আমি সায়ন্তনী,সায়ন্তনী সেন। আমার বাড়ি জলপাইগুড়ি। কিন্তু পড়াশোনার সুবাদে কলকাতায় মামারবাড়িতে থেকেছি বেশ কয়েক বছর। ক্লাস টু থেকে ক্লাশ টুএলভ। তারপর, বাবা পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছিল পুনেতে। আমি প্রথমে রাজী হতে চাইনি। বাবা বলেছিল নিজের স্বপ্ন গুলোকে যদি সত্যি করতে চাও তবে যা বলছি করো। আমার জন্য, বা তোমার মায়ের জন্য নয়। নিজের জন্য। বুঝেছিলাম যাওয়া টা দরকার।
তার, আগে বলি অংশুর কথা। আমি তখন ক্লাশ সেভেন এ পড়ি। আমার বড়ো মামা এক হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। ওনার কাছেই পড়তে আসত অংশু। ও তখন ক্লাশ এইট। বেশ ভালো লাগত ওকে। টুকটাক কথা বলত। আমার মামাবাড়ির নাম মিনি, ও আমায় তাই বলেই ডাকত। আমায় ফুল এনে দিত। ভেবেছিলাম, খুব ভালো বন্ধু ও আমার। আস্তে আস্তে এভাবেই বড়ো হতে থাকলাম।
আমি তখন ক্লাশ ইলেভেন, ও টুএলভ। ততদিনে বুঝে গেছিলাম এটা কোনো বন্ধুত্ব নয় ভালোবাসা। তারপর, একদিন ও আমার বাড়িতে এল মামার একটা বই ফেরত দিতে। বাড়িতে কেউ ছিল না। দুই মামা ই স্কুলের টিচার, আর ছোটো মামী পড়াশোনা করছে আর বড়ো মামী ভাই কে আনতে স্কুলে গেছে। আর দাদু দিদা কাশী গেছিলেন। অংশু আসতেই আমি ওকে বললাম, কেউ বাড়ি নেই। ওর চোখ চকচক করে উঠেছিল। বুঝিনি, যে ওর চোখে কি লেখা ছিল! আমার, ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ও ছুঁয়েছিল আমায়। প্রথমে বাধা দিলেও পরে কিছু বলিনি। ভালোবাসতাম আর খুব বিশ্বাস করতাম ওকে।তারপর থেকে এরকম হত মাঝে মাঝেই। বড়ো মামা ওর বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিল, তাই পড়া বাদেও অন্য সময় অংশু আসত আমাদের বাড়ি।
কখনো কেউ না থাকলে ঘরে, কখন ও ছাদের স্টোর রুমে আমাদের সেই এক কাছাকাছি ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত তৈরী হত। মাঝে মাঝে মনে হত, যেটা অংশু করে সেটাকেই তো মা ছোটোবেলায় ব্যাড টাচ্ বলে শিখিয়েছিল। কিন্তু মা তো এটাও বলেছিল, তুই বুঝতে পারবি মিনি। কোনটা গুড আর কোনটা ব্যাড টাচ। তবে আমার তো অংশুর ছোঁয়া ব্যাড টাচ লাগেনা। আমার একটা বন্ধু ছিল, নিমি। ও আমাদের পাশের বাড়িতেই থাকত। এক ই স্কুল,এক ই টিচার ছিল আমাদের। ওকে সব কথা বলতাম আমি। মা,বাবার থেকে দূরে থেকে একমাত্র বিশ্বাসের জায়গা ছিল ঐ নিমি ই।
আমাদের তখন, টুএলভ এর পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। অংশুর তখন কলেজ। আর ভালো ভাবে দেখা হতনা। তারপর, হঠাৎ একদিন বড়ো মামার কাছে শুনলাম ও নাকি বিদেশে চলে গেছে পড়তে। খুব কষ্ট হয়েছিল, আমায় ছেড়ে চলে গেল অংশু? এত ভালোবাসলাম, সবকটুকু দিলাম যা ও চেয়েছিল। তবুও, এরম ভাবে ঠকে গেলাম নিজের ভাগ্যের কাছে। বড়ো মামা, একদিন খাবার টেবিলে বলল, অংশুর তো ক্লাশ ইলেভেন দিয়েই মোটামুটি ঠিক ছিল ও বিদেশ যাবে। আরো চমকে উঠলাম। তার মানে ও সবটা জেনেও ইচ্ছে করে ঠকিয়েছে আমায়! সবটা পরিস্কার হয়ে উঠেছিল চোখের সামনে। তারমানে, ও আমায় নয়।
