নতুন সকালের অপেক্ষা

নতুন সকালের অপেক্ষা

বাসায় ঢুকার সময় বাজারের ব্যাগ থেকে একটা ফুলকপি বের করে ভাবীর সামনে হাটু গেরে বসে বললাম,

–রমণী, তোমার জন্য হাজার মানুষের ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে। মানুষের বিশ্রী ঘামের গন্ধ সহ্য করে নিয়ে আসলাম এই সুগন্ধ বিহীন ফুল৷ তুমি এই ফুল হাতে নিয়ে ধন্য করো আমায় ভাবী তখন রান্নাঘরে রান্না করছিলো। গরম কুন্তিটা হাতে নিয়ে আমায় বললো,

-৯ঃ৩০ বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যা বলছি আমি মুচকি হেসে ভাবীকে বললাম,

— আজ তো স্কুলে ক্লাস হবে না। শুধু শুধু গিয়ে লাভ কি? ভাবী রেগে গিয়ে বললো,

– ক্লাস না হলেও তুই স্কুলে যাবি। কয়েকদিন পর এসএসসি পরীক্ষা সেই খেয়াল আছে? আর স্কুলে না গিয়ে তুই যদি অন্য কোথাও যাস তাহলে কিন্তু খবর আছে। আমি কিন্তু স্কুলে ফোন দিয়ে খবর নিবো। স্কুলের পড়া শিখা হয় নি। তাই ভেবেছিলাম স্কুলে যাবো না। কিন্তু ভাবী যেভাবে রেগে আছে না গেলে আমার খবর আছে। তাই বাধ্য হয়ে স্কুলে গেলাম স্কুল থেকে বাসায় আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেলো। ভাবী আমার কাছে এসে বললো,

– তুই টিফিনে খেতে এলি না কেন? স্কুলের পাশেই তো বাসা। খেয়ে গেলে কি সমস্যা হতো? আমি ভাবীর থেকে একটু সরে গিয়ে মাথাটা নিচু করে বললাম,

— বন্ধুদের সাথে বাহিরে খেয়ে ফেলেছিলাম। ভাবী আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
– তুই আমার কাছে আয় তো? আমি ভাবীর থেকে আরো সরে গিয়ে বললাম,
— কেন? ভাবী আমার কাছে এসে আমার ডান গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,

– তুই আবারও সিগারেট খেয়েছিস? সার শরীর থেকে সিগারেটের গন্ধ বের হচ্ছে। তুই না আমায় কথা দিয়েছিলি আর কখনো সিগারেট খাবি না? আমি কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাবী তখন রেগেমেগে বললো,

–তুই দুই সপ্তাহ আমার ধারেকাছে আসবি না। এই কথা বলে ভাবী যখন চলে যাচ্ছিলো। আমি তখন ভাবীর পিছন পিছন যেতে যেতে বললাম,

– আর জীবনেও সিগারেট খাবো না ভাবী। এইবারের মত মাফ করে দাও ঘুম থেকে উঠে দেখি মা খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছে। মাকে যখন বললাম, কি হয়েছে? মা তখন বললো,

~জমিদারের মেয়েকে বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছি। ৭ঃ৩০ বেজে গেছে এখনো ঘুম থেকেই উঠে না। এমন সময় খেয়াল করলাম ভাবী তাড়াহুড়ো করে মার কাছে এসে বললো,

– আসলে মা শরীরটা একটু খারাপ লাগছিলো। তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। ভাবীর কথা শুনে মা বিরক্ত হয়ে বললো,

~তোমার তো সারা বছর শরীর খারাপ থাকে। একটা রোগা মেয়েকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসলাম। ভাবী কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেলো। আমি ভাবীর পিছন পিছন এসে বললাম,

— ভাবী, আমি তোমার কাজে হেল্প করবো? ভাবী রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কয়েকদিন পর পরীক্ষা সেটা মাথায় আছে? যা পড়তে বস গিয়ে। আমি ভাবীর দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ভাবী তার ডানগালটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এত বছর ধরে দেখে আসছি তাই আর বুঝতে বাকি রইলো না। রাতে নিশ্চয়ই ভাইয়া ভাবীর গায়ে হাত তুলেছে। আমি ভাবীকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলাম। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ভাবীর প্রতি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। কিন্তু ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস কখনোই হয় নি রাত ১০টা বাজে। বড় আপু লাগেজ হাতে নিয়ে বাসায় হাজির। মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

~ তুই এত রাতে? আপু বললাম,
– আমি আর এই সংসার করবো না। ঘুম থেকে একটু দেরিতে উঠলে শ্বাশুড়ি নানা রকম কথা বলে । ননদী আজেবাজে কথা বলে। সারাদিন সংসারের কাজ করেও কারো মন পাই না। এমন কি মাঝে মাঝে রাতুলও(আপুর হাজবেন্ড) আমার গায়ে হাত তুলে। আপুর কথা শুনে ভাইয়া রেগেমেগে বললো,

– কি! তোর গায়ে হাত তুলে? এই রাতুলকে আমি নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

~তুই কি কাজের মেয়ে না কি, যে তোর এত কাজ করতে হবে।শ্বাশুড়ি হয়েছে দেখে মাথায় উঠে গেছে না কি।তকে কিছু বললে তুই কিছু বলতে পারিস না? আর ননদী যখন আজেবাজে কথা বলে তখন গালে থাপ্পড় মারতে পারতি না? ভাবী তখন বড় আপুকে বললো,

– সংসারে এইরকম টুকটাক ঝামেলা হবেই। তাই বলে সংসার ছেড়ে চলে আসা কিন্তু ঠিক হয় নি ভাবীর কথা শুনে ভাইয়া সবার সামনে ভাবীকে থাপ্পড় মেরে বললো,

-এত বেশি বুঝো কেন? আমার বোনের গাঁয়ে হাত তুলবে আর ও এটা মেনে নিয়ে সংসার করবে? এমন সংসারে লাথি মেরে অনেক আগেই চলে আসা উচিত ছিলো এতক্ষণ সবার কথা শুনছিলাম। কিন্ত এখন আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। যে ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কখনো কথা বলি নি। সেই ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— কেন পারবে না? ভাবী তো ঠিকিই পারছে। আপুর গাঁয়ে হাত তুলেছে দেখে তুমি দুলাভাইয়ের নামে নারী নির্যাতনের মামলা দিবে। তুমিও তো ভাবীর গাঁয়ে হাত তুলো তাহলে তোমার নামে কি মামলা দেওয়া উচিত? মার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— নিজের বেলা ১৬ আনা আর পরের বেলা ৪ আনাও না। ভাবী যদি কোনদিন একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে তাহলে তুমি তাকে যা তা বলেছো। সারাদিন কাজ করেও ভাবী তোমায় মন পায় নি। তুমি আপুকে বলছো ননদী আজেবাজে কথা বললে তাকে থাপ্পড় মারতে অথচ আমি নিজ চোখে দেখেছি, আপুর গোসলের পানি গরম দিতে একটু দেরি হয়েছিলো দেখে আপু ভাবীর গায়ে হাত তুলেছিলে আমার কথা শুনে আপু ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

– ভালোই তো ভাবীর পক্ষে কথা বলছিস। নিজের মা ভাই বোনদের পর করে ঐ মহিলা এখন আপন হয়ে গেলো? আমি মুচকি হেসে আপুকে বললাম,

— তুই তো আমার নিজের বোন ছিলি। কখনো কি একটা ফোন দিয়ে আমার খোঁজ নিয়েছিস ছোটভাইটা কেমন আছে? আমার বড় ভাই কি কোনদিন আমার খোঁজ নিয়েছে আমি ঠিকমত পড়াশোনা করছি কি না। কাদের সাথে চলাফেরা করছি। কিন্তু ঐ মহিলাটা প্রতিদিন আমার খোঁজ নিয়েছে আমি কাদের সাথে মিশছি, আমি ঠিক মত পড়াশোনা করছি কি না। আমার কখন কি লাগবে সব ঐ মহিলাটা খোঁজ রেখেছে। তোরা আপন হয়েও যে কাজগুলো করিস নি ঐ মহিলাটা পর হয়েও সেই কাজ গুলো প্রতি নিয়তই করেছে ভাবী এখনো সোফায় বসে কাঁদছে। আমি ভাবীকে বললাম,

— কেবল বাজে ১১টা। এখনো ময়মনসিংহের গাড়ি পাওয়া যাবে। এই সংসারের জন্য অনেক করেছো। যেদিন তোমায় এই সংসারের মানুষ তোমার প্রাপ্য সম্মানটা দিবে সেদিন না হয় এই সংসারে ফিরে এসো। ততদিন না হয় বাপের বাড়িতেই থাকলে গাড়ি গন্তব্যের দিকে ছুটে চলছে। বাসের জানালা দিয়ে ভাবী আনমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবীকে বললাম,

— ভাবী, এই অন্ধকারে বাহিরে কি দেখছো? ভাবী চোখের কোণে লেগে থাকা চোখের জলটা মুছে বললো,
– একটা নতুন সকালের অপেক্ষা করছি..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত