এতো দাম কেনো হবে? কাজল টা পঞ্চাশ টাকার বেশি এক টাকাও দিবোনা, আর হ্যাঁ মামা নীল চুরি গুলো দুই মুঠো-ই দিয়েন।
আচ্ছা অনু কালো টিপের পাতা টা নেই কেমন?
এইই কোন ধ্যানে আছো শুনি”?
রূপার খোঁচায় বাস্তবে ফিরলাম আমি, কিছুটা ইতস্তত করে বললাম
“হ্যাঁ নাও না, ঝুমকা নিয়েছো”?
জিভের আগায় কিছুটা কামড় দিয়ে মনে পরার ছলে রূপা বললো,
“এই রে এক্ষুনি ফেলে চলে যেতাম, পাশের দোকানে রেখে এসেছি ভুলে”!
কথা টুকু শেষ করেই তাড়াহুড়ো করে দুল জোড়া আনতে চলে গেলো রূপা।
মেয়েটা আমার বাহু জড়িয়ে আছে, বানিজ্য মেলার জনসমুদ্রে হাজারো কপোত কপোতীর মাঝে আমরাও ভালোবাসার কাঙাল দুই মানব মানবী। রূপার হাতে একটা হাওয়াই মিঠাই, বাচ্চাদের মতো এপাশে ওপাশে কামড়ে খাওয়ার অব্যর্থ চেষ্টায় রয়েছে সে।
আমার হাত ধরে হেলেদুলে হেঁটে হাত, মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে একটা হালকা পাতা রঙে আবৃত মানবী তার অব্যক্ত উচ্ছ্বাস প্রাণ খুলে ব্যক্ত করছে। একজোড়া সরু ভ্রুর মাঝে ছোট্ট একটা কালো টিপ বারবার নেচে উঠছে তার কথার তালে তালে। চোখ থেকে কাজল টা কিছুটা বাহিরে এসে লেপটে গেছে, দেখতে খারাপ লাগছে না মনে হচ্ছে যেন কালো পাড়ের এক দীঘল স্রোতিস্রিনী আমার সন্মুখে টলমল করছে। অবাধ্য খোলা চুল গুলো কে সামলে রাখতে বাধ্য হয়ে হাত খোঁপা করতে ব্যস্ত মেয়েটা। খোলা চুলে তাকে মোহনীয় লাগলেও তার কথা বলতে বলতে করা খোঁপার দৃশ্যটা আমার চোখে ধাঁধানো সৌন্দর্য্যের উৎস মনে হচ্ছে।
“এভাবে ভ্যাবলার মতো চেয়ে কি দেখছো”?
আমি কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে সামনে পা বাড়ালাম, কারণ সব সময় বলে নারী রূপের প্রশংসা করতে হয়না মাঝে মাঝে চুপ থেকেও বুঝিয়ে দিতে হয় যে এ রূপ বর্ননাতীত।
” এই খালি যাবেন”?
“কই যাইবেন মামা”?
” যেতে থাকো এ পথ ধরে মন ভরে এলে নেমে যাবো”।
রূপা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কোথায় যাবো”?
আমি ওর হাত টা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললাম,
-“হারিয়ে যাবো, হারাবে আমার সাথে”?
রূপা হাসলো, মাথাটা আমার কাঁধে এলিয়ে দিয়ে বললো,
” গত পঁচিশ বছরে বহুবার হারিয়েছি আজ আর হারাতে ভয় নেই কোথাও”।
আমার ফোন বাজছে, বড় ছেলের বউ কল করছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর,
“বাবা সেই সকালে বেরিয়েছেন এখন সন্ধ্যা হয় প্রায়, ফিরবেন না”?
” না বউ মা আজ হারাবো, তোমরা খেয়ে নিও”।
মেয়েটা কিছুটা অবাক হলো উত্তর শুনে, কিছু একটা বলতে যাবে তখন লাইন টা কেটে দিলাম।
পশ্চিমে সূর্য ঢলে যায় প্রায়, আকাশ টা আজ অসম্ভব রক্তিম। বিস্তর ফাঁকা এক হাইওয়ের কোণ ঘেঁষে একটা প্যাডেলে চলা রিকশা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে হনহন করে ছুটে চলছে। তাতে বসে অনাগত বসন্তকে খুঁজতে বেরিয়েছে এক আটপৌঢ় যুগল। গন্তব্য অজানা, দুজনের চোখে মুখেই এক প্রশান্তির ছাপ। তাদের আজ হারিয়ে যাওয়ার বড্ড তাড়া..! দিকবিদিক হারিয়ে যাক তবুও সারাজীবন এভাবেই ভালো থাক।