—-আম্মু একটা কথা বলি, রাগ করোনা প্লিজ!
—-কি বলবি বল?
—-আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি ৷
—-ভালবাসো আর যাই করো বিয়েটা আমার পছন্দ মতই হবে ৷ তাই ওসব প্রেম তোমার নিকট মরীচিকা ছাড়া কিছুই নয় ৷ সময় হলে ঠিকই তাকে ছাড়তে হবে!
—-আম্মু, আমি যাকে পছন্দ করি তাকে তোমার অবশ্যই পছন্দ হবে ৷ অনেক হ্যান্ডসাম সে ৷ বিসিএস পাশ করা ছাত্র সে ৷ সরকারী চাকরি করে ৷ বাবা, মা দুজনই ভার্সিটির প্রফেসর!
—-ও আচ্ছা, তাকে আসতে বলিস একদিন!
—-আচ্ছা আম্মু!
আমার বয়ফ্রেন্ড হিমেল হাবাগোবা টাইপের ৷ অল্ড ফ্যাশন পছন্দ তার ৷ অনেক রিকুয়েস্ট করার পর আজ সে জিন্স, টিশার্ট পড়ে আসছে ৷ চোখে দামি সানগ্লাসও লাগিয়েছে ৷ হিমেল আমাদের বাসায় এসে আম্মুর সাথে দেখা করতে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো ৷ আম্মাকে দেখামাত্র কেঁপে উঠলো সে ৷ ঘাবড়ানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আম্মার দিকে ৷ মনে হলো সে ভয় পেয়েছে ৷ ভয়ে তাকে মরা পুঁটিমাছের নত লাগছিল! আম্মু তাকে দেখেই বিদ্রুপের স্বরে বলল,
—তো তুমি আমার মেয়েকে ভালবাসো? খুব ভাল ৷ কিন্তু তোমাকে একটুও আমার পছন্দ হলোনা ৷ চেহারাটা পুরো ডিপজল ডিপজল ৷ ফ্যাশন তো ভাদাইমা সাইজের ৷ চোখে ওটা কি ব্র্যান্ডের চশমা? এত বাজে লাগছে কেন? হিমেল কিছুই বললনা ৷ শুধু কাঁপছিল ৷ আমি আম্মুর পিছে দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ আম্মুর উপর দিয়ে কথা বলা নিষেধ, তাই কথা বলছিনা ৷ আম্মু ফের বলল,
—-যাইহোক, ফ্যাশন পরিবর্তন করতে হবে ৷ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তোমাকে ৷ স্মার্ট হতে হবে ৷ এমন বাজে ফ্যাশনের জন্য ডিপজল ডিপজল লাগছে ৷ আমি তো এমন ডিপজল মার্কা ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারিনা ৷ যদি আমার মেয়েকে পেতে চাও তাহলে এমন বিশ্রী ফ্যাশন পাল্টাও ৷ কিসের জব করো তুমি? এবার হিমেল নড়েচড়ে বসে ভাঙ্গা গলায় কাঁপাস্বরে উত্তর দিলো,
—-জ্বী না, কোনো জব করিনা ৷ জব খুঁজছি ৷ আপাতত একটা কোটিং সেন্টারে শিক্ষকতা করছি! এট শুনে আমার মাথায় হাতুড়ির বারি পড়লো ৷ হিমেলের উপর প্রচন্ড রকমের রাগ হলো ৷ বোকাটাকে বলেছিলাম আম্মু জবের কথা জিজ্ঞেসা করলে বলবে তুমি কৃষি অফিসার ৷ কিন্তু বোকাটা কি বললো? ওরে এক্ষণি কষে দুটা থাপ্পর মারতে মন চাচ্ছে! আম্মু হিমেলের কথা শুনে আমার দিকে বাকা চোখে তাকালো ৷ হিমেলকে সে নরম গলাতেই বলল,
—সত্যিই কোনো জব করোনা? তুমি না বিসিএস পাশ করছো? হিমেল আম্মুর কথা শুনে আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে রইলো ৷ এরপর আম্মুকে জবাব দিলো,
—না আন্টি, সত্যি কোনো জব করিনা ৷ আর আপনি যা শুনছেন মিথ্যা শুনছেন ৷ আমি কখনো বিসিএস পরীক্ষায় দিইনি, পাশের কথা আসবে কোথা থেকে? আম্মু এ কথা শুনে ভীষণ ভাবে রেগে গেল ৷ তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেল ৷ রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগল ৷ দাঁত কটমটিয়ে হিমেলকে বলল,
—তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যাও!
—কেন আন্টি?
—যা বলছি তাই করো ৷ তোমার সাথে আমার মেয়ের কোনো সম্পর্ক চলবেনা ৷
একজন লো-ক্লাস ছেলের সাথে আমার মেয়ে কেমনে প্রেম করছে ভাবতেই গা ঘিনঘিন করছে ৷ চলে যাও বাসা থেকে! আমি চুপ থাকতে পারলাম না ৷ উত্তেজিত হয়ে জোর গলায় আম্মুকে বললাম,
—আম্মু এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা ৷ তুমি আমার সামনে হিমেলকে অপমানিত করতে পারোনা ৷ আম্মু কিছু বলার আগে হিমেল সোফা থেকে উঠে আম্মুকে “আন্টি আসি” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ আমি হিমেলের পিছে পিছে গেলাম ৷ বাসার গেটে গিয়ে তাকে অপরাধীর স্বরে বললাম,
—সরি জান, আমার ব্যবহারের জন্য দুঃখিত! হিমেল চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—তুমি চুপ থাকো ৷ তোমার জন্য এমন ভাবে অপমানিত হলাম ৷ তুমি তোমার আম্মুকে নিশ্চয় বলেছিলে আমি বিসিএস ক্যাডার সরকারী চাকরি করি ৷ এটা না বললে আজ এমন পরিস্থিতির শিকার হতাম না!
—বোকা, তুমি বিসিএস ক্যাডার এ কথা বলার কারণেই আম্মু তোমাকে আসতে বলেছিল ৷ তা না হলে তো কিছুতেই আসতে বলতোনা!
—হুম হয়েছে ৷ এবার খুশি হয়েছো তো?
—তো তুমি জব কেন করছো না? আর কতদিন টিউশনি করে চলবে? আম্মুকে বলছো কোচিং সেন্টারে পড়াও ৷ সেটা হলে তো ভালই হতো আমার জন্য ৷ তুমি তো সেটাও করোনা ৷
—সব করবো ৷ সময় দাও ৷ তারপূর্বে তোমাকে বিয়ে করে নিই!
—চুপ করো ৷ কাজের বেলায় কিছুনা অথচ কথার বেলায় ঠনঠনা ৷
—সময় হলে দেখবে এই হিমেলের কি পাওয়ার! থাকো তুমি! ২মাস ১৫দিন পর আমাকে এক জায়গা থেকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে ৷ পাত্র মেসির মত দাঁড়িওয়ালা ৷ খুবই স্মার্ট ৷ চোখে আকর্ষণীয় সানগ্লাস ৷ পাত্রপক্ষের সামনে আব্বু ও আম্মু বসা ৷ আম্মু পাত্রকে নরম স্বরে জিজ্ঞেসা করল,
—তোমার নাম কি বাবা? পাত্রের জবাব,
—আমার নাম রাফাত চৌধুরী ৷
—কি করো?
—জ্বী, বিসিএস ক্যাডার ৷ বর্তমানে একটা কলেজে প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করছি!
—বাহ! খুবই ভাল ৷ তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে! আম্মু পাত্রের বাবা, মায়ের দিকে তাকিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলল,
—আমাদের মেয়েকে তো দেখেছেন ৷ পছন্দও হয়েছে, আপনাদের ৷ আমাদেরও আপনাদের ছেলেকে পছন্দ হয়েছে৷ যদি আপনারা চান তাহলে আপনাদের ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাবো! কি বলেন? পাত্র উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
—সব ঠিক আছে ৷ কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে ৷ আম্মু বলল,
—কি প্রশ্ন বাবা?
—আপনি কি বিসিএস দিয়েছিলেন? আম্মু পাত্রের এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে উঠলো ৷ ইতস্তত বোধ করে থেমে থেমে বলল,
—জ্বী বাবা ৷
—পাশ করেছিলেন?
—জ্বী না বাবা ৷ সবাই কি আর বিসিএস পরীক্ষায় পাশ হয়? সবই ভাগ্য!
—-ঠিকই সবাই পাশ হয়না ৷ মূর্খ টাইপের পরীক্ষার্থীরা পাশ করতে পারেনা ৷ যোগ্যতাহীন কেউ পাশ হয়না ৷ আসলে বিসিএসে যোগ্য অযোগ্য সবাই পরীক্ষা দেয় তো, এটাই আসল সমস্যা!
—-তুমি কি বলতে চাচ্ছো বাবা?
—-আমি বলতে চাচ্ছি ৷ আপনার মেয়েকে খুব পছন্দ হলেও আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি ৷ যোগ্যতাহীন একজন মহিলা আমার শ্বাশুরি হোক এটা চাইনা ৷ আমি চাই বিসিএসে পাশ করা একজন শ্বাশুরিকে ৷
—আমার বিসিএসে পাশ দিয়ে কি করবে? আমার মেয়ের হলে তাও একটা কথা ছিল!
—আমি বিসিএস পাশ করা স্বনামধন্য ব্যক্তি ৷ অথচ আমার শ্বাশুরি বিসিএস পাশ করা মহিলা হবেনা, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? সমাজের লোকজনের নিকট মুখ দেখাবো কেমনে? সবাই থুথু দিবে ৷ শুনুন আপনার মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছেনা ৷ আমরা আসি!
—বাবা, বিসিএসই কি সব? বিসিএস পাশ না করা মেয়েরা কি সারাজীবন অবিবাহিত থাকে?
—-চুপ করুন তো ৷ আপনার মেয়েকে ড্রাইভারের সাথে বিয়ে দেন গিয়ে!
আম্মুর মুখটা এতটুকু হয়ে গেল ৷ পাত্রপক্ষ বাসা থেকে চলে গেল ৷ আম্মু কান্নাকাটি করে একেবারে শেষ ৷ আব্বু সিদ্ধান্ত নিলো তার পছন্দের কোনো এক ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে ৷ আব্বু একজন ছেলেকে পাত্র হিসেবে পেয়েও গেল ৷ সেই ছেলেটাও বিসিএস ক্যাডার ৷ আম্মু আব্বু দুজনেই খুশি ৷ বিয়ে ঠিকও করে ফেলল আমার মতামত না নিয়ে ৷ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালাবো ৷ হিমেলকে ছাড়া অন্য কারো বউ হতে পারবনা ৷ হিমেলকে বলেছি আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যেতে ৷ সেই মোতাবেক হিমেল আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গেল ৷ বাসা থেকে তুলে নিয়ে ২ ঘন্টা পর হিমেল একটা সিদ্ধান্ত নিলো ৷ সে আমাকে একটা বোরখা ধরিয়ে দিলো ৷ এবং সে নিজেও বোরখা পড়ে নিলো ৷ এরপর যে গাড়িতে করে আমাকে বাসা থেকে তুলে এনেছিল সেই গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসার দিকে চলল ৷ অবাক হয়ে হিমেলকে বললাম,
—কি ব্যাপার ফের আমাদের বাসার দিকে যাচ্ছো কেন? হিমেল নরম আওয়াজে বলল,
—বাসায় গিয়ে তোমার আম্মুর কান্নাকাটি দেখবো ৷ উনি বিসিএস ক্যাডারওয়ালা বরের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পেরে কেমন করে সেটাই দেখবো!
—কিহ? এসব করে কি পাবে তুমি?
—পৈশাচিক আনন্দ পাবো ৷ ঐদিন ভিন্ন পাত্র সেজে তোমার আম্মুকে যেমনে শায়েস্তা করলাম ওতে যেরকম আনন্দ পেয়েছিলাম আজকে তোমার আম্মুর কান্না দেখে সেরকম আনন্দ পাবো!
—ধুরো!
—আরে চলো তো আগে! বাসায় পৌঁছলাম ৷ গাড়ি থেকে নেমে ড্রয়িংরুমে ঢুকলাম৷ দেখি আম্মু গলা ছেড়ে হাউমাউ করে কাঁদছে ৷ আর বিলাপ করতে করতে বলছে,
—এ কি সর্বনাশ করলি রে মিথিলা? তুই কেন পালিয়ে গেলিরে এএএএ? এত লক্ষ্মী একটা ছেলেকে মেয়ের জামাই করে পেতাম আর তুই এত বড় সর্বনাশ করে চলে গেলিরে এএএএএ? এমন কাজ কেমনে করতে পারলিরে এএএএ? এত ভাল ছেলেকে কি পাবো আর? ঐ মরার মিথিলা তুই কেন এমন কাজ করলিরে এএএএএ? হায় আল্লাহ এ কেমন কষ্ট দিচ্ছো আমারেএএএ? এর আগে কেন মরণ দিলানা আমারে এএএ? হিমেল তার ফোন দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এসব ভিডিও করছিলো! পাত্রপক্ষের দুজন লোক এসে বলল,
—পাত্র কোথায় যেন গিয়েছিল! তাই আসতে দেরি হচ্ছিল ৷ কিন্তু সে ফিরে আসবে বলছে ৷ একটু পরই সে এখানে এসে যাবে, আপনারা টেনশন করবেন না! আম্মু কেঁদে কেঁদে বলল,
—-কিন্তু আমার মেয়ে তো পালিয়ে গেছে! পাত্রপক্ষের লোকটি কথাটি শুনে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ হিমেল আমাকে রুম থেকে বের হতে বলল ৷ রুম থেকে বের হবার পর সে বলল,
—বোরখা খুলে বিয়ের সাজে তোমার ঘরে গিয়ে অবস্থান করো! হিমেলের কথামত বোরখা খুলে আমার রুমে গিয়ে বসে রইলাম ৷ একটু পর শোনা গেল বর চলে আসছে ৷ বর আসছে শুনে আম্মু কান্না থামালো ৷ আমি রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম ৷ আম্মু আমাকে দেখে চোখের পানি মুছে শক্ত কন্ঠে বলল,
—কই গেছিলি? আমি বললাম,
—আমার বরের সাথে দেখা করতে ৷
—তোর কোন বর?
—যার সাথে বিয়ে ঠিক করছো?
—তার সাথে দেখা করতে বিয়ের আসর থেকে চলে যেতে হবে?
—দরকার ছিল তাই ৷ কথার মাঝখানে হিমেল টোপর মাথায় আমাদের সামনে এসে হাজির হলো ৷ তার পড়নে ছিল তার চিরাচিত সেই পোশাক আশাক ৷ আম্মু তাকে দেখে বলল,
—ঐ ডিপজল তুই এখানে কেন? হিমেল বলল,
—আমিই তো এখানে থাকবো ৷ বিয়ে তো আমার সাথেই ঠিক করেছেন ৷
—কে বলল? আব্বু এসে বলল,
—হ্যাঁ সালেহা, তার সাথেই বিয়ে ঠিক করা হয়েছে ৷ আম্মু রাগস্বরে বলল,
—তার মত ফকিন্নির সাথে বিয়ে ঠিক কেন করলে? আমরা যে পাত্রের বাসায় গিয়েছিলাম সেটা তো রাজপ্রাসাদের মত বাসা ছিল ৷ পাত্রও ছিল সুদর্শন ৷ বিসিএস ক্যাডার!
—সবই ঠিক আছে ৷ সেও সুদর্শন ৷ বাসাও রাজপ্রাসাদের ৷ সেও বিসিএস ক্যাডার ৷
—মানে কি? যদি এরকমটাই হয় তাহলে এত নাটকের দরকার কি ছিল তার? হিমেল জবাব দিলো,
—-মিথিলা আমাকে ভালবেসেছিল যখন আমি বেকার ছিলাম ৷ কোনো কাজ করতাম না ৷ আমি চেয়েছিলাম সে আমার যোগ্যতা যেমনই হোক এসব মেনে নিয়েই আমাকে বিয়ে করবে ৷ বিসিএস ক্যাডার এটার গুরুত্বে সে আমাকে গ্রহণ করুক চাইনি ৷ এজন্য তাকে বিসিএস পরীক্ষার সময় বলিনি পরীক্ষা দিচ্ছি ৷ তখন তার সাথে কথায় ঠিকমত বলিনি ৷ পাশ করার পরও বলিনি ৷ যখন সে বলল তার মায়ের সাথে দেখা করতে হবে তখন সে নিজেই বুদ্ধি দিলো আমি যেন আন্টিকে বলি বিসিএস ক্যাডার আমি ৷ কিন্তু এটা বলিনি ৷ আমি পরীক্ষা করেছিলাম এটা জানার জন্য যে আজ আমি বিসিএস ক্যাডার না হলে পরিণতিটা কেমন হতো ৷ হুম দেখেছি, পরিণতিটা মোটেও ভাল হতোনা ৷ আন্টি আমাকে যেভাবে অপমানিত করেছিলেন তার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ৷
সেটার প্রতিশোধ নিতে আজ একটা নাটক করলাম ৷ মিথিলাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে গেলাম ৷ মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে এই দুঃখে আন্টি কেমন করে সেটা একটু দেখে নিলাম ৷ জানি এটা পাগলামী ৷ এরপরও একটু শিক্ষা দিলাম ৷ মেয়ের মতামত না নিয়ে বিয়ে ঠিক করলে যে পরিণতি ভাল হয়না সেটা একটু বুঝিয়ে দিলাম ৷ আরেকটা কথা আমি প্রয়োজনে নানা রুপ ধারণ করি ৷ স্মার্ট সেজে থাকা পছন্দ না ৷ যেমন আমি তেমনটাই ভাললাগে ৷ আপনারা রাজপ্রাসাদের মত ঐ বাসায় গিয়ে যে হিমেলকে দেখেছিলেন সে ছিল কৃত্তিম হিমেল ৷ কিন্তু প্রকৃত হিমেল আপনাদের সামনে দাঁড়ানো! হিমেলের কথাগুলো আম্মু অবাক হয়ে শুনছিল ৷ হিমেল আম্মুর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে ভিডিও প্লে করে বলল,
—-নেন দেখেন ৷ আমি মিথিলাকে নিয়ে একটু বাসার নিচ থেকে ঘুরে আসি! হিমেল আমার হাতটা ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল ৷ গাড়িতে চড়লাম ৷ গাড়ি চালাতে লাগলো হিমেল ৷ দ্রুতবেগে গাড়ি চললো ৷ এরপর হঠাৎ সে বলল,
—জানো একটু আগে যা যা বলেছি সবই মিথ্যা ছিল ৷ তুমি পালিয়েছো এই খবর শুনে পাত্রপক্ষ বিয়েটা বাতিল করে দিছে ৷ তারচেয়ে বড় কথা তোমার ঐ পাত্র অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে ৷ তোমার বাবাকে বিয়ের আগের দিন তোমার আমার সম্পর্কের কথা খুলে বললে তিনি আমাদের হেল্প করার কথা বলেন ৷ তবে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন বিষয়টা যেন আন্টি না জানেন ৷ এখন আর কি? যখন তোমার আম্মু জানবেন তোমার আসল পাত্র অন্য মেয়ের জন্য পালিয়েছে তখন সে আমার ফোনের ভিডিওটা দেখবেন আর কাঁদবেন ৷ সবচেয়ে কঠিন সত্য অবশ্যই আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে হবে তার! হিমেলের কথায় মাথা ঘুরছিল ৷ তাকে শুধু বললাম,
—-সত্যি করে বলো তো তুমি কি সত্যিই বিসিএস ক্যাডার? হিমেল ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো,
—ধুরো, বিসিএস ক্যাডার হলে গার্মেন্টসে কাজ করি? আমি বেহুশ!