বউকে বাবু লিখতে গিয়ে বুবু লিখে ফেলেছি। মেসেজটা রিমুভ করার আগেই বউ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল….
–আমি তোর বুবু হই?
-সরি সোনা, ওটা বাবু লিখতে মিস্টেক।
–আমার সামনে নাটক করবিনা।
-সত্যি আমি ইচ্ছে করে বুবু লিখিনি।
–আহা ন্যাকামি, আমার সাথে ফাইজলামি?
-অদ্ভুত তো, রেগে যাচ্ছ কেনো বউ?
–খবরদার বউ ডাকবি না।
-ও মনা সরি বললামতো…?
–তোর ভাত বন্ধ।
-রমজান মাস, শুধু সেহরি আর ইফতার দিলেই হবে।
–তরে কিচ্ছু দিমুনা, হুদা পানি দিয়া সেহরি খাবি, হুদা পানি পানি দিয়া ইফতার করবি।
-হুদা পানি আবার কি?
–তোর মাথা।
-রেগে যাচ্ছ কেন বউ…
–আরেকবার বউ বললে তোর মাথায় বেল ফাটাবো।
-সরি বউ….
you can’t reply to this conversation…… learn more..
কি আজব ব্যাপার? এভাবে কেউ ঘরের স্বামীকে ব্লক দেয়? হায়রে রাগ! বাসায় গিয়ে বউয়ের রাগ ভাঙ্গানোরর চেষ্টা করলাম। রাগতো ভাঙ্গেনা, উল্টা রাগের পরিমান বাড়ায়। বউকে হাসানোর জন্য ব্যাঙের মত লাফিয়ে ড্যান্স দিলাম। বিনিময়ে খেলাম খুন্তির বারি। ইফাতারের সময় বউ আমার জন্য আলাদা প্লেটে শুধু মুড়ি আর গুনেগুনে ৫ টা বুট দিলো। বললাম….
–এগলা কি?
-তোমার ইফতার, বেশি কথা বললে এগুলোও পাবেনা।
–এভাবে কেউ ইফতার করে?
-বুবু লেখার সময় মনে ছিলনা?
–ও বউ ওটা মিস্টেক ছিলো।
বউ বলাতে বউ আমার বুট পাঁচটা নিয়ে নিজের প্লেটে রাখলো। আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম, বউ বলল….
–এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? অন্যের ইফতারের দিকে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা করেনা?
-অন্যেরর ইফতার কোথায় পেলে? ওটাতো আমাদের ইফতার।
–হাহাহাহহা….হু হু হু….
-হাসছো কেনো এভাবে….?
–হুদাই…
-মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু।
–তো আই কিত্তাম?
-কিত্তাম মানে? আসো একসাথে ইফতার করি…?
–জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে মিস্টার রুপিল?
-এই এভাবে কথা বলছো কেনো?
–উফফ অফ যাও, একটু পর আযান দিবে…
আযান দেওয়ার পর ইফতার শুরু হলো। আমার শুধু পানি আর মুড়ি। বউয়ের জন্য শরবত আরো কত আইটেম। আমি মন খারাপ করে খাওয়া শুরু করলাম। বউ শুধু শরবত টুকু খেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। প্লেটে হাত নড়াচড়া করছে। কিছু খাচ্ছে না। একটুপর বউ আমার দিকে শরবত আর ওর মাখানো মুড়ি গুলো এগিয়ে দিলো। বলল….
–মুড়ি দিয়েছি বলে লাই পেয়ে মাথায় উঠোনা। এতিমদের জন্য আমার মায়া হয়। তুমি বউ ছারা এতিম তাই মুড়ি দিলাম।
বউয়ের কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম। মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করলাম। নামাজ পরে খাওয়ার সময় আমাকে একা রেখে বউ খেয়ে উঠলো। আমাকে বলল….
–ডাল আর শাক তোমার জন্য। মাছ খাবানা বিলাই, যদি খাও জরিমানা ১০০ টাকা।
বউ চলে গেলো। সোফায় গিয়ে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখার চেষ্টা করছে কি খাচ্ছি। মাছ নিচ্ছি না। অর্ধেক খাওয়া হইছে। বউ সোফা থেকে উঠে এসে একটা মাছ দিয়ে বলল….
–এবারের মতন জরিমানা মাফ, সামনেবার কোন মাফ নাই। বিলাই জানি কোথাকার….
আমি বুঝলাম না কোন এঙ্গেলে আমাকে বিলাইর মতন লাগে। যাকগে বউ তো বলছে। এখন কিছু বললাম না যদি রেগে যায়। তাড়াবির নামাজ পরে এসে দেখি বউ বিছানায় পা দুলিয়ে শুয়ে আছে। আমি ঘুমাতে যাব ঠিক তখন-ই বালিশ দিয়ে বললাম….
–পাশের রুমে যাও, এ রুমে তোমার জায়গা নেই।
-মানে কি এসবের?
–মানে তুমি আলাদা ঘুমাবা।
-প্লিজ সোনা বউ রাগ করেনা….
–হারামি বুবু বলে এখন আবার বউ মারাস…
-আচ্ছা যাচ্ছি।
মন খারাপ করে অন্য রুমে চলে গেলাম। কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। ঘুম ভাঙ্গলো কারো নিঃশ্বাসের শব্দে। জেগে দেখি বউ আমার বুকে উপর ঘুমিয়ে আছে। আমি আলতো করে মাথায় হাত রাখলাম। বউ এক ঝটকায় হাত সরিয়ে বলল….
–একা রুমে ঘুমাতে ভয় করে তাই এখানে চলে এসেছি, ভেবোনা রাগ কমেছে। এহহহহ আইছে….বিলাই একটা।
বলেই বউ উঠে চলে গেলো। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পরে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙ্গলো ১১ টায়। এবারো ব্যাতিক্রম হলোনা। বউ আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। আমি হাসলাম, বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বললাম….
-ওগো শুনছো….
–……
-রূপা…?
বউ উঠলনা। বললাম বাবু উঠো, অনেক বেলা হয়েছে। তবুও কোন সারাশব্দ নেই। মাথায় ভুত চাপলো বললাম….
–এই বুবু উঠো….
-ঐ ঐ কি বললি…? (ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠে)
আমি বউয়ের হুট করে ওঠা দেখে আবুল হয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম….
-ক ক কই কিছুনা তো..
–সত্যি করে বল কি বললি..?
-সোনা বিশ্বাস করো আমি বাবু বলছি।
–রোজা রেখে মিথ্যা বলবিনা, বল কি বলছিস…?
-আসলে বউ শয়তানি করে তোমায় বুবু….
বউ আর কিছু বলতে দিলোনা। হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বাইরে বের করলো। কোমরে হাত দিয়ে বলল….
–ঈদের আগে যদি বাসায় আসো ঠ্যাঁঙ ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিব।
-ঠ্যাঁঙ কিগো বউ? পা বলতে পারোনা…?
–বিলাই….
ঠাসসস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। অনেক্ষন ডাকাডাকি করলাম বউ ভিতর থেকে বলল…”ভাইয়া কোন লাভ হবেনা।”
বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বুকটা ফুসসস করে ডেবে গেলো। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেলাম। ইফতারের ৩০ মিনিট আগে বউ ফোন দিলো…আমি হ্যালো বলতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল….
-খুব ভালো লাগে আমায় কষ্ট দিতে?….আমি নাহয় রাগ করে বের করে দিয়েছি তাই বলে সারাদিন একটুও খোঁজখবর নিবেনা।
–সরি বউ…
-আমি রাখি, ভালো লাগছেনা।
–ঐ কাঁদছো কেনো?
-আমি কাঁদলে তোর কি?
–আমার টিস্যু কেনার টাকা নাই।
-হারামি, উগান্ডা, বিলাই তুই বাসায় আয়…উল্টা করে বেধে পিটাবো….
–সেমটু বউ।
-টুটটুট….
ফোন কেঁটে দিছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এই মেয়েটাকে এখনো চিনতে পারলাম না। জানিনা বাসায় গেলে কি হাল করবে। তবে এটা শিউর কেঁদে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলবে। বউকে আরেকটু রাগানোর জন্য দোকান থেকে টিস্যু পেপার কিনলাম। ঝড় তুফান কি হয় সেটা পরে দেখা যাবে। আসল কথা হইলো এমন বউ কয়জনের কপালে থাকে। জীবন স্বার্থক।