প্রথম যেদিন শ্বশুর বাড়িতে পা রাখলাম সেদিনই বুঝতে বাকি ছিল না, আমার স্বামী আমাকে বাধ্য হয়েছিল বিয়ে করতে । হয়তো বৃদ্ধ বাবা মায়ের কথা রাখতে।
বাসর ঘরে সব মেয়ে আসা করে স্বামীর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পেয়ে নিজের জীবন সার্থক করতে । কিন্তু আমার হয়েছে উল্টো । আমার স্বামীর নাম পাভেল । একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে । বাসর ঘরে আমি তাঁর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখে বড়ো একটা ঘোমটা টেনে বসে ছিলাম ।যখন সে ঘরে এলো আমি বুঝতে পারলাম । আধো আবছায় বুঝতে পারলাম সে পানি খেল এক গ্লাস ঢকঢক করে । তারপর আমার পাশে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
– আমার সকাল থেকে ভিষন জ্বর । পাশের ঘরে শুয়ে ছিলাম । মা জোর করে পাঠিয়ে দিল। আসলে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইছি না। যদি অনুমতি দেন আমি এখানে শুতে পারি ?
আমি হতবাক হয়ে গেলাম কথা শুনে । লোকটার গায়ে জ্বর । নিজেই ঘোমটা সরিয়ে তাকে সপর্শ করতে যাবো তখন চমকে উঠে বললো,
– প্লিজ , কিছু মনে করবেন না। আমার বিশ্রাম দরকার ।
তাকে প্রথম সপর্শ করার সৌভাগ্য আমার সেদিন হলো না । তাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম আপনি শুতে পারেন ।
সে আমার পাশে গুটিসুটি হয়ে আছে । আমি পাশে থাকা একটা চাদর তাঁর গায়ে জড়িয়ে দিলাম । সে মৃদু চোখে একবার তাকিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ।
আমি বুঝে গেলাম আমার এভাবে বউ সেজে বসে থাকা অহেতুক । তাই দেরি না করে নিজের কাপড় চেঞ্জ করতে ওয়াশরুমে গেলাম । ফিরে এসে খুব খারাপ লাগছে , আচ্ছা ওর জ্বর কি খুব বেশি ? জল পট্টি দিতে হবে নাকি ?
আমি আস্তে আস্তে মানুষটার কাছে গেলাম । নিজের হাতটা ওর কপালে রাখতে যাবো ঠিক তখনই বিড়বিড় করে বললো,
— নীলা , একবার ফিরে আসো। দেখ তোমার পাভেল তোমাকে আজও ভুলতে পারেনি। তুমি আমার হৃদয় জুড়ে এখনও আছো। কেন ভুলে গেলে আমায়। কেন চলে গেলে আমাকে ছেড়ে ।
আমি চমকে উঠে হাতটা টেনে নিলাম । কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে । কে এই নিলা। তাহলে কি পাভেল আমাকে বাধ্য হয়েছে বিয়ে করতে । আজও কি নিলাকে ভুলতে পারিনি ?
মায়াতলী গ্রাম । আর সব গ্রামের মতোই সুন্দরতায় ভরা। এই গ্রামের মেয়ে আমি রুপা। আমার বাবা স্কুল মাস্টার । তাদের একমাত্র মেয়ে আমি। ছোট বেলা থেকে ভীষণ দুষ্টু ছিলাম । আমার দাদী আমাকে জোর করে আম গাছ বরই গাছ থেকে টেনে নামিয়ে উঠোনে বসে জোর করে চুলে তেল দিয়ে হাসতে হাসতে বলতো ,
— এতো বড়ো সেয়ানা মাইয়া সারা দিন গাছে গাছে ঝুইলা বেরাইলে কেডা বিয়া করুম তোরে।
আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বলতাম, ,
— কেন গো দাদী। দাদাজান থাকতে আমার চিন্তা কিসের । করবা আমারে তোমার সতীন? ?
— হায় হায় মাইয়া কয়কি। শেষ মেষ আমার বুইড়ারে হাতাইবার মলতব।
আমি আর দাদী এক সাথে হেসে উঠতাম । দুরে মা উঠান ঝাড়ুদিত আর মুখ টিপে হাসতো। তাই দেখে দাদী কপট রাগ দেখিয়ে বলতো,
— বউমা তোমার মাইয়ারে তাড়াতাড়ি বিয়া দাও। আর কতোদিন গাছে গাছে ঝুলবো। মা হেসে দিয়ে বলতো ,
— আম্মা, আপনি ওকে বিয়ে দিলে তো থাকতে পারবেন না। তখন কি করবেন?
দাদী চোখের পানি লুকিয়ে বলতো ,
– দেখি ঘরে যাই। তোমার শ্বশুর নামাযে যাইবো।
হঠাৎ করে মানুষ টা নড়েচড়ে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গেলাম । চোখ টিপটিপ করে তাকিয়ে আমাকে দেখে ধড়ফড় করে উঠে বসে বললো ,
— আপনি ঘুমাননি ?
– আপনার অনেক জ্বর তাই ঘুম আসছিল না।
– না না এটা ঠিক করেননি , আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন আমি পাশের ঘরে চলে যাচ্ছি ।
— আমার সমস্যা হচ্ছে না। আপনি ঘুমান। আমি গ্রামের মেয়ে রাত জাগার অভ্যাস আছে ।
— দেখুন আমি এতো ফর্মালিটি পছন্দ করিনা। আপনি এখানে ঘুমান।
এই বলেই পাভেল টলতে টলতে পাশের ঘরে চলে গেল । আমি শূন্য ঘরে বসে রইলাম । আসলে এটা কি আমার দুর্ভাগ্য নাকি সৌভাগ্য বুঝতে পারছি না।
আজকে শ্বশুর বাড়িতে আমার প্রথম সকাল । অনেকটা নির্ঘুম কেটেছে সারা রাত। চোখ বন্ধ করলে পাভেলের ওই কথা গুলি মনে পড়তে লাগলো। সবে মাত্র শাড়িটা পড়া শেষ হয়েছে এর মধ্যে পাভেল ঘরে ঢুকে এলো। আমাকে এভাবে দেখে কিছু টা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । ওর এই দৃষ্টি আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে । মনে মনে হিসাব মিলাতে লাগলাম ও কি আমাকে দেখছে ? নাকি আমার মধ্যে নিলা কে দেখছে ?
— আপনার মনে হয় সকালের নাস্তা এখনও হয়নি। সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে ছিলেন । তাড়াতাড়ি করে খেয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করে ফেলুন । কাল ভোরেই আমাদের ঢাকা ফিরতে হবে । অফিস থেকে মাত্র পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছি। তিন দিন শেষ এর মধ্যে ।
আমি চুপচাপ ওর কথা শুনে যাচ্ছি । রোবটের মতো কথা গুলি বলেই চলে গেল । একবার ও বললো না, বাহ এই শাড়িতে তোমাকে দারুণ লাগছে । তোমার ভিজে চুলে একটা গোলাপ গুঁজে দেই। একবারও বললো না , যানো রুপা ঠিক তোমার মতো একটা মেয়ে আমি আমার বউ হিসাবে চাইতাম ।
— বউমা চলো নাস্তা করবে ।
হঠাৎ করে শ্বাশুরি মায়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম । মাথার ঘোমটা টা টেনে হেসে দিয়ে বললাম ,
— এইতো মা চলুন ।
শ্বশুর আগের থেকে টেবিলে বসে ছিল । আমাকে দেখে খুশি হয়ে বললো ,
— এসো মা এসো।
সবাই একসাথে খেতে বসলাম । আমার থেকে একটু দুরে পাভেল নিজের মতো করে খাচ্ছে । শ্বশুর হঠাৎ করে বলে উঠলো ,,
— কালই চলে যাবি। আর দুটো দিন থেকে গেলে হতোনা। তোর জ্বর এখনও ভালো করে পরে নি।
— না বাবা নতুন চাকরি । কাজের অনেক চাপ।
তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো ,
— মা তুমি আর বাবা আমার কাছে চাইলে থাকতো পারো। কতো বড়ো বাসা আমার ।
শ্বাশুরি বললো,,
— তোরা যা । আমি আর তোর বাবা কিছু দিন পর যাবো। আর শোন বাবা, আমাদের বয়স হয়েছে নাতি নাতনির মুখ তাড়াতাড়ি দেখতে চাই।
এই বলেই শ্বশুর শ্বাশুরি হাসতে লাগলো।
তাদের কথা শুনে পাভেলের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । আমার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে যেতে যেতে বললো ,
— মা আমি ডক্টর এর কাছে গেলাম । ফিরতে রাত হতে পারে।
পরদিন আমরা খুব ভোরেই রওনা হলাম । সারা দিন জার্নি করে আমাদের দুপুর হয়ে গেল । সারা পথ পাভেল চুপচাপ ছিল । শুধু মাত্র একবার আমাকে বলেছিল পানির বোতলটা দেন তো। তারপর থেকেই যে যার মতো।
নতুন বাসায় এসে দেখি এলোমেলো সব কিছু । বুঝে গেলাম একা একা থাকে তাই এই অবস্থা । আমাকে রুমে এসে চেঞ্জ করতে বলে ও বাইরে চলে গেল ।
আমি ওয়াশরুম থেকে সবেমাত্র বেরিয়েছি এর মধ্যে মায়ের ফোন । মা দাদী এক এক করে সবার সাথে কথা বললাম আর বললাম আমি খুব ভাল আছি। কয়েকদিনের ভিতরে তোমাদের দেখতে আসবো।
ফোন টা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। আমি কি সত্যি ভালোআছি ?
নাকি কখনও ভালোথাকতে পারবো ?
এমন সময় পাভেল ফিরে এলো। ওর হাতে বিরিয়ানি দেখতে পেলাম । ওটা দেখেই মনে পড়লো সারা দিন কিছু খাওয়া হয়নি। যদিও পাভেল একবার বলেছিল আপনি কিছু খাবেন ?
আমি ওর দিকে না তাকিয়ে উওর দিয়েছিলাম জার্নি করার পথে আমি কিছু খাইনা।
রাত দুইটা ,
পাভেল অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে । রাতে আমি নিজেই রান্না করেছিলাম ডাল চচ্চড়ি , ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা । যদিও দুইজন চুপচাপ খেয়েছি। খাওয়ার পর পাভেল কিছু সময় অফিসের কাজ করলো আমি সারা দিনের জার্নি করে শুয়ে পড়লাম । হঠাৎ করে যখন ঘুম ভাঙে তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমি একা শুয়ে আছি। ও নেই আমার পাশে । আমার বুঝতে সমস্যা হলো না এর কারণ কি হতে পারে ।
খুব জোরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে । কেন করছে আমার সাথে এমন । কেন আমাকে বিয়ে করেছিল ?
একবার ওর মুখোমুখি আমাকে হতে হবে কেন আমার সাথে এমন বিহেব করছে ।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওর জন্য নাস্তা তৈরি করলাম । পাভেল সময় মতো ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজ সেরে খেয়ে অফিসে চলে গেল । যাওয়ার আগে একবার শুধু বললো,
– ফ্রিজ এ মাছ মাংস সব কিছু আছে আপনার যা ভাল লাগে রান্না করতে পারেন । আর শুনুন
আমি ছাড়া দরজা খুলবেন না। এই বলেই চলে গেল ।
আমি ফ্রিজ থেকে মাংস মাছ বের করলাম । রান্না করে সব গুছিয়ে রাখলাম । পাভেল একবার এর মধ্যে ফোন করলো। আমি খুব খুশি হয়ে ফোন টা রিসিভ করলাম মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো আমাকে বলবে ‘” রুপা তোমাকে আমি খুব মিস করছি। সময় মতো খেয়ে নিও। ফিরার পথে তোমার জন্য একটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসবো। আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে দুচোখ ভরে তোমাকে দেখবো”
কিন্তু নাহ এই সব কিছু বলেনি। শুধু বললো ” আমার ফিরতে রাত হতে পারে । খিদে লাগলে যেন খেয়ে নেই ।
এভাবে কেটে গেল কয়েক দিন । দুজনে একই ছাদের নিচে কিন্তু কতো দুরে। পাভেল কে আমি লজ্জায় বলতে পারিনা কেন আমাকে ওর ভালোবাসা থেকে দুরে ঠেলে রেখেছে। পারি না বলতে আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করছি।
সেদিন কি সমস্ত ঘর গুছাতে গুছাতে পাভেলের ডায়েরি টা হাতে পেলাম । একবার মনে হলো কারো অনুমতি ছাড়া তাঁর জিনিস ধরতে নেই। কিন্তু আমার কাছে নিলা একটা ভয়ঙ্কর জগত। যা আমার জানা একান্ত দরকার । ডায়েরিটা খুলে চোখের সামনে মেলে ধরলাম সুন্দর গোটাগোটা করে লেখা কিছু কথা । এক মনে পড়তে শুরু করলাম, ,,
প্রিয় নন্দিনী,
তুমি ভাল করেই জানো তোমাকে আমি ভালোবেসে এ নামে ডাকি। আচ্ছা নিলা, তোমার মনে আছে সেদিনের কথা যেদিন তোমাকে আমি প্রথম বই মেলায় দেখেছিলাম তুমি খুব বন্ধুদের সাথে মজা করে ফুসকা খাচ্ছিলে । জানো সেদিন দেখেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছিলাম । এক বন্ধু হঠাত্ করে আমাকে ডেকে বললো আরে পাভেল যে কেমন আছিস ? এর পর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তুমি একবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলে। আমি অপলক চোখে তোমাকে দেখছিলাম ।
কিছু দিন পর সেই বন্ধুর কাছ থেকে তোমার নম্বর নিয়ে আমাদের যোগাযোগ করা। সেই শুরু ভালোবাসা । দেখতে দেখতে চার বছর কেটে গেল । আমার লেখা পড়া শেষ হলো জব ঠিক হলো। তোমার ও লেখা পড়া শেষ । এখন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবার পালা।
কিন্তু আমার কি দুর্ভাগ্য একদিন খবর পেলাম তোমার অনেক শরীর খারাপ হাসপাতালে তুমি ভর্তি । আমি হাসপাতালে গেলাম । তোমার ধরা পড়লো ব্লাড ক্যানসার । আমি পাগল হয়ে গেলাম এ খবর পেয়ে । কি করবো কোথায় নিয়ে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। মাত্র দু মাসের মাথায় তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে । একবার ও ভাবলে না তোমাকে ছেড়ে আমি কিভাবে বাঁচবো।
জানো নন্দিনী, তুমি চলে যাওয়ার পর আমি পাগলের মতো ঘুরে বেড়াতাম। একদিন বাবা মা আমাকে জোর করলো বিয়ে করাবার জন্য । নিজের জন্য না তাদের জন্য রাজি হলাম বিয়েতে । যেদিন মেয়েটাকে দেখতে গেলাম প্রথম দেখাতেই আমি চমকে উঠেছিলাম মনে হচ্ছিল তুমি আমার সামনে বসে আছো। আমি এতোটাই অবাক হয়ে গেলাম যে কোনও কথা বলতে পারছিলাম না।
কিছু দিন পর মেয়েটার সাথে আমার। বিয়ে হয়ে গেল । জানো নীলা মেয়েটা তোমার মতো খুব দায়িত্বশীল । বাসর রাতে সারা রাত আমার পাশে জেগে বসে ছিল । আমি খুব অন্যায় করছি ওর সাথে । এখনও আমার স্ত্রীর স্বীকৃতি ওকে দেইনি। আমার কি মনে হয় জানো , মনে হয় ওকে আমি সব কিছু বলি তোমার কথা কিন্তু মেয়েটা যদি কষ্ট পায়।
ওহ্ তোমাকে তো ওর নামটাই বলা হয়নি। খুব মিষ্টি একটা নাম রুপা। যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরি খুব ইচ্ছে করে একটা গোলাপ বা বেলিফুল নেই। মাঝে মাঝে ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে তোমার ভয় করছে নাতো ? আমি খুব শীঘ্রই চলে আসছি। বলতে ইচ্ছে করে শোন আজ তোমার সব রান্না বন্ধ চলো সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো।
আচ্ছা নিলা তোমার ভালোবাসা থেকে যদি একটু ভাগ রুপাকে দেই তাহলে কি তুমি কষ্ট পাবে ? তুমি কি মেঘ হয়ে বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়বে? তুমি কি দমকা ঝড়ো বাতাসে তোমার চিৎকারের আর্তনাদ মিশাবে ?
আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে । নিজেকে খুব ধন্য মনে হচ্ছে পাভেল ও আমাকে নিয়ে ভাবে । এর থেকে আর কিছু চাইনা।
সেদিন পাভেল আগে আগে বাসায় এলো। আমি ছাদে গাছে পানি দিচ্ছিলাম । পাভেলের কাছে এক্সট্রা চাবি আছে । ও বাসায় ঢুকে আমাকে না দেখে সারা ঘর খুঁজতে লাগলো। আমি ইচ্ছে করে দেরি করতে লাগলাম । আমি চাইছিলাম ও আমার কাছে আসুক । না বলা কথা গুলি বলুক। আমি আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি । আর মনে মনে হাসছি। এতোদিন অনেক কষ্ট দিছ এবার মজা বোঝ। এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে পাভেল ছাদে চলে এলো। এসেই একটা ধমক দিয়ে বললো ,,
— এ সবের মানে কি রুপা ? আমি তোমাকে সারা ঘরে ডাকছি আর তুমি এখানে ?
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আজ ওর কি হলো। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে বললো ,
— রুপা তুমি হারিয়ে গেলে আমি মরে যাবো। তোমাকে আমি হারাতে চাইনা।
আমি হতবাক হয়ে আছি। লজ্জা পেয়ে পাভেলের বুকে মাথা রাখলাম । নিজেই জানিনা চোখের জলে কিভাবে ওর জামা ভিজে গেছে । অনেক সময় পর ওকে বললাম ,
– এই যাহ চোখের জলে তোমার জামা ভিজিয়ে দিলাম ।
পাভেল আরো জোরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো ,
– রুপা বলো কখনও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না। আমার অনেক কষ্ট হয় ছেড়ে চলে গেলে ।
আমি পাভেলের বুকে মাথা রেখে বললাম ,
— তোমাকে কোনও দিন ছেড়ে যাবো না। কোনও দিন না।
আমাদের খুশি দেখে সেদিন আকাশ ও খুশিতে ঝলমল করছিল । পাখি বার বার মিষ্টি সুরে গান গাইছিল । নিজেকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব থেকে সুখী । স্বামীর কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেলে পৃথিবীর সব সুখ তুচ্ছ মনে হয়।
এভাবেই বেচে থাকুক পৃথিবীর বুকে ভালোবাসা গুলি ।