আমায় ক্ষমা করে দিও”- আজ আমার বাসর রাত!!
রাত তিনটায় ম্যাসেজের শব্দে ঘুম ভেঙে ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজটা দেখা মাত্র মাথাটা বঁ করে চক্কর দিয়ে উঠলো। রিপ্লায় দিতে গিয়ে দেখি- You can’t reply to this conversation.
তন্বীর ম্যাসেজ” কিন্তু এমন ফাজলামিতো তন্বী কখনো করেনা আমার সাথে!! তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো আজ যে এমন ম্যাসেজ দিলো, আবার ব্লকও করলো!! আজ বিকেলেওতো দেখা হয়েছে ওর সাথে। মামার বাড়ি বেড়াতে গেলো” আমি নিজে ওকে বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে আসলাম!! তাহলে কি ওর ফোন নিয়ে অন্য কেও শয়তানি করছে এতো রাতে!!
তন্বীর সাথে আমার আট বছরের রিলেশন। খুব গভীর রিলেশন। একে অন্যকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝিনা। আমাদের পরিবারও ব্যাপারটা জানে এবং একপ্রকার সম্মতিও দিয়েছে। তাহলে আজ হঠাৎ এমন করার কারন কি!! নিজের অজান্তে আমি কোনো অপরাধ করে ফেলিনিতো!!
সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। ছটফট করতে করতে রাতটা পার হতে না হতেই রওনা দিলাম তন্বীর মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে। জানতে পারলাম গতরাতে সত্যিই তন্বীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে তার প্রতিবেশি মামাতো ভাই আরিফের সাথে।
নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। বিশ্বাসঘাতিনীকে অনেক অনেক বদদোয়া দিতে দিতে ফিরে এলাম। ডুবে গেলাম নেষার জগতে। এভাবেই কেটে গেলো তেরোটি বছর!!
পরিবারের চাপে বছর তিনেক আগে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু মন থেকে এখনো মুছতে পারিনি তন্বীর স্মৃতি। এভাবে আট বছরের রিলেশন ভেঙে দিয়ে একরাতের মধ্যে কিভাবে মানুষ নতুন সংসার সাজাতে পারে তা এখসো কল্পনা করতে পারিনা। এখনোযে ভারোবাসি তাকে” সেই আগের মতোই প্রচন্ড ভালোবাসি!!
ক্লিনিকের ওয়েটিং রুমে বসে পত্রিকা পড়ছি। আজ আমার বউএর ডেলিভারি হবে। আমি বাবা হতে চলেছি”- মনে প্রচন্ড আনন্দ থাকার কথা, কিন্তু কেনো জানিনা আজকেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে তন্বীর কথা। মনে পড়ছে তার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো!!
আনমনে বসে আছি এমন সময় দশ বারো বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে এসে হাতের মধ্যে এক টুকরো কাগজ গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালালো! কাগজটা খুলে যা দেখলাম’_
মৃধা,
জানি আমাকে প্রচন্ড ঘৃনা করো! কিন্তু সত্যি বলছি- আজো ভালোবাসি তোমায়! সেই আগের মতোই প্রচন্ড ভালোবাসি! ক্ষনকালেন জন্যও আমার মন থেকে সরাতে পারিনা তামাকে। স্বপ্ন দেখতাম তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধার! পরিবারের সবাই রাজিও ছিলো কিন্তু কি কপাল আমার দেখো সে সুখ ভাগ্যে সইলোনা!!
তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মুখ আমার নেই তাই আড়াল থেকেই প্রানভরে তোমায় দেখে চোলে গেলাম। তুমি হয়তো আজো আমাকে প্রতারক ভাবো! কিন্তু সত্যি বলছি- তোমার সাথে প্রতারনা করতে চাইনি আমি। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর তোমার সামনে যে আর কখনোই দাঁড়াতে পারতাম না! আরিফ আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সেদিন যে পাপ করেছে তাতে আমিও যে পাপি হয়ে গেছিগো!!
পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে মরতেও পারিনি। বাধ্য হয়েছি ওই লম্পটকে বিয়ে করতে। আমি আমার পরিবার আর বিধাতা জানেন সে কাহিনী!!
আরিফ আর একটি বিয়ে করেছে। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আলাদা আছি। এই ক্লিনিকেই ছোট্ট একটা জব করি, চলে যায় কোনরকম!!
তোমার সামনে দাঁড়া তে পারবোনা তাই ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছি আজ। তুমিও কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনা!! মনের যন্ত্রনাটুকু শুধু শেয়ার করলাম। ভালো থেকো। (তন্বী)
সেদিনের মতো আজো চোখে জল ছলছল করছে, এখনি হয়তো গড়িয়ে পড়বে! কিন্তু এ জল আনন্দের, কষ্টের নাকি ঘৃণার??
##
আরিফের মতো অনেক পশুই হয়তো সমাজে মাথা উঁচু করে সাভাবিক জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে আজো, আর ভালোবাসার মানুষগুলো হয়ে যাচ্ছে স্বার্থপর, প্রতারক, ছলনাময়ী!! তাই কাওকে সম্পূর্ন না জেনে না বুঝে প্রতারক- ছলনাময়ী- কলঙকিনী বলে গালি না দিয়ে একটু পজিটিভলি কি ভেবে দেখতে পারিনা আমরা??