মানুষ হিসেবে আমি প্রচন্ডরকমের অলস ! শুধুমাত্র ঘুমিয়েই আমি সারাটা জীবন পার করে দিতে পারব…আর কিচ্ছু চাই না ! এই আলসেমির জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয় আমার বফ কে। রোজ রাতে খুব শখ করে সে আমাকে কল দেয় আর আমি রোজ কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি। বারোটা সাড়ে বারোটা পর আমার পক্ষে জেগে থাকা প্রায় অসম্ভব !
প্রথম প্রথম সে আমার ঘুমের মধ্যেও রোমান্টিকতাকে খুঁজে নিত, আমি ঘুমাতাম আর সে ফোন কানের কাছে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত। আমার নিঃশ্বাস শুনতে নাকি তার অসম্ভব ভাল লাগে। কিন্তু কিছুদিন পরই সে আবিষ্কার করল আমি ঘুমের মধ্যে চিৎকার করি। প্রথমবার আমার চিৎকার শুনে তার কান ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম ! তাই, অত রোমান্টিকতা বাদ ! আগে তো কানের পর্দা বাঁচাতে হবে নাকি?
সেদিন আমি আর আমার বফ লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিলাম। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অসম্ভব রোমান্টিক একটা আবহ তৈরি হয়েছে ! কিন্তু আমার ওসবে একদম মন নেই । কেন জানি বৃষ্টি বাদলার দিনে ঘুমের তীব্রতা আরো বেড়ে যায় ! সমরেশ মজুমদারের একটা উপন্যাসের খুবই ইন্টারেস্টিং একটা জায়গা পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে পরি। গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন আমার চোখজোড়া !
ঘুমের মধ্যে একটা সুন্দর স্বপ্নও দেখে ফেললাম। স্বপ্নটা ছিল এরকম, আমার বফ বিছানা করে দিচ্ছে খুব যত্ন করে শুধুমাত্র আমার জন্য মশারি খাটিয়ে দিল। এই কাজটা আমার অসহ্য লাগে ! সহস্র ধন্যবাদ দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, আহা কি সুন্দর স্বপ্ন ! বফের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছিল। বফ মিষ্টি হাসি হেসে একটা পিনাট বার আমার দিকে এগিয়ে দিল। এমনিতেই সদ্য ঘুম থেকে উঠে মাথা কাজ করছে না তার ওপর বফের হাতে আমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসটা দেখে মেজাজ রীতিমত বিগড়ে গেল !
ওকে একটা ধমক দিয়ে বললাম, “শুধু শুধু এই ফালতু জিনিসটার জন্য আমার ঘুমটা ভাঙালে কেন?” বেচারা অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু না বলেই চলে গেল। কিন্তু তাতে কি? আমি আবার ঘুমে মনোযোগী হলাম। সেদিন রাতেই বফের সাথে আমার প্রচন্ডরকমের ঝগড়া হলো। তার পক্ষে নাকি একটা অলস মেয়ের সাথে রিলেশনশিপে থাকা দিন দিন কঠিন পড়ছে। তার দরকার সানসিল্ক হিজাব রিফ্রেশে এড করা রাইসার মত এক্টিভ মেয়ে ! আমি তো সেরকম না ! ঝগড়ায় জেতার জন্য চা কফি খেয়ে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে রইলাম। তবুও কাজ হলো না ! কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম…সকালে উঠে দেখি বফ মেসেজ দিয়েছে “কফি শপে ছ’টায় চলে আসবে, আজ একটা হেস্ত নেস্ত করেই ছাড়ব !”
কফি শপে গিয়ে দেখি বফ কফি হাতে বসে আছে। আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি করে ওয়েটারকে কফি আনতে বললো… ব্যাপারটা খুবই লজ্জার ! আমি অলস মানলাম কিন্তু এতটাও নিশ্চই না ! বফ আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল, “তোমার সাথে রিলেশন করা কোন ছেলের পক্ষেই সম্ভব না ! তুমি শুধু খেতে আর ঘুমোতে জানো, ব্যাস ! আর কিচ্ছু না !” আমি ঝিমাতে ঝিমাতে ওর সব কথা শুনছি, আবার শুনছিও না। ঘুমে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে…এক পর্যায়ে শুধু শুনলাম “ইটস ওভার ! তুমি তোমার ঘুম নিয়েই থাকো !”
একথা বলেই সে চলে গেল। ও চলে যাওয়ার সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়লাম আস্তে আস্তে আমি যে কফি শপে আছি সেই খেয়াল নেই ! ঘুম ভাঙল ম্যানেজারের ঝাঝানি খেয়ে। চোখ মেলে দেখি এগারটা বাজে ! ম্যানেজার রাগী রাগী কণ্ঠে বলে উঠল “ম্যাডাম দয়া করে বিল দিয়ে এবার উঠুন। কাস্টমার সবাই চলে গেছে, স্টাফদেরও চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।” ঘুম জড়ানো কন্ঠে সরি বলে আমি চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি করে একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা – তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে, ঘুমোতে হবে না? রাত তো অনেক হলো !”