টুমি আমালে আপু দাকবা বুততো?? আল আমি হুপ্পি দাকবো তোমালে! একটু রাগি ভাব নিয়ে কথাটা বলল 1 বছর 8 মাস বয়সী হাবিবা!! কিন্তু সে যে আমার ভাতিজী, আমি ওর ফুফু লাগি সেটা সে বুঝে না!!সে আমাকে ফুপ্পি ডাকতে গিয়ে হুপ্পি ডাকে! কিন্তু ওরে আমি আপু ডাকতে হবে!
আমি ওরে আম্মু ডাকি সেটা ওর পছন্দ না,, সে বলে আমাল আম্মু আতে,,আমাল আম্মু আমালে টুধু আম্মু দাকবে! টুমি আমালে আপু দাকতে হবে! ভালো করে সে সব কথা বলতে পারে না!কিন্তু ওর আদো আদো বুলি আমার ভীষন ভালো লাগে! কিন্তু আজ সে আশ্চর্য্য বায়না ধরেছে,,ওরে নাকি আপু ডাকতে হবে! এর কারণ আছে,,ওর চাচাতো ফুফাতো সব মেয়েই বোন লাগে! আর ছোট বাচ্চাদের সবাই ই আদর করে আপু আম্মু এসব ডাকে!যার সম্পর্কে যা হয়! শুধু আমি ই একমাত্র ওর ফুফি!
অনেক বুঝালাম বেচারিকে , কিন্তু সে বুঝবে না! শেষ বললাম ঠিক আছে তোমার নাম ধরে ডাকবো! কিন্তু এতেও উনি খুশি না! উনাকে আপুই ডাকতে হবে! কি করার না ডাকলে আম্মাজি রাগ করে কান্না শুরু করে দেয়! সে বিষয় টা কোনো ভাবে এটা সেটা দেখিয়ে ভুলালাম!পরে আমাকে বলল সে ঘুমাবে,,আমি ওরে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম!ভাবি কাজে থাকলে হাবিবা কে আমি ই যত্ন করতাম!
হাবিবা আমার বড় ভাইয়ের 3 নাম্বার মেয়ে! ওর নামটা ও মাশাল্লাহ ইসলামিক!কিন্তু বাকি ছেলে মেয়ে গুলোর নাম ডিজিটাল! সবার মধ্যে হাবিবা খুব সুন্দর আর মায়াবী! আর গুলুমুলু! দেখলেই যে কেউ কোলে নিয়ে আদর করতে চাই! ওর জ্ঞান বুদ্ধি ও প্রকট! সে সব কিছুতেই সব বাচ্চাদের থেকে একটু আলাদা! তারাতারি হাঁটা শিখা, সুন্দর করে কথা বলা ঝগড়া করা! সবকিছুই দ্রুত ছিলো! আর তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি!
আমি আমার অবসর সময় কখনোই ঘুরাঘুরি করতাম না হাবিবা হওয়ার পর,,, ওরে নিয়েই ব্যাস্ত থাকতাম,,কেন জানি ওরে যত্ন করতে আমার খুব ভালো লাগতো! কিন্তু যখন ওর বয়স 1 বছর 10 মাস,,তখন সে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে যেতো! অনেকদিন একাধারে অসুস্থ থাকতো,, গ্রামের ডক্টর দেখানো হয়ছিলো প্রথম ! এতে সে অল্প সময়ের জন্য সুস্থ হয়েছিলো আবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো! অল্প কয়েক দিনে ওর শরীর একদম শুকিয়ে গেছিলো,, গুলুমুলু ভাব টা আর নেই! ওরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাওয়া হলো(আমাদের জেলা),, পরিক্ষা নিরিক্ষা করা হলো! ডক্টররা বলল যে ওর গুরুতর সমস্যা আছে কিডনিতে!
কিন্তু ভালো করে কিছু বলতে পারে নাই! পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলো,,, সেখানে ওরা যা বলল সেটা আমরা কেউ ই তখন জানতে পারি নি সে সময় ! শুধু ভাইয়া জেনেছিলেন! ভাবিকে ও জানান নি তখন। কারণ সেটা ভাবি কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারবে না!কিন্তু অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম! হাবিবার কিডনি বিকল হয়ে গেছে! ওর জন্মের পর পর ই একটাতে সমস্যা ছিলো,, এখন 2 টাই বাদ! আর ওর এখন অপারেশন করাটা ও রিস্ক! সে ছোট বাচ্চা! ভাই পুরো পাগলের মতো হয়ে গেছিলো! আর ডক্টর রা বলে দিয়েছে ওরে বাচাঁনো হয়তো সম্ভব না! ভালো চিকিৎসা করতে পারেন কিন্তু বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে! কিন্তু ভাই সেসব তখন কাউকে বলেন নি,,,ভাবিকে বলেছেন হাবিবা ঠিক হয়ে যাবে,, আমরা ওর ভালো চিকিৎসা করতে ইন্ডিয়া নিয়ে যাবো!
এতে ভাবি খুব ভয় পেয়ে গেছিলো,,, কারণ ভাই খুব কিপটে ধরনের,,, ভাবি জানেন গুরুতর সমস্যা আছে,, যার জন্য ভাই ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে চাচ্ছেন!তখন ভাবি খুব কান্না করছিলো হাবিবা কে ধরে! আর হাবিবা তখন ওর আম্মুকে বলেছিলো,,আম্মু তোমালে কে মেলেছে,, আব্বু? ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো,,আম্মুকে কেন মেলেছো টুমি,আম্মুকে এখন তরি বলো? ভাই নিজেকে তখন আর কোনো ভাবেই আটকাতে পারছিলেন না,,, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলেছিলেন,আমি কখনো তোমার আম্মুকে আর মারবো না,,,সরি বলছি! সেদিন হাবিবার মুখে একটা হাসি ছিলো যা আজ ও চোখে ভাসে! দিন দিন হাবিবার অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছিলো!! একটু অসাবধানে কোলে নিলে ও কান্না করতো,,কারণ সে ব্যাথা পেতো!
আর এমনিতেই সে সময় সে সারাক্ষণ কান্না করতো,,বাচ্চা মেয়ে কিছু বলতে পারতো না,,বুঝাতে পারতো না,,
আর সারাক্ষণ সে শুধু ভাবির কোলেই থাকতে চাইতো,,কোনো কাজ করতে গেলে ও ওরে কোলে নিয়ে করতে হতো ,
,মাঝে মাঝে আমার কাছে দিলে সে খুব কান্না করতো,,কারণ ওর মা ছাড়া এখন কারো কাছে ভালো লাগে না!
এদিকে ভাই ওরে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার টিকিট রেডি করে ফেলেছে! হাবিবা পর দিন ওর নানু বাড়ি যাবে সেখান থেকে 2 দিন পর ফ্লাইট! যে দিন সে চলে যাবে নানুর বাসায়,,সেদিন সকালে আমি ওরে কোলে নিয়েছিলাম শেষ! জানিনা কেন সে সেদিন কান্না করে নাই,,কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর সে সবসময় কান্না করতো ওর আম্মু ছাড়া কেউ কোলে নিলে!
আমি ওর গালে একটা পাপ্পি দিয়েছিলাম সেও পাল্টা আমাকে দিয়ে বলেছিলো,,টুমি আমালে আপু দাকো না কেরে?
আমি কান্না করে দিয়েছিলাম,,আর বলেছিলাম ওকে আম্মু আমি আপু দাকবো! সে রাগে গাল ফুলিয়ে বলে আবাল টুমি আম্মু দেকেছো! কিচ্ছু বলতে পারছিলাম না,,,শুধু মনে হচ্ছিলো বুক ফেটে কান্না আসছে! আমি ওরে তার আম্মুর কাছে দিয়ে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম আর আর অনেক কান্না করেছিলা।! দুপুরের দিকে ওরা চলে গেলো! আমার কেন জানি এতো কষ্ট হচ্ছিলো আর মনে হচ্ছিলো আর হয়তো ওরে দেখতে পারবো না! ভাবির ভাই এসে নিয়ে গেছে ওদের,,, আর আমার ভাইয়া অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পরদিন যাবে!
ওরা চলে যাওয়ার পর ভাইয়া সেদিন একটু ও ঘুমায় নাই,,বাইরে বসে কান্না করছে,,, আম্মা ভাইয়াকে সারারাত মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে,, আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে! পরদিন সকালে একবার ফোন দিয়েছিলো ভাইয়া কেমন আছে হাবিবা জানতে,,ভাবি বলেছিলো ভালো একটু,,, আর ভাই যেন তারাতাড়ি চলে যায় সেখানে! ভাই সব গুছাচ্ছে,,, 40 মিনিট পরেই আবার ভাবির নাম্বার থেকে ফোন আসলো জামাই বাবাজী তারাতাড়ি আসেন হাবিবার অবস্থা খারাপ! ভাবির মা এই কথা বলেছিলো!
ভাই দিশেহারা হয়ে গেছিলো তখন,,যে জিনিস গুছিয়েছিলো নেওয়ার জন্য সব ফেলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো,,, শেষ একটা কথা বলেছে আম্মাকে,, হাবিবার অবস্থা খারাপ,, তোমরা আসলে আসো আমি যাচ্ছি! ভাই গিয়েছিলো তারাহুরো করে,, কিন্তু শেষ বার আর ওরে জীবিত দেখা হয় নি। সে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে! আর শেষ সে তার আম্মুকে জড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলেছিলো আমাল আব্বু,,দাদু,,হুপ্পি কই??!! কিন্তু শেষ আর দেখা হলো না ওর আব্বু,,দাদু আর হুপ্পিকে!