মেয়ে দেখতে এসেছি। সাথে বাবা ও ছোটভাই এসেছে। মেয়ে সাজুগুজু করে সঙ সেজে সামনে বসে আছে। ডিভোর্সি মেয়ের আবার এত সঙ সাজার কি আছে? এমনভাবে লাজুক মুখে বসে আছে মনে হচ্ছে প্রথমবার এভাবে সঙ সেজেছে, যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। ওদিকে একটা গোটা সংসার গিলে খেয়ে এসেছে। ঘটকের উপর এই মুহুর্তে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। শুধুমাত্র ভদ্রতার জন্য চুপ করে আছি। বেটা আগে থেকে কিছুই জানায় নি। এখন জিজ্ঞেস করায় বলল ভুলে গিয়েছিল। মেজাজটা খুব গরম হয়ে আছে। শুধু শুধু এতগুলো টাকা ভাড়া দিয়ে আসলাম। মেয়ের বাবা আবার বলতে শুরু করলঃ
– আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো? আমরা ঘটক সাহেবকে আগেই সবকিছু জানিয়ে দিয়েছি। আপনারা এসেছেন তাহলে নিশ্চই আপনাদের আপত্তি নেই? আসলে দুর্ভাগ্যের জন্য মেয়েটা সংসার করতে পারল না। মেয়ের বাবা বলে বলছি না, মেয়ে আমার হাজারে একটা। রূপের চেয়ে গুণটাই বেশি। আপনার সংসার সাজিয়ে রাখবে।
– না আসলে (বাবা)
– আপনাদের কোন ডিমান্ড আছে? সরি সরি ডিমান্ড তো কারওই থাকে না। আসলে উপহার বলতে আপনারা যা বলবেন মেয়েকে দেওয়ার চেষ্টা করব। একটাই মেয়ে আমার। সবকিছু দিয়েই সাজিয়ে দেব।
– না ভাই, আমাদের কোন ডিমান্ড নেই
– তাহলে অন্য কোন কারণ? আপনাকে একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে। আসলে বাবাও ডিভোর্সি মেয়ে এটা মানতে পারছেন না। তাই কথা লুকানোর চেষ্টা করছেন।
– না ভাই সাহেব আমার স্ত্রীর একটা মতামত লাগবে তো তাই আর কি
– আপনি বুঝি বেয়ানকে বলে আসেন নি যে বৌমা দেখতে আসছেন? কোন ব্যাপার না। পরেরদিন বেয়ানকে সাথে নিয়ে আবার আসবেন।
– জ্বি ভাই আমিও সেটাই বলছিলাম। আজ তবে আমরা আসি।
– জ্বি অবশ্যই।
পাত্রীর বাবার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছেন যে আমরা বিয়েতে রাজী নই। তাতে কি? বরং বুঝতে পারাটাই ভাল। জেনে বুঝে তো আর ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে পারি না। ফেরার সময় ঘটককে একগুচ্ছ গালি দিয়ে তার গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম। আর বললাম আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় যেন তাকে আর না দেখি।
আজ অন্য এক জায়গায় পাত্রী দেখতে এসেছি। এবার ঘটক মহাশয় খোঁজ নিয়ে তবেই আমাদের এখানে এনেছেন। মেয়ে ডিভোর্সিও না, বিধবাও না। কিছুক্ষণ আলাপের পর মেয়েকে নিয়ে আসল। মাশাআল্লাহ! মেয়ে দেখতে বেশ! প্রথম দেখাতেই আমার মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। বাবা আমার মুখ দেখেই মনের কথা বুঝে নিলেন। মেয়েকে সাধারণ কিছু জিজ্ঞেস করে তারপর আমাদের দুজনকে আলাদা কথা বলার জন্য সুযোগ দেওয়া হল। আমি আবার মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পাই। লজ্জা ভেঙে কথা বলেই ফেললাম।
– আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
– জ্বি? এবার মেয়েটি আমার দিকে তাকালো। এতক্ষণ আমাকে দেখে নি।
– বললাম আমাকে পছন্দ হয়েছে?
– জ্বি
– কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পারেন
– না তেমন কিছু নেই। আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
– জ্বি হয়েছে। কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
– জ্বি বলুন
– আপনার কোন পছন্দ আছে? মানে কোন রিলেশন? মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল,
– না নেই।
আর তেমন কথা হল না। বাবা কথা পাকা করলেন। ওদের বাড়ি থেকে বের হতেই এক ভদ্র মহিলা সামনে এলেন।
– কারা গো আপনারা?
– আমরা পাত্রী দেখতে এসেছিলাম
– এই বাড়ির রুবি মাইয়াডা?
– হ্যাঁ রুবি
– সব কিছু জাইন্যা শুইন্যা তবুও রাজি হইছেন?
– মানে? কি জানব?
– আরে ভাই ওই মাইয়ারে তো একবার তুইল্যা নিয়া গেছিল। ইসকুলে যাইত। রাস্তায় কারা যেন তুইলা নিয়া সারা রাইত আটকায়া রাখছিল। জানেন না সেই খবর?
– আমাদের তো একথা বলে নি
– কইব ক্যান। ভালা মাইনষের ঘাড়ে নষ্টা মাইয়ারে চাপায় দিতে পারলেই তো বাঁচে। কি যে দিনকাল আইল।
বলতে বলতে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। এদিকে রাগে আমার আর বাবার মাথায় আগুন উঠে গেছে। এতবড় কথা লুকালো? আবার বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। মেয়ের বাবা আমাদের দেখে হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন।
– বেয়াই সাহেব যে। ভেতরে আসুন। কত করে বললাম দুপুরের খাবার খেয়ে যান। শুনলেন না। এখন কিন্তু খেয়ে যাবেন।
– আরে রাখুন আপনার খাবার। আগে বলুন আমাদের এভাবে ঠকানোর মানে কি?
– ঠাকানো? মানে বুঝলাম না
– এখন তো কিছুই বুঝবেন না। আপনার ধর্ষিতা মেয়েকে আমার ভাল ছেলেটার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিলেন। এখন কিছুই বুঝছেন না?? লোকটার চোখে পানি টলমল করে উঠল।
– না ভাই সাহেব। ব্যাপারটা তেমন নয়। তখন আমার মেয়েটা ছোট ছিল। ক্লাস টেনে পড়ত। কিছু বখাটে ছেলে আমার মেয়েটাকে বিরক্ত করত। ওদের কথায় রুবি সায় দেয়নি তাই ওরা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আমি ওদের বিরুদ্ধে কেস করি। ওদের শাস্তিও হয়। বিশ্বাস করুন ভাই, আমার মেয়েটার কোন দোষ ছিল না।
– আরে ভাই দোষ থাকুক আর না থাকুক, আপনার ধর্ষিতা মেয়েকে কোন মুখে আমার ছেলের ঘাড়ে চাপাতে চাইলেন? ছিঃ এ বিয়ে হবে না। চল বাবা।
আমরা চলে আসলাম। মেয়েটি হয়ত কাঁদছে। তাতে আমার কি? আমি তো আর জেনে শুনে একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করতে পারি না। আজ আবার এসেছি পাত্রী দেখতে। এবার যদি কোন সমস্যা হয়, ঘটক ব্যাটার খবর আছে। ঘরবাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাত্রীর বাবার আর্থিক অবস্থা বেশ ভাল। ঘরের দামী আসবাবগুলো তেমনই জানান দিচ্ছে। এসব দেখতে দেখতেই পাত্রীকে নিয়ে এল। মেয়েটা খুব সুন্দরী। একবার দেখলে পলক ফেরানোই যায় না।
– একি আপনারা খালি মুখে বসে আছেন যে? নাস্তা শুরু করুন। নাস্তা করতে করতে গল্প করা যাবে। পাত্রী কিসে পড়ে, ভাইবোন কতজন এসব টুকটাক কথা হল। তারপর পাত্রীর সাথে আলাদা কথা বলার সুযোগ পেলাম।
– আপনাকে একটা কথা বলে রাখা ভাল(পাত্রী)
– হ্যাঁ বলুন(আমি)
– কলেজে আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিল। যদিও এখন আর নেই। ছেলেটা আমাকে ধোকা দিয়েছে
– ও আচ্ছা। এটা কোন ব্যাপার না। আজকাল এমন অনেক হচ্ছে
– ব্যাপার সেটা নয়। আসলে ওর সাথে আমার একবার ফিজিক্যাল হয়েছিল।
ওকে অনেক ভালবাসতাম আর বিশ্বাস করতাম। তাই ওকে বাঁধা দেই নি। কিন্তু ও যে আমাকে ধোঁকা দেবে বুঝতে পারি নি। আপনাকে সত্যিটা বললাম কারণ বিয়ের পর জানতে পারলে আপনি অনেক কষ্ট পাবেন
– আপনার সততা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আসলে প্রেম ভালবাসা এখনকার যুগে কমন ব্যাপার। আর প্রেম হলে ফিজিক্যাল হওয়াটাও স্বাভাবিক। আপনি সত্যি বলেছেন দেখে আমার খুব ভাল লাগল। আমার এতে কোন সমস্যা নেই। আসলে আমারও একসময় একটা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমার চাকরি হবার আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়।
– এটাই শুধু বলার ছিল। এখন ডিসিশন আপনার।
– আপনাকে আমার ভাল লেগেছে। আমাদের বিয়েটা হচ্ছে।
বাবাকে ডিসিশন জানিয়ে দিলাম। পাত্রী আমার পছন্দ হয়েছে। কথা পাকা করে আমরা বাড়ি ফিরে আসলাম। মেয়েটি খুব ভাল। আগে প্রেম ছিল সেটাও বলে দিয়েছে। অল্প বয়সে এমন প্রেম ট্রেম থাকতেই পারে। এটা কোন ব্যাপারই না। কিন্তু আগের মেয়েগুলো কিভাবে ধোকা দিচ্ছিল। ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ বিয়ে করে? আর ধর্ষিতা মেয়ে? OMG!! Impossible