মজনু

মজনু

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিয়েই দেখি মজনুর ২৩টা মিসড কল! আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে মজনুর একটা পেটনেম আছে, “কিপটা মজনু।” সে এতোই কিপটা যে ইমার্জেন্সি ব্যাপারেও কল দিবে না, ১ সেকেন্ডের একটা মিনি মিসকল দিবে। সেই রাত থেকে মজনুর ২৩টা কল এসেছে তার মানে ব্যাপার সুপার ডুপার সিরিয়াস! অবশেষে আমিই কল ব্যাক করলাম। সাথে সাথে মজনু কল রিসিভ করলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

-“কিরে ব্যাটা, রাত থেকে কল দিতেসি। রিসিভ করোস না কেন? কি খাইছোস?”
-“আগে বল ব্যাটা তোর এতগুলা মিসকল কেন? কিছু হইছে?”
-“দোস্ত, আনিকা তো আমার সাথে ব্রেক আপ করছে কালকে রাত্রে। এ্যাএএএ। আমার আনিকা গো, আমি কি নিয়া থাকবোওও।”
-“আচ্ছা, কাঁদিস না বাচ্চাদের মতো। হঠাৎ ব্রেক আপ করলো কেন?”
-“ও বলছে ওর বার্গার পছন্দ, আমার পছন্দ পিৎজা।

ওর পিংক কালার পছন্দ আমার পছন্দ ব্লু। আমাদের নাকি কিছুই মিলে না। তাই রিলেশন কাট।” আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। আজকালকার রিলেশন করা যতো কঠিন, ব্রেক আপ ততো সহজ! ওদিকে মজনুটা ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছে। শুনতে খুব বিশ্রী লাগছে।

-“মজনু শোন গাধা, কাঁদিস না। যা এক গ্লাস পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর।”
-“আবির জানিস, আমার আনিকাও না পানি খেত। ওর কথা খুব মনে পড়ছে। আনিকা গোওওও।”
-“আচ্ছা, আমি ওয়াশরুম থেকে আসি। ফোন রাখ ব্যাটা।”
-“আবির রে, আমার আনিকাও না ওয়াশরুমে যেত।” ওপাশ থেকে মজনুর নাক ঝাঁড়ার শব্দ পাওয়া গেল।

না! এর মাথা পুরোপুরি গেছে। এখন ফোনে বকবক করার কোন মানে হয় না। টুট করে ফোন কেটে দিলাম। আমি নিশ্চিত ওপাশ থেকে মজনু হাউমাউ করে বলছে, “আবির রে, আমার আনিকাও এভাবে কথার মাঝে খট করে ফোন কেটে দিত। আনিকা গোওওও।”

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার ফোন নিয়ে বসলাম। ইদানীং একটা বিদেশী তরুণীর সাথে ফেসবুকে চ্যাটিং বেশ জমে উঠেছে। মা বলেছে, “তোকে বিয়ে করালে কোন বিদেশী মেয়েকেই বিয়ে করাবো, উঠতে বসতে কথা শুনালেও উত্তরে কিছু বলতে পারবে না। বাংলা ভাষা বুঝলে তো বলবে!” নাড়ীর টান কতো আমি তা বুঝে গেছি। আমি কিছু বলার আগেই মা মনের কথা বুঝে ফেলেছেন। এবার দেখতে হবে আমার প্রেমের টান কতো! প্রেমের টানে টানাটানি করে আমি প্রিয়তমাকে বাংলাদেশে আনতে পারি কিনা দেখা যাক। “ঘুম থেকে উঠো, আমি ঘুম ভাঙানিয়া পাখি! গুড মর্নিং বেবি।” লিখে এঞ্জেলাকে মেসেজ করেই ফেসবুকে লগ ইন করলাম। নিউজফিডে দুই মিনিট আগে মজনুর করা পোস্ট দেখে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো।

একটা বিষের বোতলের ছবি আপলোড করে মজনু তাতে ক্যাপশন দিয়েছে, “যেই জীবন অন্যের কাজে লাগে না, সেই জীবন রেখে কী লাভ বলেন ফ্রান্স?” সর্বনাশ! মজনু বিষ খেয়ে নিজের অকর্মা জীবনটা বিলীন করে দিবে নাকি! সাথে সাথে ওকে কল করলাম। ওপাশে রিং হলো। রিসিভ হলো না। একবার দুইবার তিনবার! না রিসিভ হয় না। মজনুটা আবার বিষ খেয়ে চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে কিনা কে জানে। শার্ট গায়ে চাপিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। সকালবেলা বলে খুব বেশি ভীড় নেই। ওদের বাসাও আমাদের বাসার কাছেই। দশ মিনিটের মধ্যেই এক দৌড়ে পৌঁছে গেলাম। ওর ঘরে ঢুকে কয়েকবার ডাক দিলাম। কোন সাড়াশব্দ নেই। কে জানে কোন চিপায় মজনুটা বিষ খেয়ে ব্যঙের মতো পড়ে আছে কিনা! রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ও বিষের বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছুটে ওর হাত থেকে বিষের বোতল কেরে নিলাম। “এসব কি করছিস?” মজনু আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠল।

-“তুই এখানে!”
-“বিষ খেতে চাইছিলি কেন?”
-“আমি কোথায় বিষ খেতে চাইলাম!”
-“ফেসবুকে ওসব কি পোস্ট দিয়েছিস?”
-“আরেহ, রান্নাঘরে ইঁদুরের যন্ত্রণায় কিছু রাখতে পারি না।

ইঁদুর মারবো বলে বিষ এনেছি। আর তুই কি না কি ভাবলি!”
যাক! ওর মাথায় তাহলে এমন কিছু আসেনি! আর আমি শুধুই হয়রান হলাম! মজনু ঠিক তখন আমাকে চেপে ধরে বলল, “দোস্ত! আরেকটা জি.এফ খুঁজে দে না! সিঙ্গেল আর কতদিন!” আমি আকাশ থেকে পড়লাম! “তুই না একটু আগে আনিকার জন্য হাউমাউ করলি!”

-“পাস্ট ইজ পাস্ট! দে না দোস্ত, জি.এফ খুঁজে!” আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম! “আজ বুঝলাম বাবা মায়েরা সবই বুঝে। তাই তো আঙ্কেল আন্টি এতো ঘটা করে আকীকা দিয়ে তোর নাম মজনু রেখেছে!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত