জামাইকে শুধু বলেছিলাম, “ঈদের কেনাকাটা করব, টাকা দাও সাথে সাথে হাজার টাকার চকচকে দশটা নোট বের করে দিয়ে বলল, “আপাতত এইটা রাখোবোনাস পেলে আরো দেব” আবেগে আপ্লুত হয়ে ছলছল চোখে জামাইকে বললাম, “তুমি আমাকে এত ভালবাসো? থামো, এক্ষুণি আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসছি !” ও আমার হাত টেনে বলল, “তোমাকে চা বানাতে হবে না তো ! কাজের লোক আছে কি জন্য? সারাদিন কত কাজ করো তুমি…এবার একটু রেস্ট করো।” চা খেয়ে রুমে আসছিলাম, তখনই ছেলে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলল, “আম্মু ! আমি তোমাকে খুব ভালবাসি !” আমি খানিকটা ধমকের সুরে বললাম, “উফ এত জোরে কেউ চিৎকার করে ! সরাসরি বললেই তো পারিস, তোর কি লাগবে…এত ভালবাসা দেখাতে হবে না।”
ছেলে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, “সত্যি আম্মু তোমাকে অনেক ভালবাসি। তাই তো তোমার সাতদিন ধরে জমিয়ে রাখা কাপড়গুলো আমি একাই ধুয়ে দিলাম !” ছেলের কথা শুনে চোখে জল চলে এলো…আসলেই সাতদিন ধরে জমিয়ে রাখা কাপড়গুলোর জন্য খুব টেনশনে ছিলাম। শাশুড়ি দেখলে আচ্ছামত বকাঝকা করত…মনে করতে চেষ্টা করলাম আজ আমার জন্মদিন বা বিশেষ কোনদিন কি না। কিন্তু উঁহু ! তেমন বিশেষ কোন দিন তো আজ না…তাহলে এসব ভাবনায় ছেদ পড়ল। আমার শাশুড়ি এসে আদুরে গলায় বলল, “মা, ছেলে তোমাকে টাকা দিয়েছে না ঈদের কেনাকাটার জন্য?” আমি হ্যা-সূচক মাথা নাড়ালাম। “এই নাও এই সামান্য টাকাটাও রাখো…আমার পক্ষ থেকে। যদি কিছু ভাল লাগে কিনে নিও।”
শাশুড়ির কথা শুনে আমার আশ্চর্যের সীমা রইলো না ! আমাকে আবারো আশ্চর্য করে দিয়ে শাশুড়ি বলল, “মা, আমি সব রান্না করে রেখেছি…আজ তোমার কোন কাজ নেই। যাও মা, মার্কেটে যাও আমার একেবারে কেঁদে ফেলার উপক্রম…ইমোশনাল হয়ে শাশুড়িকে বললাম, “মা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন…আমি মনে মনে আপনাকে এখন অবদি অনেক যা তা বলেছি। সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী ! আমি ভাবতেও পারিনি আপনি এত্ত ভাল !” শাশুড়ি জড়িয়ে ধরে বলল, “মা, তুমি কি বলছ এসব? আমিই আসলে তোমার মর্যাদা বুঝিনি। তুমি এত্ত মহান, অসম্ভব বুদ্ধিমতী, রাণী রাসমনির চেয়েও করুণাময়ী তা আমি আগে বুঝি নি মা ! আমাকে ক্ষমা করে দিও…” শাশুড়ির সাথে কথা শেষ করে রেডি হয়ে মার্কেটের জন্য রওনা হলাম…কি কি কিনতে হবে তার একটা লিস্ট করেছি। পাশের বাসার ভাবীকে দেখিয়ে দিতে হবে আমিও তো কম না !
মার্কেটে গিয়ে খুঁজে খুঁজে একটা দোকানে একটা জামা খুব পছন্দ হলো কিন্তু দোকানদার বড্ড বেশি দাম চাচ্ছে। দামাদামি করতে হবে। খুব অদ্ভুত ব্যাপার, দোকানদারের চেহারার সাথে আমার শাশুড়ির চেহারার বড় বেশি মিল ! কিছুতেই বুঝে উঠতে পাচ্ছি না এমন কেন মনে হচ্ছে…মনে করতে চেষ্টা করলাম, শাশুড়ি তো সবসময় বলতেন উনি নাকি জমিদার বংশের। ওনার আত্নীয়ের সবাই জমিদার টাইপ ! তার মানে আত্নীয় হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না…
দামাদামির লড়াই শুরু হলো…দোকানদার বলেই যাচ্ছেন দুই হাজার টাকা দাম আর আমি অনবরত একটাই কথা বলে যাচ্ছি, পাঁচশোর বেশি হবেই না ! আমি তো জানি, ওটা পাঁচশোর বেশি হওয়া অসম্ভব ! ঝগড়া এক পর্যায়ে অনেক বেড়ে গেল…এক পর্যায়ে মনে হলো, দোকানদার জোরসে একটা ধাক্কা দিলেন… ধপাস করে পরে যাওয়ার একটা বিকট শব্দ হলো !
আশেপাশের সবকিছুই আবছা লাগছে…দোকানদারকে এখন অবিকল আমার শাশুড়ির মত দেখাচ্ছে…আস্তে আস্তে সবকিছু আরো ঝাপসা লাগছে। দোকানদার কিছু বলে যাচ্ছে কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছি না…অথচ অদ্ভুত ব্যাপার…দেখতে পাচ্ছি তার মুখ নড়ছে ! কিছুক্ষণ পর আমি দোকানদারের মুখে চিৎকার শুনতে পেলাম “বৌমা এত বেলা করে ঘুমোচ্ছ কেন ! আটটা বাজে ! ওঠো ! আমার ছেলেটাকে কি না খাইয়ে অফিসে পাঠাবে? ও যে রোজা করেনা, জানোই তো… আর সাতদিন ধরে এত কাপড় জমিয়ে রেখেছ কি আমার ধুয়ে দেওয়ার জন্য? এক্ষুণি উঠে সব ধোও !”
বুঝতে একটু দেরী হলো কিন্তু আমি নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। পাশেই বিছানা আর মশারি খুলে এসেছে এবং আমার গায়ের সাথে লেপ্টে আছে ! বুঝতে বাকি নেই – আমি ঘুমের মধ্যেই বিছানা থেকে পরে গেছি ! ছেলে গরুর মত চিৎকার করতে করতে বলল, “মা এখনো ঘুমোচ্ছ? আমার হাফপ্যান্টটা একটু ধুয়ে দেবে? আমি না ঘুমের মধ্যে ইয়ে করে ফেলেছি কিছুক্ষণের মধ্যে আবার জামাই এসে যোগ দিলো, “তাড়াতাড়ি উঠে এক কাপ চা করে দাও তো আর হ্যা, এবার ঈদের টাকা দিতে পারব না। বোনাস পাইনি কিন্তু এদের কোন কথাই আমার কানে যাচ্ছে না আমি এখনো ঘুমের ঘোরেই আছি ! মাথা এলোমেলো হয়ে আছে এখনো বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছি “জামাটা পাঁচশো টাকার বেশি হবে না ! আমি কিন্তু পাঁচশো টাকাই দেব, এই বলে দিলাম !”