ভাগ্যের ফায়সালা

ভাগ্যের ফায়সালা

দীর্ঘদিনের রিলেশন ব্রেকাপ করে বিয়ে করেছিলাম বাবার পছন্দের ছেলের সাথে৷ বাবার ডিসিশনের সামনে নিজের ডিসিশন রাখার সাহস কখনো হয়নি তাই হয়তো ভাগ্যকে মেনে নিয়ে অপরিচিত মানুষের হাত ধরে চলে এসেছিলাম একদম নতুন পরিবেশে৷ প্রাক্তনের কি অবস্থা জানতে চাইলেও আশেপাশে এতো লোকজন যে খোঁজ নিতেই পারলামনা। অবশ্য আমি জানতাম সে খুব বেশি কষ্টে থাকলে দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। আজও তাই করছে৷ একমিনিট সে থাকতে পারেনা আমাকে ছাড়া।

প্রাক্তনের কথা ভাবতে ভাবতে মনমরা হয়ে বসেছিলাম। এমন সময় আমার স্বামী এসে বসলেন আমার পাশে। আস্তে করে নামাজটা পড়ে নিতে বললেন। কিছু বলতে পারলামনা। নামাজ পড়ে এসে উনার পাশে বসলাম। কিছুক্ষণ কথপোকথন করার পর জানতে পারলাম তিনিও পারিবারিক চাপে বিয়ে করেছেন। ভরসা পেলাম। আমার কথাও জানালাম৷ তিনি কেমন যেন আশ্বস্ত হয়ে বললেন সমস্যা নেই দুজনেরই উচিত একটু সময় নেওয়া৷

হুম্ম! সময় নিলাম। সংসারজীবনে দুজনের ভালো বন্ডিং হলেও দুজনই প্রাক্তনের স্মৃতি থেকে বের হতে পারিনি৷ আমার স্বামী এককথায় খুব ভালো মানুষ। চারমাসের সংসারে বুঝতে পারলাম তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। পরে জানতে পারি তার ডায়েরি দেখে আসলে প্রাক্তন বলে কেউ নেই আমাকে সঙ্গ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। তিনি বিশ্বাস করতেন আমি একদিন সব ভুলে তার সাথে জীবন শুরু করবো।

ডায়েরি পড়ে কেমন চিট মনে হচ্ছিলো উনাকে। বাসায় ফিরলে খুব রেগে উনার সামনে ডায়েরি ফেলে দিয়ে বললাম এটা কি? প্রতারণা করছেন আমার সাথে? তিনি নিটোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিছুই বললেননা৷ আমি সব গুছিয়ে নিয়ে ফিরে এলাম বাবার বাড়িতে। ফিরে আসার কারন সবাই জানতে চাইলেও আমি কিছু বলিনি। তিনিও বলেননি। শুধু ম্যাসেজ করেন “ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো”। আমি ম্যাসেজ সীন করে রেখে দিলাম। কেটে গেলো ছয় মাস। আমাদের বিয়ে দশমাস।

এদিকে প্রাক্তনের সাথে যোগাযোগ হলো। দূর্বলতা আগের মতোই৷ কথা কথা বলতে সিদ্ধন্ত নিলাম দুজনেই পালিয়ে যাবো। কিন্তু যেদিন যাবো সেদিন কেনো জানি উনার কথা খুব মনে পড়ছিলো। তবুও গেলাম। দেখি প্রাক্তন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে ছুটেই যাচ্ছি। তার সামনে এসে দাঁড়ালাম। তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠলাম। কিন্তু ব্যাগটা আমার হাতেই। সে একবারের জন্যেও নিলোনা। ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলেও একবার বললোনা মুখটা মুছে নাও। কি অদ্ভুত!

এগুলো ভুল ধরার বিষয় না। আমি জানি প্রাক্তনের অভ্যাস৷ কিন্তু আজ কেনো জানি আমার স্বামী আর প্রাক্তনের মাঝে খুব বেশিই পার্থক্য নির্ণয় করতে ইচ্ছে করছিলো। এমন সময় মোবাইলে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ। ” সে হাসপাতালে । বুকটা ধক করে উঠলো। বাস ছাড়বে এমন সময় ড্রাইভারকে থামতে বলেই নেমে গেলাম। সোজা চলে গেলাম পিজি হাসপাতালে। উনি অক্সিজেন মাস্ক পরে আছে। মাথা ফেটে গিয়েছ। পুরো শরীরে ব্যথা পেয়েছেন। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু উনার সাথে সরাসরি কথা বলার অনুমতি নেই কারো।

বাইরে বসেই অপেক্ষা করছিলাম। পরেরদিন বিকেলে সবাইকে অনুমতি দেয়া হলো দেখা করার। তিনি প্রথমেই আমাকে খুঁজলেন। লজ্জানত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। এমন সময় তিনিই জিজ্ঞেস করলেন, ” যাওনি?” আমি কিছুই বললাম না। কি হলো? চলে গেলে কি খুব সুখী হতে? অবশ্য আমি সইতে পারতামনা কিন্তু। যাও। আমি শক্ত করে উনার হাত ধরে বললাম, “না”। আপনার সাথেই থাকতে চাই। ফিরিয়ে দিবেন? তিনি ঠিক তার বুকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ” কখনোই না”। আমি খুব শান্তি পাচ্ছিলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন কেনো ফিরে আসলে আগে বলো?

যত্নের অভাবে। ভালবাসায় শুধু আবেগ থাকলে হয়না। যত্নও থাকতে হয়। তার প্রতি ভালবাসা ছিলো। কিন্তু আপনার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টিকর্রতা প্রদত্ত৷ আমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনি৷ আপনার কাছেই সুখ। এই যত্নের লোভ সামলাতে পারিনি। তাই।

তিনি কাছে টেনে নিয়ে বললেন, “আর যেওনা”। কপালে চুমু দিয়ে বললেন ” তুমি শুধু আমার”। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। শুরু করলাম সংসার। মাঝেমাঝে প্রাক্তনের জন্য আফসোস হতো। কিন্তু এখন আর হয়না। সেও বিয়ে করে সুখে আছে। ভাগ্যের ফায়সালায় আমি সন্তুষ্ট। বেঁচে থাকুক প্রত্যকটা মানুষ বৈধ ভালবাসায়। না ভাঙুক কোনো সংসার৷

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত