জ্যৈষ্ঠ মাসের এক বিকেলে সখীপুর বাজারে জহুরুল ইসলাম নতুন রিকশা কিনেছে। রঙিন হুডজুড়ে আঁকা গাছপালা, ফুল আর লতাপাতার ছবি। খরচ কম পড়ায় জহুরুল এই রিকশা কিনে নিয়েছে বুদ্ধি করে।
গত বৈশাখে গ্রামের বিলে সারাদিন দল বেঁধে পরের ক্ষেতে ধান কেটেছে সে। উদয়াস্ত কামলা খেটেছে। তখন কিছু টাকা জমেছিল। সেই টাকায় আজ পর্যন্ত ভালো-মন্দ খেয়ে আসছে। আরো কিছুদিন মোটামুটি চলে যাবে।
পাড়ার সবার ঘরে ঘরে গোলাভরা ধান। কাঁচা ধানের মিষ্টি গন্ধে সবার উঠোন ভরে উঠেছে। অথচ জহুরুলের গোলায় ধান নেই। বোশেখমাস কেটে গেছে। এখন তার উপার্জনের দ্বিতীয় কোনো পথও নেই। সে তাই বুদ্ধি করে রোজগারের টাকায় একটা রিকশা কিনেছে। এখন থেকে সে নেত্রকোণা জেলা শহরে সারাদিন রিকশা চালিয়ে শূন্য পকেটে টাকা ভরবে। সংসারে, অভাবের কোনো গতি করতে না পেরে জহুরুলকে বেছে নিতে হয়েছে এই পেশা।
অথচ একসময় উত্তরের বিলে তার বাবার অনেক জমি ছিল।ভাগ্যের প্যাঁচে পড়ে আজ তাকে শহরের পাকা রাস্তায় রিকশার প্যাডেল চাপতে হচ্ছে। বাবা বেঁচে থাকতে আর দশজন কৃষকের মতো ভালো-মন্দ খেয়ে দেয়ে সুখের ভেতর দিন কাটিয়ে দিত তারা। কোনোদিন দুঃখ তাদের স্পর্শ করে নি।
জহুরুলের বাবা তোবারক আলির এক ভুলে তাদের সেইসব সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গেছে। জীবিতকালে তোবারক আলি জুয়াড়ি ছিল। সংসারের কাজকর্ম ফেলে সমস্তদিন সে সিগারেট টেনে বেড়াত। আর কয়েকজন মিলে বাজারের আড্ডাঘরে বসে জুয়া খেলত সারা রাত।
সেই জুয়ার ফাঁদে পড়ে তোবারক আলি সংসারের সমস্ত টাকা জলে ফেলেছে। খোয়াড়ের গরু বেঁচেছে।
একদিন তোবারক আলির ছোটভাই মোবারক আলি ভয়ে ভয়ে বলেছিল, ভাইজান, জুয়া খেলে অনর্থক টাকা ফেলতাছেন!
তোবারক তখন আরক্তচোখে তার দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলল, তোর কি কোনো সমস্যা হইতাছে? তোর টাকা দিয়া তো আর খেলতাছি না। আাব্বাজান দুইজনের সম্পত্তি আলাদা আলাদা ভাগ করে দিয়া গেছেন। তোর ভাগে যা যা পড়ছে, তাই নিয়া তুই পড়ে থাক্!
ভাইজানের মারমুখো ভঙ্গি দেখে ফুটো হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো মোবারক আলি চুপসে গেল।
এক মিষ্টি ভোরে সারারাত জুয়া খেলে তোবারক আলি বাড়ি ফিরল বিধ্বস্ত চেহারায়। চোখ লাল। শার্টের বোতাম খুলে এলোমেলো হয়ে আছে। ভোরবেলার পাতলা অন্ধকার তখনো পুরোপুরি কাটে নি। চারপাশ কেমন ঠাণ্ডা। লতিফা উঠোনে চুলো ধরিয়ে হলুদ বাটছিল। আচমকা স্বামীর এই অবস্থা দেখে ছুটে এসে আতংকিত গলায় সে বলল, কী হইছে জহুরুলের বাপ?
তোবারক আলি কিছু বলে না। তার মাথায় যেন একসঙ্গে সাত আসমান ভেঙে পড়েছে তখন ।দুশ্চিন্তায় সে পুরোপুরি গুম হয়ে গেছে।
ধীরে ধীরে মাটির বারান্দায় গিয়ে ধপাস করে সে বসে পড়ে ।তারপর হঠাৎ আর্তনাদ করে ওঠে, সব গেছে গা। খেলায় বাজি ধরে ক্ষেত-খামার, গরু-বাছুর সব হারাইছি!
সেই ভোরে জহুরুলের মা সারা বাড়ি কাঁপিয়ে দাপাদাপি করে কেঁদেছিল।তার কান্নার শব্দে ভেঙে গিয়েছিল পড়শিদের আারামের ঘুম। সেই থেকে জহুরুলদের সুখের সংসারে ভাঙন লেগেছে।
রাতে রিকশা চালিয়ে জহুরুল ঘরে ফিরলে বউ ছমিরুন ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলে, মেয়েডা ছিঁড়া কাপড়ে ইশকুলে যাইতে পারে না। স্যারেরা বলল ইনিফম পইরা যাইতে।
জহুরুল খাওয়ার আগে হাত ধুচ্ছিল। ধুতে ধুতে বলল, ঘরে কয়ডা টাকা আছে! হের পড়ন লাগত না। খাইতে না পাইলে আবার পড়া কিয়্যের?
রাতে চাটাইয়ের শক্ত বিছানায় শুয়ে জহুরুল মনে মনে ভাবে, মেয়েডারও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। পড়ালেকা না-করলে অয় ক্যামনে? সে তাই নিয়ত করে ফেলে, সখীপুর প্রাইমারি স্কুলে মেয়েকে আবার পড়তে পাঠাবে। দোকানে নিয়ে গিয়ে স্কুলের নতুন ইউনিফর্ম বানিয়ে দেবে।
পরক্ষণে মনে পড়ে তার পকেটে টাকা নেই। তখন প্রবল বাতাসের মুখে দপদপ করে নিভে যাওয়া বাতির মতো তার আগ্রহ দমে যায়।
সংসারে সে বড় অভাবি। খেটে খেটে মরে গেছে। অথচ পাতিলের তলায় খাবার নেই। মেয়েটা ভাতের সঙ্গে ছোটমাছ খেতে পছন্দ করে। এখন আর গ্রামের বিলেও এইসব মাছের দেখা মেলে না। নয়তো বিল থেকে সে ধরে আনত। কিশোর বয়সে জহুরুল উত্তরের বিলে জাল ফেলে কত মাছ ধরেছে।ছোটবড় নানা প্রজাতির মাছ দিয়ে অল্পক্ষণে ভরে ফেলেছে খোলই। সেসব স্মৃতি আজ কল্পনাও করা যায় না। বাবা-মা’র মৃত্যুর পর, এই চৌদ্দ-পনের বছরে চোখের সামনে পুরো জগৎটাই কেমন বদলে গেছে।
বেদনায় জহুরুলের মন একটু বিষিয়ে ওঠে। বাজার থেকে যে পয়সা দিয়ে কিনে আনবে মাছ, সেই সুযোগও নেই। কারণ, সদাইপাতি কিনতে গেলে হাত থেকে শ’খানেক টাকা অনায়াসে বেরিয়ে যায়। অথচ তার পকেট একদম ফাঁকা।
জহুরুলের স্ত্রী ছমিরুনের দুইজোড়া কাপড়। প্রায় বছর তিনেক ধরে পরছে। প্রতিদিন গোসলের পর বদল করে পরতে পরতে দুটোই পুরনো ন্যাকড়া হয়ে উঠেছে।
অপরদিকে জহুরুলের মৃত চাচা মোবারক আলির দুই ছেলের সুখী সংসার। সারাবছর ওরা জহুরুলের বাড়ির উঠোন মাড়িয়ে কানকোয় সুতো গেঁথে ঝুলিয়ে নিয়ে যায় বড় বড় মাছ। সেই দৃশ্য দেখে জহুরুলের কলিজায় তখন খচখচ করে ফুটতে থাকে ঈর্ষার কাঁটা। চাচাত ভাইদের সংসারের বড় পসার বেড়েছে। জহুরুলদের তুলনায় ওদের বউ আর ছেলেপুলেদের শরীর ভারি নাদুসনুদুস। স্বাস্থ্য বেড়ে হাতে-পায়ে বাড়তি মাংস লেগেছে।
গত ঈদুল ফিতরের দিন ওদের বাচ্চাদের নতুন জামা দেখে মেয়েটা নতুন কাপড়ের বায়না ধরেছিল। জহুরুল কিনে দিতে পারে নি। উল্টো রেগে ধমক দিয়ে মেয়ের গালে প্রচণ্ড চড় কষিয়ে দিয়েছিল। চড় খেয়ে মেয়েটা দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল কাঁদতে কাঁদতে।
জহুরুল ভাবে, জগতের যাবতীয় দুঃখ যেন একসাথে গাদাগাদি করে তার এই ছোট্ট ঘরের ভেতর ঢুকে গেছে। দুঃখ যেন আঁটে না ঘরে।
গভীর রাত। জহুরুল শুয়ে শুয়ে আর বেশি ভাবতে পারে না।তার দুই চোখ ফেটে দরদর করে বেরিয়ে আসে জল । চোখের কোণায় সেই জল শুকাতে শুকাতে একসময় নিজের অজান্তে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
২.
সখীপুর বাজার থেকে নেত্রকোণা জেলাশহরের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। জহুরুল রিকশা নিয়ে বাজারের ঝুড়ি-নামা বটগাছের গুঁড়ির কাছে বসে আছে। হালকা বাতাস দিচ্ছে। বাতাসে বটগাছের অসংখ্য পাতা ফড়ফড় করে কাঁপছে।
জহুরুল আজ সদরে যাবার ইচ্ছা করেছিল। সদরের কাছাকাছি এক দরিদ্র পল্লীতে তার শ্বশুরবাড়ি। ঘুরেটুরে দেখে আসবে ভেবেছিল। কিন্তু রিকশায় কোনো যাত্রী নেই। একদম খালি যাওয়া যায় না। কোনো একজন যাত্রী হয়তো জুটবে সদরের, সেই আশায় জহুরুল চুপচাপ বসে ছিল।
জ্যৈষ্ঠ মাসের দুপুর। সকালবেলা চড়া রোদ উঠেছিল। এখন আকাশে মেঘাচ্ছন্ন ভাব। হঠাৎ চারপাশ খুব ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। কিছুক্ষণের ভেতর হয়তো ঝুমঝুম করে নেমে পড়বে বৃষ্টি।
এই নরম আবহাওয়ায় বসে থাকতে থাকতে আরামে জহুরুলের চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল। আচমকা ওর কানে গেল খসখসে এক গলা, এ্যাই খালি, যাবা ওইদিকে?
যে লোকটি ডাক দিয়েছে, কালো গেঞ্জিপরা ভুঁড়িওয়ালা। নাকের নিচে চওড়া গোঁফ আছে। চেহারায় কেমন রুক্ষ রুক্ষ ভাব। জহুরুল তড়াক করে উঠে লোকটির আপদমস্তক দেখে নিয়ে বলল, যাইব। উটেন।
পাকা রাস্তায় চলতে শুরু করেছে হুডতোলা রিকশা। জহুরুল দ্রুত পা দাবাচ্ছে। আকাশের ভাবগতি ভালো না। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। সদরের বড় রাস্তায় ঢোকার মুখে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। বৃষ্টিতে জহুরুলের সারা গা ভিজে গেল। গন্তব্যে পৌঁছে যাত্রী নামিয়ে দিলে খসখসে গলায় লোকটি বলল, কত ভাড়া?
জহুরুল গামছা দিয়ে মাথার ভেজা চুল মুছতে মুছতে বলল, পঁচিশ টেকা দেন।
হঠাৎ জহুরুলকে পুরোপুরি অবাক করে দিয়ে ভুঁড়িওয়ালা যাত্রীটি খেপে যায় তার ওপর। রাগত গলায় বলে, ধুর বেটা, তোরে পঁচিশ টাকা দিব ক্যান্? দশটাকা নিলে নে, নয়তো বাড়িত যাহ।
জহুরুল ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে কিছু বুঝতে পারে না। লোকটা হঠাৎ এমন রেগে গেল কেন?
ভুঁড়িওয়ালা রিকশার কাছে ভাড়া হাঁকাহাঁকি নিয়ে মুহূর্তে বড়সড় জটলা বাঁধিয়ে ফেলল। মূলত তুচ্ছ কোনো ইস্যু নিয়ে নিম্নবিত্ত লোকদের সাথে কুৎসিত আচরণ করাই হচ্ছে এইসব লোকদের কাজ।
জহুরুল ভয়ে ভয়ে বলল, স্যার, এইহানের ন্যায্য ভাড়াই এইডা। আফনে কম দিবাইন ক্যারে?
এই কথায় লোকটা হঠাৎ তার ওপর মারমুখো হয়ে ওঠে।তারপর বিজলির বেগে জহুরুলের গালে চড় কষিয়ে দেয়। রাগে গরগর করতে করতে বলে, ছোটলোক কোথাকার, মুখের ওপর কথা কস!
জহুরুল অসহায় চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। উপস্থিত লোকদের কেউ কিছু বলে না।
ভুঁড়িওয়ালা গজগজ করতে করতে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ পেছন ঘুরে দ্রুত ছুটে এসে রিকশায় বসা জহুরুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। শানের বাঁধানো রাস্তায় উল্টে পড়ে যায় জহুরুল। মুহূর্তে ভয়ানক রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে যায়। ইটের টুকরো লেগে জহুরুলের কনুইয়ের চামড়া ছুলে বেরিয়ে পড়ে সাদা হাড়।
টাউনের প্রভাবশালী লোক ভেবে উপস্থিত লোকদের কেউ প্রতিবাদ করে না। তারা সবাই যেন গ্যালারির নীরব দর্শক। টানটান উত্তেজনা নিয়ে এই মান-অপমানের খেলা দেখছে এখন।
কতক্ষণ পর নিজ নিজ কাজে লোকজন চলে যেতে শুরু করে। ভিড় পাতলা হয়ে আসে। কয়েকজন সদয় লোক তখন ধরাধরি করে জহুরুলকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এলাকার রিকশাচালকদের কাছে খবর পেয়ে ছমিরুন গ্রাম থেকে সদর হাসপাতালে ছুটে আসে। সাথে বাচ্চা মেয়েটি।
ডাক্তাররা জানায়, জহুরুলকে আজ রাতে হাসপাতালে থেকে যেতে হবে। ছমিরুন তাই স্বামীর পাশে সারারাত জেগে বসে থাকে।
পরদিন ভোরে প্রথম যখন চোখ মেলে জহুরুল, দেখে, তার ডানদিকের পেশেন্ট বেডে গতকালের সেই ভুঁড়িওয়ালা নিথর হয়ে শুয়ে আছে। সাদা চাদর দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢাকা।
জহুরুল ভয়ে এবং বিস্ময়ে থ’ বনে যায়। তারপর হাসপাতালের এক নার্সের কাছে জানতে পারে ঘটনা। ভুঁড়িওয়ালা গতকাল সন্ধ্যায় রিকশা থেকে নেমে সরু গলির ভেতর বাসায় ঢুকছিল। গেটের মুখে মুখোশপরা কয়েকজন দুর্বৃত্ত ক্ষুর চালিয়ে তার পিঠের মাঝামাঝি কেটে ফেলেছে।রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। সে এক রাজনৈতিক দলের মাঝারি ধরনের নেতা ছিল।
জহুরুল তাকিয়ে দেখে, লোকটার বিছানার চারপাশে মৌসুমে দুষ্প্রাপ্য ফলমূলের স্তূপ। কমলা, আপেল, আঙুর ইত্যাদি।
বিভিন্ন লোকজন তাকে দেখতে আসছে। হাতে করে ঝুলিয়ে নিয়ে আসছে ফলভর্তি সুতোর ব্যাগ। দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটে বিছানার চারপাশে ফলের বড়সড় দোকান বসে গেছে।
জহুরুল নিষ্পলক চোখে সেদিকে তাকিয়ে ছিল। বেদনায় হঠাৎ ভেতর থেকে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে সে। গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে রাজপথে সে দু’মুঠো ভাতের জন্য রিকশার প্যাডেল চাপে প্রতিদিন। অথচ তার কপালে দুই বেলা আহারের ভাত জোটে না। এক ইউনিফর্মের অভাবে মেয়েকে পাঠাতে পারে না স্কুলে। বউ ছমিরুনের পরনের ভালো কাপড় নেই।
অথচ এইসব বড়লোকদের কোনোকিছুর অভাব নেই জগতে।ভুঁড়িওয়ালা লোকটার চারপাশে ধীরে ধীরে যেসব ফলের স্তূপ জমা হচ্ছে, একসময় মাছি বসতে বসতে বাসি হয়ে সেইসব পচে যাবে। তবু খাওয়ার কোনো লোক নেই।
জহুরুলের চিন্তায় বাঁধা পড়ে। হঠাৎ ওর খুব কান্না পেয়ে যায়। চোখ ফেটে গলগল করে গরম জল বেরিয়ে পড়ে। জগতের সমস্ত লোকদের উপর অভিমান করে যেন তার মন কেঁদে উঠেছে।
এক গ্লাস জল ফেললে পাতিলের জমাটবাঁধা দই যেমন ভেঙে পড়ে, বেদনায় জহুরুলের মন ভেঙে সেইরকম ছানা-ছানা হয়ে যায়।