নতুন নতুন কোলবালিশকে তালাক দিয়েছি।বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ি আসলে প্রায়ই একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেটা হলো সাদিয়ার বোনেরা সবাই এসে একই আবদার করে সেটা হলো…..
-দুলাভাই আজ আপু আমাদের সাথে ঘুমাবে।কত দিন আপুর সাথে ঘুমাই না।আপনিও অনেক নিষ্ঠুর আপুকে সেই যে নিয়ে গেলেন আর আসেন না।
দুষ্টু শালিকাদের মুখে মিষ্টি মধুর নিষ্ঠুর কথাটা শুনে আমার নিজের প্রতি কেমন ভিলেন ভিলেন লাগলো তাই ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে তাকে তাদের সাথে যেতে বললাম।বৌ তাদের বললো তোরা যা আমি আসছি। যাওয়ার সময় মুখের কোণে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বলে গেলো….
-একা একা ঘুমাতে পারবে তো….??
কথাটা বলেই সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমিও কপাল চাপড়াতে থাকলাম।এতো শীতের রাতে সদ্য বিয়ে করা কোলবালিশ ছাড়া ঘুমনো যে কত কষ্টের তা একমাত্র সেই বোঝে যায় শালিকা আছে।যেহেতু বিয়ের আগে কোলবালিশকে তালাক দিয়েছিলাম তাই আজ তার কাছে যেতেই চিৎকার করে বললো শয়তান তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না…..!!
কি কষ্টে যে রাতটা কাটালাম আমি জানি আর আমার কম্বলটা জানে ভাগ্য ভালো কম্বলের সাথে আমার কোনো মনোমালিন্য হয় নাই না হলে….???
সকালে খাবার টেবিলে নাস্তা করার জন্য আসতেই দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে।
কোনো মতো প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছিলাম এমন সময় সাদিয়ার মেজ বোন পেটে খোচা দিয়ে বললো দুলাভাই পোড়া গন্ধ কোথা থেকে আসে খাটের তলায় আগুন লাগান নাই তো আবার…??
তার কথা শুনে খাবারটা গলা আবধি গিয়েই ব্রেক করলো।খুক খুক করে কাসতে শুর করাতে সাদিয়া দৌঁড়ে এসে মাথায় হালকা চাপড় দিতে দিতে পানি খাওয়ালো।তার বোনকে রাগের অভিনয় করে একটা ধমক দিলো।
নাস্তা করে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যপার কি…??কিছুটা ভয় আর লজ্জা মিশিয়ে বললো….
-আসলে রাতে ওরা সবাই জিজ্ঞাসা করছিলো তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো…??তাই আমি….
তাই আমি কি…??
-আমি ওদের বললাম অনেক ভালোবাসে।আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।ওরা তখন বললো “সে তো নতুন বিয়ে করলে সবাই এমন করে”তখন বললাম আরে তোর দুলাভাই আমাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারে না।পাগলামি করে…..
তখন তুমি কি বলছো….??
-কি বলবো যা সত্যি তাই বলছি….!!
কি সত্যি বলছো…??
-এই যে তুমি একা থাকতে পারো না বলে খাটের তলায় আগুন লাগাতে চাও।এই পাগলামি করেই তো বিয়ে করেছো আমাকে…..
ও শিট শিট….তোমাকে একথা কে বললো..???
-কে আবার আম্মা বলেছে।বিয়ের দিন যখন আম্মাকে বললাম আমার তো মা নেই তাই আজ থেকে তুমিই আমার মা।তাই আপনাকে তুমি করে বললাম।
~আমার একটাই আপসোস যে আমার কোনো মেয়ে নেই আজ আর সেই আপসোস নেই।আজ থেকে তুই আমার মেয়ে।
-আম্মা আজ আমি তোমার সাথে থাকবো….!!প্লিজ আম্মা প্লিজ….
~কি বলিস পাগল হয়েছিস নাকি আমার সাথে থাকবি…??আরেকটু দেরি করলে হারামিটা খাটের তলায় আগুর দিলো বলে….
সেদিন আম্মার কথা শুনে অনেক জোরা জুরির পর সব খুলে বলে ”
তুমি নাকি একদিন সন্ধ্যার পর অনেক কাঠ কুট এনে খাটের নিচে জমা করে আগুন লাগাতে চাইছিলে…?? তার পর আব্বা জিজ্ঞাসা করায় বলেছিলে তোমার নাকি রাতে অনেক ঠাণ্ডা লাগে একা একা নাকি শরীর গরম হয় না তাই……
সেজন্যই তো তাড়া তাড়ি তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিলো….
এতোদিনে ব্যপারটা বুঝলাম কেন এতো দ্রুত আমাকে বিয়ে দিলো।আমি ওমনটা করেছিলাম কারণ দাদি দেখি প্রতি বছর শীত কালে একটা মাটির হানকিতে গরম ফুলকি নিয়ে ঘরে খাটের তলায় রেখে দেয় আর সকালে বলে “কাইল যেই ঠাণ্ডা পরছিলো যদি আগুন না নিতাম তাইলে মনে হয় এতোক্ষণে পটল তুলতাম”।সেটা শুনেই তার পন্থা অবলম্বন করতে চাইছিলাম আর আব্বা আমারে কি ফাঁন্দে ফালাই দিলো।
কষ্টের বলছি কারণ রোজ সাদিয়ার বোনেরা এসে বলে দুলাভাই আমাদের মা ছোট বেলায় মারা যাওয়ার পর থেকে আপুই মায়ের অভাব পূরণ করছে তাকে ছাড়া ঘুমাতে পারি না।বলেই তাকে নিয়ে যায়।ওদিকে আমি…..মনে দুঃখ্যে গান ধরি….
আমার জিবনের একটাই সম্বল
বিয়ে করা বৌ না,সেটা আমার কম্বল