আদুরে বাবু

আদুরে বাবু

বসুন্ধরা সিটিতে একটা নাদুস-নুদুস কিউট বাচ্চাকে দেখে আদর করার লোভ সামলাতে পারলাম না।। আমার সামনে দিয়ে বাচ্চার মা, বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, আর বাচ্চাটা ঘুরে পিছনে তাকিয়ে খেলা করছে।। আমি একটু দ্রুত পায়ে হেঁটে বাচ্চাটার উপর একপ্রকার হামলে পড়লাম।। শুরুতেই নরম গালদুটো টেনে লাল করে দিতে দিতে মুখ দিয়ে অদ্ভুত আদুরে শব্দ করছি- ও লে, সোনা বাবু লে।। উ লু গু লু গু লু উ লু।। টু টু টু টু টি টি টি টি বাচ্চাটার মা চট করে ঘুরে তাকালো।। এইবার আমার হার্টবিট দুইদফায় চারবিট মিস্ করে বসলো।। এটা আমি কি দেখলাম, এই বাচ্চার মা তো আর কেউ না, এ যে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা মিলা।।

মিলাও আমাকে দেখে কেমন আঁতকে উঠলো।। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না।। কথা না বের হবারই কথা, মাত্র তিন বছর আগে ব্রেকাপ হয়ে গেছে আমাদের, এর মধ্যে মিলা বিয়েসাদী করে রীতিমত এমন একটা কিউট বাচ্চার মা হয়ে গেছে।। আর আমি কিনা এখনো, অন্যের বাচ্চা দেখে জিভ বের করে আদর করার জন্যে চুক চুক করি।। মিলা ধমকের সুরে বলে বসলো- কি সমস্যা আপনার?? আমি বিব্রত গলায় বললাম- না, কিছু না, তোমার বাচ্চাটা অনেক কিউট হইছে।। মিলা চড়া গলায় বললো- হবেই তো, কারণ আপনার মত বদমাইশ কারও সাথে বিয়ে হয় নি যে।।

আমি কণ্ঠে দুঃখ মিশিয়ে বললাম- তাহলে সত্যিই তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?? মিলা কটমট করে তাকিয়ে বলে- ঐ ফাউল লোক, আমার বিয়ে না হলে বাচ্চা আসলো কই থেকে?? আমি জিভে কামড় দিয়ে বললাম- ও তাই তো, আসলে এত ভিড় মার্কেটে সব গুলিয়ে ফেলেছি, তা তোমার জামাই কই?? মিলা আশেপাশে তাকিয়ে বললো- আমি একাই এসেছি, আমার শপিং করতে জামাই লাগে না।। তো আপনি বিয়ে করেন নি?? আমি গলায় আরও দুঃখী ভাব নিয়ে বললাম- না, আমার আর বিয়ে!! আমাকে কে বিয়ে করবে বলো??

মিলা কণ্ঠে উপহাস মিশ্রিত করে বলে- তা যা বলেছেন, আজকালকার মেয়েরা এত বোকা না যে আপনার মত ছেলেকে বিয়ে করতে চাইবে।। আমি আপনমনে মাথা নেড়ে বললাম- আচ্ছা তোমার বাবুর নাম কি? বাবুর না বাবুর নাম অরণ্যি।। আমি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলাম- মানে কি, এটা তোমার, আমার বাচ্চার নাম দেয়ার কথা ছিলো।। কেন তুমি ওর নাম অরণ্যি রাখলা।। এর কোন মানে হয়, এখন এই বাচ্চা আমার, আমাকে দিয়ে দাও, ব্যাস।।

মিলা আবার আমাকে ধমক দিয়ে বলে- ঐ চুপ থাকেন, আগে ছিলেন ফাউল, এখন হইছেন মহা ফাউল।। অরণ্যি নাম কি আপনি কিনে নিছেন নাকি, আজাইরা।। এত বাচ্চার শখ থাকলে বিয়ে করেন, গর্দভ বেটা কোথাকার!!

আমি মিলার ধমক খেয়ে চুপসে গেলাম, একটু হতাশাও ভর করেছে মনের মধ্যে।। মিলা তো সুযোগ পাইলেই আমাকে গর্দভ, ফাউল, বদমাইশ এসব বলে যাচ্ছে।। আবার ভাব ধরে, আপনি আপনি করে বলছে।। না এই অপমান আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়।। আমি একটু মায়া দেখিয়ে বললাম- চলো, বসি কোথাও, তোমার বাচ্চার যে স্বাস্থ্য, তাতে তো কোলে রাখতে রাখতে তোমার হাত ব্যাথা হয়ে যাবার কথা।। মিলা বিড়বিড় করে কি যেনো বললো।। এমন সময় কয়েকজন মহিলা হাউকাউ করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।। উনাদের আসার ভাব ভঙ্গি দেখে, আমি বেশ ভড়কে গেলাম।।

এসেই মিলার কোল থেকে ছোঁ মেরে বাচ্চাটাকে কেড়ে নিয়ে একজন একনাগাড়ে বলতে থাকলো- আরে আপা, আপনি রাইসাকে কোলে নিয়ে কই গেছেন, খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।। আর এভাবে মানুষের বাচ্চাকে কোলে নিবেন না।। নিজের জামাইকে বলেন বাচ্চা নিতে, তারপর ইচ্ছামত আদর কইরেন।। সারা মার্কেট ঘুরলাম, ভয়ে আমরা কান্না করে দিছি।।

উনার সাথে থাকা অন্য মহিলাগুলোও পারলে মিলাকে মারতে যায়।। আমি বেচারা কিছুই বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।। মহিলাগুলো আরও কিছুক্ষণ জ্ঞানের বাণী কচলিয়ে আমাদেরকে ছেড়ে দিলো।। আমি মিলার দিকে তাকিয়ে বললাম- ঘটনা কি, তুমি কি বাচ্চা চুরি করো নাকি?? মিলা আবার আমাকে ধমক দিয়ে বলে- ঐ ফাজিল পুলা, চুপ থাক।। এখন প্রেম চলে তোর কারও সাথে??

আমি সেই শুরু থেকেই এই মেয়ের ধমকের উপরে আছি, কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিলাম- না কে প্রেম করবে আমার সাথে।। তুমি ছেড়ে যাবার পর থেকে একাই তো আছি।। মিলা চট করে আমার কলার চেপে ধরে বলে- ভেরি গুড, চল বিয়ে করবো, তারপর বাচ্চা বানিয়ে এই বেটিগুলাকে দেখাবো, করবি বিয়ে?? আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি, কবে বিয়ে করবো, আর কবেই বা বাচ্চা নিবো, কি আজব আবদার!! আমি চুপ করে আছি দেখে, মিলা আরেক দফা হুমকি দিয়ে বলে- কি রে কথা বলিস না কেন?? আমি আমতা আমতা করে বললাম- তা করবো, কিন্তু উনাদের বাচ্চা তোমার কাছে কেনো ছিলো??

মিলি এবার বলতে শুরু করলো- আরে মার্কেটে ঢুকেই দেখি এই বাবুকে, ওই যে মহিলাদের দেখলা না উনাদের সাথেই ছিলো।। বাবুটা কত কিউট দেখছো না, আমার তো দেখেই মনে হলো চকলেটের মত একবারে চেটেপুটে খাই।। আমি উনাদের কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে আদর করতে ছিলাম, এরমধ্যে কে যেনো বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিয়ে দিলো।। আমি ভাবলাম, ভালো করে আদর করার জন্যে দিয়েছে, আমি কোলে নিয়ে এদিক ওদিক একটু করে চক্কর মেরে মেরে আদর করছি, দেখি উনারা ভ্যানিশ।। একবার তো বুচ্ছো শোভন, পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম।। আবার ভাবলাম, ভুল করে আমার কোলে দিয়েছে হয়তো, উনাদের খুঁজতে থাকলাম, আর প্রথমে পেলাম একটা বদমাইশকে।।

আমি ভ্রুঁ কুঁচকে বললাম- বদমাইশ আবার কে?? মিলা আমার হাতে হাত রেখে বলে- আর কে, তুমি বদমাইশ।। আমি কেঁশে গলা পরিষ্কার করে নিলাম।। দু’জন একসাথে শপিং মলের উপরের দিকে যাচ্ছি।। এমন সময় দেখি আমাদের সামনেই আরেকটা কিউট বাচ্চা, আমি প্রায় বাচ্চাটার কাছে গিয়ে আদর করতে যাবো।। দেখলাম, কে যেনো পিছন থেকে টেনে ধরলো।।

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মিলি বললো- আর নয় অন্যের বাচ্চাকে দলাই মলাই করা, তোমার হাতে কত জীবাণু থাকতে পারে।। তোমার স্পর্শ বাচ্চাটার ভালো নাও লাগতে পারে, তোমার অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া বাবুর গার্ডিয়েনের বিরক্তির কারণ হতে পারে।। সুতরাং, নিজের বাবু বানাও আর ইচ্ছামত আদর করে খাও।। ওকে!! আমি বললাম- ওকে!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত