পাত্রী বিড়ম্বনা

পাত্রী বিড়ম্বনা

“চায়ে চিনি ঠিক হয়েছে?”

“জ্বি, চিনি, লবণ, মরিচ সব ঠিক হয়েছে! আপনি বানিয়েছেন?”

“জ্বি, নিজ হাতে বানিয়েছি!”

“সত্যি বলতে আপনার হাতে যাদু আছে, এর আগে এমন সুন্দর করে কেউ কখনো চা বানিয়ে খাওয়ানি!”

এই বলে তন্দ্রার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছি। তন্দ্রা তার ছোটবোন নাহিদকে গুতো দিয়ে বিস্মিত ভাবে আমার চা খাওয়া দেখছে।

“ঐ, তুই কি আসলেই মরিচের গুড়ার বয়ম আমাকে দিয়েছিলি, নাকি হলুদের টা!”

“আপু, মরিচের বয়ম-ই দিয়েছিলাম!”

“তাহলে এই লোকের মুখের এক্সপ্রেশন এমন কেন! একে দেখে তো মনে হচ্ছে অমিয় সুধা পান করছে?”

“কে জানে!”

“বাজার কি বাবুল ভাই করেছিলো?! আমারতো মনেহয় সে দুই নাম্বার মরিচের গুড়া কিনে নিয়ে এসেছে। ঠেসে দুই চামচ দিয়েছি। এতক্ষণে তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয়ে, লাল চা খাওয়ার সাধ মিটে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাকে দেখেতো মনে হচ্ছে সে এই চা খুব পছন্দ করেছে এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেক কাপ চাবে।”

আজ তন্দ্রাদের বাসায় এসেছি, তন্দ্রাকে দেখতে। এটা আমার পঁচিশতম পাত্রী দেখা। এর আগে প্রতিটি যায়গায় খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেও পাত্রীপক্ষের সবাই কোন এক অজানা কারণে পিছু হটে যায়। তন্দ্রার হাতের মরিচ চা খেয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। এর আগেও দু একবার লবণের চা, মরিচের চা খেয়েছি। প্রথম প্রথম খুব অস্বস্তি লাগলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে সাধ করেই মরিচের চা খাই। আজ তন্দ্রার হাতে মরিচের চা খেতে তাই খারাপ লাগছে না, বরং ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে আমাকে সাইজ করানোর জন্য মরিচের চা বানানো হলেও, বানানোর সময় সে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলো। ভালো রান্না করতে পারা মেয়েরা নাকি ইচ্ছা করলেও খারাপ রান্না করতে পারে না। তন্দ্রার চা অন্তত তাই বলছে। কিছুক্ষণ পরে আমাদের দুজনকে একা কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন দুই পক্ষের মুরব্বীরা। মাহরাম হিসেবে তন্দ্রার ছোটবোন নাহিদ আছে, কিন্তু রূমের অপর প্রান্তে বসা। “আচ্ছা আপনাকে আমি মরিচ এর চা খাইয়েছি, তার পরেও আপনি বিচলিত হননি যে! কারণটা কি জানতে পারি?”

“জ্বি, অবশ্যই! আপনার আগে বেশ কয়েক বার পাত্রী দেখেছি। তো এরকম অবস্থার সম্মুক্ষীন বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে। আপনি যে কাচা মরিচ সহ শুকনা মরিচের গুড়া দিয়ে মাসালা টি বলে চালিয়ে দিয়েছেন, তাও চায়ের রঙ বলে দিচ্ছিলো! কিন্তু তার পরেও খেয়েছি আপনাকে ভড়কে দিতে। মানুষকে ভড়কে দিতে আমার মন্দ লাগে না! আপনি কি কোন কারণে আমাকে অপছন্দ করছেন বা বিয়ে করতে অনাগ্রহী?” “না ঠিক তেমন নয়! আসলে আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না। সামনে আমার ফাইনাল এক্সাম।”

” এই ব্যাপার আমাকে মুখে বললেও পারতেন!” “না শুধু এটানা, আপনি ব্যবসা করেন। ব্যবসায়ী ছেলে আমার পছন্দ না!” “এটাও তো মুখে বলা যেতো, আমি কিছু মনে করতাম না!” “না, আপনার ব্যাপারে আমার বাবা মা খুব পজেটিভ! এবং তাদের ভাষ্যমতে আপনার মত ছেলেই হয় না। তাই চাচ্ছিলাম আপনি নিজে থেকে আমার অমতের কথা বুঝে স্বেচ্ছায় মানা করে দেন!” “এটাওতো আপনি চাইলে মুখে বলতে পারতেন, আমি দ্বিতীয়বার অনুরোধ করতাম না! তবে এটা ঠিক, আপনার বেলায় হয়তো এটা মেনে নেওয়া কিছুটা হলেও আমার জন্য কষ্ট হতো!” “এত কিছুর পরেও আপনার কষ্ট হওয়ার কারণ জানতে পারি!”

“জ্বি অবশ্যই, আপনার চোখের অন্তরালে কিছু অব্যক্ত ভাষা আছে। আমি যখন চা খাচ্ছিলাম, প্রথমে আপনার চোখে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এক ধরণের ছেলে মানুষির আনন্দ দেখেছিলাম। কিন্তু শেষের অংশে আপনি চাচ্ছিলেন না আমি মরিচের চা আর পান করি। কিন্তু মুখ ফুটে সেটা বলতেও পারছিলেন না। কিন্তু আপনার চোখ বার বার বারণ করতে চাচ্ছিলো! এটা থেকে বুঝেছি আপনার মনে কিছু দয়া মায়া আছে। এই বিষয়টা আপনার প্রতি আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে!” বেশ কিছুদিন পর এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় চায়ের কাপ হাতে তন্দ্রা দাঁড়িয়ে আছে। আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছি! “এই নাও তোমার রঙ চা!” “চায়ে চিনি, লবণ, মরিচ সব ঠিক দিয়েছো তো!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত