গুজব

গুজব

সাজু স্যারের প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য রওনা দিচ্ছিলাম। এমন সময় অভির কল,
–হ্যালো রাসেল ?
–হুম বল।
–আলাদিপুর যাবি..?
-ক্যান ?
– আলাদীপুরে একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে।
-কি ঘটনা..?
-আরে লেবুরর গাছে কাঠাল ধরছে।
-যাবি নাকি.? আমি অজয়,সজল,নিলয়, যাচ্ছি।

আচ্চা তোকে পাচ মিনিট পর জানাচ্ছি বলেই কলটা কেটে দিলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কিছুক্ষন পর সাজু স্যারের প্রাইভেট ও আছে । সামনে আবার কলেজের পরীক্ষা। এসব ভাবনা যেই না শুরু করলাম দেখি মোবাইলের স্কিনে রুপার নামটা ভেসে উঠেছে। এই রুপা নামের মেয়েটার মাথায় মনে হয় আগুনের খনি আছে । মাথা অলটাইম গরম থাকে । কথায় কথায় আমারে কুত্তা হারামী বলে, হিরো আল্ম বলে। যাই হোক কল টা রিসিভ করে নেই। কল রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে,

–হারামী কই রে তুই? তাড়াতাড়ি স্কুল মাঠে আয়।
–ক্যান কি হইছে?
–,আমি মায়া,নিলু আর অবন্তী তোর জন্য অপেক্ষা করছি। আর আমরা স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছি । আজ প্রাইভেট হবে না।
-কি বলছিস এইসব ? আর প্রাইভেট ছুটি নিয়েছিস ক্যান।?
-তুই এত্ত বেশি কথা কস ক্যা? তোরে আসতে বলছি তুই এখন আসবি। আর সেটা পাচ মিনিটের মধ্যেই ।

কথা শেষ না হতেই ফোন কেটে দিল রুপা। কি আর করার, তাড়াহুড়ো করে স্কুল মাঠে রওনা দিলাম। স্কুল মাঠে গিয়ে দেখি অভি,অজয়,সুপ্ত আর সজলও সেখানে যোগ দিয়েছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না এরা সবাই লেবুর গাছে যে কাঠাল ধরেছে সেই কাঠালকেই দেখতে
যাছে।

আমি ভাবছিলাম আমরা বাস অথবা অটোতে করে যাব আলাদীপুরে। কিন্তু তা আর হলো না, তিন কিলোমিটার রাস্তা হেটেই যেতে লাগলাম। রুপার কথা হলো বন্ধুদের সাথে হেটে যাওয়ার মাঝে নাকি আলাদা একটা ফিলিংস আছে। মোবাইলের ক্যামেরায় ছবি বন্দী করতে করতে যাওয়ার মজাই নাকি আলাদা। তাই আমরা আলাদীপুরে রওনার দেওয়ার পথিমধ্যে অনেকগুলি সেলফি তুললাম। সেলফি তোলার পর আমি কয়েকটা পিক আপলোড দেওয়ার জন্য ফেইসবুকে ঢুকলাম। ফেইসবুকে ঢুকেই দেখি টাইমলাইনে অভির পোস্ট। আমাকে ট্যাগ করেছে সাথে আরো ৭২ জনকে। অভির ট্যাগকৃত স্টাটাস্টি ছিল এরকম, “আপনিও হতে পারেন আমাদের পথের সংগী আলাদীপুরের লেবুর গাছের কাঠাল দেখার জন্য। ” রুপা, আর অবন্তীকে দেখলাম সেটা শেয়ার ও করেছে। এদিকে স্যার ও পোস্ট মারছে, কি আজব দুনিয়া লেবুর গাছে কাঠাল আলাদীপুরে । স্যারের পোস্ট অনেকেই শেয়ার ও করেছে। আমার ফেইসবুক এখন লেবুর গাছের কাঠালের স্টাটাসে ভরপুর।

অবশেষে আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট হাটার পর আলাদীপুরে রওনা দিলাম। আলাদী পুরে গিয়ে আমাদের সমবয়সী এক বালককে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া লেবুর গাছে নাকি কাঠাল ধরেছে ওই বাড়ি কই বলতে পারবেন.? ছেলেটি হাত বাড়িয়ে আংগুল দিয়ে একটা জংগল ওয়ালা বাড়ি দেখিয়ে দিলেন। এরপর আমরা খুব আগ্রহের সাথে জংগোল ওয়ালা বাড়িতে গেলাম। এরপর বাড়িতে গিয়ে টিনের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,বাড়িতে কেউ আছেন ? কিছুক্ষন পর একজন মধ্য বয়স্ক লোক বের হলো।

-কি চাই তোমাদের ?
-আচ্ছা চাচা আপনাদের বাড়িতে নাকি লেবুর গাছে কাঠাল ধরেছে ?
-কি বললে,?লেবুর গাছে কাঠাল ?
-জী চাচা, লেবুর গাছে কাঠাল।
-আচ্ছা দুইটা মিনিট অপেক্ষা কর আমি দেখাচ্ছি।

দুই মিনিট না যেতেই চাচাজান ইয়া বড় একটা লাঠি নিয়ে আমাদের ধাওয়া করতে লাগলেন,আর বলতে লাগলেন। হারামীর জাত আইজক্যা তোগো লেবুর গাছের কাঠাল বাইর করমু। কোন রকম নিজেদের জান নিয়ে চাচার হাত থেকে বাচলাম।

পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম ঘটনা আসলে অন্য রকম। লেবুর গাছে কাঠাল ধরেছে এমন কিছু না। আসলে আমরা যার বাড়িতে গিয়েছিলাম তার নাম লেবু মিয়া। আর লেবু মিয়ার কাঠাল গাছ আছে। সেজন্যই মানুষ তাকে ক্ষেপানোর জন্যই বলে “লেবুর গাছে কাঠাল ধরেছে।
নীতিকথা-গুজবে কান দিবেন না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত