অবশেষে আমরা

অবশেষে আমরা

ঝিনুক উঠ, এই ঝিনুক উঠ না। তোর ভার্সিটির দেরী হয়ে গেলো তো। কথাটা শোনে ধড়মড়িয়ে উঠে পড়লো ঝিনুক। ঘুম থেকে উঠে সে দেখলো রিয়ান বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝিনুক কিছুক্ষণ ঠায় বসে রইলো বিছানায়। একটু পর ওর কাছে পুরো ব্যপারটা ক্লিয়ার হলো।

ঝিনুক এখন ওর ফুপ্পির বাসায় আছে।গতকাল বিকেলেই ও এখানে এসেছে।আর রিয়ান হলো ওর ফুফাতো ভাই। সে সকাল সকাল ঝিনুকের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যই ভার্সিটির কথা বলেছে। ঝিনুক কিছুক্ষণ রাগি চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু রিয়ানকে কিছুই বললো না। বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো। ঝিনুক খুব স্বল্পভাষী মানুষ।প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না সে। ঝিনুক এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। ঝিনুক ওর পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। দু ভাইয়ের একটামাত্র বোন সে। সবার ছোট বলে খুব আদরের সে।তাছাড়াও পড়াশোনা, আচার ব্যবহার সবদিক দিয়েই সে সবার চেয়ে আলাদা।তাই সব আত্নীয়স্বজনের কাছেও ঝিনুক বেশ আদরেরই।

পরীক্ষা শেষে কিছুদিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে।তাই ওর ফুপ্পি অনেক বলে কয়ে ঝিনুককে এনেছে। ঝিনুক তেমন কোথাও যায়না। ওর রুমটাই ওর দুনিয়া।ওর রুমে থাকা বিশাল বইয়ের সংগ্রহ নিয়েই ওর সময় কাটে।তাই ভার্সিটি ছাড়া আর অন্য কোথাও যাওয়া হয়না ওর। কিন্তু এবার ফুপ্পির রিকোয়েস্ট রাখার জন্য আসতে হলো। ঝিনুক ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে ওর ফুপ্পি ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে। রিয়ান আর ওর বড় বোন রিয়া বসে আছে।

” ঝিনুক আয়, নাস্তা করে নে। তোর চোখ এমন দেখাচ্ছে কেন? রাতে ঘুম হয়নি? ঝিনুককে দেখে ওর ফুপ্পি বলে উঠলেন।
” জায়গা চেঞ্জ হয়েছে তো তাই ঘুম আসছিলো না। ভোররাতের দিকে ঘুমিয়ে ছিলাম।
” তাহলে উঠলি কেনো, আর একটু ঘুমিয়ে নিতি।
” কি করে ঘুমাবে মা, তোমার গুনধর ছেলে ঘুমাতে দিলে তো।
” রিয়ান কি করেছে?
” ঝিনুককে ডেকে তো ও ই তুলেছে।
” কি রে রিয়ান,তুই ওকে ডেকেছিস কেন?
” তুলবো না কেন? আমাদের বাড়িতে এতো বেলা করে ঘুমানোর নিয়ম নেই। তুমি তো আমাকে ঘুমাতে দাও না তাহলে ও ঘুমাবো কেন?

” তোরে নিয়ে আর পারা গেলো না। দেখ রিয়ান একটা কথা বলে দিচ্ছি তুই ঝিনুককে একদম বিরক্ত করবি না। তাহলে ভালো হবে না বলে দিলাম।আর যেন না শুনি তুই ওর পিছনে লেগেছিস কোনো কিছু নিয়ে।
” বাহ,, নিজের বাড়িতে এখন আমাকে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে।ভালোই তো।
” বেশি কথা না বলে খাওয়া শেষ কর। আর যা বললাম মনে রাখিস।

খাওয়া শেষ করে রিয়া আর ঝিনুক রিয়ার রুমে চলে এলো।আর রিয়ানও ওর রুমে চলে গেলো। রিয়ান আর রিয়া দু ভাইবোন। রিয়ার কিছুদিন আগে কাবিন হয়েছে। ওর বর দেশের বাইরে গেছে বিয়ের পরপরই।সে ফিরলে অনুষ্ঠান হবে। তাই এখন এ বাড়িতেই আছে সে। আর রিয়ান এবার মাস্টার্সে পড়ছে। মাস্টার্স কমপ্লিট হলেই ওর বাবার বিজনেস এ জয়েন করবে। রিয়ান খুব চন্ঞল আর প্রানবন্ত ছেলে। সারাক্ষণ বাড়িটা মাতিয়ে রাখে। ঝিনুকের একদমই বিপরীত বলা চলে।

