প্রতিদিনের মতো বিকেলে নদীর পাড়ের আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিল। হঠাৎ মাইকে বাঁশির সুর ভেসে এলে ওরা সকলে চুপ হয়ে গেল। বাঁশিতে ছিল লোকগানের সুর, তাই কামাল বেশি মনোযোগ দিল। লোকগান কামালের পছন্দের প্রথম দিকে রয়েছে। যেখান থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসছে, সেখানে সন্ধ্যার পর পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে। হৃদয় নামের কোন এক মাজারের মুরিদ মারা গেছে গত বছর। তার বাড়িতে এ আয়োজন।
সপ্তাখানিক আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল খুব, ‘হদয় পাগলার মাজারে পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে’। এ অয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিল্পপতি আবুল হাসেম সওদাগর। আমার মতো অনেকেই এর আগে ওনার নাম শোনে নি। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নাকি ব্যবসা আছে ওনাদের।
শিল্পপতি সাহেব নির্বাচনের আগে নেতা হবার ভালই একটা উপলক্ষ পেয়েছেন, আলমগীর বললো।
কামাল, আলমগীরের কথা কেড়ে নিয়ে বললো– ব্যবসায়ীদের ইদানিং রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রবণতা খুব চোখে পড়ছে। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে খুব। এছাড়াও মেধাবীদের রাজনীতিতে প্রবেশের খুব একটা উৎসাহ দেখছি না। ফলে নেতৃত্ব হয়ে পড়ছে মেধাশূন্য।
ঠিক বলেছ। যারা আসছে, তাদের অধিকাংশই আবার সুবিধবাদি। জনগণের স্বার্থের চাইতে নিজেদের আখের গোছাতেই তারা বেশি ব্যস্ত, সফিক বললো।
নীরবতা ভেঙে আলমগীর বলে ওঠে– দল ক্ষমতায় থাকতে তারা কামিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্ক। বিরোধী দলে গেলে কেউ পালিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, কেউ ডুব মেরে বসে থাকছে। আবার কেউবা গোলেমালে মিশে যাচ্ছে…।
আলমগীরের কথা শেষ করার আগেই কামাল বলে– জনগণের পক্ষে কথা বলার কেউ থাকছে না। যার ফলে ক্ষমতাসীনরা বেশির ভাগ সময় নিজেদের মতো করে আইন পাশ ছাড়াও, যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ পাচ্ছে। যা দেশের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়।
ওদের আড্ডার কখনো কোনো নির্দিষ্ট টপিক থাকে না। আজ টপিকটা হয়ে গেল রাজনীতি। রাজনীতি কামালের কখনোই প্রিয় বিষয় নয়। তাই প্রসঙ্গ পাল্টালো কামাল। ইদানিং কামালকে মহাকাশ বিজ্ঞান খুব টানে। টাইম ট্রাভেল নিয়ে বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে একটা অবিশ্বাস্য লেখা পড়েছে সে, আজ সেটা নিয়েই কথা বলতে চাইলো আড্ডায়। কিন্তু বাঁশির সুরটা আবার শোনা গেল। এর আগে একবার বেজেই থেমে গিয়েছিল। এবার বাজতেই থাকল। তাই কামালের কথায় ছেদ পড়লো।
মাইকে ক’দিন ঘটাকরে প্রচার করা হয়েছে, ‘উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিল্পপতি…..’।
অনুষ্ঠানটিকে কামাল খুব একটা পাত্তা দেইনি এতদিন। দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ দ্বিতীয় দিন। পুনরায় বাঁশির সুর শুনে কামাল বলে উঠলো, ভুল করেছি…। অনুমান করছি অনুষ্ঠানের মান আসলে আমার ধারণার থেকেও অনেক উর্ধ্বে। যাইহোক, অনুষ্ঠান যেহেতু দু’দিনব্যাপী তাই আড্ডার পক্ষ থেকে পরের দিন যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। কামালই প্রস্তাব করল। সফিক ও আলমগীর সাথে সাথেই সম্মতি জানাল। কামাল সিদ্ধান্তটা নিয়ে, মনে মনে ভাবল– বাহ্ আমিতো দেখছি বড় হয়ে গেছি! কামালেদের পরিবারটা, অনেক রক্ষণশীল একটি পরিবার। সন্ধ্যার পর কখনোই বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না ওর। ছোট বেলায় পাশের বাড়িতে দু’এক বার পালিয়ে ভিসিআর দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছাড়া– রাতের বেলা আর কোথাও গিয়েছে বলে মনে পড়ে না। সেই কামাল চার পাঁচ কিলোমিটার দূরের পালা গান দেখতে যাওয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে– বড়ই অবাক হল।
ওদের আড্ডার সদস্য মাত্র তিন জন। তিন জন, তিন ক্লাসের ছাত্র। আর ওরা ছিল তিন বাড়ির তিন ছেলে। তিন জনের সাথে কোথাও মিল নেই। আবার কত যে মিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা, প্রতিদিনের এই আড্ডায় মিলিত হওয়ার কারণে। নদীর পাড়ে একটা নির্দিষ্ট বসার জায়গা ওদের। সামনে মরা নদী আর পিছনে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ। নদীর মাঝখানে জীর্ণশীর্ণ মরা খাল– মরে গিয়েও বেঁচে থাকে বর্ষার অপেক্ষায়। শেষ ভালবাসা হিসেবে এটুকুই টিকে আছে নদীর অস্তিত্বে। বর্ষাকালে দুকূল ছাপানো পানি, স্রােত ও ঢেউ– সবই পায় নদী। কিন্তু পলি জমে জমে, নদীর পিছনের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠের চেয়েও নদীর বুক অনেকটা উঁচু হয়ে গেছে। দূরের অচেনা কাউকে ওখানে এনে ছেড়ে দিলে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হবে– একদিন এখান দিয়েই যেত কয়লার স্টিমার, ভাটিয়ালি গান গেয়ে মাঝি যেত পাল তুলে, গুণ টেনে। ছিল উথালপাথাল ঢেউ। ছিল কূল ভাঙ্গা স্রােত। ওরা যেখানে বসে, ঠিক ওই সোজাসুজি কত মাঝির নৌকা ডুবেছে! কামালের বাবা না বললে ওর কখনো জানাই হতো না। সবই আজ বইয়ের পাতার গল্পের মতো। কামাল যা দেখেছে ওর ছোট্ট জীবনে, তাও এখন রূপকথার মতোই।
বেশিরভাগ সময় বিকেলে আড্ডা শুরু হয়ে বেলা ডোবার সাথে সাথে শেষ হয়। কখনো আবার কামালদের বাড়ির পিছনের রাস্তার রেইন ট্রির নিচে দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে নিতে রাত দশটাও বেজে যায় ওদের। কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই– গানটার আদলে ‘একদিন শেষ হবে এই আড্ডার’ শিরোনামে কামাল একটা লম্বা কবিতাও লিখেছিলো।
পশ্চিমের গ্রাম থেকে সফিক নামের যে ছেলেটা অংশ নেয় এই আড্ডায়, নদীটার মতো ওর একটা উথালপাতাল ভালোবাসা ছিল। আজ তা মরা নদী।
উত্তর পাড়া থেকে আড্ডায় আসা আলমগীর নামের ছেলেটা নদীর মতো সাগর মোহনায় ছুটে চলতে চায়– শেষ খুঁজে পায় না।
আর কামাল– কী পেয়েছে, কী হারিয়েছে, কী হতে চেয়েছে, কী হয়েছে নিজেই জানে না। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ার সময়ও কামাল বলেছিল– আমি পড়াশুনা করতেছি জ্ঞান অর্জন করার জন্য, চাকুরি পাওয়ার আশায় না। এ নিয়ে এক স্যারের সাথে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল কামালের। একদিন ইংরেজি স্যার ক্লাসে বলছিলেন, ‘তোমরা তো সবাই চাকুরির জন্য পড়তেছো, তাই না?’ সেদিন একমাত্র কামাল প্রতিবাদ করে বলেছিল, ‘না স্যার, আমি জ্ঞান অর্জনের জন্যই পড়ি’। শেষ পর্যন্ত কামাল, কী জ্ঞান অর্জন করেছে– নিজেই জানে না! এরপর দেড় বছরের মাথায় যখন কামালের অনার্স শেষ হয়। তখন বুঝতে পারে পড়াটা চাকরির জন্যই পড়েছে সে। আসলে স্যারের সেদিনের কথাই ঠিক ছিল। চাকরির পিছন ঘুরে ঘুরে মাস্টার্সটাও শেষ করে ফেলে কামাল। চাকুরির দেখা পায় না। মনে মনে সে ভাবে, যদি এই বুঝটা আগে বুঝতে পারতাম, তাহলে এতদিন হয়ত ছোটখটো হলেও একটা চাকুরি জুটত। জ্ঞান অর্জনের পড়া কী করে চাকুরির পড়া হয়ে গেল, সে কথা কামাল ছাড়া আর কেউ জানে না! হয়ত জানবেও না।
পরের দিন সন্ধ্যার ঠিক আগে রওনা হল ওরা তিন জন। শীত তখনো হিমালয় থেকে পুরোপুরি নেমে আসেনি তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে বাংলার জমিনে। এসব অনুষ্ঠান অনেক রাতে শেষ হয়। তাই ওরা শীতের অস্ত্র সাথে নিতে ভুল করল না। সন্ধ্যার পর পর গিয়ে পৌঁছলো যথাস্থানে। হৃদয় সাহেবের বাড়ির পাশেই মস্ত খেলার মাঠ। সেখানেই এ আয়োজন। গেট দিয়ে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পড়ল নাগর দোলা। নাগর দোলার কেরত কুরুত শব্দ বেশ ভালই লাগল ওদের। পাশেই এক স্টলে টিভি দেখিয়ে মানুষ জড়ো করে কিছু একটা বিক্রি করার চেষ্টা করছেন এক দোকানি। টিভির ভেতর চলছিল নর্তকির অশ্লিল নাচের দৃশ্য। তাই ওখান থেকে একরকম দৌড়ে পালালো ওরা।
ঐ দৃশ্য দেখে রাগে গজগজ করতে করতে আলমগীর বললো– কিরে মামা কই আনলি?
এটা কি কোন ভদ্র সমাজের কাজ? সফিক বললো।
কামাল বললো– তরুণ প্রজন্ম আজ ধ্বংসের পথে এ কারণেই।
আলমগীর এবার হাসতে হাসতে বললো– নাচের ভঙ্গি দেখে আমার মনে হচ্ছিল বাইরে বেরিয়ে, আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে।
এরপর ঘুরে ঘুরে মাঠের চারপাশ দেখতে লাগলো ওরা। মাঠের চারপাশ ঘেরা– বাদাম, মুরুলি, মনাক্কা ও বিভিন্ন খাবারের আইটেমসহ বাহারি দোকানে। কোথাও তাসের ম্যাজিক দেখাচ্ছে। কেউ অষ্টধাতুর আংটি, কেউ লতাপতার ঔষধ বিক্রি করছে। কাঠের খাঁজকাটা বিভিন্ন অক্ষরের ছাপ নিচ্ছে কেউ কেউ। একদল মঞ্চ প্রস্তুত করছে।
আমরা ঘুরে ঘুরে শেষমেষ গিয়ে উপস্থিত হলাম হৃদয় পাগলার কবর তথা মাজারের কাছে। কবরের উপর চার খুঁটির ছনের একটি চাল দেয়া হয়েছে। উরস উপলক্ষ্যে কবরটাকে কাঁচা মাটি দিয়ে দু’য়েকদিন আগে লেপা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। কবরের ওপর এবং চারপাশে আলগা ফুল ও ফুলের মালা ছড়ানো ছিটানো। দশ থেকে পাঁচশত টাকার নোট কবরের উপর এলোমেলো করে বিছানো। কিছুক্ষণ আগে হয়ত ফুল ও টাকা বৃষ্টি হয়েছে এই খানে! হতেও পারে, পাগল মানুষ ছিলেন হৃদয় সাহেব। সৃষ্টিকর্তার পাগল। সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবই পারেন। কিন্তু কবরের উপরে চালা আছে বিধায় সেই ধারণাও নাকোচ করে দেয়া যুক্তিসংগত। একজন মাঝবয়সি লোক এসে ব্যাগ থেকে একটা ফুলের মালা বের করে মাথা বরাবর রাখল। এরপর পঞ্চাশ টাকার একটা কচকচে লাল নোট বের করে রাখলেন বুক বরাবর। লোকটি হয়ত হৃদয় সাহেবের বুক পকেটের কথা চিন্তা করেই ওখানটায় টাকাটা রাখলেন। একজন নারী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে পা বরাবর উপুড় হয়ে পড়ে ‘বাবা’ বলে চিৎকার দিয়ে, কান্না জুড়ে দিল। ওরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল সমস্ত কা-কারখানা।
পল্লি কবি জসিম উদ্দীনের “শেয়াল শাহ্”, অলিউল্লাহ্ সাহেবের “লাল সালু” এবং অনেক আগে পত্রিকায় পড়া বাংলাদেশে অকারণে যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা এরকম ভণ্ড বাবার আস্তানা নিয়ে লেখা একটি কৌতুকের সাথে, এখানকার পুরোপুরি মিল খুজে পায় কামাল।
নিজের অজান্তেই কামাল বলে ওঠে– মানুষ এখনো অসচেতনভাবে এতটা ছিটকে আছে ধর্ম থেকে!
ধর্ম যেটাকে চরম ভাবে নিষিদ্ধ করেছে, তাকেই কিছু ভন্ড মানুষ বৈধভাবে চালিয়ে দিচ্ছে, আলমগীর বললো। অশিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের ঠেলে দিচ্ছে নরকের পথে, সফিক বললো।
এই এলাকাটায় পূর্বে খুব একটা যাওয়া হয়নি কামালের। তবুও মোটামুটি পরিচিতই ছিল। আজকের মহাযজ্ঞের আয়োজন যেখানটায় ঠিক তার পাশে একটা খুপরি ঘর ছিল। যেন ঠিক আসমানিদের ভেন্না পাতার ছাউনি। ওরা আরও কয়েক দণ্ড পুরো এলাকা ঘুরে সেই খুপরি ঘরের পাশে গিয়ে দাড়াল। কামাল ও সফিকের এই বাড়িটায় বসবাস করা লোকদের সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকলেও; এখানে আসার আগে আলমগীরের জানা ছিল না। বাড়িটায় দুজন নিঃসন্তান দম্পতি বসবাস করে। এদের একজন কানা আর একজন কালা। মানে কানে খাটো। এরা দিনে জেলা শহরে ভিক্ষা করে আর সন্ধায় ঘরে ফিরে আসে। পল্লী কবির মতো, ঘর না বলে পাখির বাসাও বলতে পারি।
এসেই খোঁজ খবর নিয়ে এবং নিজেদের চোখে ওরা যা যা দেখলো, তাতে বুঝতে বাকি ছিল না– হৃদয় সাহেব আসলে সৃষ্টিকর্তার পাগল ছিল না। ছিল তার মতই আরেক ভন্ড বাবার পাগল। সেই মৃত ভন্ড হৃদয় পাগলের জন্য এত আয়োজন! এত পয়সা খরচ! অথচ স্টেজের পাশে খুপরি ঘরে দম্পতি অনাহারী থাকে। তার খবর কেউ রাখে না। এই আয়োজনের মানেও তারা কোনদিন জানবে না। হয়তো তারা গত কাল ঘুমাতেও পারেনি এই শব্দ দুষণে। হয়ত আজ রাতটাও নির্ঘুম কাটবে তাদের। নির্ঘুম থাকলে জীর্ণশীর্ণ দেহ নিয়ে হয়ত কাল দাঁড়াতেও পারে না। পারবে না ভিক্ষার জন্য শহরে যেতে। কামাল ও ওর সাথীরা ঘরে না ঢুকলেও পাটখড়ির বেড়ার ফাঁক গলে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল একজোড়া দম্পতি বসে আছে পাশাপাশি, পাশে একটি কেরসিনের প্রদিপ প্রায় নিভু নিভু। বিদ্যুৎ, টিভি, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেট– কোন আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করতে পারেনি তাদের জীবন! হয়ত এর সুফল কিংবা প্রয়োজনীয়তাও কোনদিন অনুভবও করবে না এরা!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কামাল হাঁটা শুরু করলো বাড়ির দিকে। বাঁশির সুরে বাজতে ছিল– “বাড়ির কাছে আরশি নগর, আমি এক দিনও না দেখিলাম তারে।” কামালের সাথীরাও ওর পিছন পিছন চললো। যে বাঁশির সুর টেনে এনেছিল এতদূর। সে সুর আর বাধতে পারল না ওদের!
এত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও বাঁশির সুর আর ওদের কান অবধি পৌঁছতে পারছিল না। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় ছাড়া আর কোনটাই যেন কাজ করছিল না তখন। যেতে যেতে এই দম্পতির কথাই ভাবতে থাকলো ওরা। এদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? নাকি এই দম্পতির মতোই আমরা, আমাদের এই সমাজ– কানা ও কালা।