আমার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, প্রতঙ্গকে ভালোবাসত। তারপর, বাবার কথায় একেবারে পুনে। পুনে যাওয়ার, বছর পাঁচেক পর আবার এসেছিলাম মামাবাড়ি। কোনোকিছুই বদলায়নি, সবার আদর, সেই রাধাচূড়া গাছ সব এক ই আছে। শুধু অংশুর দেওয়া কথাগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই আর। তখন, আমি এস্টাবলিস্ট। মামাবাড়িতে মামীরা,একজনের ছবি দেখিয়েছিল আমায় সম্বন্ধের জন্য। না বলে দিয়েছিলাম, অংশু ই তখন ও মনে অনেকটা জায়গা দখল করে ছিল। চাইলেও, আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারত না।
তারপর, ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখলাম নিমি কে। বিয়ে হয়ে গেছে, তবে মুখটা বড্ড শোকানো। আমায় এতদিন পর দেখতে পেয়ে, ডাকল ওর বাড়ি। ওর মা নাড়ু খেতে দিল। তারপর শুনলাম ওর কথা। ওর হাসবেন্ড বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। কিন্তু নিমিকে একটুও ভালোবাসেনা, অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটায় কিছু বললেই নিমিকে মারে আর বলে ছোটোবেলায় ওর নাকি এক প্রেমিকা ছিল, যে ওর শরীর চেয়েছিল শুধু। শরীর নিয়ে খেলেছিল একটু ও ভালোবাসেনি। তাই, ও নাকি ওর বৌ, নিমিকে ভালোবাসতে পারেনা। সেই ছোটোবেলার প্রেমিকা নাকী ভালোবাসা নষ্ট করে দিয়েছে। নিমি র বাবা তাই ওকে ওদের বাড়ি এনে রেখেছে, পাঁচমাস হল। আর, ওর হাসবেন্ড কোনো খবর ও নেয়নি, আসেওনি। তাই, নিমির বাবা ডিভোর্সের চেষ্টা করছে। সব শুনে আমিও বলেছিলাম আর না ফিরতে, ও আর চাইছিল না। ওর হাসবেন্ডকে দেখতে চাইলাম। ও ছবি দেখাল।
ছবি, দেখে আমার মাথায় সব গুলিয়ে গেছিল। এ তো অংশু, যে আমায় লোভ দেখিয়ে, স্বপ্ন দেখিয়ে শরীর ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল। ও নাকি, নিমির হাসবেন্ড। অংশুর কথা নিমি জানত, কিন্তু ওকে দেখেনি কোনোদিন ও নিমি। যদি দেখত তাহলে হয়তো অংশু নিমিকে বলেছে, আমি নাকি ওর শরীর নিয়ে খেলেছি, সত্যি মানুষ নিজের লোভ আর স্বার্থের জন্য কত নীচে নামতে পারে! নিমি কে বললাম, যাবি আমার সাথে পুনে? ও এককথায় রাজী হয়েছিল। ঠিক করে নিয়েছিলাম ওকে নিয়ে যাবো।
ছোটোবেলা দিয়েই আমার ইচ্ছে ছিল আমি বড়ো ডাক্তার হব। হয়েও গেছিলাম। ছোটোবেলায় আমি আর নিমি ঠিক করেছিলাম দুজনেই একসাথে ডাক্তারী পড়ব আর বিদেশ যাবো। নিমিও পড়াশোনা করেছে তবে এম.বিবি.এস পড়তে পারেনি। এখন আমি আর আর নিমি পুনেতে থাকি। আমার এখানকার হসপিটাল গুলোতে নাম ডাক হয়েছে বেশ, 85% বার্ন কেস গুলো আমিই সারিয়ে তুলি। আর নিমি আমার পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট। সমস্ত অপারেশনের টাইম, কোন হসপিটালে কবে আমার চেম্বার, করে ডক্টরস্ মিটিং সব খোঁজ ও রাখে আমার।
আমার কেনা, 3bhk ফ্ল্যাট টাতে এখন দিব্যি ভালো আছি আমরা দুজন। শুধু নিমিকে কোনোদিন ও জানতে দিইনি ওর হাসবেন্ড ই আমার অংশু। একটা নারী কে জীবনে ভালো থাকার জন্য কখন ই কোনো পুরুষ মানুষের দরকার হয়না। দরকার হয় একটা ভালো বন্ধুর দরকার হয় একটা সৎ বন্ধুত্ব। যেটা আমি নিমির মধ্যে আর নিমি আমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে।