দাদির ফেসবুক

দাদির ফেসবুক

বাসায় ছুটি কাটাতে গিয়ে দাদিকে অনেকটা বাধ্য হয়েই একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিলাম। তার নাকি বুড়ো বয়সে একা একা সারাদিন ঘরে বসে সময় কাটে না। তার উপর এ যুগে সবাই যখন ফেসবুক চালাচ্ছে,তবে সে কেন ইন্টারনেট জগত থেকে বঞ্চিত থাকবে? প্রতিদিন তার কাছে এসব যুক্তি শুনতে শুনতে আর কোনো উপায় না পেয়ে আইডিটা খুলেই দিতে হলো। দাদি টুকটাক পড়াশোনা জানে,বাংলা টাইপে সে পটু,কিন্তু ইংরেজিতে তার জ্ঞান অতি সামান্য।

আইডি নাম কি দেওয়া যায় জিজ্ঞেস করতেই সে বলল..”রুপকথার রাজকন্যা” নাম দে।আমি গালে হাত দিয়ে দুই মিনিট দাদির মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। সে আমার মুখে হাত বুলিয়ে বলল “তুই কি ভাবছিস, আমার আসল নাম যমুনা বেগম দেব? আমাকে কি এতই আনকালচারাল পেয়েছিস?ওসব নাম এখন কি আর চলে? নে,তাড়াতাড়ি কর।” আইডি খুলে ফেসবুকের টুকটাক ফিচার তাকে শিখিয়ে দিয়ে আমার আইডিতে তাকে এড করে দিয়ে ভার্সিটিতে ফিরে এলাম।এড করার ইচ্ছা ছিল না। ভয় পেলাম যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলে.!ফেসবুকে এরকম প্রচুর ঘটনা পড়েছি।

দুইদিন পর দেখি সে প্রোফাইল পিকচার পাল্টে ফেলেছে।তাও আবার আমার রিসেন্ট শাড়ি পরা ছবি দিয়ে। আমার নিজের আইডিতেই আমি কোনো ছবি রাখিনি।একটামাত্র পুরনো আমলের শাবানা স্টাইলের ছবি। দাদীকে মেসেজ দিলাম “দাদি,এইটা কি করেছ? আমার ছবি দিছ কেন?” দাদি কয়েকটা চোখ উল্টানো মার্কা স্টিকার সেন্ড করে রিপ্লাই দিলো “আসলে আমার কাছে আমার ইয়াং বয়সের কোনো ছবি নেই।আমি আবিষ্কার করেছি, ছেলেরা ইয়াং মেয়েদের আইডিতে বেশি বেশি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, লাইক,কমেন্ট করে। তাই তোর ছবি দিলাম। দেখ, সাতশো তেরোটা লাইক পড়েছে। তুই এত গল্প লিখিস, উল্টাপাল্টা শাবানা, ববিতা মার্কা ছবি দিয়ে তো দুশো লাইকও পাস নে।” কিন্তু,তাই বলে আমাকে ভাইরাল করছ কেন? তোমার আইডিতে তো সব আলতু ফালতু চ্যাংড়া ছেলে এড করে রেখেছ। ওদের সামনে আমার ছবি প্লিজ পাব্লিক কোরো না দাদি।ওরা ভাল ছেলে না।

দাদি কয়েকটা এংগ্রি স্টিকার দিয়ে বলল “তুই চুপ থাক।ওরা ইজি বাপের বিজি পোলা,সবসময় এক্টিভ থাকে আর লাইক কমেন্ট করে।তোর লিস্টের পুলাপান তো সামান্য লাইকও দিতে জানে না।” দাদি কোনোরকম কথা শুনছে না।আজ সকালে দেখি আমার ভেজা চুলের একটা ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছে “ভেজা চুলে আমাকে কেমন লাগছে গায়েজ,কমেন্ট করে জানাও।” সেখানে শত শত ছেলের রোমান্টিক কমেন্ট। আমার ফোন হারিয়ে যায় বলে বাসায় গিয়ে সব ছবি দাদির ফোনে রেখে দিতাম।এখন সে সেগুলারই অপব্যবহার শুরু করেছে।

দাদিকে কল দেব,সে ব্যবস্থাও নেই,ওয়াইফাই লাইন।আব্বা তাকে সিম ইউজ করতে দেয় না। একবার রং নামবারে এক ছেলের সাথে প্রেম করে কেলেঙ্কারি করে ফেলেছিল। এখন যদি শোনে আমি তাকে আইডি খুলে দিয়েছি, তবে আমার জন্যে বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেবে। একদিন আমার আর দাদীর জোড়া ছবি দিয়ে সে লিখেছে  “আমি আর আমার সুন্দরী দাদি একটা সেল্ফি তুললাম। আমার দাদিটা অনেক রোমান্টিক।” ফাজিল মহিলা আমার ছবি আপ্লোড দিয়ে আমাকেই দাদি বানাইছে! কোনো উপায় না পেয়ে তাকে মেসেঞ্জারে কল দিলাম। সেখানেও কল রিসিভ করে না।কয়েকটা টেক্সট দিয়েও তার রিপ্লাই নেই। টেনশনে এক্সামের পড়াও পড়তে পারছি না।

একটু পর দেখি দাদি মেসেজ দিয়েছে”এত ডিস্টার্ব করছিস ক্যান? মেসেঞ্জারে এক ছেলের লগে কথা বলছি। জানিসই তো, আমার ভয়েস কত্ত কিউট! কেউ টেরই পায়না যে আমার এত বয়স মনে মনে ফন্দি আটলাম,দাদিকে ভিডিও কলে কথা বলতে বলব।তাইলে আর কোনো ছেলেই তার সাথে এড থাকবে না। সব ফাস হয়ে যাবে। এক বুক আশা নিয়ে দাদিকে সাজেস্ট করলাম “দাদি, অডিও কলের চেয়ে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করা মজা। তুমি এখন থেকে ভিডিও কলে কথা বলো। ” তার উত্তর এলো তোর মাথায় কি গোবর পোরা? ভিডিও কল দিলে ওরা আমার আসল চেহারা দেখে ফেলবে না? তুই আর আমাকে টেক্সট দিয়ে জ্বালাস নে।সোজা কালো ঘরে পাঠিয়ে দেব। ” দাদি,কালো ঘর কি? কালো ঘর মানে তোকে ব্লক করে দেব।আমি ইউটিউব থেকে শিখেছি কিভাবে ব্লক করতে হয়।সেদিন এক সত্তর বছরের বুইড়াকে ব্লক মেরেছি। বজ্জাতটা ভিডিও কল দিয়েই যেত।

তুমি এক বুড়ি হয়ে যদি কচি কচি ছেলেদের সাথে চ্যাট করতে পার,তবে তারই বা কি দোষ.! আমি আর ওই বুইড়া তোর কাছে সমান হলাম?আমি কত স্মার্ট,রোমান্টিক।ছি, যা তোকে ব্লক দিলাম। আমার রিপ্লাই দেওয়ার আগেই সে ব্লক করে দিল।আর কোনো উপায় নেই দাদির এক্টিভিটি দেখার।পাসওয়ার্ড টাও আমি মনে রাখিনি। আমিও একটা ফেইক আইডি খুলে দাদিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলাম। চারদিন পার হয়ে গেলো,এক্সেপ্ট করেনি। মেসেজ দিলাম “এই যে সুন্দরী,কিউটি আপু,আমাকে এক্সেপ্ট করেন না কেন?”

তার রিপ্লাই “সরি, আমি অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখি না।” কিন্তু,আমি তো মেয়ে।আমাকে এক্সেপ্ট করতে কি সমস্যা? তারপর দাদীর যা রিপ্লাই এলো,সেটা পড়ে আমার মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগল। সে লিখেছে “তুই কি ভাবছিস রে সোনু,আমি তোকে চিনতে পারব না? এসব ফেইক আইডি দিয়ে আমাকে বোকা বানাবি,তা পারবি না।আমি তোকে এক্সেপ্ট করছি না।”

তার টাইমলাইনের লাস্ট স্ট্যাটাস একা একা দিন কাটে মোর, একটা মনের মানুষ নাই।” ফিলিং বোরিং, কেউ চাইলে মেসেঞ্জারে আড্ডা দিতে পারো।আপাতত ফ্রি আছি, আব্বা ব্যবসার কাজে ইন্ডিয়া গেছে, বকা দেওয়ার কেউ নাই।” মেজাজ গেল উলটে।কিছুটা গালাগালি করেই মেসেজ দিলাম ” ওই বুড়ি,কি ভিমরতি ধরছে তোমার? আব্বা কই পাইলে তুমি? লজ্জা করে না এই বয়সে এরকম রঙ তামাশা করতে?” সে কয়টা হাসির ইমুজি দিয়ে রিপ্লাই দিলো “আরে ওইটা তোর আব্বা গতকাল রাইতে ইন্ডিয়া গেছে, তাই লিখলাম।আর রঙ তামাশা করার এখনই তো বয়স।দুদিন পর তো মরেই যামু গা।”

বুড়িটা এই আইডিটাও ব্লক দিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। আব্বা আসার আগেই কিছু করা উচিত। আইডিটা আমার মায়ের ফোন নামবার দিয়ে খুলেছিলাম। ছোট ভাইকে হাত করে মায়ের সিমে পাসওয়ার্ড রিকভার রিকোয়েস্ট করে দাদির আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে নিলাম।এক কথায় পাসওয়ার্ড চুরি করলাম। তার আইডিতে ঢুকে দেখি চ্যাটলিস্টে কোনো মেয়ে নেই। ছেলেদের শত শত মেসেজ জমে আছে।।

এক ছেলে তো রীতিমত বাসার এড্রেস চেয়ে ফেলেছে। টুক করে আইডিটা পার্মানেন্টলি ডিলেট করে আরাম করে খাটের উপর শুয়ে আছি। শান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, খেয়ালই নেই।ঘুম ভাঙল মায়ের ফোনে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দাদি কাঁদো কাঁদো স্বরে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল “সোনু রে, আমার আইডিতে আর যাওয়া যাচ্ছে না। এ কি হয়ে গেল আমার.! আমি কয়েকবার গলা ঝেড়ে উত্তর দিলাম “দাদি, ফেইক আইডি খুলে ফেসবুকে যারা প্রচুর ছেলেদের সাথে অশ্লীল চ্যাট করে,তাদের আইডি অটোমেটিক অফ হয়ে যায়।”

কিন্তু, আমি তো তেমন কিছুই করিনি। শুধু মাত্র কয়েকজনকে দু একটা চুমুর ইমুজি দিতাম। কি.!! রাগ করিস না সোনু, আমার সাথে এমনটা ক্যান হলো.! আচ্ছা, তুই এবার বাসায় এলে আমাকে একটা স্ট্রং আইডি খুলে দিস। রাখছি এখন, তোর মায়ের ফোন চুরি করে কল দিছিলাম। ফোনটা রেখে উপরের দিকে তাকালাম।ফ্যান টা ঘুরছে।ফ্যানের সাথে আমারও মাথাটা কেমন দুলছে। সরিষা তেলের বোতল খুজছি,মাথায় প্রচুর তেল দেওয়া প্রয়োজন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত