কাব্যের পরিণতি

কাব্যের পরিণতি

পাবলিক টয়লেটের সামনে সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য। এই মুহূর্তে তার সিরিয়াল নাম্বার ১৩ তে। তারমানে কাব্যের আগে আরো ১২ জন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। কাব্য এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। একটু পরপর মোচড়ামুচড়ি করছে। ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেচারা নাজেহাল অবস্থায় আছে। আমি আর কাব্য একটা দোকানে গেছিলাম টিশার্ট কিনতে। হঠাৎ বলে উঠলো…..

–দোস্ত একটু দাঁড়া আমি আসছি।

-কই যাবি?

–আরে আসছি, তুই ওয়েট কর।

তারপর অনেক্ষণ সময় চলে গেলো বাট কাব্যের দেখা নাই। এদিক সেদিক খুঁজলাম পেলামনা। আরেকটু খোঁজাখুঁজির পর আবিষ্কার করলাম কাব্য পাবলিক টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শালা টয়লেটে যাবে তাও বলেনি। আমি দূর থেকে কাব্যকে কল দিলাম, রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা। মেসেজ দিলাম….

-তুই কই?

–কেন কি হয়েছে?

-সেই কখন গেলি আসবি কখন?

–আরে দোস্ত ওয়েট করনা একটু।

-সেটা নাহয় করলাম কিন্তু তুই কই?

–আর বলিসনা, মার্কেটের বাইরে আসতেই পুরোনো এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো। তাই ওকে নিয়ে একটু রেস্টুরেন্টে এসেছি।

কাব্যের কথা শুনে আবুল হয়ে গেলাম। কি হ্রামিরে শালা। আমি বাস্তব দেখছি টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে নাকি রেস্টুরেন্টে। মনেমনে বললাম…. ‘হে আল্লাহ তুম মুঝে উঠা লে…মুই এই দুনিয়ায় নেহি থাকতাহু, ইজ দুনিয়ায় কাব্য ফ্রেন্ড বহুত হারামজাদাহে, উচকো পিঠমে মে ট্রস ট্রস করে মারতে মন চাতাহে। শালা মিথ্যুক।’

আমি চোখটা ভালো করে ঢলে নিলাম। আবার ভালো করে দেখলাম নাহ কাব্যইতো। শালায় এত বড় চাপাবাজ হইলো কবে? আমি মেসেজ দিলাম….

–আসবি কখন?

-একটু চাপে আছি, চাপ শেষ হলেই আসব।

আহারে বেচারা চাপে আছে। চাপটা যে কিসের বুঝলাম। আমি বললাম….

–কিসের চাপ?

-ঐ আরকি…ফ্রেন্ডের সাথে অনেক কথা বলছিতো তাই।

–সত্যি করে বলতো তুই কই?

-আরে রেস্টুরেন্টে আছি, মেসেজ দিসনা আর।

আমি বুঝে গেলাম কাব্য বেশ হতাশায় আছে। বেচারা প্রসুর চাপে আছে। এতদিন বুঝেছি ঠেলার নাম বাবাজি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে চাপের নাম বাবাজি। যদি চাপ হালকা হয়ে কাব্য প্যান্ট নষ্ট করে মানইজ্জতের বারোটা বেঁজে যাবে। কাব্য চাপের ঠ্যালায় রীতিমত ঘামা শুরু করছে। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখতে বেশ মজাই লাগছে আমার। আমি জুম করে কাব্যের কয়েকটা পিক নিলাম।

‘কেমন আছেন রুবেল ভাই?’ কথাটা শুনেই পিছনে তাকালাম। বেশ অবাক হলামও বটে। হুট করে মালিহার সাথে দেখা হবে আবার তারমুখ থেকে এমন কথা শুনব ভাবতে পারিনি। কারণ এই মেয়েটা কাব্যের প্রাক্তন প্রেমিকা। আমিই ব্লাকমেইল করে ব্রেকাপ করেছিলাম। অবশ্য মেয়েটি জানে আমার হাত আছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম…..

–আ..আ..আছি ভালোই তুমি?

-এইতো চলছে। তা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?

–এমনিতেই….তুমি এখানে কেন?

-ফ্রেন্ডের সাথে এসেছি। তা ভাই সেই হারামজাদা কাব্যের খবর কি?

হুট করে মালিহার মুখ থেকে কাব্যের নাম শুনে আরেকদফা অবাক হলাম। তাও আবার হারামজাদা বলছে। আমাকে বলল…..

–ঐ শালা ঠকবাজরে পাইলে খুন করব।

-ও আবার কি করল?

–ওর কাছে এখনো ৬ হাজার টাকা পাই, দেয়নি।

-কিসের টাকা?

–রিলেশন চলাকালিন আমার কাছ থেকে নিয়েছে।

-সেই টাকার আশায় এখনো আছো?

–তো থাকবনা, একবার পেয়ে নেই শুধু।

মনে মনে বললাম, খাইছেরে তালোই। কাব্যের কি হবে আল্লাহই জানে। বেচারা এমনিতেই চাপে আছে তার উপর যদি মালিহা দেখে তো কাব্য শেষ। আমিও ভাবলাম কাব্যকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। হালায় আমার কাছ থেকেও টাকা নিছে। আমি মালিহাকো বললাম…..

–কাব্য আশেপাশেই আছে।

-কিইইইই….! আমাকে বলুন কোথায় ও?

আমি আর কিছু বললাম না, হাত দিয়ে ইশারা করে কাব্যকে দেখিয়ে দিলাম। মালিহা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল….

–আজকে ওর শিক্ষা দিব। আমার ৬ হাজার টাকা।

-পরে দিও বেচারা চাপে আছে….

মালিহা আমার কথা গ্রাহ্য করলনা। হনহন করে হেঁটে চলে গেলো কাব্যর সামনে। কাব্য মালিহাকে দেখেই চোখ বড়বড় করে তাকালো। এদিক সেদিক দেখলো। মালিহা কোমড়ে হাত দিয়ে বলল….

–দে নাড়া, বের কর টাকা।

-মা মা মানে?

–আমার ৬ হাজার টাকা দে?

-কি কি কিসের টাকা?

–ফাজলামো মারাও? ৬ হাজার টাকা নিছিলা মনে নাই?

-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো?

–আমি অতকিছু বুঝিনা, টাকা বের কর নইতো টয়লেট করা হবেনা….

কাব্য কাঁদোকাঁদো ভাবে মালিহার দিকে তাকিয়ে আছে। মালিহা রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। যার ভাষা…’তুই টাকা বের কর এখনি।’ আমি কাব্যের অবস্থা দেখে কবিতা রচনা করলাম….

‘আবার আসিব ফিরে,
এই মার্কেটের সামনে।
দেখব আমি কাব্যকে…
মাইনকা চিপায় পরে আছে।’

কাব্যকে দেখে মনে হয় মালিহার অনুশোচনা হলো। বলল….

-আচ্ছা ৪ হাজার দে, বাকি ২ হাজার মাফ।

–দেখো আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি সিনক্রিয়েট করোনা প্লিজ।

মালিহার এবার কাব্যের শার্টের কলার ধরে টান দিলো। এতে করে কাব্য লাইন থেকে সরে আসলো। কাব্যকে দেখে মনে হলো বেচারা এবার কেঁদেই দিবে। মালিহার দয়া হচ্ছেনা, বেচারিও অনেক কষ্ট পেয়েছে ব্রেকাপ করাতে। কিন্তু কে বোঝে টয়লেটের চাপের কষ্টের চেয়ে আর কোন কষ্ট হয়না। আমি এই দৃশ্য ভিডিও করছি। মালিহা বলল….

–টাকা দিবিনা?

-নেই এখন পরে নিও…

–টাকা বের কর।

-সত্যিই নাই, প্লিজ আমি চাপে আছি।

–তোর চাপের গুষ্টি কিলাই….

বলেই মালিহা কাব্যের পেটে ডুম করে ঘুষি মারলো। ঘুষি অতটা জোরে দেয়নি, তবুও কাব্য চাপের কারণে ঘুষির প্রভাবে ‘পুরুউউত..টাসস’ করে শব্দ করলো। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়েছে। মালিহা নাক চেপে সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে গেলো। কাব্য আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল। পরক্ষণেই চারপাশ খেয়াল করে আবারো আবুল হয়ে তাকিয়ে রইলো কাব্য। জীবনডা টয়লেট।

আমি ভিডিও করা অফ করে সেখান থেকে কেঁটে পরলাম। সেই দোকান থেকে খুশির ঠ্যালায় ৩০০ টাকার টিশার্ট ৪০০ টাকায় কিনে বাসায় ফিরলাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম…’মানসম্মান আর টয়লেটের চাপ, টিকিয়ে রাখা বড় দায়রে কপিলা।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত