ডাইনীর আবদার

ডাইনীর আবদার

“বাবু, জানো, ঐশীর বয়ফ্রেন্ড তার হাত কেটে ঐশীর নাম লিখছে। ঐশী এই নিয়ে খুব শো- অফ করছিল। তুমিও তো আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমিও বলে দিয়েছি সকালে ঘুম থেকে উঠে হরলিক্সের কাপটা নিয়ে মাত্র একটা চুমুক দিয়েছি এমন সময় আহিয়ার ফোন এল।ফোন রিসিভ করতেই যেন মধুর বৃষ্টি হতে শুরু করলো। ব্যাপারটা কি? সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার মেয়ে তো আহিয়া না।

নিশ্চয় কোন ধান্দা আছে। আমার আজো মনে পরে কোন এক শীতের সকালে ভোর চারটায় একবার ও আমাকে ওদের বাসার সামনে যেতে বলেছিল। আমাকে নাকি খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। আমি জীবনে কারো জন্য এক মিনিটের ঘুম বা শান্তি বিসর্জন দিইনি। যেহেতু নতুন নতুন প্রেম, কি আর করা। না পেরে গেলাম। ওই ঐতিহাসিক দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। কুত্তায় আমার ভীষণ ভয়। ঐদিন পাক্কা দশটা কুত্তার তাড়া খেয়ে আমার প্রায় তিন কেজি ওজন কমে গিয়েছিল। আমার আম্মু, হরলিক্স, কমপ্লেন খাইয়ে যা ওজন বাড়িয়েছিল,সব মনে হয় ঐদিন ঝরে গিয়েছিল।

আজকে আহিয়ার কথা শুনে কেন জানিনা ঐদিনটার কথা মনে পড়ে গেল। যাই হোক, ফোন রিসিভ করতেই ও বললো, “কি করে আমার বাবুটা?” “এইতো বাবু, মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। এখন হরলিক্স খাচ্ছি।” “এই তোমার লজ্জা করে না এত বড় দামড়া হয়ে এখনো হরলিক্স খাও।” “এতে লজ্জার কি আছে। আমি ভালো ছেলে।আর মা বলে” হরলিক্স না খেলে, হবে না ভালো ছেলে।” “আচ্ছা বাদ দাও এসব। শোন না বাবু, জানো, ঐশীর বয়ফ্রেন্ড তার হাত কেটে ঐশীর নাম লিখছে। ঐশী এই নিয়ে খুব শো- অফ করছিল। তুমিও তো আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমিও বলে দিয়েছি…” এইটুকু শোনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। “কি বলেছ তুমি?”(তোতলিয়ে) “বলেছি, তুমি তোমার রক্ত দিয়ে আমাকে চিঠি লিখবে।”

মাইয়া বলে কি? আমি আজ পর্যন্ত কারো জন্য যেখানে নখ‌‍ও কাটিনি, সেখানে ও আমাকে আমার অঙ্গ কেটে রক্ত বের করতে বলছে।মাগো দেখে যাও, এক শাকচুন্নী তোমার ছেলের রক্ত চুষে নিচ্ছে। যাই হোক,আমি নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে বল্লাম, “ইয়ে মানে, বাবু, রক্ত দিয়ে না লিখলে কি হয় না? মানে চিঠিই তো, অন্যকিছু দিয়ে লিখি।” “না, হয় না। তুমি আমাকে একটুকুও ভালোবাসো না।বাই।আর আমাকে ফোন দিবা না।” ফোনটা কেটে গেল। আমি পড়লাম মহা বিপদে। কি করার কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। হাতে একটা ছুরি নিয়ে আধ ঘন্টা বসে রইলাম। কিন্তু যা বুঝলাম, নিজের হাত কাটার মত এত বড় কলিজা এখনো আমার হয়নি। এমন সময় মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।মাকে বললাম, “মা, দেশী মুরগী খেতে ইচ্ছে করছে। বাজারে যাবো। টাকা দাও।” জীবনে প্রথম আমি বাজারে যাবো। মা তো সেই লেভেলের খুশি। বলল, “ব্যাগে আছে, নিয়ে নে।”

যাই হোক, বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে হাসপাতালে গিয়ে হুদাই ভুংভাং করে হাতে একটু ব্যান্ডেজ করে নিলাম। আর গুগল থেকে আমার হাতের মত দেখতে একটা কাটা হাতের ছবি ডাউনলোড দিলাম। তারপর কাটা হাত আর ব্যান্ডেজ করা হাতের দুটো ছবি আহিয়ার ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলাম। এবং একটা মুরগি জবাই করে তার রক্ত দিয়ে চিঠি লিখলাম। এভাবেই সে যাত্রায় কোনরকম বেঁচে গেলাম। আহিয়াও ব্যাপক খুশি হয়েছিল। তার সব বান্ধবীকে এই কথা বলে ছিল।

তারপর এক সপ্তাহ শান্তিতেই কাটল। একদিন সন্ধ্যায় ফোন করে বলল নদীর তীরে দেখা করতে। সাথে নাকি ঐশীও আছে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। আমার বাম চোখটা কাঁপছে। আমি শিওর, মাইয়া আজকেও আমাকে কোন বিপদে ফেলবে। ওদের সাথে দেখা করে যা বুঝলাম তা হলো ওরা আজকে একটা তামিল মুভি দেখছে, যেখানে নায়িকার ব্রেসলেট পানিতে পড়ে যায় আর নায়ক সেইটা আবার খুঁজে বের করে। এখন ওদের মধ্যে তর্ক হচ্ছে যে কার বয়ফ্রেন্ড সেম কাজটা করতে পারবে। আমি দেখলাম ঐশীর বয়ফ্রেন্ড আরিয়ান‌ও আসছে। ও আসতেই আহিয়া আর ঐশী দুজন দুজনের হাত থেকে দুটি ব্রেসলেট খুলে নদীতে ছুড়ে মারল আর আমাদের ওগুলো তুলে আনতে বলল। আমি বললাম, “বাবু, এই শীতকালে দুপুরবেলায় গোসল করতেই ভয় করে। আর তুমি এই সন্ধ্যাবেলায় নদীতে ঝাঁপ দিতে বলছ। এটা না করলে কি হয় না?” “দেখ, তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তবে তোমাকে এটা করতেই হবে।” “প্লীজ, একবার ভেবে দেখো, এটা করলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো।”

আমি আহিয়াকে আর আরিয়ান ঐশীকে বুঝানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু ওরা বুঝতেই চায় না। একসময় গেল চরম মেজাজ বিগড়ে। আহিয়াকে বললাম, “জানু, বাবু, সোনা, তুমি কি সাঁতার জানো?” “হ্যাঁ, জানি” ও জানি বলার সাথে সাথেই দিলাম এক ধাক্কা‌। সোজা গিয়ে পড়ল নদীতে। এই প্যাচাল আর ভাল লাগেনা। আরিয়ান আর ঐশী আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে র‌ইলো। আরিয়ানের মনে কি ছিল কে জানে। আমার কান্ডকারখানা দেখে ও ঐশীকে জিজ্ঞাস করল, “বাবু, তুমি জানো, সাঁতার?” “ইয়ে মানে,জানি।”(তোতলিয়ে) পরমুহূর্তেই আরও একটা কিছুর নদীতে পড়ার শব্দ কানে এলো। আরিয়ান চেঁচিয়ে বলতে শুরু করল,”এইবার দেখ, ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে কেমন লাগে, হা হাহ।”

আমি ওর সাথে হ্যান্ডশেক করে বললাম, “স্বাধীন জীবনে স্বাগতম” “ঠিক‌ই বলছেন ভাইয়া,ডাইনীগুলোর আবদার জীবনটা এক্কেবারে ত্যাজপাতা করে দিছিল।” আমি আর আরিয়ান দুজন বাসার পথে হাঁটতে শুরু করলাম। আরিয়ান গান ধরল,”আমি এক স্বাধীন পাখি।” আমিও কম কিসে। একটা মাললায়ম গান ধরলাম,”কামারিয়া করে লপালপ, ললিপপ লাগেলু,,,,,,এই স্বাধীন জীবন ললিপপ লাগেলু”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত