অরবিন্দ কলোনির মূল গেটের পাশে ভালো ড্রাইভওয়ে ছিল। ইদানিং ইটপাটকেলে ভরপুর। সেখান দিয়ে নীল রঙের গাড়ি তাসের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। বহু মানুষ জড়ো হলো গাড়ি দেখার জন্য। বিভিন্ন ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মারলো আড়চোখে– আট থেকে আশি। এরকম মোটরগাড়ি সাধারণত এ কলোনিতে আসে না।
ড্রাইভারের পাশে বসা সৌম্য। পেছনে নন্দদুলাল, আর কবিতা কুমারী, মাঝখানে তূনীর। মাথায় ব্যান্ডেজ। নন্দদুলাল ধরলো তূনীরের হাত। সৌম্য দ্রুত তূনীরের হাত স্পর্শ করতেই তূনীর বলে উঠলো, ধরতে হবে না, আমি একাই একশো।
আঠারো দিন অতিবাহিত করে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে তূনীর। হাসপাতালে যাবার প্রথম কয়েকটি দিন জীবন মৃত্যু সম্পর্কে সংশয় ছিল। এখন সে নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। যায় সামান্য রোগা হয়েছে কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা অফুরান।
সবার হাত ছাড়িয়ে তূনীর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শান্ত নিরীহ পটলচেরা চোখে চেনা পরিবেশ, জানা শোনা মানুষদের দেখল।
বারান্দায় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনিকুন্তলা দেবী। কিছু দূরে দরজার কোণে অদ্রিজা। মায়ের মুখমন্ডল পাহাড় প্রতিম শক্ত। চোখের দৃষ্টি প্রখর। কিছুদিন টুকিটাকি ভুলে ছিলেন। আজ আবার হৃদয়ে নাড়া দিচ্ছে। তাঁর এমন সহজ সরল পরোপকারী ছেলেকে কোন হৃদয়হীন ভিলেন এরকমভাবে মেরে গেলো? যদি দুর্ঘটনা ঘটে যেত। তাঁর স্নেহের দুলাল কারোর ক্ষতি করার চেষ্টা করে না। আর কত যন্ত্রনা দেবে যান্ত্রিক।
তূনীর হৃদ্যতার সাথে বললো– মা, কেমন আছ? কী রে! তোরা কেমন আছিস?
অবশেষে পেছন ফিরে বললো– সৌম্যদা আসুন। কবিতা কুমারী এসো, নন্দদুলাল…। সৌম্যদা? আমার মা। মা, তুমি বুঝতে পেরেছ তো সৌম্যদা আমাদের প্রফেসর, আর কবিতা কুমারী নন্দদুলাল আমাদের পরম বন্ধু।
সৌম্য আর নন্দদুলাল করোজড়ে নমস্কার করলো মনিকুন্তলা দেবীকে। কবিতা কুমারী পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম জানালো ভারত মাতাকে। মনিকুন্তলা ধ্যানস্থরূপ পরিহার করে বাস্তবের হাতে হাত ধরলেন। দ্রুত কবিতা কুমারীর হাত ধরে বললেন, এসো ভেতরে এসো।
সৌম্য বললো– না, আর সময় নেই, তূনীর বিশ্রাম নাও……।