ছিল না। আমি তর্ক করার চেষ্টা করলাম,
– আচ্ছা,এখন যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছ তার প্রতি কি ভালোবাসা আছে? তবুও তো বিয়ে করছ। আপু আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
– তার প্রতি আমার ভালোবাসা নেই কিন্ত তাকে বিয়ে করাতে আমার পরিবার খুশী থাকবে।ভালোবাসার মানুষের জন্য পরিবারের বিরুদ্ধে কদম উঠানো যায় কিন্ত যার প্রতি ভালোবাসা নেই তার জন্য পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না।আর আমি কখনোই চাই নি বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে লাভ ম্যারেজ করতে।বাবা মা আমাকে যেখানে বিয়ে দিয়ে খুশী থাকবে আমি সেখানেই খুশী থাকবো। আপুর কথায় কিছু একটা ছিল,যার জন্য আমি আপুর সাথে কোন তর্কে যেতে পারলাম না।আমার মনে হতে লাগলো, আপুর জায়গা থেকে আপু ঠিকই করছে। দেখতে দেখতে বিয়ের তারিখ চলে আসছে।আমি কথায় কথায় আপুকে খোঁচা মারছি,
– ইশ কবে যে তুমি যাবে বাসা থেকে আর পুরো বিছানা আমার একার হবে।
কিন্ত পরক্ষণেই আপুর ছলছল চোখ দেখে সরি বলতে বাধ্য হই। এরমধ্যে একদিন মা জানালো,সিমান্ত ভাইয়ারা আপুর বিয়ের শাড়ী কিনবে আর সেজন্য তারা আপুকে সাথে নিয়ে শপিং করতে চাচ্ছে। সিমান্ত ভাইয়া আপুর হবু বর।তাদের কথা হচ্ছে,বিয়ের শাড়ী যে পড়বে,সে নিজেই পছন্দ করে কিনুক। আপু প্রথমে যেতে রাজী হচ্ছিলো না।আমি আর মা অনেক জোর করে ঠেলে ঠুলে আপুকে রেডি করালাম। এরপর আপুকে ধরে নিয়ে গেলাম শপিংমলে। মেরুন রঙের ড্রেসে আপুকে এত বেশী সুন্দর লাগছিল যে অনেক্ষন পর্যন্ত সিমান্ত ভাইয়া চোখ সরাতে পারল না। ভাইয়ার সেই মুগ্ধ দৃষ্টি দেখে আপু যদিও লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছিল,কিন্ত আমি দৃশ্যটা বেশ উপভোগ করছিলাম। আমি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
– আমি বোধহয় কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গিয়েছি।আমার মনে হয় আপনাদের একটু স্পেস দেয়া দরকার। কথা বলুন আপনারা।
আপু আমার হাত ধরে আটকাতে যাচ্ছিলো। কিন্ত তার আর সুযোগ দিলাম না।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে এলাম।ভাইয়া তার বড় ভাই এবং ভাবীকে সংগে করে নিয়ে এসেছেন।আমি তাদের সাথে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখতে লাগলাম দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম দুজনে কি লজ্জা লজ্জা ভঙ্গিতে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে।দৃশ্যটা এত মিষ্টি যে আমার চোখে পানি চলে এলো।
বিয়ের শপিং করে বাসায় এসে দেখলাম বিভিন্ন জেলায় যে আত্নীয় স্বজনরা ছিল তারা সবাই বিয়ে উপলক্ষে আমাদের বাসায় চলে এসেছেন।আপুকে দেখে সবাই বেশ আহ্লাদ করতে লাগলো। এতগুলো মানুষের রান্নাবান্না করতে করতে মা হিমশিম খাচ্ছে দেখে মা কে হেল্প করতে এগিয়ে গেলাম। রাতের খাবার পর সবার জন্য ড্রইংরুমে ঢালা বিছানা করা হলো। আমি আর আপু রুম বড়দের জন্য ছেড়ে দিয়ে কাজিনদের সাথে ড্রইংরুমে চলে এলাম।এখানেই ঘুমাবো সবাই। তানিশা বেশ উৎসাহ নিয়ে বলল,
– গায়ে হলুদের প্ল্যান কি?আমি কিন্ত দিলবার দিলবার গানে নাচবো। পুর্নতা মাথা নেড়ে বলল,
– উহু দিলবার দিলবার পুরানো হয়ে গেছে।নতুন গান সিলেক্ট করতে হবে। শফিক ভাইয়া ওর মাথায় চাটি মেরে বলল,
– সারাক্ষণ শুধু নাচ৷ গানের চিন্তাই এদের মাথায় ঘুরে।এভাবে যদি পড়াশোনা ঘুরতো তাহলে এতদিনে বিখ্যাত কেউ হয়ে যেতি। জেরিন মুখ গোমড়া করে বলল,
– তুমি যে কি বলো না ভাইয়া।বিয়েতে এসেছি কই একটু আনন্দ করবো,এখানেও তুমি পড়া পড়া করছ। শফিক ভাইয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
– আচ্ছা যা,আনন্দ কর।আমি তোদের নাচের ট্রেইনার হবো যাহ। তখন সবাই একটা আনন্দের শব্দ করলো। আমি বললাম,
– চলো,সবাই মিলে আনতাকশারি খেলবো। অহনা মাথা নেড়ে বলল,
– উহু,আমি ভালো গান পারি না।হেরে যাবো এরচেয়ে চল ট্রুথ অর ডেয়ার খেলি। সায়েম বেশ ভয় পাওয়া গলায় বলল,
– কখনোই না।এই শীতের রাতে ডেয়ার নিলে তোমরা নির্ঘাত ঠান্ডা পানিতে গোসল করে আসতে বলবা।আমি খেলবো না এই গেম।
কোন গেম খেলা ছাড়া আড্ডা দিতে দিতে রাত দুটো বেজে গেল।রাত বেশী হওয়াতে আপু তাগাদা দিল ঘুমিয়ে পড়ার জন্য। এভাবেই প্রতিটা দিন খুব আনন্দের সাথে কেটে যাচ্ছিল।শফিক ভাইয়া সত্যি সত্যি নাচের ট্রেইনার হয়ে তানিশা, জেরিন ওদের নাচ শেখাচ্ছে।মা চাচীরা সারাক্ষণ হাসি আনন্দের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।বাবা কমিউনিটি সেন্টার কোনটা বুক করবে সেটা নিয়ে মামা চাচাদের সাথে পরামর্শ করে যাচ্ছে। সারাক্ষণ একটা উৎসব উৎসব পরিবেশে দিন কেটে যাচ্ছে। মেহেদী সন্ধ্যাটা খুব ধুমধামের সাথে না হলেও মোটামুটি একটা উৎসবের মতই করা হলো। প্রত্তয় আমাদের আরেক কাজিন,মেহেদী নিয়ে বেশ আজেবাজে কথা বলে ফেলল,
– এত সময় ধরে মেহেদী দেয়ার কি প্রয়োজন। মেয়েদের খেয়ে দেয়ে কাজ না থাকলে যা হয়।কাজের বেলায় নাই সব আছে অকাজে। কিন্ত ও জানতো না এই একটা কথা ওর জীবনে কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতে পারে।রাতের বেলা প্রত্তয় যখন ঘুমিয়ে গেল,আমরা মেয়েরা তখন চুপিচুপি ওর মুখে মেহেদী দিয়ে দাড়ি মোছ একে দিলাম।সাধারণ মোছ না,নবাবী স্টাইলের ইয়া বড় মোছ। সকালে নিজের চেহারার হাল দেখে রেগে মেগে অস্থির হয়ে বলল,
– তোরা কালনাগিনীর দল আমার চেহারার একি হাল করেছিস।আমি এখন বিয়েতে কাউকে মুখ দেখানোর যোগ্য রইলাম না। আমি কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
– আরো বলবি মেয়েদের নিয়ে কিছু? প্রত্তয় হাতজোড় করে বলল,
– মাপ চাই মাতা রানী মাপ চাই।
এখন সে সারাক্ষণ ফেসওয়াস দিয়ে ডলে ডলে মুখ ধুয়ে যাচ্ছে।এতে মেহেদীর রঙ কিছুটা হালকা হয়েছে।সাথে সেভ করা বন্ধ করে দিয়েছে যাতে দাড়ির নিচে মেহেদীর রঙ ঢাকা পড়ে।ওর কান্ড দেখে আমরা হেসে কুল পাচ্ছি না। গায়ে হলুদটা বেশ আয়োজন করেই শেষ হলো। হলুদের ডালা সাজিয়ে বরের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগে আপুর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম,
