রুবি আপার চাবি

রুবি আপার চাবি

লাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর কফি হাউস এর আলো-ছায়ায় মিনি কফি পান করতে মাঝে মাঝেই আসে রকি। এখানে আড্ডাটা জমে ভালো। নূতন নূতন ছেলে-মেয়েদের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। হেসে-খেলে সময়টা আইসক্রিমের মতো গলে গলে ঝরে যায়। খোলা আকাশের নীচে বসে চাঁদটাও কখনো সখনো উপভোগ করা যায়।

সেদিন কফি হাউসের আড্ডার টেবিলে রকি, সেন্টু, জিয়া, আশীষ, তমা, লিনিসহ প্রায় ১০/১২জন ছিলো। পুবের এপার্টমেন্টের কোমরের পাশ থেকে পূর্ণিমাচাঁদ সবেমাত্র গলা বাড়িয়েছে। রাজধানীতে আকাশছোঁয়া দালানকোঠার খপ্পরে এমন চাঁদ দেখার সৌভাগ্য খুব কমই হয়। সবাই খুব উৎফুল্ল। নীচুস্বরে গান আর কবিতায় মেতে উঠেছে।

অথচ রকির মনটা কেমন যেনো উতলা হয়ে আছে। একরকম বিষণ্ণতা অনুভব করে সে। সেন্টু তা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করে– কি-রে মুড অফ নাকি?

– ভাল্লাগছে না। জবাব দেয় রকি।

– তা’হলে চল্ দোস্ত ঘুরে আসি।

– কোথায়?

– চলতো, হেব্বি ফান!

আড্ডা ছেড়ে দু’জন আস্তে করে কেটে পড়ে। রিক্সা নিয়ে চলে আসে আধা কিলোমিটার দূরে এক এপার্টমেন্টে। দরজা খুলে দেন যে ভদ্রমহিলা– রুবি আপা তার নাম।

চমৎকার খোলামেলা স্বভাবের তিনি। কথা বলা, সৌন্দর্য, হাসি– সবকিছুই অপূর্ব। সেন্টু পরিচয় করিয়ে দেয়। রুবি আপার হাজবেন্ড শিল্পপতি। প্রায় সারাবছরই দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। রুবি আপাও প্রায়ই সফরসঙ্গী হন। সেন্টুর অনুরোধে গুনগুন করে চার লাইন গেয়ে শোনান। গানের গলাও খুব মিষ্টি। চা-নাস্তা শেষে সেল নাম্বার বিনিময় করে চলে আসে ওরা।

দিন পাঁচেক পর একদিন সন্ধ্যায় রুবি আপার ফোন।

– কী করছেন রকি?

– কফি হাউসে আড্ডা দিচ্ছি।

– কেমন আছেন? ব্যস্ত নাকি?

– ভালো। মোটেও ব্যস্ত না।

– চলেন ঘুরে আসি।

থতমত খেয়ে যায় রকি। বলে– হ্যাঁ, চলেন।

– তাহলে ঠিক দশ মিনিট পর কফি হাউসের সামনে শিল্পকলা একাডেমীর দক্ষিণ পাশের গেইটের পাশে এসে দাঁড়ান, আমি আসছি।

দুরুদুরু বুকে দাঁড়িয়ে আছে সে। আট মিনিটের মধ্যে কালো কাঁচের একটা শুভ্র টয়োটা লেক্সাস গাড়ি এসে থামে। ধীরে ধীরে নেমে যায় জানালার কাঁচ। অথবা একটা গোলাকার চাঁদ উঁকি দেয়। ইশারায় ডাকেন রুবি আপা! রকি গাড়িতে ঢুকে পড়ে।

স্বপ্নরাজ্যে প্রবিষ্ট হয় সে। হিম সুগন্ধিতে দুলে উঠছে পুরো মগজটা। মনে হয় তার অতীত বলে কিচ্ছু ছিলো না এবং ভবিষ্যত বলেও কিছু থাকবে না। বর্তমানের নিশ্চল কোলে সে শুয়ে আছে দীঘল আরামে।

– কথা বলছেন না কেনো? মন খারাপ?

মুখে জবাব আসে না রকির। সে এখন মনুমেন্ট, একমাত্র দর্শনার্থী রুবি আপাকে অনুভব করছে। এতো কাছে পরীর মতো অসাধারণ এক রমণী! তন্ময় হয়ে যায় সে।

রুবি আপা আবার বলেন– কী দেখছেন?

– আপনাকে।

মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। রকিও তার জবাব দেয়।

এবার তিনি বলেন– তাহলে চলো। হয়ে যাক।

– ঠিক আছে।

ওরা এসে নামে গুলশানের এক অভিজাত হোটেলে। রুবি আপাকে অনুসরণ করে বারে ঢুকে পড়ে সে। স্ন্যাকস্-এর সাথে রেড ওয়াইন এবং আড্ডা। যেনো দেড় ঘন্টা সময় দশ মিনিটের মধ্যেই পার হয়ে যায়। খানিকটা টলোমলো পায়ে ওরা ফিরে আসে গাড়িতে।

গাড়ি চলছে ডুবসাঁতারে স্বপ্নের ভিতর। রুবি আপা মাথাটা কাত করে ঘাড়ে রেখে রকিকে কাছে টেনে নেন। হাতে হাত নিয়ে খুব মিহিস্বরে গাইতে থাকেন, ‘যাও পাখি বল তারে, সে যেন না ভুলে মোরে।’ কী মোলায়েম শরীরি অনুভব!

গাড়ি ঠিক আগের জায়গায় শিল্পকলা একাডেমীর দক্ষিণ পাশের গেইটের পাশে এসে থামে। রুবি আপা রকির হাতে কী যেনো একটা বস্তু গুঁজে দেন। গাড়ির ম্লান আলোয় সে দেখে ছোট্ট একটি চাবি।

রকি বলে– চাবি?

– হাঁ, আমাকে পাওয়ার চাবি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত