আমি শিং-ওয়ালা গরুকে ভীষন ভয় পাই!! শুধু শিংওয়ালা বললে ভুল হবে,,সব গরুকেই ভয় পাই! তবে যে গুলোর বড় বড় শিং সেগুলো ভয়ানক লাগে! ছোট বেলায় প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার সময় আর আসার সময় খুব আতংকে থাকতাম!! কারণ গ্রামের খোলা মাঠে অনেকেই গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য বেঁধে রাখতো ।।আবার রাস্তার পাশে ও রাখতো, যেখানে কিনা অনেক ঘাস ছিলো! মাটির রাস্তার পাশে সবুজ ঘাস থাকে,,যে গুলো গরু আর মহিষেরা খায়।।তার জন্যই মুলত এদেরকে এখানে রাখে সারাদিন!
যেহেতু আমাদের একটা মেঠো পথে স্কুলে যেতে হতো! এর পাশে বাঁধা বা খোলা অবস্থাতেই অনেক গরু ঘাস খেতে থাকতো! আবার এটা পেরিয়ে আরো একটা মাঠ ও পার হতে হতো, রোজ সেখানে থাকতো প্রায় ৩০, ৪০ টা গরু আর মহিষ! এমনিতে মানুষের জন্য রাস্তার মাঝখানে গরু না বাধঁলে ও,,, বাধঁনের যে রশিটা সেটা অনেক বড় করে দিতো ফলে সেগুলো রাস্তায় উঠে যেতো! আর অন্য পাশে থাকতো বাধঁন ছাড়া গরুগুলো! ঘর থেকে বের হলে ভয়ে থাকতাম,কাউকে না পেলে রাস্তা পার হওয়ার সাহস নেই,,বড় মানুষ কেউ যদি আসে, তাইলে পেছনে পেছনে পার হয়ে যেতাম।
আগে এতো ভয় পেতাম না,,ভয়টা শুরু হয়েছে তখন থেকে যখন আমার এক স্কুলে যাওয়ার সঙ্গীকে শিং দিয়ে আঘাত করেছিলো!(ওর নাম তারিন,সে এখনো আমার সেরা বান্ধুবী হয়ে ই পাশে আছে) আঘাত পাওয়ার মধ্যে ওর অবশ্য দোষ ছিলো,,সবাই দৌড়ে চলে আসছে,,,কিন্তু সে ধিরে ধিরে আর গরুর সামনে গিয়ে হাটঁছিলো আর বলছিলো ওরে নাকি গরু কিছু করে না! তখনই গরুটা একদম শিং দিয়ে উপরে তুলে আছাড় মারছে,,এখানে অনেক চিৎকার চেচামেচিতে গরুটাকে সবাই আটকালে ও তারিন অনেক আঘাত পেয়েছে।।ওর এক হাত ভেঙে গেছিলো! অনেকদিন সে অসুস্থ ছিলো! এরপর থেকে আমি প্রচুর ভয় পেতাম,,তারিন ও কখনো আর এমন দুঃসাহসিকতা দেখায় নি,,দেখাবে কি! গরু দেখলে সে ১০০ হাত দূরে থাকে।।
একদিন স্কুল টিফিন টাইমে আমি আর তারিন বাড়ি থেকে খেয়ে আসতে রওয়ানা দিলাম,,আকাশ মেঘলা ছিলো!
যেই আমরা বের হলাম এমনি বৃষ্টি শুরু হলো।। তেমন বেশি বৃষ্টি শুরু হয় নাই তখন,,চলে যেতে পারতাম কিন্তু সেটা হয় নি,,কারণ বৃষ্টির কারণে সকল গরু বাড়ি উদ্দেশ্যে আসা শুরু করছে,,আমি আর তারিন ভয়ে একটা বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে রইলাম,,ভাবলাম এসব চলে গেলে বাড়ি যাবো ।।
কিন্তু একি গরু যে আস্তে আস্তে আরো বেশি আসতে লাগলো।। এদিকে প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে! দুজন ভিজে একাকার হয়ে গেছি,,জীবনে প্রথম এতো ভিজা হয়েছিলো আমাদের দুজনের! টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে যাবে, আমাদের আজ আর খাওয়া কিংবা স্কুলে যাওয়া হবে না বুঝতে পারছিলাম,,,,তবে দেরি হলে কিংবা আর স্কুলে না গেলে বকা খাওয়ার চিন্তা ছিলো না কারণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তারিনের বাবা! কারণ টা বললেই বুঝবেন কারণ এর আগে তারিন মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলো! এরপর প্রায় ৪০ মিনিট পর সব গরু আসা শেষ হলো, আর বৃষ্টি ও থামলো।। আমরা বাড়ি গেলাম।।স্কুলে যাওয়া হয় নি আর এক সপ্তাহ,।কারণ দুজনের ই ঠান্ডা জ্বরে অবস্থা খারাপ ছিলো! এইদিনের পর আর এমন ঘটনা হয় নি,,কিন্তু এর প্রায় ৫ বছর হয়ে গেলো গরু নিয়ে আরেক কাহিনী! আমরা তখন ক্লাস টেনে, স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাচ্ছি,, আমাদের বাড়ির অনেক আগে একটা বাড়ি আছে সেটা হলো পশ্চিম দিকে,,,, যেখানে উনারা অনেক গরু পালন করেন।
সেখানে আবার ৩ টা রাস্তা ছিলো, মানে পুর্বে, পশ্চিমে আর আমরা যে দিকে সোজা যাচ্ছি সেটা! এই জায়গা টা পার হওয়ার সময় দেখলাম ২টা গরু পুর্ব দিক থেকে দৌড়ে আসছে! আমরা ভাবছি সেগুলো সামনের পথে যাবে,,তাই পশ্চিমে যে বাড়িটা আমরা ও দৌড়ে সেদিকে গেলাম,,,একটা ছোট টিনের চালের মতো একটা ঘরে গিয়ে একটু স্বস্তি নিয়ে দাড়ালাম,,এমনি দেখি এমা গরুগুলো এদিকে আসছে,,মানে আমরা গরুর ঘরেই এসে আশ্রয় নিয়েছি! চোখ বন্ধ করে দুইজন তখন দিলাম উল্টা দিকে দৌড়!
সেদিন যতোটা ভয় পাইছি তার থেকে বেশি হাসছি! কারণ আমরা বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সেখানেই আশ্রয় নিলাম যেখানে ছিলো বিপদের বসবাস! মনে হলে ভীষণ হাসি পাই! তবে এখনো গরুকে ভয় লাগে খুব,,তবে ওইসব রাস্তার পাশে আর সবুজ ঘাস নেই,কারণ সেগুলো এখন ইট পাথরের হয়ে গেছে! আগের মতো এতো এতো গরু ও দেখা যায় না!