” আচ্ছা আপু তোমার কাছে কোনো বই নেই? গল্প বা উপন্যাস এর?
” তুই এখানে এসেও বই পড়বি? এতো ভালো লাগে তোর বই পড়তে? বই ছাড়াও তো আরও অনেক মাধ্যম আছে সময় কাটানোর।সেগুলোও ট্রাই কর। তোর তো ইন্টারনেট জগতে এক্টিভিটি নাই বললেই চলে। একটু সেদিকেও মন দে। সবার সাথে কথা বল,যোগাযোগ কর।ভালো লাগবে।

” আমার ওসব ভালো লাগে না আপু। বই ছাড়া অন্যকিছুতে ইন্টারেস্ট পাইনা। ফেসবুক আইডি খোলে ছিলাম।কিন্তু ভালোই লাগে না।তাই আর ইউজ করিনা।

” আচ্ছা শোন, এখানে যতোদিন আছিস একটু সোস্যাল সাইটে এক্টিভ থাক, দেখবি ভালো লাগবে।আমাদের সব কাজিন, অন্যসব আত্নীয় স্বজনদের সাথে কন্টাক্ট কর এতে তোর ও ভালো লাগবে ওরাও খুশি হবে। তুই তো নিজেকে সবসময় আড়ালে রাখিস। দে ফোনটা আমায় দে তো। সবার সাথে তোকে এড করে দেই। রিয়া ঝিনুকের ফোনটা নিয়ে অনেকের সাথে ঝিনুককে এড করে দিলো। ঝিনুক অনিচ্ছা সত্বেও সময় কাটানোর জন্য অনলাইনে এক্টিভ হলো। ঝিনুক বিকেলে ছাঁদের এককোনে দাড়িয়ে হেডফোনে গান শুনছিলো। ওর একটু দূরে দাড়িয়ে রিয়া ওর বরের সাথে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত। রিয়া ফোনে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে হাসছিলো।ঝিনুক সেদিকে তাকিয়ে আপন মনেই হেসে উঠলো। স্পেশাল কারও সাথে কথা বললে হয়তো এরকমই তৃপ্তির হাসি মুখে ফুটে উঠে।

” কি রে কোনো ব্যাঙ কি করছিস? ঝিনুকের মাথায় হালকা চাটি মেরে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো ঝিনুক।
” গান শুনছি।
” হুম ভালো। তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?
” ভালোই।
” আর প্রেম? কথাটা শোনে ঝিনুক কপাল কুঁচকে তাকালো রিয়ানের দিকে।
” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? শুনলাম তো তুই নাকি চুটিয়ে প্রেম করছিস।
” কে বলেছে?
” সেটা তো কথা না। এখন কথা হলো তোর মতো পেত্নীর সাথে কোন পাগলে প্রেম করে সেটা।
” আমার কোনো রিলেশন নেই। রিয়ান এবার বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো।
” what a joke.. আচ্ছা মামা মামির সাথে কথা বলবো নাকি? তোদের বিয়ের ব্যপারে?
” ভাইয়া,,
” আরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন? হেল্প তো আমাদেরই করতে হবে। বলে ফেল।
” ধূর,,

বলেই ঝিনুক ছাদ থেকে নেমে গেলো। ঝিনুকের আসলেই কোনো রিলেশন নেই। পড়াশোনা নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিলো অন্যদিকে তাকানোর মতো সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়নি। তবে সব পাঠকদের একটা গোপন তথ্য দিয়ে রাখি, রিয়ান ঝিনুকের Secret ক্রাশ। ঝিনুক মনে মনে রিয়ানকে পছন্দ করে।ঝিনুক ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায়ই রিয়ানের প্রেমে পড়েছে।হুমায়ুন আহমেদ যেমন তার হিমুর হাতে কয়েকটা নীলপদ্ম বইটাতে বলেছিলো একটা মেয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যৎ না ভেবেই তার সবকটি নীলপদ্ম দিয়ে দেয়,তেমনি ঝিনুকও তার নীলপদ্ম গুলো রিয়ানকে দিয়েছে, এক্ষেত্রে বলা যায় রিয়ানের হাতে নীলপদ্ম ।তবে ওর আচার আচরনে কেউ কখনো সেটা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাবে না।এমনকি রিয়ানও না। রিয়ানের দিকটা এখনো পরিষ্কার নয়।দেখা যাক শেষ অবধি গল্পটা কোনদিকে মোড় নেয়।

” তোমার এখানে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো মা? রাতে খাবার সময় রিয়ানের বাবা ঝিনুককে বললো।
” নাহ আঙ্কেল,
” কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বলবে কেমন?
” জ্বি।
” কথাটা তোমার ছেলেকে বলে দাও। ও ই সারাক্ষণ মেয়েটাকে জ্বালাতন করে। ঝিনুকের ফুপ্পি বলে উঠলো।
” আমি আবার কি করেছি মা?
” কি করিস সেটা তুই ই জানিস।
” আমি কিছু করিনি বাবা।
” গুড।কিছু করেছিস সেটা ও যেন না শুনি।

সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার মতো ঘুমুতে চলে গেলো। ঝিনুক রুমে এসে শোয়ে পড়লো। কিন্তু ওর কিছুতেই ঘুম আসছে না। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। ঝিনুক দেখলো সকালে রিয়া আপু যাদের সাথে এড করে দিয়েছিল তাদের অনেকেই রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। ঝিনুককে অনলাইনে পেয়ে অনেকেই ওকে মেসেজ দিচ্ছে। ওর খোঁজ নিচ্ছে। ঝিনুক কিছুক্ষণ সবার নানা প্রশ্নের উত্তর দিলো। তবে ওর বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে। একপর্যায়ে ও অনলাইন থেকে বেরিয়ে ফোনটা পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

মোবাইলের রিংটোনে ওর ঘুম ভাঙ্গলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রিয়ান কল করেছে। ঝিনুক রাতে শোয়ার সময় দরজা লক করে শুয়েছিলো তাই রিয়ান ওর রুমে আসতে পারেনি বলে মোবাইলে কল দিচ্ছে এই সকালে। ঝিনুক বিরক্তই হলো। রিয়ান কেন যে এমন করে ও বুঝেই পায়না। ঝিনুক রুম থেকে বের হবার পর রিয়ানের সাথে দেখা হয়নি।কারন রিয়ান ভার্সিটিতে চলে গেছে।

বিকেলে রিয়ানের চাচ্চু তার পরিবার নিয়ে বেড়াতে এলো রিয়ানদের বাসায়।রিয়ান আরও কিছু কাজিন ও এলো সাথে। বাড়িটা মুহূর্তেই জমজমাট হয়ে গেলো। রিয়ানের সব কাজিনরা, রিয়া,রিয়ান, ঝিনুক সবাই ছাদে আড্ডায় বসলো সন্ধ্যাবেলা।যদিও ঝিনুকের এতো হইচই পছন্দ না তবুও ফর্মালিটি রক্ষার জন্য সবার সাথে বসতে হলো।
আড্ডার মাঝেই ঝিনুক খেয়াল করলো রিয়ানের ওর ফুফাতো বোন মিলির সাথে ভাবটা যেন একটু বেশিই। রিয়ান আর ঝিনুক চোখের ইশারায় দুজন দুজনের সাথে কথা বলে সেটাও ঝিনুকের চোখ এড়াতে পারেনি। কারন ঝিনুকের চোখ যে সারাক্ষণ রিয়ানের ওপরই নজর রাখে। রিয়ানকে ওর ভালো লাগে বলেই হয়তো অন্য কারও প্রতি ও আকৃষ্ট হয়নি। কোনো রিলেশনশিপ এ জড়ানো হয়নি।ও এসব নিয়ে ভাবেও নি কখনো। ঝিনুক মাথা ধরেছে বলে সেখান থেকে উঠে চলে এলো।রিয়ানকে এভাবে অন্যজনের সাথে দেখতে ওর মুটেও ভালো লাগছে না। রাতে ঝিনুক একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলো।তখনই রিয়ানও ছাদে এলো।

“কি রে তোর মন খারাপ?
” নাহ,,
” তাহলে এভাবে একা দাঁড়িয়ে আছিস যে?
” আমি এতো হইচই নিতে পারিনা জানো তো, নিচে সবাই আছে,অনেক কথাবার্তা হয়।এজন্য ছাদে এলাম।
” তুই এমন কেন? কারও সাথে মিশতে চাস না। একা একা থাকিস সবসময়। আমার এরকম একদমই পছন্দ না।
” তোমাকে পছন্দ করতে বলছে কে?
” আচ্ছা বাদ দে এসব। আমার একটা সাহায্য করতে পারবি?
” বলো।
” আমি মিলিকে পছন্দ করি।কিন্তু বলতে পারছি না। তুই একটু বলে দিবি। আমার সাহসও হচ্ছে না। ও আবার কি ভেবে বসে।
” আমি কেন বলবো? তুমি নিজে বললেই তো ভালো হয়।
” আমি তো বলবো ই।তবে তুই আগে একটু ওর সাথে কথা বলে জেনে নে না ওর মনে আমার জন্য কোনো ফিলিংস আছে কি না? প্লিজ ঝিনুক।

” আচ্ছা দেখি, আমি ট্রাই করছি।
” Thanks a lot dear.
” welcome. তুমি এখন নিচে যাও।আমি একটু একা থাকবো।
” আর থাকতে হবে না।অনেক রাত হয়েছে এবার নিচে চল।
” তুমি যাও আমি আসছি।

রিয়ান চলে যাবার পর ঝিনুক ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর খুব হাসি পাচ্ছে। ও যাকে এতোটা ভালোবাসে তার সাথে এখন অন্যএকজনের রিলেশন করানোর মাধ্যম এখন ও। নিজের প্রিয়জনকে এখন অন্যকারও হতে ও নিজেই সাহায্য করবে। এটা তো হাসি পাবার মতোই ব্যপার। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ঝিনুক বুঝতে পারলো ওর হাসিটা মিলিয়ে গেছে। ওর চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।তাহলে কি ও কাঁদছে? না না ওর বোকার মতো কাঁদলে চলবে নাকি। ও চোখটা মুছে নিলো। রিয়ান তো ওকে পছন্দ করেই না। রিয়ান যাকে পছন্দ করে তার সাথেই ওর থাকা উচিত। সেখানেই ও ভালো থাকবে।তাহলে ও কাঁদবে কেন। রিয়ান ভালো থাকবে সেটাই তো কাম্য। পরদিন বিকেলে ঝিনুক মিলিকে নিয়ে ছাদে গেলো।মিলি আর ঝিনুক সমবয়সী।

” ঝিনুক কিছু বলবে তুমি? আমাকে ছাদে নিয়ে এলে যে?
” হুম, কিছু কথা আছে তোমার সাথে।
” বলো,,
” এতো ঘুরিয়ে কথা বলতে পারি না আমি তাই সোজাসুজিই বলি, তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?
” হঠাৎ এমন কথা?
” বলো দরকার আছে,
” করি, কিন্তু কেন?
” রিয়ান ভাইয়াকে? কথাটা শোনে মিলি ঝিনুকের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
” তুমি,,
” তুমি বলো হ্যা কি না?
” হ্যা,,কিন্তু তুমি কেন জানতে চাইছো?
” সেটা পড়েই জানবে।চলো নিচে চলো। ঝিনুক নিচে এসে রিয়ানের রুমে ঢুকলো।রিয়ান শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো। ঝিনুককে দেখে উঠে বসলো।

“কিছু বলবি?
” হুম,,
” বল,,
” মিলি ও তোমাকে পছন্দ করে। আমার কথা হয়েছে ওর সাথে। এবার তুমি ওকে বলতে পারো।প্রবলেম নেই।
” Thanks,,
“আচ্ছা আমি যাই। বলেই ঝিনুক রিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

সন্ধ্যায় রিয়ান ঝিনুকের সামনেই ছাদে মিলিকে প্রপোজ করে। শুধু ঝিনুক নয় রিয়ানের আরও ২/৩ জন কাজিনও ছিলো তখন। সবাই বেশ এনজয় করে ব্যপারটা। শুধু ঝিনুকেরই কষ্ট হচ্ছিলো। তবে সেটা তো আর কাউকে বুঝতে দেয়নি ও। রাতে খাবার সময় ঝিনুক বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা তুলতেই সবাই একবাক্যে নাকচ করে দিলো।ওর এতো তাড়াতাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। আরও কিছুদিন ওকে এখানেই থাকতে হবে। তবে ঝিনুকের আর এখানে থাকার একদমই ইচ্ছে নেই।কিন্তু কেউ এখন ওকে যেতেই দিবে না।

পরদিন বিকেলে রিয়ান আর ওদের সব কাজিনরা,রিয়া সবাই ঘুরতে বের হয়েছে। ঝিনুকও সাথে ছিলো ওদের।ওর যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না।তবে সবাই রীতিমতো জোর করেই নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ঝিনুকের মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। রিয়ান আর মিলিকে পাশাপাশি দেখে ঝিনুকের খুব খারাপ লাগতো। ঝিনুক কিছুতেই রিয়ানের পাশে মিলিকে দেখে নিজেকে মানাতে পারছেনা।

ঝিনুক যতোই চাইতো রিয়ান আর মিলিকে এড়িয়ে চলতে ততোই ওরা ওর সামনে চলে আসতো। মিলি আর রিয়ান দুজনই ওদের সব কথাবার্তা ঝিনুকের সাথেই শেয়ার করতো। ঝিনুকের হাজার কষ্ট হলেও ওদের সব কথা শুনতো ও। ওদের দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া শোনে হাসতোও। তবে ওর মনে যে ঝড়টা বয়ে যায় সেটা কাউকে বুঝতে দেয়না ও। সুকৌশলে চোখের জলটাও আড়াল করতে শিখে গেছে ও।

ঝিনুক সাতদিন পর ওর বাড়িতে চলে আসে। ও ওসব দিনের স্মৃতি ওর মন থেকে দূরই হচ্ছে না। রিয়ানের ব্যপারটা ও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে এটা মেনে নিতে যে রিয়ান অন্য কারও হয়ে গেছে। সেই কিশোরী বয়স যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছে সে আজ অন্য কারও স্বপ্নে বিভোর সেটা ভাবতেই ওর ভীষন কান্না পায়। ও নিজেকে সামলানোর জন্য আবারও বইয়ের জগতে ডুব দিলো।

রিয়ান, মিলি সহ সবার সাথেই ঝিনুকের অনলাইনে যোগাযোগ হতো। রিয়ান আর মিলির কাপল পিকগুলো দেখলে ঝিনুকের খারাপ লাগাটা আরও বেড়ে যেতো। রিয়ান আর মিলি ইনবক্সে ও ঝিনুকের সাথে কথা বলতো।ওদের অনেক স্পেশাল মোমেন্টর ছবি, ঘটনাগুলো শেয়ার করতো। একসময় ঝিনুক এসবে হাপিয়ে উঠে। ও আর নিতে পারছিলো না। তাই ও ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করে দেয়। সবার সাথে যোগাযোগ আবারও অফ করে দেয়। ওর পুরো Concentration পড়াশোনায় লাগিয়ে দেয়। বইয়ে ডুবিয়ে দেয় নিজেকে।

তারপরও মাঝে মাঝে ওর মন খারাপ হয়ে যেতো। ঝিনুকের ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা এরমধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ঝিনুকের বাবাও ঝিনুকের বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করে। ” এই যে পেত্নী আসবো? ঝিনুক ওর রুমে শোয়ে বই পড়ছিলো। তখন ওর ছোট ভাইয়া যাবির ওর রুমে আসে। ঝিনুক যাবিরের সাথেই সবচেয়ে বেশি ফ্রি। যাবিরের সাথেই ওর সবচেয়ে বেশি কথা হয়। ঝিনুক ওর দুই ভাইয়েরই প্রান। তবে ওর বড় ভাই যারিফ দেশের বাইরে থাকায় ঝিনুকের তার সাথে কথা কম হয়।

” এসো ভাইয়া।
” ডিস্টার্ব করলাম?
” কি যে বলো,,, একদমই না। কিছু বলবে ভাইয়া?
” কেন ভাইয়া এমনি তোর রুমে আসতে পারে না বুঝি?
” পারে তো। তবে মনে হচ্ছে আমার ভাইয়া আমাকে কিছু বলতে চায়। তিথির সাথে ঝগড়া হয়েছে তোমার? ওকে কিছু বলতে হবে?

” ধূর, ওসব কিছু না। তোর বান্ধবীকে এখন আমি একাই সামলাতে পারি বুঝলি?
” হুম, তাহলে এবার আসল কারনটা বলো।
” ঝিনুক তোর কি কারও সাথে কোনো কমিটমেন্ট আছে? I mean তুই কাউকে পছন্দ করিস বা কারও সাথে রিলেশন আছে? দেখ Hesitate করিস না, ভাইয়াকে বল, আমি কথা দিচ্ছি তোকে কেউ কিছু বলবে না। আমি বাবার সঙ্গে কথা  বলবো।

” ওয়েট ভাইয়া, তুমি হঠাৎ এসব বলছো? হয়েছেটা কি?
” তুই বল,তারপর বলছি।
” নাহ ভাইয়া,সেরকম কিছুই নেই। আমি কোনো রিলেশনশিপ এ নেই। কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বলো?
” ভেবে বলছিস তো?
” ভাবার কি আছে বলোতো? আমি রিলেশন এ থাকলে তো কিছু ভাবার কথা।
” আসলে ঝিনুক বাবা তোর বিয়ে নিয়ে ভাবছে।বাবার একটা ছেলে পছন্দও হয়েছে।

এখন তোর ওপর ডিপেন্ড করছে সবটা। তোর সম্মতি থাকলে এগুবে। তোকে আবারও বলি আমরা কষ্ট পাবো,খারাপ ভাবে নেবো এসব ভেবে কিন্তু তুই আবার কিছু লুকাস না।ভাইয়াকে বল।

” সত্যি বলছি ভাইয়া সেরকম কিছু নেই।
” তাহলে কি বাবাকে বলবো বিয়ের ব্যপারে এগুতে?
” বলতে পারো।
” তুই মন থেকে বলছিস তো?
” হ্যা ভাইয়া, তোমরা আমাকে বিদায় করে দিতে চাইছি তোমাদেরর ইচ্ছে অপূর্ণ রাখি কি করে বলো?
” কি যে বলিস পাগলী, বিদায় বলছিস কেন।তোর বরকে আমরা আমাদের এখানেই রেখে দিবো।কেমন হবে তাহলে?
” তুমিও না।
“আচ্ছা তুই পড়,আমি এখন যাই।
” হুম,যাও।

ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর ঝিনুক আবারও শোয়ে পড়লো। ওর রিয়ানের কথা খুব মনে পড়ছে। ও রিয়ানকে ছাড়া আর কাউকে নিজের পাশে কখনো কল্পনায় করতে পারেনি। ভাইয়াকে তো বলে দিলো ওর বিয়ে করতে কোনো প্রবলেম নেই।কিন্তু ও মন থেকে মানতে পারবে তো? শেষ অবধি ও সবটা সহ্য করতে পারবে তো?

ঝিনুক ওর ভাইয়াকে বলার পর ঝিনুকের বাবা বিয়ের ব্যপারে স্টেপ নিলো। বিয়ের কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়ে ও যায়। এরমধ্যে ঝিনুককে দেখতে আসা, পাকা কথা সবই মোটামুটি শেষ। ঝিনুককে ছেলের সাথে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য বলা হলেও ঝিনুক রাজি হয়নি। সব ঠিকঠাক থাকায় ঝিনুকের এন্গেজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড করা হয়। ঝিনুকের বাবা খুব বড় করেই আয়োজন করেন এন্গেজমেন্ট পার্টির। সেই অনুষ্ঠানে এটেন্ড করার জন্য ঝিনুকের অনেক আত্মীয়স্বজনও আসা শুরু করে বাড়িতে। রিয়ানরাও চলে আসে। ঝিনুক এতোদিন সবটা সহ্য করতে পারলেও রিয়ান ওর সামনাসামনি থাকায় ওর ভয় হতে শুরু করলো। রিয়ানকে দেখে যে ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বারবারই ওর চোখে জল চলে আসছে ও অন্য কারও হবে ভেবে। ওর ভয় হতে শুরু করলো ওই এই খারাপ লাগাটা আবার কেউ বুঝে যাবে না তো? শেষ পর্যন্ত ও নিজেকে সামলে রাখতে পারবে তো?

দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে এলো। পার্টিটা রাতে হবে।তাই বিকেল থেকেই সবাই রেডি হওয়া শুরু করলো।সাজ সাজ রব পরে গেছে গোটা বাড়িতে।সবাই খুব আমোদে আছে। ঝিনুককেও অনেকটা সময় নিয়ে তৈরি করা হলো। ঝিনুককে তৈরি করার পর কেউ আর ওরদিক তেকে চোখই ফেরাতে পারছিলো না। ঝিনুক এমনিতেই বেশ মায়াবী চেহারার অধিকারী। ওর গায়ের রং যদিও ফর্সা নয়, তবুও ওর চেহারায় অন্যরকম মায়া কাজ করতো। ছিপছাপ গড়নের ঝিনুককে সাজানোর পর যেন আরও বেশি মায়াবী হয়ে গেছে।

সবাই যখন সাজগোছ নিয়ে ব্যস্ত ঝিনুক সেই সুযোগে ছাদে চলে গেলো। ওর ভীষনরকম কান্না পাচ্ছে। চোখটা বারবারই ভিজে উঠছে। নিজেকে একটু শান্ত করার জন্য ছাদে এসে দাঁড়ালো। আজকে সত্যি একটা স্পেশাল দিন। ওর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার একটা বড় ধাপ আজ ও পার করতে চলেছে।

কিন্তু ও যে খুশি হতে পারছে না। যাকে নিয়ে এমন স্পেশাল দিনের স্বপ্ন ও দেখতো, আজ ওর পাশে যে মানুষটা দাঁড়াবে সে যে ওর স্বপ্নের মানুষটা নয়। কি করে ও খুশি হতে পারে। ও মনেপ্রাণে চেষ্টা করছে নিজেকে শান্ত করতে।সবটা তো ওর ইচ্ছেয় ই হচ্ছে। ও বলেছে বলেই তো বিয়ে হচ্ছে ওর। আর রিয়ান তো অন্য একজনের।তাকে নিয়ে এভাবে কষ্ট পাওয়াটা ওর মানায় না। ওকে শক্ত হতেই হবে। ও বারবার দোয়া করছে যেন এন্গেজমেন্ট এর সময় রিয়ান সামনে না থাকে। কে জানে হয়তো রিয়ানকে দেখে ও কেঁদে ফেললো। তখন বিশ্রী ব্যপার হবে সেটা। রিয়ান ওর সামনে থাকলে ও কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না তখন।

” আজ কিন্তু তোকে খুব সুন্দর লাগছে। যাবির এর কথায় ঝিনুক পিছনে ফিরে তাকালো।
” Thanks ভাইয়া। তুমি কি এই সময় এখানে?
” তোকে খুঁজতেই এলাম। নিচে দেখলাম না তাই ভাবলাম হয়তো ছাদে আছিস।
” ওহ,,
” তুই খুশি তো ঝিনুক?
” খুশি হবো না কেন ভাইয়া। আমি তো খুশিই। সবটা তো আমার ইচ্ছে অনুযায়ী ই হচ্ছে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তো কিছু হচ্ছে না তাহলে আমি কেন খুশি হবো না কেন বলোতো?

” খুব গুছিয়ে মিথ্যা বলা ও শিখে গেছিস।
” কি বলছো ভাইয়া? আমি মিথ্যে কেন বলবো?
” সেটা তুই ভালো জানিস কেন মিথ্যে বলছিস।
” কি হয়েছে ভাইয়া,আমি তোকে কি মিথ্যা বলেছি বল আমায়?
” তুই যে রিয়ানকে পছন্দ করিস সেটা আমায় বলেছিস? তুই বলেছিস তোর কোনো চয়েজ নেই।
” ভাইয়া,,!
” মিথ্যে কেন বললি?
” তুমি কি করে জেনেছিস ভাইয়া? কে বললো তোমাকে? আমিও তো এই কথা কাউকে বলিনি।
” আমাকে কেউ বলেনি। সেদিন রাতে তোর রুমে গিয়েছিলাম। তুই ঘুমাচ্ছিলি।

তোকে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছিলাম।তাই তোর রুমে গিয়েছিলাম। তোর টেবিলের ওপর তোর ডায়েরি টা ছিলো। যদিও কারও পারসোনাল জিনিস ধরা ঠিক নয় তাও সেদিন আমি তোর ডায়েরিটা পড়ে ছিলাম।তখনই সব জেনেছি।এতো কষ্ট পাচ্ছিস একবার ভাইয়াকে বলতে পারিস নি?

” ভাইয়া প্লিজ তুমি এটা কাউকে বলো না প্লিজ,, প্লিজ ভাইয়া। আর ভাইয়া রিয়ান তো অন্যএকজনকে ভালোবাসে। আমি চাইলেই কি কিছু হতো নাকি? প্লিজ ভাইয়া কাউকে বলো না। আর এখন তো সব ঠিক হয়েই গেছে। আমার তো বিয়ে ও ঠিক হয়ে গেছে।বিয়ের পর আমি বরের সাথে লন্ডন চলে যাবো।এখন আর ওসব পিছনের কথা মনে রেখো না ভাইয়া। দেখবে আমি এখানেই সুখী হবো।ভালো থাকবো এখানেই।

” আমার বোনকে তো ভালো থাকতেই হবে। তৃতীয় একজনের গলা শোনে যাবির আর ঝিনুক দুজনই পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো যারিফ দাড়িয়ে আছে। দুজনই অবাক হয়ে গেলো। যারিফ যে আসবে সেটা ওরা জানতো না। যারিফ বলেছিলো ও ঝিনুকের বিয়ের সময় আসবে।

” ভাইয়া তুমি? বলেই ঝিনুক যারিফকে জড়িয়ে ধরলো।
” তুমি আসবে বলো নি তো ভাইয়া? যাবিরও অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
” সারপ্রাইজ দিলাম।আমার বোনের বিয়ে আর আমি আসবো তা কি হয়?
” আজ তো বিয়ে না ভাইয়া, আজ তো,,
” ওই একই হলো। তোকে তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আজকে।
” thanks ভাইয়া,কিন্তু দেখোনা কেমন বউ এর মতো সাজিয়েছে। এতো ভারী ভারী গহনা,এতো ভারী মেকআপ। আমার ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে যেন বউ সাজিয়েছে। আর আজই বিয়ে আমার।ধূর।

” মেয়েরা তো ভারী সাজ একবারই সাজে। তুই ও সেজেছিস।
“কিন্তু ভাইয়া আজ তো,,
” আরে নিচে চল তো। সবাই ওয়েএ করছে আমাদের জন্য। আমাদের তো আবার কমিউনিটি সেন্টারে যেতে হবে। চল জলদি।
” হুম চলো।

ওরা যখন কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছালো তখন মোটামুটি সব গেস্টই চলে এসেছে। ঝিনুক যতোটা বড় করে অনুষ্টান হবে ভেবেছিলো তারচেয়েও অনেক বেশি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রচুর গেস্ট ও এসেছে। ঝিনুক মনে মনে বলছিলো বাবা যে কি করে। এন্গেজমেন্ট এ এতো আয়োজন করে নাকি কেউ। মনে তো হচ্ছে কোনো বিয়ে বাড়ি এটা। এর ফাঁকেও ঝিনুক একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো রিয়ান কোথায় আছে সেটা দেখার জন্য। কিন্তু রিয়ানকে কোথাও দেখলো না। এদিকে ঝিনুককে স্টেজে নিয়ে বসানো হলো। ঝিনুক বারবার আড়চোখে চারদিকে তাকাচ্ছিলো রিয়ানকে দেখার জন্য। কোথায় গেছে কে জানে। রিং পড়ানোর আগে একবার কি ওকে দেখতেও পাবে না ঝিনুক?

স্টেজে বসার কিছুক্ষণ পরই ঝিনুক জানতে পারলো আজই ওর বিয়ে। ঝিনুক কি করবে বুঝতে পারছে না ভেবেছিলো এই অনুষ্ঠানের পর কিছুটা সময় পাবে নিজেকে প্রিপেয়ার করার। নিজেকে ভেতর থেকে তৈরি করবে। কিন্তু আজই বিয়ে হয়ে গেলে ও তো লোকটাকে মন থেকে মানতেই পারবে না। কিভাবে সংসার করবে তাহলে? ও যে এখনই অন্যকারও হতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু এ কথাগুলো এখন ও কাকে বলবে? সব কিছুর এরেন্জমেন্টও হয়ে গেছে।এখন তো পিছাতে ও পারবে না। ও অসহায়ের মতো চারদিকে তাকাচ্ছিলো। তখনই ওর পাশে এসে দাড়ালো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তিথি।ওর হবু ভাবীও বলা চলে।

” ভয় পাস না ঝিনুক, তোর বিয়েটা রিয়ান ভাইয়ার সাথেই হচ্ছে। ওর কাঁধে হাত রেখে বললো তিথি।
” কি বললি?
” ঠিকই শুনেছিস। তোর বিয়ে আজ রিয়ান ভাইয়ার সাথেই হচ্ছে। সবাই সবটা আগে থেকেই জানে।শুধু তুই ছাড়া।
” কিন্তু বাবা যার সাথে,,
” না বলে দিয়েছে। এন্গেজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড হওয়ার পর তোর ভাইয়া রিয়ানের কথা জানতে পারে।তখনই যারিফ ভাইয়া আর আঙ্কেলকে ব্যপারটা জানায়। ব্যস গল্পের মোড় ঘুরে গেলো।
” কিন্তু রিয়ান?
” তার রাস্তা ও ক্লিয়ার, মিলির সাথে রিলেশন আসলে জাস্ট মজা ছিলো।

রিয়ান ভাইয়া তোকে দেখানোর জন্য রিলেশন এর নাটকটা করেছিলো। তোর মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস আছে কি না সেটা জানার জন্য। ওনি ও যে তোকে খুব ভালোবাসে। মিলির সাথে ওনাকে দেখে তোর রিয়েকশনটা কেমন হয়। কিন্তু ওনি কনফিউজড হয়ে গেছে। তোর আচরন ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। তাই এতোদিন কিছু বলেনি। কিন্তু তোর পরিবার থেকে যখন ওনাকে বিয়ের কথা বলা হলো ওনি তো তখন আকাশের চাঁদটা হাতে পেয়ে গেছেন।

” এতোকিছু হলো আর আমি কিছু জানলাম ই না?
” জানবি কি করে? আমরা তো কেউ তোকে জানাতে চায়নি। পাশ থেকে যাবির ভাইয়া বলে উঠলো।
“এখন বল সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম?

যারিফও পাশে এসে দাঁড়ালো। ঝিনুক আর কিছু বললো না। ওর চোখ জলে ভরে উঠেছে। জল আর আটকাতে পারলো না ও। যারিফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললো।

” সব প্লানিং করলাম আমি,তুই আমাকেই ভুলে গেলি? যাবির বলে উঠলো।
” ভাইয়া,,,
” ঝিনুক আর কাঁদিস না,দেখ তোর সাজ একদম নষ্ট হয়ে যাবে। তখন কেমন হবো বল তো। চুপ কর।

তিথি এগিয়ে এসে বললো। এরমধ্যেই রিয়ানও স্টেজে চলে এসেছে। বরের শেরওয়ানিতে ওকে ভালোই লাগছে। ওদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ হলো কিছুক্ষণের মধ্যে। রিয়ান আর ঝিনুক পাশাপাশি বসে আছে। সবাই যে যার মতো সময় কাটাচ্ছে। আনন্দ করছে।

” তো ম্যাডাম এখন কেমন ফিল করছেন? রিয়ান ঝিনুকের কানের কাছে মুখ এনে বললো।
” খুব খারাপ।
” সে কি কথা, আপনি আপনার প্রিয়জনকে আপন করে পেয়েছেন আপনার তো খুশি হওয়া উচিত।
” হয়তো খুশি হওয়া উচিত ছিলো, তবে তাকে পাওয়ার মাধ্যমটা যে ভিন্ন,খুশি হবো কি করে? আমার রাতের ঘুম হারাম হয়েছে, নিজেকে ভেতরে ভেতরে এতোটা কষ্ট পেতে হয়েছে, কান্না করতে হয়েছে।খুশি হবো কি করে।

” এতো কিছুই হতো না যদি মনের কথাটা বলে দিতেন।
” আপনিও বলতে পারতেন। ওসব নাটক করার কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিলো না।
” আরে এতো কিছু না হলে গল্গল্পে টুইষ্ট আসতো না তো। কাউকে আমাদের এতো ইন্টারেস্টিং স্টোরিও শুনানোর চান্স থাকতো না। তবে এতোকিছুর পরও যে তোমাকো পেলাম সেটাই তো বড় কথা।
” মজা বুঝাবো আপনাকে।আমাকে দেওয়া প্রত্যেকটা কষ্টের হিসাব হাড়ে হাড়ে নেবো।
” আপনার সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো ম্যাডাম।

ওদের কথার মধ্যেই ওদের কিছু কাজিন সেখানে চলে আসে।তাই ওরা আর কিছু বলে নি। তবে ঝিনুক মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। মনে মনে ওর একটা কথায় ঘুরছিলো ” অবশেষে আমি তাহাকে পাইলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত