ফাটা কপাল

ফাটা কপাল

ত্রিশ বছর বয়স হতে চললো কিন্তু বিয়ের কোনো নাম গন্ধও নেই!! বেকার” তাই বিয়ে দেওয়ার কথা যেনো বাড়ির লোকও ভুলে বসে আছে একদম!! শিশু বউ এর সাথে সেলফি পোস্ট করে রাতারাতি পপুলার হয়ে যাবো তাও হতে পারলাম না এখনো!!

শিশু বউ না থাকলেও শিশু প্রেমিকা অবশ্য একটা আছে আমার। কিন্তু গুলুমুলু এই শিশু প্রেমিকার সাথে সেলফি পোস্ট করে কি সেলিব্রিটি হতে পারবো আমি?? হতে পারবো কি ভার্চুয়াল জগতের ভাইরাল টপিক্স?? এমন বিভিন্ন ভাবনা ভাবতে ভাবতেই কানে বেজে উঠলো আযানের ধ্বনী। নির্ঘুম কেটে গেলো আরো একটি রাত। ভোর হয়ে এলো” চোখে যে ঘুমের রেশটা ছিলো সেটাও যেনো কেটে গেলো হঠাৎ!!

পাশ ফিরতেই দেখি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে আমার গুলুমুলু শিশু প্রেমিকাটি। ডিম লাইটের নীল আলোয় তার নীলাভ মুখটি আশ্চর্য্য রকম মায়াবী হয়ে উঠেছে। ঘুমন্ত বালিকার রুপ যে শতশতগুন বেড়ে যায় তা আজ প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম আমার জীবনে!! সত্যিই কি তবে ঘুমন্ত বালিকার রূপে মায়াবী ঝলকের আভা খেলা করে ফিরে??

মায়াবতী প্রেমিকার অপরূপ রূপ দর্শনে হৃদয় ফুঁড়ে জেগে উঠলো প্রেম। এ প্রেমে কোনো ‘কাম’ নেই আছে শুধু ভালোবাসা” ভালোবাসা আর ভালোবাসা!! খুব ইচ্ছে হলো চুমু এঁকে দিই তার ঘুমন্ত মুখমন্ডলে!! হালকা করে ছুঁয়ে দিই ঠোঁট’ তার টোল পড়া ভরাট গাল আর কপালে!! কিন্তু তা কি সম্ভব?? মামাতো ভাইয়ের বিয়ে। পুরো বাড়ি লোকে লোকারণ্য! একমাত্র ছেলের বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি রাখেননি আমার বড় মামা। দু’দিন আগে থেকেই তাই লোকজনের সমাগমে ভরে উঠেছে পুরো বাড়ি। আমি আমার বোনদের সাথে আরো একদিন আগে গিয়েই উপস্থিত হয়েছি। মামাতো ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা!!

তনু আমার মামাতো ভাইয়ের ছোট খালার একমাত্র আদরের কন্যা। বয়স তেরো কি চোদ্দ হবে! সবেমাত্র ক্লাস এইট এ উঠেছে। আমার চেয়ে প্রায় পনেরো ষোলো বছরের ছোট হবে। সেদিনও আমার সামনে নেংটু হয়ে বেড়ালো। কাঁধে পিঠে করে বড় করে তুললাম। কত্তো হিসু করে দিয়েছে কোলে উঠে তার কোনো হিসাব নাই। আর সেই মেয়ে কিনা আজ প্রপোজ করে আমায়!!

এখনো যেই তনু লাফিয়ে লাফিয়ে পিঠে চড়ে! দেখতে পেলেই আইসক্রিম খাবো ফুসকা খাবো এই খাবো সেই খাবো করে জ্বালিয়ে মাছ ভাজা করে দেয়! সেই তনু যখন গতকাল বিকেলে কোথা থেকে উড়ে এসে হঠাৎ আমার গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বললো- ভালোবাসি ভাইয়া” বর হবে আমার?? আমিতো পুরো টাসকি খেয়ে জ্ঞান হারাবার উপক্রম! বলে কি এ মেয়ে?? বছর তিনেক আগেও যে মেয়ে চুমু দিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার বাইনা ধরতো সে কিনা আজ বর বানাতে চাই আমাকে!!

হাত তুলেও মারতে পারিনি! তবে কড়া ধমক দিয়ে তেড়েছিলাম। কিন্তু এখন বেশ মন খারাপ হচ্ছে। হাঁটুর বয়সি মেয়ে, যার দিকে কখনো অন্য নজরে তাকাইনি! যাকে দেখে কোনো ফিলিংসই আসেনি কখনো! সেই মেয়েকে দেখেই আজ কতো কিছুইনা ভাবছি! তবে কি প্রেমে পড়ে গেলাম তার?? বাইরে ফুরফুরে হাওয়া বইছে। বেশ পরিস্কার হয়ে উঠেছে আকাশ। ডিজিটাল (এলার্ম এর) যুগে মোরগগুলোও হয়তো শান্তি করে ঘুমোচ্ছে, তাদেরো কোনো তাড়া নেই!! তাই নিস্তব্ধ আশেপাশের পরিবেশটা।

বিছানা ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়ালাম। বিয়ে বাড়িতে প্রচুর লোকের কারনে শোয়ার জায়গার বড্ড অভাব! এক রুমে গাদাগাদি করে দশ বারো জন শুয়েছিলাম কোনোরকম, কিন্তু একফোটা ঘুমাতে পারিনি সারারাত। একেতো বালিসের অভাব” তার উপর আবার শিশু প্রেমিকার ভাবনা!! আজ নামাজটাও পড়া হলোনা!!

দেখতে দেখতে কেটে গেলো দু’টো দিন। আগমন ঘটলো নতুন বউ এর। আজ মামাতো ভাইএর বাসর রাত। সবাই মহা আনন্দে আছে। আনন্দে আছে আমার শিশু প্রেমিকাটিও। একটুও ভাবলেশ নেই তার মধ্যে। এ দু’দিনেও সে আগের মতোই আচরন করেছে আমার সাথে। আজো আইসক্রিম খাওয়ার বাইনা ধরে টাকা নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে। কিন্তু আমার মনটা বড্ড বিষন্য। কিছুই ভালো লাগছেনা। মন থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছি বারবার। ভালোবাসার মানুষটা ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে নিজেকে বড় একা একা লাগে। ভালোবাসার পিপাসায় ক্লান্ত আমি তাই অনিচ্ছা সত্তেও প্রেমে পড়ে গেলাম তনুর। এখন তাই বারবার শুধু তাকেই দেখতে মন চাই।

সারাদিন তনুকে ভালোবাসি তোকে বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একা পাইনি একবারো। এখন রাত প্রায় একটা বাজে। ছাদে বসে ফেসবুক গুঁতাচ্ছিলাম। ঘুমানোর জন্য নিচে নামতেই দেখি তনু সহ আরো দু’তিনটি মেয়ে বাসর ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না। ডাক দিলাম তনুকে।

>> তনু এদিকে আই।
>> চমকে উঠে জ্বী ভাইয়া??(ভয় পেয়ে বাকি মেয়েরা ভোঁ-দৌড়)
>> কি করিস এতো রাতে??
>> কিছু নাতো!(ভয়ে কাঁপছে)
>> সেদিন যা বললি তা কি সত্যি??(কোনো ভনিতা ছাড়ায় সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম)
>> কি বলেছি ভাইয়া? কবে?? মনে করিয়ে দিলে আমার শিশু প্রেমিকা তনু যে উত্তর দিলো তার মর্মার্থ এমন”_

>> স্যরি ভাইয়া। আসলে চারিদিকে সবাই প্রেম করছেতো! আমার বান্ধবীদেরও সবার বয়ফ্রেন্ড আছে! এক সময় শুনেছি চিঠিতে প্রেম হতো” তারপর রং নাম্বারে এখনতো ফেসবুকেই প্রেম হয়ে যাচ্ছে। সেদিনতো আমার এক বান্ধবীর কমেন্টস এ এক ছেলের সাথে কথা বলতে বলতেই হয়ে গেলো প্রেম। তারপর একদিন দেখা করে ছেলেটি হাঁটু গেড়ে ফুল দিয়ে প্রপোজ করলো আমার বান্ধবীকে। অনেকে শুনি এভাবে হাঁটু গেড়ে রিং পরিয়েও প্রপোজ করে। আমি ভালো মেয়ে তাই এখন প্রেম ট্রেম করিনা। কিন্তু বড় হলে যখন কারো উপর ক্রাশ খাবো তখনতো তাকে প্রপোজ করতে হবে’ তাইনা?? কিন্তু তখন যদি তাকে এক্সেপশনাল ভাবে প্রপোজ না করে সবার মতোই কমন প্রপোজ করি তাহলেতো ও আমাকে ক্ষ্যাত বলে আখ্যায়িত করবে।

তোমার বোনকে কেও ক্ষ্যাত বললে কি তোমার ভালো লাগবে বলো?? তাইতো এক্সেপশনাল ভাবে প্রপোজ করার কিছু টিপস্ নোট করে রাখছি এখন থেকেই। সেখান থেকেই সেদিন তোমার উপর একটা টিপস্ প্রয়োগ করে দেখলাম। তুমি যেভাবে সেদিন রিয়্যাক্ট করলে আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম। তুমি আবার মাইন্ড টাইন্ড করোনিতো ভাইয়া??  কথাটা শোনা মাত্র জ্ঞান হারিয়ে পড়ে কপাল ফাটালাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আবিস্কার করলাম হাসপাতালের বেডে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আমার শাশুড়ি আম্মা(তনুর আম্মু)।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত