তুষার আজকে যাচ্ছে টাঙ্গাইল।সে তো প্রায় কাজের জন্য যেতে হয় সেখানে।কিন্তু আজকে তার নিজের প্রাইভেট গাড়ীতে যাচ্ছে না।কারণ তার গাড়ীটা নষ্ট হয়ে গেছে হঠাৎ করেই।তাই আজ বাসে করে যেতে হবে কোনোরকমে।বাস মানেই তো ভীড়,মানুষে মানুষে পাড়াপাড়ি-ঘেষাঘেষি,তবুও মনকে স্থির করে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাড়ালো।বাস এসে যথা সময় দাড়ালো।সবাই উঠে গেলো।তুষারের কপালটা ভালোই ছিলো কারণ বাসে ভীড় কম ছিলো।কিন্তু স্ট্যান্ডে একটা খাম দেখতে পেলো পড়ে আছে।কিন্তু কার খাম এটা, তুষার ভাবলো কেউ হয়তো উঠার সময় ফেলে গেছে,তাই নিয়েই উঠলো বাসে!
কপাল টা ভালোই ছিলো যে সামনের দিকেই একটা সিট পেয়ে গেছে। সিট এ বসেই অন্যদিকে তাকাতেই দেখলো একটা মেয়ে বসে আছে।সেদিকে বেশী খেয়াল করলো না তুষার।তুষার খামটা খুলে দেখলো একটা সি.ভি আর কিছু কাগজ পত্র আছে।সেগুলো একটু ঘাটাঘাটি করতেই বুঝতে পারলো তাদের কোম্পানিতে চাকরীর জন্যই যাচ্ছে।কিন্তু বাসে তো অনেক লোকজন খুজবে কিভাবে তাকে।সি.ভি তে খেয়াল করতেই দেখলো মালিকের নাম তানিয়া।মানে একটি মেয়ে।
যাই হোক মেয়েটির কাছে এইটা পৌছে দিতে পারলে ভালো হত।সে মনে করলো পাশের মেয়েটি তো নয় আবার।তাই তুষার নাম জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু নামটা ছিলো ভিন্ন।তাই মনে হলো তুষারের এটা হয়তো পিছের কোনো জায়গায় আছে। তাই অপেক্ষা করতে থাকলো যদি সামনে যারা আসবে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করে মিললে দিয়ে দিবো। হঠাৎ সামনের একটা স্ট্যান্ডে তুষারেরে পাশে থাকা মেয়েটি নেমে গেলো।একটা মেয়ে সামনে এসে তুষারকে বললো পাশে বসতে পারে কি না।তুষার অনুমতি দিলো।মেয়েটি বসা মাত্রই তুষার বলে উঠলোঃ
-আচ্ছা আপনার নামটা কি জানতে পারি!
-হ্যা, তানিয়া!
-আচ্ছা ঠিক আছে! কিছুক্ষণ পর দেখলো মেয়েটার মনটা ভীষণ খারাপ।হয়তো ওই খামের কারণে।তাই কৌতুহলে বললো:
-আচ্ছা আপনার মনটা কি খারাপ নাকি!
-হ্যা!
-কারণ টা কি জানতে পারি!
-হুমমম, আমার চাকরীর জন্য যে কাগজগুলো ছিলো একটা খামের ভেতর সেগুলো পাচ্ছি না!
-ওওও,আচ্ছা!
তারপর তুষার চুপ করে রইলো।কিছু বললো না আর খামের ব্যাপারটা তো আরো না।তুষার একটা সারপ্রাইজ দিবে বলে ভাবলো।তুষার মির্জাপুর নেমে যাবে আর কাগজ টা তার পাশে রেখে যাবে বলে! কিছুক্ষণ পর একটা ফুল বিক্রেতা বাসে উঠলো একটা বালটিতে অনেক ফুল নিয়ে।তুষার একটা গোলাপ ফুল কিনে নিলো।তখন কৌতুহলে মেয়েটি মানে তানিয়া বলে উঠলোঃ
-আপনার বউ এর জন্য নাকি!
-আরে নাহ, আমি তো বিয়েই করেনি এখনো!
-দেখে মনে হয় না তা!
-না, আসলে ফুলটা প্রছন্দ হলো তাই কিনে নিলাম!
আর কোনো কথা হলো না তাদের।তুষার একটা কাগজের ছোট একটা টুকরো বের করলো মানিব্যাগ থেকে।সেখানে কিছু লিখলো, তানিয়া খেয়াল করলো লিখতেছে কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করলো না!
দেখতে দেখতে মির্জাপুর এসে গেলো।তুষার খামটার উপর ওই কাগজের টুকরোটা আর সাথে ওই লাল গোলাপটা তুষারের বসার সিটে রেখে নেমে গেলো।তানিয়া কিছুসময় পর খেয়াল করে দেখলো সেই লোকটা নেই।আসলে টেনশনে খেয়াল করতে পারে নি।কিন্তু যখন দেখলো তার জায়গায় ছিলো তার প্রয়োজনীয় কাগজের খামটা আর তার উপর ওই ছোট চিরকুট টা আর লাল গোলাপ তখন তানিয়ার মনটা ভালো হয়ে গেলো।মনে মনে অনেক খুশি হলো তানিয়া।সে চিরকুটা নিয়ে পড়তে লাগলোঃ
“আপনার খামটা আপনার কাছে পৌছে দিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।আপনি হয়তো অনেক কষ্ট পাচ্ছেন তাই কষ্টটা দূর করার জন্য খামটার সাথে লাল গোলাপটা আপনাকে উপহার হিসেবে দিলাম। আর হ্যা ভাববেন না যে কখনো আমাদের দেখা হবে না হয়তো ভাগ্যে থাকলে হতেও পারে। ভালো থাকবেন!” চিরকুটটা পড়ে একটা হাসি দিয়ে তার হ্যান্ড ব্যাগে ভরে রাখলো তানিয়া আর লাল গোলাপটাকে নিজের মোলায়েম হাতে ধরে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো মুচকী হাসতে লাগলো!!!