একটি মেইল ফেসবুক আইডির আত্ম কাহিনী

একটি মেইল ফেসবুক আইডির আত্ম কাহিনী

আমি একটি মেইল ফেসবুক আইডি। আমার জন্ম হয়েছিল 2014 সালে একটি কমদামী মোবাইলে । আমার জন্ম নিয়ে আমি নিজেই এখন লজ্জাবোধ করি । এখনকার ফেসবুক আইডিগুলা কত লাকি! কত সুন্দর, দামি স্মার্টফোনে তাদের জন্ম হয় । আর আমার জন্ম কিনা একটা বাটনওয়ালা টমটম মোবাইলে । সেই লজ্জায় আমার কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু কি আর করা! ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বলে কি আমি মানুষ নই! সেই আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠাতেই হয়, চ্যাট করতে আর নিউজফিডও স্ক্রল করতে হয় ।

সে যাই হোক, আমার বার্থনেম ছিল ‘অবুঝ বালক কুদ্দুস’ । আমার মালিকের নাম আবদুল কুদ্দুস থেকেই এই নামের উৎপত্তি । আমার মালিকের বন্ধুর পেট ফুলে ওঠা প্রেগন্যান্ট মোবাইল আর অস্থির 2G নেটওয়ার্ক দিয়ে টানা ১০ বারের চেষ্টায় আমি জন্ম লাভ করেছিলাম। তখন আমার মালিক ক্লাস নাইনে পড়ত । প্রোফাইল পিকচারে সে তার লাল শার্ট আর বেগুনি রঙের চশমা পরা যে ছবি দিয়েছিল সেটা মনে হলে আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে । আমার মালিক দিনে ২-৩টা করে স্ট্যাটাস দিত । সেগুলা যারা পড়ত তাদের করুণ দশা চিন্তা করে আমার এখনো খারাপ লাগে । আহারে!

আমার মালিক দশম শ্রেণিতে উঠার পর “Angel Pori” নামের একটা মেয়ে আইডির সাথে ভাব জমাল । সারাদিন উরাধুরা চ্যাটিং চলত । মাঝখান দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার কারণে আমার মালিক আমাকে কিছুদিন ব্যবহার করতে পারেনি । পরীক্ষার পর এসে দেখে ‘Angel Pori’ এখন ‘ভদ্র ছেলে’ হয়ে গেছে । রাগে দুঃখে আমার মালিক আমাকে কয়েকদিন অজ্ঞান (পড়ুন deactivate) করে রাখল । এরপর কি মনে করে একদিন জ্ঞান ফিরিয়ে এনে বন্ধুর সহায়তায় নাম পরিবর্তন করে দিল ‘বুঝ বালক’ ।

কলেজে উঠার পর আমার মালিক কিভাবে যেন একটা মেয়ের ফেসবুক আইডি জোগাড় করল । তার সাথে প্রেমও শুরু হল আমার মাধ্যমে । যেদিন তারা প্রথম ঘুরতে গেল, সেদিন সন্ধ্যায় একটা কাপল ছবি আপলোডিয়ে আমার মালিক ক্যাপশান দিল, “ভন্দুরা, গালপেনের সাতে গুরথে গিয়ে ফডোটা তুললাম। কেমন হয়েচে কমেড করে ঝানাও।” বিশ্বাস করুন, এটা দেখে আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল । আমার যদি জীবন থাকতো, তখনই অন্তত দশবার স্যুসাইড করে ফেলতাম ।

আমার জীবনের প্রথমদিকে আমার মালিক একবছর পর্যন্ত সবার ছবি, পোস্টে ‘নাইচ’ কমেন্ট করত । আমার পিত্তি জ্বলে যেত কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না । এখন অবশ্য সে স্মার্ট হয়েছে, ‘নাইচ’ কমেন্ট আর করে না । আমার বর্তমান বয়স প্রায় পাঁচ বছর আর বর্তমান নাম ‘tHe PeRFect BOy KuDD’ ।এই পাঁচ বছরে আমার নাম পরিবর্তন হয়েছে কমপক্ষে তিরিশবার । Lovely boy, Alone boy, Choklet boy, স্বপ্নের রাজকুমার, Bangoli boy, বাবুনির বাবুই, রাত্রির আব্বু, নিশীরাতের কুদ্দুস, হ্যান্ডসাম পোলা, দুঃখি বালক আমি, তোরে অভিশাপ দিলাম ইত্যাদি নাম পরিবর্তন হতে হতে বর্তমান নামে এসে ঠেকেছে ।

প্রথম দিকে ফ্রেন্ড ছিল 50, 130, 256 এরকম । আর এখন পাঁচ হাজার পূর্ণ হয়ে ফলোয়ার আছে কয়েক হাজার । তবে আমার মালিক খুব দয়ালু কিনা! তাই সুন্দরীরা রিকোয়েস্ট পাঠালে ছেলেদেরকে আনফ্রেন্ড করে ওদেরকে অ্যাড করে নেয় ।

আমার মালিক এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, দামি ফোন ইউজ করে, ডিএস্লারের ছবি আপলোডায় । তার নাম কুদ্দুস থেকে এখন ‘Kudd’ । সপ্তাহে অন্তত 2-3 টা করে ছবি আর শ’ খানেক স্ট্যাটাস দেয় । মাইরালা, কাইরালা, গাইরালা গ্রুপের এডমিন । দামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে চেক-ইন দেয় ।

দুই-তিন দিন পর পর “অমুক জায়গায় যাচ্ছি ফ্রান্স, তোমরা আসছো তো?” টাইপ স্ট্যাটাস দেয় । ইনবক্সে কত মেয়ের সাথে লুতুপুতু করার চেষ্টা করে । আমার বোন ম্যাসেন্জারকে দিয়ে কত মেয়েদের সাথে অ্যাডাল্ট চ্যাট, ফোনালাপ করে । আবার, নারীদের নিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প লেখে, বিশেষ দিবসে নারীর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে । আমি খালি দেখেই যাই, কিছুতো করতে পারিনা । আমার নাম ফেইসবুক বটে কিন্তু আমার তো আর ফেইস নেই ।

কিছুদিন আগে মালিক চ্যাটে তার এক ফ্রেন্ডকে বলছিল, আমাকে নাকি আর রাখবে না । আমি নাকি পুরনো হয়ে গেছি । আমাকে নাকি পারমানেন্ট ডিঅ্যাক্টিভেইট করবে । আমি দেখে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না । আহা জীবন, আহারে জীবন!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত