মাই ডিয়ার শ্বশুর

মাই ডিয়ার শ্বশুর

রাত এগারোটায় শ্বাশুড়ির ফোন। রিহানের আম্মু ফোন ধরেছে। নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটেছে। ডিভোর্স টিভোর্স হয়ে গেছে কিনা কে জানে ? কয়েকদিন ধরে দুজনেই খুব উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। রিহানের আম্মু ফোন নামিয়ে বলে,

– অনি তাড়াতাড়ি বের হও বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না!
– কী সাংঘাতিক কান্ড, দিলোয়ারা আন্টির বাসায় চলে যায়নি তো ?
– একদম ফাজলামো করবা না বললাম!
– একজন সাবালক পুরুষ রাত এগারোটায় বাসায় ফেরিনি এটা নিয়ে এতো উদ্বেগের কি আছে বুঝলাম না।
– অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়, বাবা এতো রাতে বাইরে থাকেন না! আমি ফোনটা নিয়ে যথেষ্ট উৎকন্ঠার সাথে শাশুড়িকে বললাম,

– মা, বাবা কী নিজের ইচ্ছায় বের হইছে না আপনি বের করে দিছেন?
– আমি বের করে দিবো কেন !
– তাহলে তো মা শঙ্কার ব্যাপার!
– অবশ্যই শঙ্কার ব্যাপার তিনি আটটার মধ্যে বাসায় চলে আসেন!
– তাহলে মা কোথায় খুঁজবো, থানায় নাকি মর্গে ?
– ফাজিল ছেলে, শ্বাশুড়ির সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
– স্যরি মা আমি খুবই উৎকন্ঠিত। সময় যা পড়ছে কিছুই বলা যাচ্ছে না! গুম হয়ে গেছে কিনা কে জানে?
– ফাইজলামি রাখো, তাঁর ফোন খোলা আছে। আমার ফোন ধরছেনা, তুমি ফোন দিয়ে দেখো কোথায় আছে?
– আপনারটা না ধরলে আমারটাও ধরবেনা।

তবে উপায় একটা আছে। পাশের বাসার দিলোয়ারা আন্টি ফোন দিলে নিশ্চিত ধরবে। ভদ্রমহিলার ফোন শ্বশুর সাহেব না ধরে থাকতে পারবেন না। দিলোয়ারা আন্টি আমার শ্বশুরের শেষ বয়সের ক্রাশ। যাহোক শ্বশুর সাহেবকে খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। খুব সম্ভবত উনি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে লাল মরিচের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাচ্ছেন। না হলে দেখা যাবে কমলাপুর রেলস্টেশনে পেপার বিছিয়ে শুয়ে আছেন। শ্বাশুড়ির সাথে সম্পর্ক অবনতি হলে তিনি এসব স্থানে আশ্রয় নেন।

কমলাপুর না পেলে জেন্টল পার্কে খুঁজ নিতে হবে। মদ খাওয়ার বারের নাম জেন্টল পার্ক বাংলায় ভদ্র পল্লী। নামের কী বাহার। রোজ কিয়ামত বোধহয় আর বেশিদিন দূরে নাই। যেসব অবলা পুরুষ ঝগড়াঝাঁটিতে অপারদর্শী তারা স্ত্রীর সাথে ঝগড়ায় হেরে জেন্টল পার্কে এসে মদ খায়। আমি সরাসরি জেন্টল পার্কে ঢুকে গেলাম। ছোট্ট সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ। ঢাকা শহরের বিশিষ্ট জেন্টল সাহেবরা এখানে বসে লিকুইড সেবন করছে। কিন্তু আশংকার কথা হচ্ছে আমার শ্বশুরকে এখানে দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প আলো আর সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পরিবেশ। কারও মুখ ঠিকঠাক চেনা যাচ্ছে না। কি আর করা, একটা সিগারেট ধরিয়ে বারে বসে গেলাম। একজন পরিসেবক এসে আমার রিকোয়্যারমেন্ট জানতে চাইছে। আমি তাকে সবিনয়ে বললাম,

– আসলে আমি আমার শ্বশুরকে খুঁজতে এসেছি!

মদের বারে কেউ তাঁর শ্বশুরকে খুঁজতে এসেছে শুনে পরিসেবক সাহেবের বিশ্বাস হচ্ছে না। যাহোক অনেক দিন পর বারে এসে মনটা উদাস হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে দু’এক পেগ মেরে দিতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রিহানের আম্মু জানতে পারলে মহা ক্যালেঙ্কারি হয়ে যাবে। ডিভোর্সও দিয়ে দিতে পারে। তবে অসুবিধা নাই হালকা ভদকা নেওয়া যেতে পারে। দু’চার পেগ ভদকায় আমার তেমন কিছু হয় না। জাস্ট ঘন্টা খানেক কথা বলার প্রবণতা বাড়ে তারপর সব ক্লিয়ার।

সোডা ওয়াটারের সাথে ক্যারু ভদকা চলছে। অসাধারণ অনুভূতি! দুই পেগ মারতেই শরীরটা উড়ে যাওয়া শিমুল তুলার মতো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আমি উড়ছি। কী ব্যাপার!!! “আগে তো হয়নি এমন, মন করে কেমন কেমন!” সবকিছু এতো সুন্দর লাগছে কেন ??? পৃথিবীটাকে মুড়ির মোয়ার মতো লাগছে, মন চাইছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। মনটা এতো উদার হয়েছে যে, ইচ্ছে করছে জামা কাপড় খুলে রাস্তায় নেমে যাই। এমন সময় আমার কাঁধে কে যেন হাত রাখলো। শুভ্র সাদা দাড়ির এক বৃদ্ধ। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। আমি উঠে গিয়ে তাঁর সাথে কুলাকুলি করলাম। আবেগআপ্লুত লোকটিকে অনেক দিনের পরিচিত মনে হচ্ছে।
লাজুক ভঙ্গিতে লোকটি বললো,

– ভাইজান একটা সিগারেট হবে?
– হবে ভাইজান বসুন! আমি এক কাটি বেনসন দিয়ে নিজের হাতে জ্বালিয়ে দিলাম। কৃতজ্ঞ চিত্তে লোকটি বললো,
– ধন্যবাদ ভাইজান!
– ওয়েলকাম ভাইজান।

নেশার রাজ্যে হিসাব নিকাশ আলাদা। এখানে সবাই পরষ্পর ভাই ব্রাদার। শ্বশুর জামাই কোনো ব্যাপার না। আমি ৯৯ পার্সেন্ট শিউর এই বৃদ্ধ লোকটিই আমার শ্বশুর। তবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর না এক পার্সেন্ট ডাউট আছে। নেশার ঘোরে এক পার্সেন্ট অনেক বড় ব্যাপার। দেখা গেলো শ্বশুর মনে করে বাসায় নিয়ে গেলাম পরে শাশুড়ি বললো এটা কাকে ধরে এনেছো! পুরোপুরি শিউর না হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। বৃদ্ধ ভাইজানের পরিচয়টা জেনে নিতে হবে।

– ভাইজান, আপনারে কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি, আচ্ছা ভাইজানের বাসাটা কোথায়?
– আমার বাসা মালিবাগ!
– এজন্যই তো চেনা চেনা লাগছে, মালিবাগ মোড়ে আমার শ্বশুরের বাসা!
– ও তাই নাকি ? আপনারেও তো চেনা চেনা লাগছে আপনার বাসা কোথায় ভাইজান ?
– আমার বাসা রামপুরা, টিভি রোড!
– বলেন কি রামপুরা তো আমার মেজো মেয়ের বাসা!
– তাই তো বলি ভাইজানরে চেনা চেনা লাগে কেন ? আমি কাঁপা হাতে শ্বাশুড়িকে ফোন দিয়ে বললাম,
– মা চিন্তা করবেন না বাবাকে পাওয়া গেছে। তবে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শউর না!
– কী বলছো হাবিজাবি ?
– হাবিজাবি না মা লোকটা অবিকল বাবার মতো তবে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। সকাল হলে বলা যাবে!
– অনি তোমার মাথা কি ঠিক আছে?
– আংশিক ঠিক আছে মা। রিহানের আম্মুকে বলবেন যেন দুঃশ্চিন্তা না করে।

আমি সন্দেহভাজন শ্বশুরকে নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে গেলাম। পাঁচ টাকা দিয়ে পুরাতন পেপার কিনে শ্বশুরের ভুঁড়িতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে নিশ্চিত হয়ে শ্বশুরকে নিয়ে বাসায় ফিরবো। ততোক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত