নীলচে দিন

নীলচে দিন

শুক্রবারের সকাল হতে হতে যে খবরটা পাওয়া গেল, তা হলো ঝুমুর নেই—হাওয়া ।

ছুটির দিনে এমন বীভৎস খবর শুনতে কারোরই ভালো লাগার কথা না। একে শীতের আমেজ, তার ওপর এমন সংবাদ, আমার মনে হলো আজ উঠে আর কাজ নেই। পর্দার ওপার থেকে কমলা রোদ এসে পড়ছে ঘরের ভেতর, সেখানে একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ। তীর্থ এখন এ ঘোড়ায় আর চাপে না। মাঝেমধ্যে শুধু টেনেটুনে এখানে–ওখানে রাখে। তীর্থর কণ্ঠ বাইরে, তার মায়ের সঙ্গে। বলছে, জুমু কই, জুমু?

ঝুমুরকে তীর্থ জুমু বলত। ওর মা বুয়া বলে ডাকত। আমি কিছু বলতাম না। বুয়া বলার জন্য ঝুমুরের বয়স কম ছিল। সতেরো–আঠারোর কাউকে বুয়া বলতে কেমন যেন বাধে!

রুনার কণ্ঠ, ল্যাপটপ আছে, বুঝেছ, নিয়ে যায় নাই!
আমার কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল না। তবু বললাম, তা–ও ভালো।
রুনার কণ্ঠ, ভালো আবার কী? কী কী নিয়ে গেছে, এখনো কি জানি নাকি?
আমার এবার বলতে ইচ্ছা করল, খুঁজে দেখো। কিন্তু বললাম না। তীর্থ বাইরে থেকে বলল, বাবা, জুমু নাই গা!

ঝুমুর কাজে-টাজে ভালো ছিল। মাস ছয়েক আগে এসেছিল। ওর এক চাচি বা এমন কেউ নিয়ে এসেছিল। বলেছিল, আপনাদের বাড়িতেই রাখতেছি। দুজন মানুষ আপনারা…কাজকাম কম!

রুনা বলেছিল, না না কাজ অনেক। তীর্থ ছোট না, এর কাজ আছে মেলা। দরকার নাই।

আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম রুনার কথা। ঠিকঠাক একটা কাজের মেয়ে পাচ্ছে না বলে রুনার শতেক অনুযোগ। ছুটা বুয়াটা কাজে খুব ফাঁকি দেয় বলে প্রায় প্রতিদিন এসএমএস করে যখন অফিসে থাকি…আর এখন কিনা মেয়েটাকে বিদায় করে দিতে চাচ্ছে!

কিন্তু চাইলেই আর পারে কই! রেখে দেয়। বাধ্যই হয়। কাজ তো কম না। তীর্থ যেভাবে ঘর অগোছালো করে, সেসব ঠিকঠাক করে রাখতেই অন্তত একজন লাগে। ঘরের অন্য কাজ তো আছেই! রাতে রুনাকে বলি, মেয়েটাকে রেখে ভালো করেছ!

রুনা তাকায় আমার দিকে। তারপর একটা শ্বাস ফেলে বলে, তোমার তো ভালো লাগবেই!

এ কথার মানে খুঁজে পাই না। তীর্থ বলে, বাবা, মোবাইল!

মোবাইল নিয়ে এটা-সেটা বের করতে থাকে তীর্থ। রুনাকে বলি, তোমার কাজে হেল্প করতে পারবে বলেই বলছিলাম। তোমার যদি আপত্তি থাকে তো রেখো না।

রুনা এমন একটা ভঙ্গি করে যে আমি বুঝে উঠতে পারি না, সে আসলে কী বোঝাতে চাইছে। বলি, কোথায় থাকতে দিচ্ছ? রুনা বলে, কেন? বেডরুমে দিলে তোমার সুবিধা?

আমার মেজাজ খারাপ হয়। রুনার এই ইঙ্গিতপূর্ণ কথা অপমানজনক। কিন্তু কিছু বলার আগেই একটা গোঙানির শব্দ ভেসে আসে। তীর্থ আমার মোবাইলে ভিডিও ফাইলে ঢুকে পড়েছে। সেখান থেকে একটা বাজে ভিডিও চলতে শুরু করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে কটমট চোখে রুনা বলে, ছেলেকে এইসবই শেখাবে তাহলে?

হড়বড়িয়ে তীর্থের হাত থেকে ফোন নিয়ে নিই আমি। ভিডিওটা বন্ধ করি। তীর্থ বলে, নঙ্গু নঙ্গু!

আমার হাত থেকে ঝটকায় মোবাইলটা নিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে দেয় রুনা। ঝনঝনিয়ে ভেঙে যায় ফোনটা। পরে নতুন একটা মোবাইল কিনতে হয় আমাকে। সেই অর্থে নতুন ফোনের বয়স আর এ বাসায় ঝুমুরের বয়স এক সমান—ছয় মাস!

দুই.

গতকালকের মাংস ছিল—সেটা দিয়ে পরোটা খেতে খেতে অনলাইনে নিউজপেপার দেখছিলাম। তীর্থ ওটস খাবে না। সেটা নিয়ে রুনার সঙ্গে একপশলা বিবাদ হয়ে গেছে। এরপর কিছু একটা হলেই রুনা তীর্থকে পেটাবে। বিস্ময়করভাবে সত্য যে আমি মনে মনে সেই সময়টার অপেক্ষাও করছি। কিন্তু রুনা আজকে অন্য ছুটির দিনের চেয়ে আশ্চর্য রকম শান্ত। জুসের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে যেন কথার কথা বলছে, এমনভাবে বলল, ঝুমুরকে টাকা দিয়েছিলে কোনো?

আমি বললাম, না তো।

রুনা বলল, ওর কাছে কিছু দিন আগে বেশ কিছু টাকা দেখেছিলাম!

আমি বললাম, ওর কাছে?

রুনা বলল, হুম। ওর ব্যাগ ঘেঁটে পেয়েছিলাম। ছয় হাজারের মতো।

আমি বললাম, তুমি ওর ব্যাগ ঘাঁটতে গেছিলে নাকি?

রুনা বলল, তুমি দিয়েছিলে টাকা?

আমার নাশতা শেষ। তীর্থ বলল, তুমি আমাকেও তাকা দাও বাবা। তুমি মাম্মাকেও তাকা দাও। তুমি জুমুকেও তাকা দাও। তুমি ভালো বাবা।

আমি বললাম, আমি ঝুমুরকে টাকা দিইনি।

রুনা বলল, তাহলে অতগুলো টাকা সে কোথায় পেল?

আমি বললাম, তার আমি কী জানি?

রুনা বলল, তুমি অতগুলো টাকা ওকে কেন দিয়েছিলে শিহাব?

আমি বললাম, আমি কোনো টাকা দিইনি দিইনি দিইনি!

বারান্দায় সিগারেট জ্বালালাম। শেষ সিগারেট। এখন নিচে গিয়ে সিগারেট আনতে হবে। ঝুমুর থাকলে ঝামেলা হতো না। ওকে টাকা দিলেই চট করে নিয়ে আসত। মেয়েটা ছিল কাঠবেড়ালির মতো—ছটফটে! চনমনে! কিছুদিন আগে সে আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। বলেছিল, তার হাজার দশেক টাকা দরকার।

এমন কথা তার আমাকে বলার কথা না। কিন্তু বলেছিল। বলার সময় মনে হয়েছিল ভীষণ ত্রস্ততার মধ্যে আছে। আমি বলেছিলাম, এত টাকা কেন লাগবে?

ঝুমুর বলেছিল, লাগবে সার। ম্যালা বিপদ!

আমার আর ওর বিপদের কথা শোনা হয়নি। ইচ্ছা যে করেনি, তা না। মনে হয়েছিল আসলে কী দরকার, একবার জানা উচিত। কিন্তু ততক্ষণে তীর্থ চলে এসেছিল। তীর্থকে নিয়ে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঝুমুর চলে গিয়েছিল।

পরে দশ হাজার টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম। আলাদা মানে আটানব্বই হাজার টাকার একটা বিল পেয়েছিলাম কাজের। সেটা থেকে দশ হাজার নিজের কাছে নিয়ে বাকিটা ব্যাংকে জমা করে দিয়েছিলাম। ঝুমুরকে বলেছিলাম, কবে লাগবে তোর টাকাটা?

ঝুমুর বলেছিল, আইজ হইলে আইজ! কাইল হইলে কাইল সার!

আমি কালকে দেব ভেবেছিলাম। এভাবে কয়েকটা কাল পার হয়ে গেলে ঝুমুর নিজেই হাওয়া! আমার খয়েরি প্যান্টের সামনের পকেটে এখনো রাখা আছে টাকাটা। মনে হতেই সিগারেট নিভিয়ে ছুটে গেলাম ঘরে। খয়েরি প্যান্টটা চেক করলাম। টাকা নেই। মানে টাকাটা নিয়েই হাওয়া হয়েছে ঝুমুর—চোর!

তিন.

আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে তীর্থ ঘুমিয়ে যায়। ছুটির দিনে আমার ঘুম আসে না দুপুরে। অথচ অফিসে ঢলে পড়ি। তীর্থর শূন্য ঘোড়াটার দিকে তাকিয়ে থাকি। রুনা বাসন মাজছে। ওর ঠান্ডার ধাত আছে। আজকে হয়তো শ্বাসকষ্ট হবে। নতুন একটা কাজের মেয়ে দেখতে হবে; বা হয়তো ঝুমুর ফিরে আসবে। হয়তো রাগ হয়েছে, চলে গেছে। ট্রেন ধরে গ্রামে চলে গেছে। পেটে টান পড়লে আবার ফিরে আসবে। তার না একটা মোবাইল ছিল? রুনাকে প্রশ্নটা করতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় নিশ্চয় সে কল দিয়েছিল—বন্ধ পেয়েছে। আর তখনই নিশ্চিত হয়েছে যে ঝুমুর পালিয়েছে!

কাজ গুছিয়ে রুনা ঘরে এলে একটু চাপা স্বরে বলি, তোমার খুব ঝামেলা হয়ে গেল, না? আমি কালকেই মতিন সাহেবকে বলছি…ওনার ফ্ল্যাটে নাকি কে একজন আছে—বুয়া সাপ্লাই দেয়!

রুনা কিছু বলে না। তার নীরবতা ভালো লাগে না। অস্বস্তি হয়। মনে হয় টাকার প্রসঙ্গটা বলা দরকার। জানানো দরকার ঝুমুর চোর—চুরি করেই গেছে। কিন্তু টাকাটা কিসের, এ প্রশ্নের উত্তর কী হবে, সেটাও বুঝতে পারি না।

রুনা বলে, তুমি ওর গায়ে হাত দিছিলা?

প্রশ্নটা রুনা করে আকস্মিকভাবে। আমি হতচকিত হয়ে যাই। তাকাই বিস্ময়ে। বলি, কার?

রুনা বলে, আকাশ থেকে পড়ার ভান ধরবা না! তোমার চাহনির মধ্যেই সব জানা যায়! তুমি ওর গায়ে কয়বার হাত দিছ?

আমার প্রথমে রাগ হয়। প্রচণ্ড রাগ। কিন্তু রাগের সঙ্গে সঙ্গে কেমন একটা অপরাধবোধও হতে থাকে। আমি যেন নিজেকেই জিজ্ঞেস করতে থাকি, আমি ঝুমুরের গায়ে হাত দিয়েছি কি না!

ঝুমুর একবার কফির মগ উল্টে ফেলেছিল আমার জুতায়—সেদিন তার গায়ে হাত দিতে ইচ্ছা করেছিল। তাকে পেটাতে ইচ্ছা করেছিল। মনে হয়েছিল লালচে চুলগুলো ধরে একটা ঝটকায় ফেলে দিই হারামিটাকে—কিন্তু পারিনি তো! সে ‘মাফ কইরা দেন স্যার, মাফ কইরা দেন স্যার’ বলে তাড়াতাড়ি জুতাটা মুছে দিয়েছিল।

রুনা বলে, ছুটির দিনের এই দুপুরবেলাগুলাতে পানি খেতে তুমি বারবার যেতে না রান্নাঘরে?

আমারও মনে হতে থাকে, সত্যি তো দুপুরবেলাগুলোতে বারবার পানি খেতে আমি যেতাম রান্নাঘরে। আর সব কাজ সেরে রান্নাঘরে মাদুর পেতে শুয়ে থাকত ঝুমুর। ঘুমিয়ে থাকত না, কিন্তু চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থাকত। একদিন হাসতেও দেখেছি। হাসলে ঝুমুরের টোলও পড়ত, মনে আছে।

রুনা বলে, তুমি কি অর সাথে শুয়েওছ?

এমন প্রশ্নে আমার রাগ করা উচিত। কিন্তু আমি রাগ করতে পারি না। জোর কণ্ঠে কিছু বলতে পারি না। জোরে কথা বললে তীর্থ উঠে যাবে ঘুম থেকে। আর না উঠলেও আমি তেমন কোনো জোর পাই না কণ্ঠে। রুনা বলে, আমি ঘুমিয়ে গেলে প্রত্যেক রাতেই তুমি জোর করে শুতে, না? আর এ জন্যই সে পালিয়ে গেছে, তাই না? কোনো কিছু না নিয়ে শুধু জানের ভয়ে পালিয়ে গেছে, না? আমি বলি, সে টাকা নিয়েছে! দশ হাজার টাকা! আমার প্যান্টের পকেট থেকে দশ হাজার টাকা নিয়েছে। এমনি এমনি পালায়নি। সে চোর…

তোশকের নিচ থেকে আমার দশ হাজার টাকা বের করে দেয় রুনা। বলে, মেঝেতে পড়ে ছিল…

আমি টাকাটা নিতে পারি না, রুনার চোখের দিকেও তাকাতে পারি না। তীর্থ ঘুমের মধ্যে হাসে—হয়তো স্বপ্নের মধ্যে হাসে।

চার.

সন্ধ্যায় মর্গে যেতে হয় আমাদের।

তীর্থকে নিয়ে আমি আমগাছ তলায় দাঁড়িয়ে থাকি। রুনা গিয়ে লাশ শনাক্ত করে আসে। বাইরে বেরিয়ে তার শ্বাসকষ্ট হয়। ঠেলে ঠেলে বমি উঠলেও বমি করতে পারে না।

মহাখালি রেলক্রসিংয়ে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল ঝুমুর। পরে ট্রেন এলে সে ইঞ্জিন জড়িয়ে ধরতে চায়। বাম পাশটা পুরো গুঁড়ো হয়ে গেছে বলে ঠিকমতো চেহারা চেনার উপায় নেই।

ঝুমুরের চাচিকে দশ হাজার টাকা দিই লাশ গ্রামে নেওয়ার জন্য। তারা রাতেই রওনা দেবে বলে জানায়। রান্নার হাঙ্গামা হবে বলে ওদিক দিয়ে আমরা পুরান ঢাকায় চলে যাই। বিরানি খেতে বসলে রুনা বমি করে ফেলে আর গভীর রাতে তার জ্বর আসে। ওর মুখের দিকে আমি তাকাতে পারি না। বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছে ওর মুখ। ফিসফিস করে বলে, ঝুমুরের পেটে তোমার বাচ্চা আসছিল? অ্যাবরশন করাতা…এতটুকুন মেয়ের মরা ছাড়া আর কোনো রাস্তা রাখলা না তুমি!

রুনার মুখ থেকে সাদা ফেনার মতো বেরিয়ে আসতে থাকে। মায়ের এমন চেহারা দেখে কেঁদে ফেলে তীর্থ। আমার কোলের ভেতর গুটিসুটি মেরে বসে থাকে সারা রাত। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে তীর্থ। তাকে দেখতে একটা ভ্রূণের মতো লাগে। আমার ঘুম আসে, কিন্তু আমি ঘুমাতে পারি না।

পাঁচ.

রুনার অনুমান ঠিক হয়। কয়েক দিন পর ঝুমুরের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া যায়। ক্লিয়ার সুইসাইড—এবং গর্ভে চার মাস সাত দিনের সন্তান। আমি রুনার দিকে তাকাতে পারি না, রুনাও আমার দিকে তাকায় না। আমি বলি, এসব কিছুই হয়নি, রুনা। ঝুমুরের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী না। কিন্তু আমি জোর গলায় কিছু বলতে পারি না। আমার মনে হতে থাকে ঝুমুরের মৃত্যুর জন্য বোধ হয় আমিই দায়ী। ফলে আমার আর রুনার মধ্যে না-থাকা ঝুমুর অনেক বেশি করে থাকতে শুরু করে। একটা অচলাবস্থার মধ্যে আমাদের দিনগুলো বয়ে যায়। আমরা একই সঙ্গে থাকি, আবার থাকি না। আমরা একই সঙ্গে খাই, ঘুমাই কিন্তু আমরা কেউ কারও সঙ্গে থাকতে পারি না। আমি অফিস করি, বাজার করি, ছুটির দিনগুলোতে সিগারেট আনতে যাই মহল্লার দোকানে। আর দোকানে গেলে দোকানি জব্বারের হাতে আমার অব্যবহৃত, ড্রেসিংয়ের ড্রয়ারে পড়ে থাকা, হাতঘড়িটা দেখি। বারবার দেখি। কিন্তু কখনো ঘরে এসে দেখতে ইচ্ছা করে না আমার ঘড়িটা ড্রেসিংয়ের ড্রয়ারে রয়েছে কি না। আমার মনে হয়, আমার আর রুনার সময় আটকে গেছে, কোনো ঘড়িতেই আর সেটাকে চালু করা সম্ভব হবে না।

তীর্থ শুধু বড় হতে থাকে আমাদের সম্পর্কের দূরত্ব ও শীতলতার মধ্যে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত