কি ব্যাপার আপনার শার্টের বুকের বাটন খোলা কেনো??
আসলে স্যার গরমের কারণে খোলে রেখেছিলাম তাই মনে নেই,,,,,
আপনি একা তো আর গরমের জ্বালায় জ্বলছেন না আমরা সবাই জ্বলছি,,,,
জ্বি স্যার তবে আমার মত ৪৫মিনিট হেঁটে হয় তো এই গরমে ইন্টারভিউ দিতে আসেননি কখনও,,,,,,??
মানে,,??
বাসা কোথায় আপনার,,,??
এই তো স্যার কাউরান বাজার বাসা নয় মেসে থাকি,,,,
তো আপনি ২৫টাকার বাস ভাড়া বাঁচিয়ে হেঁটে চলে আসছেন,,,??
জ্বি স্যার,,,,
এই রৌদ্রের মাঝে এতটা পথ হেঁটে আসলেন কেমন করে,,,??
সবাই যেমন করে হাঁটে,,,,,
আরে মশাই আপনি তো দেখছি ভিন্ন ধরণের মানুষ,,,,,??
কেমন স্যার,,,??
এই যে ২৫টাকার বাস ভাড়া বাঁচালেন,,,,,
এটা স্যার আজ নতুন নয়,,,,,,
সব ইন্টারভিউ দিতে কি হেঁটে হেঁটে যান,,,??
হ্যাঁ স্যার। অনেক সময় যেতে যেতে লেট হবার কারণে ঠিক সময় পৌছাতেও পারি নাই। আবার কতগুলাতে ইন্টারভিউ দিবার পরও চাকরি হয় নাই,,,,,,
না হবার কোনো কারণ,,,,??
তেমন কোনো বিশেষ কারণ নাই স্যার কারণটা হচ্ছে পকেট ভরতি করতে পারি নাই,,,,,
ওহ,,,,
জ্বি স্যার। পকেট ভরতি করবার মত টাকা যদি আমার কাছে থাকতো তাহলে কখনও চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতাম না,,,,,
হুম বুঝলাম। এখন আমরাও যদি তেমনটাই করি,,,??
তাহলে প্রত্যেক বারের মত অফিস থেকে বের হয়ে যে পথ ধরে হেঁটে এসেছিলাম আবারও সেই পথ ধরে হাঁটতে থাকবো। আসার সময় পানি তৃষ্ণা পেয়েছিলো তাই যাবার সময় পাশের নাস্তার দোকান থেকে দুই তিন গ্লাস পানি পান করে চলে যাবো,,,,
আবার এতটা পথ হেঁটে যাবেন,,,??
হ্যাঁ স্যার,,,,
কেনো পকেটে টাকা নাই,,,???
আছে মাএ ২৫ টাকা,,,,
তাহলে সেই টাকা দিয়েই তো যেতে পারবেন,,,,,
নাহ স্যার এই ২৫ টাকা থেকে ৩টা গোল্ডলিফ সিগারেট আর একটা দিয়াশলাই কিনবো তাহলে রাতের হাঁটার খরচটা মিটে যাবে,,,,,
আপনি সিগারেট খান,,,,??
হ্যাঁ,,,,
দিনে কয়টা লাগে,,??
দিনে খাই না শুধু মাত্র শুক্রবার বাদে,,,,,
কেন শুক্রবার কি কোনো বিশেষ দিন,,??
নাহ শুক্রবার জসিম ভাইয়ের সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই সকাল থেকে রাত অবদি ওনার সিগারেটের প্যাকেটটা আমার কাছেই থাকে,,,,,
হুম বুঝলাম,,,,,
তো মশাই এতদিন কোথাও কাজ করেছেন,,,?
নাহ স্যার,,,,
কেনো,,,?
শুধু ইন্টারভিউই দিয়ে গেলাম চাকরি আর হয়নি,,,,,
এটা যদি না হয়,,,?
তাহলে মেসের মালিককে বলতে হবে আর দুইমাস পর একবারে ৬মাসের ভাড়া পরিশোধ করবো ইনশাল্লাহ,,,,,,
আপনার বাড়িতে কেউ নেই,,??
আছে শুধু মাত্র মা,,,,,
আর কেউ,,,?
দুই বোন আছে শশুড়বাড়ি,,,,,
তাহলে আপনার লেখা পড়ার খরচ কেমন করে চালালেন,,,,,,,,??
তখন টুকটাক টিউশনি করতাম এখন আর করি না অনেকটা ভবঘুড়ে হয়ে গেছি,,,,
,
ওহ আপনার সার্টিফিকেট গুলা দেন তো দেখি,,,,,
নিন,,,,,, ( সার্টিফিকেট গুলো ওনার দিকে বারিয়ে দিলাম )
মস্ত বড় চেয়ারটাতে বসা লোকটা টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। মুচকি
একটা হাসি দিয়ে বলে ওঠলেন,,,,
পানিটা খান,,,,,
আমি কিছু না বলে নিঃশব্দে পানিটা পান করে নিলাম।
রুমের এসিটা থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস বের হচ্ছে শরিরের ঘাম শরিরেই শুকিয়ে গেলো। এই রুম থেকে বের হতেই একটা বড় ধরনের ধাক্কা খাবো। ধাক্কাটা হলো বাইরের গরম অবহাওয়ার,,,,
লোকটা মন দিয়ে আমার সার্টিফিকেট গুলা দেখছেন কিন্তু কিছুই বলছেন না,,,,,,
হঠাৎ মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন ফাইলটা আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বললেন,,,,
চাকরিটা না হলে কি করবেন আর হলে কি করবেন,,,,,,??
না হলে সোজা বের হয়ে চলে যাবো আর হলেও বের হয়ে যাবো। তবে চাকরিটা হলে মুখের কোনে একটা মুচকি হাসি থাকবে আর না হলে মুখটা মলিন হবে তবে হাসিটা থাকবেই,,,,,,
কাজটা করতে পারবেন তো মানে আবার ছেড়ে দিবেন না তো এত এত কাজের চাপে একাকিত্বের ভয়ে,,,,?
কাজের চাপে কাজ ছেড়ে দিবার প্রশ্নই আসে না তবে একাকিত্বটাকে প্রচন্ড ভয় পাই। চারপাশে প্রচুর লোক আছে একাকিত্ব ছুতেও পারবে না,,,,,,
আচ্ছা। আপনার কথা গুলো বেশ রহস্যজনক,,,,
কি জানি স্যার তবে সবাই এটাই বলে,,,,
হুম।
আমাদের রিসেপশনে যাবার সময় একবার দেখা করে যাবেন এবার আপনি আসতে পারেন,,,,
ধন্যবাদ,,,,
রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। যেটার ভয় ছিলো সেটাই হলো গরমের একটা বেশ বড়সর ধাক্কা খেলাম। তবে নিজেকে সামলে নিয়েছি এই গরম সহ্য করার মত ক্ষমতা আছে। বড় লোকের মত মোমের তৈরি শরির নয় আমাদের চামড়া বেশ শক্ত পোক্ত সহজে কাঁটাছিঁড়া হয় না,,,,,
রিসেপশনে একটা ভদ্র লোক বসে আছে।
রিসেপশনের সামনে দাঁড়াতেই লোকটা আমাকে বললেন,,,,,,,
আপনার ফাইল এবং ফোন নাম্বারটা বলুন,,,,,,
ফাইল এবং ফোন নাম্বারটা বলে অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম। রাস্তায় প্রচন্ড রৌদ্রের তাপ রৌদ্রের
তাপটা একদম সোজা কপাল বরাবর লাগছে। অফিস থেকে বের হতে না হতেই ঘামে চুপসে গেছি।
শার্টের অবস্থা নাজেহাল। এই গরমে কোনো সুস্থ্য মানুষ বাসা থেকে বের হবে না। তবে গরিবেরা সুস্থ্য না এরা অসুস্থ্য। এক বিশেষ ধরণের রোগে আক্রান্ত। রোগটার নাম হচ্ছে ” অভাব “।
এই রোগের কোনো ওষধ নাই তাই এই রোগ থেকে মুক্তির কোনো পথও নাই,,,,,,
রাস্তার পাশে নাস্তার দোকান থেকে দুই গ্লাস পানি পান করে নিলাম। এই পানির স্বাদ এবং অফিসের পানির
স্বাদ অনেকটা ভিন্ন। এই পানিটা কেমন জানি নুনতা নুনতা আর অফিসেরটা একটু ভিন্ন। অবশ্য ঢাকা শহরে এক গ্লাস পানি পান করলেও ২ টাকা দিতে হয়। তবে নাস্তার দোকানের পানির জন্য কোনো মূল্য দিতে হবে না,,,,,,,
রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছি কপাল থেকে ঘাম গড়িয়ে ঠোটের নিচ দিয়ে এসে সোজা বুকে পরছে,,,,
শার্টের বাটনটা এখনও লাগানো তাই গরমটা একটু বেশিই লাগছে। রাস্তা দিয়ে হাটছি আর আশেপাশে লোক গুলার দিকে বেশ ভালো করে দেখছি। আমার মত অনেক লোকই হাতে ফাইল নিয়ে হাঁটছে। দেখে মনে হচ্ছে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে বা দিয়ে ফিরছে। কিছু কিছু লোকের মুখে অনেকটা হাসি খুশি ভাব আবার কিছু লোকের মুখটা বাংলার পাঁচের মত হয়ে আছে। কেউ কেউ হাতে চাকরির জয়েন লেটার নিয়ে ছুটে চলছে মিষ্টির দোকানে আবার কেউ কেউ হাতে পরিক্ষার সার্টিফিকেটের ফাইল নিয়ে ছুটে চলছে শেষ গন্তব্য স্থলে,,,,,,
আমিও ছুটে চলছি শেষ গন্তব্য স্থলে মানে মেসের দিকে। রৌদ্রের তাপটা ক্রমশ বাড়ছে কমার নাম গন্ধ নাই। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে রৌদ্রে আবারও গলা শুকিয়ে আসছে। রাস্তার পাশে একটু খালি জায়গা
দেখতে পেয়ে গাছের ছায়াতে বসে পরলাম।
গাছের নিচে ছোট একটা বেঞ্চ রাখা সাথেই একটা চায়ের দোকান। বেঞ্চের একপাশে একটা বৃদ্ধ লোক বসে আছে। বয়সটা অনুমানিক ৭০এর উপর হবে দেখে মনে হচ্ছে হাঁটা চলা ত্রখনও করতে পারে। লোকটার চোখের কোনে পানির মত কিছু একটা চোখে পরলো। পানি দেখে মনের ভিতরটা একটা মোচর দিয়ে ওঠলো কৌতুহল জাগছে মনের মাঝে। কৌতুহলের মাত্রাটা বাড়ছে কোনো কিছু না ভেবে হুট করে জিজ্ঞেস করে বসলাম,,,,,
চাচা কাঁদছেন,,,,??
মাথাটা উঁচু করে আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। বাম হাত দিয়ে চোখের পানিটা মুছে মুচকি একটা হাসি দিলেন।
হাসিটা ভুবন ভোলানো হাসি তবে এই হাসির মাঝে এক পৃথিবী সমান রহস্য বিদ্যমান তা পরিষ্কার ভাবে বুঝা
যাচ্ছে,,,,,
কই না তো চাচা কাঁদছি না আমি। আমি তো ভাবছিলাম,,,,,
( ঠোটের কোনে হাসি )
হ্যাঁ চাচা আমি এতক্ষন সেটাই দেখছিলাম,,,,,,
কি দেখতে ছিলা,,??
আপনার হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকা এক বুক কষ্ট বেদনা কান্না অভিমান,,,,,
কই না তো,,,,,,,
আমিও এটাই বলি সবাইকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে ” মন খারাপ দোস্ত ” আমি হেসে উওর দেই ” কই
না তো “,,,,,
হু বাবা পৃথিবীটা বড়ই রহস্যময় এর রহস্যের কোনো শেষ নেই,,,,,
শেষ বয়সে হঠাৎ এই কথা কেন চাচা,,,,??
আজকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিলো চাচা জীবনের শেষ মুহূর্ত্ব গুলো কাটানোর জন্য বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হচ্ছে,,,,,,
কেন বাড়িতে চাচি নাই বা সন্তান,,,,,
তোমার চাচি আমারে ছাইড়া চলে গেছে সেই কবে আজ ছেলে আর ছেলের বউ আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। আমি নাকি বোঝা হয়ে গেছি ওদের উপর,,,,,,
তা এই ভর দুপুরে এখানে কেন শেষ কিছু মুহূর্ত্ব ছেলে ছেলের বউ আর নাতি-নাতনিদের সাথে
কাঁটাতেন,,,,,,,?
ছেলে বাসা থেকে নিয়ে আসছে সামনেই গেছে সি এন জি আসতে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে
যাচ্ছে,,,,,
তাহলে চাকরির মেয়াদ শেষ চাচা,,,,?
হু চাচা। যখন ইন্টাভিউ দিয়া চাকরিতে ডুকছিলাম তখন খুবই ভালো ছিলাম সবার কাছে ছোট পরিবার তিন জনের সংসার। তোমার চাচি আমি আর ছোট ছেলে কতই না স্বপ্ন ছিলো তোমার চাচির ছেলেকে নিয়ে।
আজ সব স্বপ্ন দুস্বপ্ন,,,,,,
চোখ দুটা ছলছল করছে চাচার যেকোনো সময় বর্ষা নামতে পারে। পানিতে কানায় কানায় ভরতি চাচার দুই
চোখ মুখটা মলিন হয়ে আছে। নিজের প্রিয় মানুষদের সব চাইতে বেশি যে সময়টাতে প্রয়োজনই তখনই তাদের পাশে পাচ্ছে না। আজ বৃদ্ধ বলে সবার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে,,,,,,
চাচা যাই ছেলে চলে আসছে,,,,,,
সাবধানে থাকবেন চাচা,,,,,,
মুখটা মলিন বহু কষ্টে মুখ থেকে একটা হাসি বেরিয়ে আসলো। কান্না লোকাতে না পেরে পাঞ্জাবীটা মুখে চেপে ধরলেন।
জীবন নামক চাকরি জীবনে আজ ওনার মেয়াদ শেষ। অবসর নিতে ইচ্ছা না থাকার পরও এক প্রকার
বাধ্য হয়ে অবসর নিচ্ছেন। লোকটার চলে যাবার পথ পানে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। ছেলে আগে আগে হাঁটছে বাবা পিছনে পিছনে। বাক্সপেটরা হাতে নিয়ে ছেলে শু শু করে হেঁটে যাচ্ছে বাবা পাঞ্জাবীর কোনটা
দিয়ে চোখের পানি মুছেই চলছে,,,,,,
” যদি ছেলে দেখে ফেলে যে বাবা কাঁদছে তাহলে হয় তো কষ্ট পাবে “।মনে মনে এটাই ভাবছে বৃদ্ধ বাবা। বাপের পায়ে কমদামি সেন্ডেল ছেলের পায়ে দামি সু-জুতা। বাপ ছেলের হাঁটা দেখে চাচার অতীতে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
কোনো একসময় বাপ ছেলের হাত ধরে রাস্তার পাশ দিয়ে এভাবেই হেঁটে চলে ছিলো। কেমন করে চলতে হয় কেমন করে হাঁটতে হয় কেমন করে রাস্তা পার হতে হয়। আজও ছেলে ঠিক তেমন করেই হাঁটছে পার্থক্য শুধু ছেলে আগে বাপ পিছে। ছেলে বাক্স হাতে হাঁটছে বাপের হাত না ধরে নিজেই একা একা রাস্তা পার হচ্ছে,,,,,,,,,
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে বাইরে শীতল বাতাস বইছে আমি হাঁটছি। দুপুরে মেসে আসার পর আর বের হওয়া
হয়নি এখন বের হলাম। ফোনটা বাজতে শুরু করলো পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখলাম একটা অপরিচিত নাম্বার। সাধারণত অপরিচিত নাম্বার দেখলে আমি রিসিভ করি না তবে আজ কি মনে করে জানি রিসিভ করলাম,,,,,
হ্যালো কুয়াশা”বলছেন,,,??
জ্বি বলছি আপনি কে,,,?
আপনি সকালে যে ইন্টারভিউ দিয়ে গিয়েছিলেন আমি সেখান থেকে বলছি,,,,,,
জ্বি বলুন,,,,?
আপনার চাকরিটা হয়েছে পরশু দিন থেকে জয়েন করতে পারেন,,,,,,
ধন্যবাদ,,,,,,
ফোনটা কাঁটতেই একটা মেসেজ আসলো।
অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজটা সো করতেই লেখা,,,,,,
” এবার থেকে আর রৌদ্রে হেঁটে কোথাও গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হবে না। চাকরি পেয়েছেন মশাই তাই বাসে করেই অফিস আসবেন ”