শুরু করছি ঘুড়ি ওড়ানোর গল্প দিয়ে। অবাক হচ্ছো ভীষণ? কোনো সম্বোধন নাই, কুশল জানানো নাই, সরাসরি কথায়।
জানোই তো, অামি এমনি ছিলাম এবং অাছি, হয়তো থাকবো।
শরতের বিকেলগুলোতে অামরা অামাদের ছাদে উঠতাম দল বেঁধে, তোমরা তোমাদের বাসার ছাদে। অাকাশে সাদা সাদা ভেজা তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়াতো, কী সুন্দর হিমেল বাতাস থাকতো! তোমরা রঙ-বেরঙের ঘুড়ি ওড়াতে, অামরা রঙ বেছে ঘুড়ি বা রঙ পছন্দ করে সাপোর্ট দিতাম, মনে অাছে কি? তুমি নেভি ব্লু বা সাদা নীল ঘুড়ি নিতে, অামি তোমাকে সাপোর্ট করতাম। প্রায়ই তোমার ঘুড়ি কাটা পড়তো বা হারিয়ে যেতো দূরে, তুমি বিষণ্ণ হয়ে যেতে, মন খারাপ হতো অামার।
গান ছাড়োনি তো?
অামি এখন অনেক গান শুনি, অাগে এত শুনতাম না।
তোমার ঐ ভরাট, উদাত্ত কণ্ঠ অামার কানে ঝমঝমিয়ে বাজে, জানো?
মুঠো মুঠো সময় ব্যয় করে ছাদের কোণাটায় দাঁড়িয়ে অাকূল হয়ে ঐ মন্ত্রমুগ্ধ গলার গান শুনতাম, তুমি শুনিয়ে যেতে একের পর এক।
হা হা হা। কী যে হাসি পাচ্ছে, কেন জানো? বাজে অভ্যেস তোমার, অাছে কি এখনো? বিকেলটা বা ঐ কলেজ ফাঁকি দিয়ে তোমার সাথে রমনায় যখন হাঁটতাম তখন কী করতে? মনে অাছে?
বড্ড রাগ করতাম তোমার কান্ড দেখে।
ঝালমুড়ি খাও অার বাদাম খাও যাই খাও না কেন অালতো করে হাতটা ওড়নায় মুছে নিতে, মুখটাও।
বাসায়ও নাকি তোমার এমনি অভ্যেস। কত যে বকেছি এ অাহ্লাদীপনায়। অাজ বড় মনে পড়ে যাচ্ছে।
দেখেছো অাজ রাতটা? কী সুন্দর চাঁদ উঠেছে । পূর্নিমার রাতগুলো অামরা দুজন দুবাসার ছাদে উঠতাম, বাতাসের কানে কানে কথা বলাতাম, অাকাশ অার চাঁদটা দারুণ হাসি নিয়ে সাক্ষী হয়ে থাকতো।
সময়ের মহাকাল পেরিয়ে যায়, কত কত পূর্নিমা, শরৎ বিকেল, চুরি করা অলস দুপুর, শীত সন্ধ্যা জমিয়ে রেখেছি , ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি স্মৃতির বিজন ঘরে। ভালো লাগে ভাবনা নিয়ে খেলতে, নাড়াচাড়া করতে, তোমাকে ভেঙে ভেঙে পড়তে। কেমন উত্তাল ঘোরে জীবন কাটতো অনেকগুলো রোদ জমানো বিভা সুখে।
অামার লেখাগুলো অাছে কী? পড়েছো? নাকি ভুলের চৈতালিক চিতায় দগ্ধ করে ছাই করেছো অামায়।
কেমন অাছো বলো এবার। তোমার মায়ের জিদ জিতে গেলো তোমার ইচ্ছার নুয়ে যাওয়া কান্নায় । তুমি মাকে সুখী করলে, সবাইকে খুশি করলে, অামাকে হারিয়ে ফেললে।
গভীর রাতে হাওয়া যখন জানালার বাইরে কাঁঠালীচাঁপা গাছটির পাতায় কাঁপন তোলে চমকে চমকে উঠি, মনে হয় এই বুঝি তোমার মাধূর্যময় ভরাট উদাত্ত কন্ঠটি ডেকে গেলো।
হা হা হা, তোমার কন্ঠের পাগল ছিলাম, দিন রাত পার করে দিতাম ঐ কন্ঠের গোছানো, সাজানো শব্দের বাক্যবাণীতে।
ভালো অাছো তো! গোলাপ ফোঁটা সুখে, বৃষ্টির রিমঝিম রিমঝিমে, শিশিরের প্রলেপ মাখা ভোরে প্রতিটি নীলপদ্মে অামার জড়ানো মাখানো কবিতায় সেই তোমাকে বানাই। সেই ভেজা সুরের, গন্ধমাখা রাতের সম্মোহিত ঢেউয়ের একটা উজাড় করা তুমিময় তুমি।
নিস্তব্ধ পৃথিবীর বুকে এঁকে যাবো তীব্র ভাবাবেগে ভেসে যাওয়া অনুপম শোভন এক মুগ্ধ মোহন তুমি। তোমার জন্য অাকাশ হোক এক ঠিকানাবিহীন অাগামী।
দেখো তো রাত ক’টা বেজে চলেছে।
উঠলেই যখন বারান্দায় এসে দেখো। বেলী অার হাস্নাহেনারা কী উথাল পাথাল গন্ধ বিলাচ্ছে! চাঁদটাও অাজ অপরূপ । ভারী নিঃশ্বাস ভেসে অাসছে ভেতর কামরাটা থেকে। কলটা তোমার ঠিক করাতে হবে ওয়াশরুমের, টিপটিপ অাওয়াজ অাসছে জল পড়ার।
বাতাসে টেবিলে রাখা তোমার লেখার খাতাটা কী খস খস শব্দ তুলছে! তোমার বাইকটা ভালো অাছে তো? কী প্রিয় সেটা! দেখেছো? সবকিছু তার তার কাজ করে যাচ্ছে, নিয়ম মতো। হচ্ছে, ঘটছে, চলছে। কিছুর জন্য কিছুই অাটকে থাকে না।
যেমন থাকেনি অামার জন্য কারো কান্না। অামার জন্য করেনি কেউ এক ভালোবাসাময় অপেক্ষা!
ইতি,
রুদ্রালী