আব্বু-আম্মুকে অনেকদিন ধরে বলতেছি ঘুরতে যাবো। কিন্তু কিছুতেই রাজী হচ্ছেনা। আজকেও বললাম, তাদের উত্তর একটাই “বিয়ে হলে জামাইর সাথে যাইছ”। এই কথা শুনলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।জামাই ছাড়া কি দুনিয়া অচল?সবকিছুই কেন জামাইর সাথে করতে হবে।বিয়ে না হলে কি ঘুরতে যাওয়া অপরাধ? আচ্ছা যাইহোক বিরক্ত হয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। একটু পরেই…
আম্মু:- অনি খাইতে আয়..
আমি:- আম্মু বিয়ের পর খাবো।
আম্মু:- তোর আব্বু ডাকে তোকে।
আমি:- বিয়ের পর শুনবো।
আম্মু:- আমার সাথে মশকরা করছ?
আমি:- বিয়ের পর করবো।
আম্মু:- বেশি বাড়াবাড়ি করতেছস কিন্তু।
আমি:- বিয়ের পর করবো। আম্মু বিরক্ত হয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিল। কিছুক্ষণ পর…
আম্মু:- কিরে পড়তে বসলি না এখনো?
আমি:- না আম্মু,বিয়ের পর পড়তে বসবো।
আম্মু এবার ধরে নিয়েছে তার মেয়ের মুদ্রাদোষ দেখা দিছে। যার নাম “বিয়ের পর শুনবো/বলবো/করবো”।
আব্বু আসার সাথেসাথেই আম্মু বলে উঠলো ওগো শুনছো, তোমার মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।
আব্বু:-কেন কি হয়েছে অনির?
আম্মু:- যা বলিই না কেন সব বলে বিয়ের পর।
দুজনেরই এখন হাত পড়লো।কিভাবে চিকিৎসা করবে?এই বয়সে মেয়ের এই অবস্থা। কারো কাছে কিভাবে বলবে অসুখের নাম “বিয়ের পর”।লোকলজ্জা বলেও তো কিছু আছে। আম্মু বলতেছে এই শুনো অনিকে বিয়ে দিয়ে দিই,তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। আব্বু রেগে বলতেছে, তোমার কি মাথা খারাপ? সবসময় বিয়ের চিন্তা ছাড়া মাথায় কিছু আসেনা?
আম্মু:- তোমার মেয়েকে কি করবা তুমি ভালো জানো আমি কিচ্ছু জানিনা।
আব্বু এখন আসছে আমার কাছে, বলতেছে কি হয়েছে তোর?এমন করিস কেন? আব্বুর কথা শুনে রীতিমতো আমার গলে যাওয়ার মত অবস্থা কিন্তু কিছুতেই তো গলে যাওয়া চলবেনা। আমাকে অনেক বলছে “বিয়ের পর” এবার আমি বলবো।
আমি: কই কিছু হয়নি তো। এখনো তো কিছুই করিনি, সব বিয়ের পর করবো।
আব্বু:- থমকে গেল।কিছুক্ষণ পর “বেশরম মেয়ে কোথাকার” বলেই রেগে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম আব্বু আম্মুর রুমে ছোটখাটো ঝড় বয়ে যাচ্ছে।বুঝতে পারলাম আমাকে নিয়েই হচ্ছে। কি আর করা আমিও রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম এখন থামো আমার বিয়ের পর ঝগড়া করিও। তারা দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।তারা থেমে গেল। সকালে আম্মু বলল, কিরে আজকে কলেজ যাবি না?
আমি:-না আম্মু, বিয়ের পর জামাইর সাথে কলেজে যাবো।
তারা মোটামুটি দুজনেই অনেক বিরক্ত হয়ে গেছে। ইদানীং আমারও একটা সমস্যা শুরু হইছে,যাই বলিনা কেন সবার আগে মুখ ফসকে বের হয়ে যায় “বিয়ের পর”। এখন বাবা মা দুজনেই বিয়ে ঠিক করছে আমার জন্য। ছেলে মানসিক ডাক্তার। এক কাজে দুই কাজ বিয়েও এবং তাদের মেয়েকে সুস্থ করার দায়িত্বও সেই ছেলের। ছেলের সাথে আমার সাথে আলাদা কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ছেলে:- তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?
আমি:- বিয়ের পর সব বলবো।
ছেলে উত্তরে খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে।এখনো বুঝতে পারেনি এটা আমার ছোটখাটো মুদ্রাদোষ। আজকে আমার বিয়ে, কাজী এসে আমাকে বলতেছে বলো মা কবুল। আমি তার মুখের উপর বলে দিলাম এখন না বিয়ের পর জামাইর সাথে বলবো।কাজী এ শুনেই ২মিনিটের জন্য থমকে যায়।আচ্ছা যাইহোক পরে মনেমনে কবুল বলে দিলাম বিয়েও হয়ে গেলো। এখন জামাই বাসররাতে প্ল্যানিং করতেছে কোথায় ঘুরতে যাবো। আমাকে জিজ্ঞাসা করতেছে অনি তোমার কোথায় যাওয়ার ইচ্ছে?
আমি:- বিয়ের পর বলবো।
আদিত্য:- আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি :- না এখনো বিয়ের পর হয়নি,আম্মু বলছে বিয়ের পর ঘুরতে যেতে।
আদিত্য:-আদিত্য কিছুটা রেগে গিয়েই বলল লাগবেনা কোথাও যাওয়া।
এই কথা বলার পরই আমার হুঁশ আসছে আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে,আম্মু বলছে বিয়ের পর জামাইর সাথে ঘুরতে।তাহলে কি আদিত্যই সেই ছেলে যার কারণে এতদিন শুনতে হয়েছে বিয়ের পর জামাইর সাথে ঘুরতে যাইছ। এবার আদিত্যের সাথে অনেক্ষন ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করলাম, চলো আদিত্য আমরা ঘুরতে যাই।আদিত্য তো চুপ মানে চুপ।হঠাৎ করে আদিত্য জোরে চিল্লানি দিয়ে বলতেছে বিয়ের পর যাবো। এবার আমি ভাবতেছি, না জানি আমার ভবিষ্যৎ ছেলেমেয়েরাও বলে বিয়ের পর।সবই তো তাদের মায়ের অভ্যাস থেকে পাওয়া।