পাণ্ডুলিপি থেকে গল্প: আত্রাই নদীর বাঁকে বাঁকে
সুরভির সিদ্ধিলাভ
লেখক: আহমেদ আববাস
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রকাশনী: অনিন্দ্য প্রকাশ
বইয়ের ধরণ: গল্পগ্রন্থ
নদীর অপর পাড় ফি বছর নতুন করে গড়েই চলেছে। এপাড়ে ভাঙ্গছে, নির্দয়ভাবে, এলোপাতাড়ি, যাচ্ছেতাই। এবং রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। প্রতিবছরই এপাড়ে এ এলাকায় দশ/বিশ হাত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কারো বাড়িঘর, কারো ফসলি জমি, কারো বনজ কিংবা ফলজ গাছপালা।
রোজকার ন্যায় সেই পড়ন্ত বিকেলে আমি নদীর এপাড়ে বসে কালক্ষেপণের জন্যে গালগপ্পে মেতেছিলাম। একটা পালতোলা ছইঅলা নৌকো এসে আমাদের ঘাটে ভেড়ে। তখন সবারই অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি সেদিকে। ‘কে এলো, কে এলো!’
সরকারপাড়ার মেয়ে সুরভি বাপের বাড়ি নাইওর খেতে এলো। সাথে তার স্বামী, বোন এবং অন্যান্য পরিজন। দীর্ঘ আট বছর পর তাকে দেখলাম, আমার সামনে দিয়ে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মত দৃঢ় পদক্ষেপে পার হয়ে গেল। আমাকে চিনলো না।
আমি এবং সুরভি একইপাড়ায় একসাথেই বড় হয়েছি। একই বয়সি, সহপাঠি এবং শিশুকালের খেলার সাথী। আট বছর আগের সেকথা কি তার মনে আছে? আমাদের কৈশোরকালের ঘটনা।
সেদিন ছিল বিষ্যুদবার। হেমন্তের মাঝামাঝি। চারদিকে পাকাধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। বিকেলে রোদের তেজ না থাকলেও উষ্ণতার কমতি ছিল না। এমনই এক গোধুলিবেলায় গোপন অভিসারের জন্যে আমবাগানের নির্ধারিতস্থানে পরিকল্পনামাফিক আমি তার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকি। ভূমির ঋজু এবং কোণাকার আলপথ পেরিয়ে শঙ্খিনী সাপের মত সুরভি আমার পাশে আসে। বাগানের পশ্চিমে বহমান আত্রাই নদী, উত্তর-দক্ষিণে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ইউক্যালিপটাসের ন্যায় উদ্ধত দেবদারু গাছ, তার নিচে আশশেওড়া, শটিবন এবং কালকাসুন্দের ঘন ঝোপঝাড়। সেখান থেকে প্রায় ৩০০ গজ পর্যন্ত ধানিজমি পেরোলেই পূবদিকে গাঁয়ের বসতবাড়ি। প্রত্যাশিতভাবে আমার অপেক্ষার ধ্যানভঙ্গ করে সুরভি।
‘তুই কখন আইছিস।’
‘এ-ই তো কিছুক্ষণ হল, তোর জন্যে বইসে আছি।’
‘চল্ এখানে না, দক্ষিণ দিক যাই। বড় বড় শটিগাছের ওতে (আড়ালে)। ঐ জাগায় গেলে কেউ দেখতে পাবি ন্যা।’
এক অজানা আশঙ্কায় ভীত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি সুরভিকে অনূসরণ করি। গাছ গাছড়ার আড়ালে একটু ফাঁকা জায়গায় দুজনে বসে পড়ি। একে অপরের দিকে অপলকভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকি। বুঝতে পারি না, কীজন্যে দুজনের নির্জনে সহমিলন। দীর্ঘদিন ধরে একান্ত নিরিবিলিতে বসে দুজনের কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও মুখ ফুটে কেউ কাউকে বলতে পারিনি। অথচ প্রার্থিত মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত হলে দুজনেই একেবারে সমাচ্ছন্ন ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি।
সুরভি ওড়নাবিহীন ব্লাউজ পরে আছে। নিচে পেটিকোট, এভাবে এ পোষাকই পরে প্রতিদিন। সন্ধ্যালোক ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে দেখে ভয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাগিদে আমাকে বলে, ‘এই ছোঁড়া কিছু কইসনা কীজন্যে।’
‘তুই ক, আমার ভয় করে।’
‘আমি জানি না’ বলে তার ডানহাতের পাঁচ আঙুল চেপে আমার বামগালে আদর করে দেয়।
এ সময় শঙ্কা, ভীতি, কুন্ঠা ও বিহ্বলতার দরুন আমার সর্বাঙ্গ ঘেমে নেয়ে হয়ে ওঠে। চৌদ্দ বছরের বিশুদ্ধ ও আনকোরা জীবনের যত জিজ্ঞাসা, দিদৃক্ষা, লালিত ইন্দ্রিয় জিগীষা সম্পূর্ণ নিস্তেজ, নিস্পন্দ, সংযত ও নিবৃত্ত হয়ে যায়- বায়ুভর্তি বেলুন ফুটো হয়ে চুপসে গেলে যেমনটি হয়। পরিবারে কঠোর রক্ষণশীলতার কারণে ক্লাস এইটে উঠলেও মনে কোন প্রকার পরিপক্কতা আসেনি। প্রায়ই রাতে ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। শৈশোবোত্তর বয়স থেকেই দুজন আঠার মত লেগে থেকে সময় পার করেছি।
সমস্ত চরাচর সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে ছেয়ে গেছে। গাঁয়ের হাট থেকে নদীপাড় দিয়ে বাড়ি ফিরছিল পড়শি আফসার মামা। আমাদের অনুভূতির চাপা প্রকাশ একটু জোরালো এবং সোচ্চার হলে তার কানে পৌঁছে।
‘বাগানের ওপাশে কে রে!’
‘কেউ না মামা।’ পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে আচমকা প্রত্যুত্তর দিই।
‘সন্ধের সময় তুই ওটি (ওখানে) কী করিস।’
‘কিছু না মামা’ বলতেই আফসার মামা আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। জোয়ান মানুষ মামাকে দেখে একটু ভয় পেয়ে যাই। এ সময় সুরভি জমির আলপথ খুঁজে না পেয়ে সোজা ছুটে পালায়।
‘ঠিক আছে, আগামিকাল শুক্কুরবার। নামাজের পর বটতলায় মসজিদের মান্ষের কাছে সালিশ দিব।’
‘না মামা, আমার দোষ নাই। সুরভি ছাগল খোঁজার জন্যে আমাক ডাইকে আনছিল,’ বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করি।
মাস পার হয়ে গেছে। মামা আর সালিশ ডাকেনি। সুরভি তার মামাবাড়ি গেছে। অনেকদিন দেখা হয়নি। কিন্ত ওর জন্যে মাঝে মাঝে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়, দেখতে ইচ্ছে করে। শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছি। প্রাইমারির পর ও হাইস্কুলে যায়নি। আজ তিনবছর হল ওকে ছেড়ে স্কুলে যাই।
খিদে লাগলে দু’একদিন টিফিনে বাড়ি আসতাম। একদিন মধ্যাহ্নের জলখাবার খেয়ে ঘোর দুপুরবেলা ফের স্কুলে যাচ্ছিলাম। দুপুর দুটোর দিকে পথঘাট ফাঁকা হয়ে মানুষের চলাচল কমে যায়। গ্রামের লোকজনেরও বোধহয় মধ্যাহ্ন বিরতি। বাগান পেরিয়ে সামনের দিকে যাই। যেতে যেতে মনে পড়ে। কৌতূহলবশত পেছন ফিরে সেদিনের স্থানটির দিকে দৃষ্টি দিই। মনেহয়, শটিবন ও আশশেওড়া গাছের পাতাগুলো একটু একটু নড়ছে। এবং আবার, পুনর্বার। আমি থেমে যাই। একটু আড়ালে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই– সুরভি ও আফসার মামা ওখান থেকে বেড়িয়ে দুজন দুদিকে সটকে পড়ছে। মনটা খারাপ হয়ে যায়, খুব খারাপ। দুজনের প্রতি ভীষণ ঘৃণা হয়। স্কুলে না গিয়ে হিন্দুপাড়ায় সারাদুপুর বন্ধুদের সাথে অন্যমনস্কভাবে মার্বেল খেলে সময় পার করি। শেষ বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরলেও অবুঝমনে একটা খটকা লেগে যায়। এ নিয়ে অশান্তি ও বিরক্তির পরিসর পরিব্যপ্ত হবার আগেই অর্থাৎ সপ্তাহখানেক বাদেই খুব ধুমধামের সাথে আফসার আর সুরভির বিয়ে হয়ে যায়।
ওদের বিয়ের আট বছর পর আজই নৌকো থেকে নেমে সুরভি আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। সুরভির বিয়ের দু’বছর পর ভাল জীবনযাপনের প্রত্যাশায় আফসারের পরিবার এ গ্রাম থেকে বিদায় নেয়। অপুত্রক নানাবাড়িতে সম্পত্তি রক্ষার জন্যে গহিন বিলাঞ্চলের গ্রামে গিয়ে তারা বসতি গড়ে। এ কারণে বাড়ি গেলে কখনো সুরভির সাথে দেখা হত না।
কিশোর বয়সে কচিমনে তার সাহচর্য রেখাপাত করলেও দৈহিক উপযোগিতার বিষয় কখনো মাথায় আসেনি। আগমনের দিন আমার অভিমুখে নেত্রপাত না করলেও পরে কোন এক প্রসন্ন দিবালোকে আমার সামনে আসে। সেসময় তাকে দেখে মনেহয়, তার শরীর যেকোন পুরুষের দৃষ্টি হরণ করার জন্যে যথাযথ জুতসই। মাঝারি মানের এবং দোহারা গড়নের হালকা মেদবহুল শরীরে বিকশিত লাবণ্য চোখে পড়ার মত।
‘কি রে সুরভি, কেমন আছিস?
‘আছি একরকম, তুই তো কোনদিন খবরও নিলি না।’
‘শুনছিলাম আফসার মামা তার নানাবাড়ি রামরাজত্ব পাইছে। তুই তাইলে সুখেই আছিস।’
‘অভাব নাই, সেইকথা বলতে পারিস। আবার অভাব আছেও।’
‘তোর আবার কীসের অভাব!’
‘এই যেমন আট বছরে একটা বাচ্চাও হয়নি। এই নিয়ে শ্বাশুড়ি মাঝে মাঝেই খেইখেই করে।’
‘ডাক্তার টাক্তার দেখাইছিস।’
‘কতবারই দেখাইলাম, কোন কাজ হয়নি।’
‘দাম্পত্যজীবনে কোনকিছু ঘাটতি নাই তো, মানে শারীরিক সমস্যা।’
‘তার আগ্রহের কমতি নাই, কিন্তু অন্য সমস্যা থাকলে থাকতে পারে। এই যেমন শুনি, দ্যাশের পেসিডেন্টেরও ছাওয়াল পাওয়াল হয় না। ঐ ঢোঁড়াসাপ আর কী! রাগ ছোবল সবই আছে কিন্তু বিষ নাই।’
‘তাইলে কী বলতে চাইছিস, নির্বিষ, নির্বিজ পুরুষ।’
‘আমার তো তাই মনে হয়। আমার তো সবকিছু ঠিকঠাক আছে।’
‘দ্যাখ্, ওপরঅলার ওপর বিশ্বাস রাখ। আর ভাল ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা কর।’
সুরভির বাবা গ্রামের সবচাইতে সচ্ছল গৃহস্থ। বাড়িতে সবসময় দু’একজন কাজের লোক থাকে। ঘরবাড়ি এবং পরিজনহীন আতার পাগলাও কিছুদিন ধরে তাদের বাড়ি থেকে কাজ করে। আতার পাগলের কোন বেতন নেই, থেকে খেয়ে সই। জোয়ান, দাঁড়িঅলা, শক্ত সমর্থ এক পুরুষ। আতার পাগলার মাথায় কেউ যদি ১০ কেজি মাল উঠিয়ে দিয়ে নিরুৎসাহিত করে। যদি বলে, ‘এই আতার এত ভারি জিনিস তুই নিবি কীভাবে! তোর ঘাড় মচকে যাবে।’
শোনার সাথে সাথে আতার পাগলা ১০ কেজির ঝুলি ধপাস করে মাটিতে ফেলে দেবে। আবার দুইমণের বস্তাও যদি তার মাথায় তুলে দিয়ে বলা হয়, ‘যা একবোরে পাতলা, তোর কোন অসুবিধা নাই।’ তাহলে মাথায় নিয়ে তরতর করে ছুটে যাবে। মাঝে মাঝেই কিছু দুরাচার ও ক্রুরমতি লোক আতার পাগলাকে দিয়ে অনেক পরিশ্রমের কাজ করিয়ে নেয়। হয়ত কাজশেষে কলাটা/মূলাটা হাতে ধরিয়ে দেয়, সেটাই তার মনে থাকে, পূর্ববর্তী কাজের কথা বেমালুম ভুলে যায়। যখন যে গ্রামে যে বাড়িতে ভাল লাগে, সেখানেই থাকে আতার পাগলা।
প্রখর রৌদ্রময় এক দুপুর বেলা। আমবাগানের পাশে বারমেসে লেবুগাছ থেকে লেবু তোলার জন্যে সেখানে যেতে গিয়ে দেখি, বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছপালার নিচে, যেখানে কালকাসুন্দ, শটিবন আর আশশেওড়া গাছগুলো ঘন হয়ে আছে। সেখান থেকে বেড়িয়ে আতার পাগলা আমবাগানের দিকে আসছে। আমার কাছাকাছি এলে দেখি, আতার পাগলা কাঁদছে। ‘কি রে আতার, কান্দিস ক্যানে, তোক কে মারিছে।’
‘রামছাগলডা খুঁজে আইন্যা তার কাছে দিইনি বইলা সুরভি আপা ঠাসঠাস কইরা দুই গালে চর মারিছে।’
‘যা কান্দিস ন্যা। আপা মারিছে তো কী হইছে, ভাল হয়্যা যাবিনি। বিকালবেলা তোক্ লেবেনচুস কিনে দিবনি।’
‘তোর আপা কই গ্যাছে?’
‘এটি (এখানে) আইছিল, আমাক থাপ্পড় মাইরা চইলা গ্যাছে।’
দিনে দিনে আমার ছুটি পনেরদিন পার হয়ে যায়। পরদিনই কর্মস্থলে ফিরে আসি। সুরভির সাথে আর দেখা হয়নি। চাকরির ব্যস্ততা, নাগরিক জীবন, প্রায়শ বিভিন্ন সোসাইটিতে নানারকম পার্টি এসবের ভেতরেই সময় আটকে থাকে। কৈশোরকালের সেই বালিকার কথা খুব একটা মনে পড়ে না। যখন ছুটিতে যাই, গ্রামে গেলেই একটু মনেপড়ে। তখন হয়ত অসতর্কভাবে কাউকে জিজ্ঞেস করে বসি, ‘এ-ই সুরভি আইছে নাকি!’ স্বদেশে অবস্থান করলে প্রতিবছরই নিদেনপক্ষে একবার বাড়ি যাই। শুধু গতবছরই ব্যতিক্রম ছিল। প্রথমদিকে ছুটি না কাটানোয় শেষদিকে অর্থাৎ নব্বই সাল নিবর্তনে দেশের অস্থির পরিস্থিতির কারণে ছুটি যেতে পারিনি। গ্রামেই তো আমার গোড়া। শেকড়ে টান পড়লেই ছুটে যাই। বাড়ি গেলেই এখনো মনেমনে সুরভিকে খুঁজতে থাকি। নদীপাড়ের বটতলায় বসলেই এ অঞ্চলের হাজার খবর কানে আসে। আতার পাগলা নদীকূলে গেলে সবাই তাকে আদর, ইয়ার্কি, সহানুভূতি এবং রগড় করতে থাকে। গতবার বাড়ি গিয়ে আতার পাগলাকে নদীতটে না দেখে একজনকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, ‘সে তো বছরখানেক আগেই এ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।’
শীতের পিঠা আর খেজুরের কাঁচা রসের স্বাদ গ্রহণের জন্যে সাময়িক ছুটিতে আবার বাড়ি গেছি। কখনো একদিনের জন্যে বাড়ি গেলেও অদুরের সেই নদীপাড়ের বটতলায় গিয়ে বসি, আড্ডা দিই, সবার সাথে কুশল বিনিময় করি। সেখানে বসে প্রসঙ্গক্রমে একজনের কাছে জানতে পারি, শীতকালীন নাইওর খেতে সুরভি বাড়ি এসেছে। এবং তার একটি নাদুস নুদুস ছেলে হয়েছে। শুনে সুরভিকে দেখার আগ্রহ পেয়ে বসে। কৌশলে সুরভিকে আমাদের বৈঠকখানা ঘরে ডেকে নিই। সে-ও আমার আগমন সংবাদ শুনে মুখিয়ে আসে।
‘সুরভি কিরম আছিস। তোর কোলে ছেলে দেইখ্যা খুব ভাল লাগতিছে।’
‘সবই খোদার রহমত। ঐ যে দুই বছর আগে তোর সাথে যখন দেখা হল, তার পরপরই আমার প্যাটে বাচ্চা আসে। এখন শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, সোয়ামি সগলি খুশি।’
‘আমি কইছিলাম, ধৈর্য ধর, ওপরওয়ালাক্ ডাক্, চেষ্টা করে যা। খোদা দয়াময়, তাই তোর ওপর দয়া করিছে।’
আদর করে সুরভির বাচ্চাটিকে কাছে টেনে নিই। কোলে উঠে শিশুটি হাসতে থাকে। স্নেহের দৃষ্টি নিয়ে খুব গভীরভাবে ওর দিকে তাকাই– হষ্টপুষ্ট, গাবদাগোবদা গজন্দর কিন্তু তার মুখে ঐশ্বরিক, বিশুদ্ধ এবং অনাবিল এক হাসি। সেই হাসিতে অক্লেশে এবং স্বচ্ছন্দে তার থুতনিতে একটা অগভীর, মৃদু, আলতো এবং লঘু টোল খেয়ে যায়। কেউ অনুসন্ধান কিংবা খুঁটিয়ে পরখ করতে গেলে তার চোখে পড়তে পারে, নাহলে কেউ কখনো ঠাহর করতে পারবে না। অকিঞ্চিত এমন তুচ্ছ, নগণ্য এবং উপেক্ষণীয় টোল হাসির সময় আরেকজনের থুতনিতে লক্ষ করেছিলাম। সেই গুরুত্বহীন, গৌণ, অনভিপ্রেত, অনাহুত, অপ্রকৃতিস্থ প্রাণিটিকে আর এ গ্রামে চোখে পড়ে না।