এই নিয়ে কয়েক রাত আমার বর ফোনে লুকিয়ে কথা বলছে। রাত যখন গভীর হয় ও ফোন টা নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়। আমি সব কিছু বুঝতে পারি কিন্তু অদৃশ্য বোবা কান্না গলা চেপে ধরে। মুখ ফুটে বলতে পারি না কিছু। কাল রাতে যখন হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল একটু অবাক হয়েছিলাম এতো রাতে হাসির শব্দ কোথা থেকে আসছে।
আমার পাশে রাশেদ নেই। ওহ্ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হলো না। আমি আশফি আর আমার বর রাশেদ। একটা বিদেশি কম্পানিতে জব করে। আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়। বিয়ের দুই ঘন্টা আগে জানতে পেরেছিলাম আমার বিয়ে। আমার বাবা আর দশটা বাবার মতো না। মেয়ের মতামতের কোনোও মূল্য বাবার কাছে নেই। আমাদের কলেজের একটা অনুষ্ঠিত রাশেদের বাবা ছিল প্রধান অতিথি সেখানেই দেখা। তার পর বাড়িতে বিয়ের খবর পাঠানো। রাশেদের দাদার নাতবৌ দেখার প্রবল ইচ্ছেটাই এখানে তাড়াতাড়ি করতে বাধ্য করলো।
রাশেদ এই বিয়েতে অদৌ রাজি ছিল কিনা আমার জানা নেই। হয়তো সবার চাপে পরে রাজি হয়েছিল।
দুই ঘন্টা পর আমার জীবন বদলে গেলো। সাদামাটাভাবে বিয়েটা হওয়ার কারণে বান্ধবীদের তেমন বলা হয়নি। যাইহোক অবশেষে রাশেদের ঘরে আমি বসে আছি। ইয়া বড়ো ঘোমটা টেনে। আমি ছোট বেলা থেকে ভিষণ লাজুক। কথা ও কম বলি।বর কেমন হবে সেটা বসে বসে ভাবতে লাগলাম। বাসর ঘরটা কিছু কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো। মাথার উপরে ফ্যান চলছে তবুও আমি ঘেমে যাচ্ছি। একটু পর ও এলো। এসে আমার দিকে এক পলক তাকালো। তারপর পকেটে হাত দিয়ে কিছু খুজতে লাগলো। আমি নেমে সালাম করলাম। ও মনে হলো একটু হেসে দিলো।
দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। একটু পর মোবাইল বের করলো। এবার পকেটে হাত দেওয়ার আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম। মোবাইল বের করে গেম খেলছে খুব মন দিয়ে। আমি চুপ করে বসে আছি। কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা। ঘুম থেকে উঠেই আমি লাফ দিয়ে বসলাম। আমি এখানে কেন? চিন্তা করতেই নিজে হেসে দিলাম। কাল রাতে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এটা আমার শ্বশুর বাড়ি।
এভাবে কেটে গেল কয়েকদিন। খুব একটা দরকার ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলি না। রাতে যদি ও টুকটাক কথা হয় তবে সেটা একান্ত দরকারি। কিছু দিন পর রাশেদের বাসার চলে এলাম।অবশ্য এটা এখন আমার ও বাসা।
রাশেদ সেই থেকে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। কি এমন কথা যেটা এতো রাতে একা একা বলতে হয়। আজ আমার জানতেই হবে রাশেদ রোজ কার সাথে কথা বলে।আমি আস্তে আস্তে ও রুমের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। রাশেদের কথা স্পষ্ট আমি শুনতে পারছি। ও ফোনে বলে যাচ্ছে,
– নীরা আমার ও তো একটা চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। আমি আর পারছি না এভাবে। বাবা আমার সাথে অন্যায় করেছে। নিজের পছন্দ করা মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে। বাবা আর দাদুর চাপে পরে সব হয়ে গেছে। মেয়ে টা একেবারে সেকালে। সারা দিন মাথায় ইয়া বড়ো ঘোমটা দিয়ে চলে। আমি কি খেতে পছন্দ করি কি করতে ভালোবাসি কিছু ও বোঝে না। ঘুরতে নিতে চাইলে যেতে চায় না। আর গেলে ও বোরকা পরে ভুত সেজে যেতে চায়। আমার বন্ধুদের কাছে ছোট হতে হয় আমাকে।
আমি পাগল হয়ে যাবো। আশফি একটা সেকেলে মেয়ে। আমার সাথে যায় না। ওকে নিয়ে আমার থাকা পসিবল না।
আমি এতোটুকু শুনেই ঘরে চলে এলাম। আমার সমস্ত মাথা ঘুরছে। একি শুনে এলাম আমি। রাশেদ আমাকে সয্য করতে পারছে না। আমি একটা সেকেলে মেয়ে। আর ভাবতে পারছি না। বিছানায় বসে পড়লাম। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এমন সময় রাশেদের আসার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি করে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম।
কিন্তু আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। এখনো হিসাব মিলাতে পারছি না যার সাথে একই বিছানায় শুয়ে আছি সে আজ কতোটা পর করে দিলো।
চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। বুকটা ভার হয়ে আছে মনে হচ্ছে কেউ পাথর দিয়ে বেধে রেখেছে। গলা চেপে ধরে আছে কষ্টের দড়ি। যে দড়ি চাইলে ও ছাড়ানো সম্ভব না।
সারা রাত নির্ঘুম কেটেছে। সকালে রান্না ঘরে ঢুকেই মনে পড়লো আমি তো ওর পছন্দের খাবার জানি না তাহলে কি খেতে দেবো?
খাবার টেবিলে দুজন বসে আছি। পরাটা আলু ভাজি ডিম ভাজি সকালের খাবার। দুজনেই চুপ করে আছি। আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আর কষ্ট হচ্ছে না। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। রাশেদ কে মুক্তি দিতে চাই। ওর জীবন নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।
হঠাৎ করে রাশেদ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার চোখ লাল কেন রাতে ভালো করে ঘুমাওনি।
বাহ চমৎকার অভিনয় তোমার মনে মনে বললাম। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই? আসা করি সত্যি কথাই বলবে।
রাশেদ এক মনে খেয়ে যাচ্ছে। আমার কথা শুনে মাথা উঁচু করে বললো,
— বলো কি বলবে?
আমি একটু থেমে ওকে বললাম,
— তুমি কি আমাকে নিয়ে সুখী?,
ও হঠাৎ করে এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। তারপর বললো,
— হঠাৎ এ কথা বলছো কেন?
আমি রাশেদকে বললাম,
— কারণ আমি সুখী না। আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই।
আমার কথা শুনে রাশেদের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। আমাকে বললো