– আপু ভাইয়াকে কিছু বলতে হবে কিনা আমাকে বলে দাও।আমি তোমার বার্তা পৌছে দিবো। আপু চোখ গরম করে বলল,
– ভাগ এখান থেকে অসভ্য কোথাকার। আমি মুখে সিরিয়াস সিরিয়াস একটা ভাব ফুঁটিয়ে বললাম,
– মুখে বলতে লজ্জা লাগলে একটা চিরকুট লিখে দিতে পারো।কথা দিচ্ছি পড়ে দেখবো না।
– দাড়া তোর চিরকুট আমি বের করছি।
আপু উঠে আসার আগেই আমি এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বিয়ের দিন মেয়েরা সবাই মিলে পার্লার থেকে সাজলাম। আপুকে একটা ডানাকাটা পরীর মত লাগছিল।মনে হচ্ছিল স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরী যেন। বরযাত্রী এলে আমরা সবাই মিলে গেট ধরলাম।বরপক্ষ থেকে একজন জানতে চাইলো আমাদের দাবী কি? আমি গলা উচিয়ে বললাম,
– এক কথা শেষ করতে দিলো না।তার আগেই একজন চেঁচিয়ে উঠলো,
– এই দেখ তো কারো মানিব্যাগের চিপায় এক টাকার কোন কয়েন আছে কিনা। আমরা হৈ হৈ করে বলে উঠলাম,
– এক লক্ষ টাকা।এর এক টাকা কমেও আমরা গেট ছাড়বো না। তারা বলল,
– এত টাকা তো কেউ পকেটে নিয়ে ঘুরে না।আপনারা ক্রেডিট কার্ড রাখুন।
তবে তারা কার্ড দিতে রাজী কিন্ত পাসওয়ার্ড দিতে রাজী না।শেষ পর্যন্ত অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে পঞ্চাশ হাজারে সেটেলমেন্ট হলো। এভাবে মহা আনন্দে আর ধুমধামের সাথে আপুর বিয়ে হয়ে গেল।বিদায় বেলায় বাবা মা আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম,আপুর জন্য আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।মনে হচ্ছে আমার শরীরের একটা অংশ কেউ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আপুর বিদায় দৃশ্য সহ্য করতে পারলাম না।দূরে দাঁড়িয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললাম। গাড়িতে উঠার আগে আপু জিজ্ঞেস করলো,
– মিরু কই?ওকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন? তানিশা আমার হাত ধরে টানতে টানতে আপুর কাছে নিয়ে গেল।আমি আপুর দিকে তাকাতে পারলাম না।আপু আমার গালে হাত রেখে বলল,
– ভালো থাকিস টুনু।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।আপুকে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেললাম। বাসায় ফিরে কেমন যেন সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।এই বিছানায় আজ থেকে আমার একা ঘুমাতে হবে।রাতে ঘুম না এলে আপুকে ঘুম থেকে জাঁগিয়ে গুটুর গুটুর করে আর গল্প করতে পারবো না।বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লে আপু আর চশমা খুলে মাথাটা পরম মমতায় বালিশে রেখে গায়ে চাদর টেনে দিবে না। যখন তখন আর এটা সেটা বানিয়ে দেয়ার আবদার করা যাবে না ভাবতেই বুক ফেঁটে কান্না এলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কে আগে কাজল লাগাবে এটা নিয়ে খুনসুটি হবে না।”তোর বইগুলো কেন গুছিয়ে রাখিস না” বলে আপু আর কখনো বকা দিবে না।পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করে আমি ঠিক থাকতে পারলাম না।বিছানার উপর বসে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগলাম।