দু ঘন্টা ধরে দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছি। কলিংবেল ও দিতে পারছি না। বউ নিয়ম করেছে একবার কলিং বেল চাপলে সময় আধাঘন্টা করে বাড়বে।বউ আবার নিয়ম নিয়ে খুব কঠিন।যার কারনে কলিং বেল চাপার সাহসও পাচ্ছি না।এক বড় ভাই বলেছিলো প্রেম করে বিয়ে করিস না,লাইফ হেল হয়ে যাবে।এরেঞ্জ ম্যারেজ করবি তাহলে বউরে মাইরের উপর রাখতে পারবি।মনে মনে আমি এখন সেই ভাইটার বংশ উদ্ধার করছি।
সুপ্তির সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আটমাস চলছে।এই আট মাসে আমি এখনো এই মেয়ের হাবভাব কিছু বুঝতে পারি না।মাঝেমধ্যে ভয়াবহ রকমের বোকার ভাব ধরে।আবার মাঝেমধ্যে শার্লক হোমস সাজে।
বউ এর মধ্যে একবার উঁকি দিয়েছে,আর বলেছে,
” খুউব হেসে হেসে কথা বলা না? যাও তোমার ঐ প্রেমিকার কাছে যাও।সে তোমার জন্য হাসি মুখে দরজার খুলে অপেক্ষা করছে।
শখ করে বউ কে নিয়ে কাচা বাজার করতে গিয়েছিলাম সেখাইনেই ঘটলো বিপত্তি।বউ খাসির মাংস দরদাম করছিলো।আমি সেই সুযোগে একবার মাছের মলে উঁকি দিয়ে এক মেয়ের মাছের দরদাম পর্যবেক্ষন করছিলাম যাতে মাছ কেনার সময় না ঠকি।আমি একটু এগিয়ে হাসিমুখে মেয়েটাকে বললাম,” আপনি সস্তায় মাছটা পেয়েছেন।গত বাজারে আমি এইটা দিগুন দাম দিয়ে কিনেছিলাম।মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে বললো,”আজ বেশি করে কিনে নিন।ব্যাস হয়ে গেলো একটা ভয়াবহ কান্ড।বউ পিছন থেকে বললো, ” কে এই মেয়েটা?
আমি মুখ খানা শুকনো করে বললাম পুরোনো বান্ধবী।হঠাৎ দেখা।বউ চক্ষু ছানাবড়া করে বললো,” বান্ধবীর সাথে পরিচয় করালে না কেন? আমি বললাম আরেকদিন করাব,কেমন?
আর মাছ কেনা হলো না।রিকশায় উঠে বুঝতে পারলাম বউ ফুসফুস করছে।ঘনঘন থুথু ফেলেছে।আমি একটু চেপে বসলাম।বউ এর হাবভাব ভাল না।ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে।
বউকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বল্লাম,তুমি ভিতরে যাও আমি আসছি।
বউ এর রাগ কমার আশায় বাড়িতে ফিরলাম সন্ধার পর।কিন্তু লাভ হলো না।বউ আটকে দিয়েছে জায়গা মতো।
আমি বউকে টেক্সট করলাম,”আর কত সোনা?শীতে শরীর তব্দা হয়ে আসছে।দরজাটা খুলো।
রিপ্লে আসলো,” পাড় পায়া যাবা বুঝছো?ঐ মেয়ে যে তোমার প্রেমিকা ছিল আমি বুঝিনাই মনে করছো।আমায় নামায় দিয়ে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে দেখা করে ফষ্টিনষ্টি করে এখন আমার কাছে ফিরে আসছো,তাই না?
বউ এর টেক্সট পড়ে আমার বুক ধরফর শুরু হয়ে গেল।কি করতে চাইলাম আর কি হয়ে গেলো।
আমি কাপা কাপা হাতে লিখলাম,”বিশ্বাাস করো বউ আমি ওই মেয়েরে চিনিও না।জীবনের প্রথম দেখেছি।”
রিপ্লে আসলো,” চুপ বদমায়েশ।”
আমি সিগারেট ধরালাম, এই পরিস্থিতিতে সিগারেট ই সম্বল।দ্রুত ঘরে ডুকার উপায় বের করতে হবে।বউ হয়তো এতক্ষণে গোছগাছ করে ফেলছে।একটু পর বাপের বাড়ি রওনা হবে।
আমি বউকে টেক্সট করলাম,”লক্ষীটি আমায় ভুল বুইঝো না,তোমার কসম আমি ওই মেয়েকে চিনি না।বাথরুমের আয়নার কসম।
রিপ্লে আসলো, “কুত্তা আমার নামে কসম কাটবা না,আরেকবার মিথ্যা বললে তোমার গলা চেপে ধরবো।”
আমি লিখলাম, “ধরো চেপে ধরো।তবু্ও ভালো।এই শীত থেকে আমায় রক্ষা করো।
বউ এর মনে একটু দয়া হলো,একটা সুয়েটার আমার মুখে ছুড়ে মেরে বললো,” গো টু হেল।আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না।”
আমি নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নামলাম।এক কাপ চা খাওয়া দরকার।গত রাতে বউ এর পাশে বসে বউয়ের কাপে চা খেয়েছি এখন খেতে হবে স্টলের কোনো ময়লা গ্লাসে।এইটার নামই কপাল।
চায়ের কথা বলে ফেসবুকে ঢু মারলাম।বউ পোস্ট দিয়েছে, ” জামাই প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ করায় এই শীতে তাকে বাইরে বাইরে ঘুরাচ্ছি।শাস্তি।মেয়েরা শিখো।পুরুষদের টাইটের উপর রাখতে হবে।”
পোস্টে একটা স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।মনে মনে কিছুক্ষণ কপালের গুনগান করলাম।
দু কাপ চা শেষ করলাম।ফোন ভ্রাইবেট করলো।ছোট বোন কল দিয়েছে।কি লজ্জা কি লজ্জা।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমি ফোন পিক করলাম।
“ভাইয়া তোর প্রাক্তন প্রেমিকার কি খবর?
আমি রাগী কন্ঠে বললাম,” কি ব্যাপার?
বোন বললো,”তোর ভালোর জন্যই কল দিয়েছি।এক্ষুনি এক হাজার টাকা সেন্ড মানি দে,তোর ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করছি।”
“যদি না পারিস দু হাজার ব্যাক দিবি,রাজি?”
“রাজি!”
ভাগ্যের উপর জুয়া ধরলাম। এক হাজার টাকা পেলে ঘরে নায়া ফেরার কষ্ট কিছুটা হলেও কমানো যাবে।
আমি দুই নাম্বার সিগারেট ধরালাম,বউ এর কল আসলো,গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে,কেউ চাইলে ঘরে ফিরতে পারে।”
আমি হাসলাম।বোনের বুদ্ধির প্রশংসা করতে হলো।বোকা ভাইক্যা শেয়ানা বোন।
কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে গেলো।রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বুঝলাম বউ শাস্তি মওকুফ করে শাস্তির ধরন পাল্টেছে। বিছানা পুরোটাই শীতল।যেন বরফের দেশে আটকে গেছি।বউ বিছানায় পানি ঢেলে বাইরে থেকে রুমের দরজা আটকে দিয়েছে।আমি মিনমিন করে বউকে দু বার ডাকলাম কাজ হলো না।ঘটনা বুঝার জন্য ফেসবুকে ঢু দিলাম।বোন কমেন্ট করছে,” হারামীটাকে ঘরে এনে শাস্তি দাও,নইলে পরে আবার প্রাক্তন প্রেমিকার বাসায় চলে যেতে পারে।”
আমি বড় করে একটা হা ছাড়লাম।
-বুঝলাম বাশ আসলে সব দিক থেকেই আসে।