হিমা

হিমা

‘তোমার বউ কত বোকা! ‘ হিমা শরীরে তোয়েলা প্যাচিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল। ‘হ্যা। না হলে কি আর আমাকে এমন অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। বাসায় যাওয়ার সময় দুইটা গোলাপ নিয়ে যেয়ে বলবো, হানি সরি। আজ অফিসে বস অনেক কাজ দিয়েছিলো। তাই বের হতে একটু দেরী হয়ে গেছে৷ তারপর সে আহ্লাদে আটখানা হয়ে আমাকে শরবত খাইয়ে দিতে দিতে বলবে, আহারে! আমার সোনাটা আমাদের সংসারের জন্য কত কষ্ট করে।’ হিমা হাসতে হাসতে বলল, ‘এতো বোকা স্ত্রী পেলে কোথায়?’ আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই হিমা গোসল করতে চলে গেলো।

আমি শুয়ে রইলাম। এতোক্ষণ শরীরের উপর অনেক ধকল গিয়েছে৷ ক্লান্তি লাগছে। চোখ বন্ধ করলাম৷ স্ত্রীর কথা মনে পরলো। মেয়েটা কত বোকা। আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে৷ আর আমি মেয়েটাকে কিভাবে ঠকাচ্ছি৷
মোবাইলের ভাইব্রেশনে ভাবনায় ছেদ পরলো। আমার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম। না আমার মোবাইলে ভাইব্রেশন করেনি। বালিশের পাশে হাত দিতেই হিমার মোবাইলটা হাত লাগলো। স্ক্রিন জ্বলে আছে৷ হিমার মোবাইলেই মেসেজ এসেছে৷ হাবি নামে সেভ করা, ‘ময়না! অফিসের কাজে আমার আজ শহরের বাইরে যেতে হবে। রাতে ফিরবো না।’ ততক্ষণে হিমা গোসল করে বের হয়ে আসছে। ‘তোমার হাজবেন্ড মেসেজ দিয়েছে।’ ‘কি মেসেজ?’ ‘আজ নাকি ফিরবে না৷’ ‘তাহলে তুমি থেকে যাও!’ ‘না তা কি করে হয়। আমার বোকা বউ চিন্তা করবে।’ ‘তুমি তাকে মেসেজ করে দেও যে তোমারও অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে৷’ ‘গুড আইডিয়া!’

আমি স্ত্রীকে মেসেজ করে দিলাম।, ‘হানি! অফিসের কাজে আমার শহরের বাইরে যেতে হবে। হয়তো আজ ফিরতে পারবো না। ‘ ‘মেসেজ করে দিয়েছি।’ মোবাইলটা খাটের উপর রেখে আমি বললাম। হিমা শরীর থেকে তোয়েলাটা ফেলে দিয়ে আমার ঠোটে চুমু দিয়ে বলল, ‘গুড। এখন যাও গোসল করে আসো। আমি খাবার রেডি করছি।’ হিমার সাথে আমার পরিচয় দিন পনেরো আগে। অফিসের এক পার্টিতে পরিচয় হয়েছে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে মেয়েটার খুব কাছে চলে এসেছি। এসেছি বললে ভুল হবে। হিমা আমাকে তার কাছে নিয়ে এসেছে। আমি দ্বিতীয়বারের মতো তার বাসায় এসে সময় কাটালাম।

গোসল করে বের হতেই হিমা খাবার খেতে ডাক দিলো। সে ক্যান্ডল লাইত ডিনারের ব্যবস্থা করেছে। খাবারের মেনু হিসেবে আছে, কলিজা ভূনা ডাল আর সাদা ভাত। খাবার খেতে খেতে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার হাজবেন্ড কি প্রায় অফিসের কাজে বাইরে থাকে?’ ‘না এখন প্রতি রাতেই বাইরে থাকে। আগে মাঝে মধ্যে বাইরে থাকতো।’ ‘প্রতি রাতেই বাইরে থাকে!’ আমি অবাক হয়ে বললাম। হিমা এক গ্লাস পানি খেয়ে বলল, ‘আসলে ও এখন আর বেচে নেই৷ বেচে থাকতে প্রায় রাতে এই মেসেজ দিতো। তার সৃতি ভুলতে না পেরে আমি তার নাম্বার থেকে অটোমেসেজ সেভ করে রেখেছি। প্রতি রাতে এই সময়ে এই মেসেজটা আমার নাম্বারে চলে আসে।’

‘ও সরি। আমি বুঝতে পারিনি।’ আমি খাওয়া শেষ করে বেডরুমে চলে আসলাম। বুকশেল্ফ থেকে বিভিন্ন বই নিয়ে দেখতে লাগলাম। বই দেখতে গিয়ে একটা ডায়েরি হাতে পরলো। খুলে পড়তে লাগলাম৷ বিভিন্ন রোমান্টিক কোটেশন লেখা৷ আমি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একের পর এক কোটেশন পড়তে লাগলাম। কারো পায়ের শিব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম হিমা দাঁড়িয়ে আছে৷ ড্রেস চেঞ্জ করেছে। কালো ব্লাউজ আর কালো পেটিকোটের উপরে পাতলা সিল্কের কালো শাড়ি৷ নাভি দেখা যাচ্ছে। আমি হিমার থেকে চোখ ফিরাতে পারছিলাম না। হিমা আমার কাছে এসে আমার চোখের উপর হাত রেখে বলল, ‘এভাবে তাকিয়ে থেকো না৷ চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।’ হাত সড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। আমি আবার ডাইরির পৃষ্ঠা উলটানো শুরু করলাম।

কয়েক পেজ পরেই একটা ছবি চোখে পরলো, ‘এইটা কি তোমার হাজবেন্ডের ছবি?’ আমি পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে জিজ্ঞাসা করলাম। ‘না!’ হিমা ঠোটে কালো লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলল। আমি আরো পেজ উল্টাতে লাগলাম৷ একের পর এক ছবির দেখা মিলতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এতো ছবি কার?’ আমি হিমার দিকে তাকালাম৷ সে কপালে টিপ পরছে। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমি উঠে গিয়ে পিছন থেকে হিমাকে জড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘এতো সাজগোছ করছো কার জন্য?’ ‘তোমার জন্য।’ হিমাকে ঘুরিয়ে সামনাসামনি জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বললে না তো ছবিগুলো কার?’ ‘তোমার মতো পুরুষদের।’ ‘মানে?’

‘ওদের বউ ও তোমার বউয়ের মতোই বোকা ছিলো। তারাও আমার সাথে তোমার মতোই সময় কাটাতে আসতো।’
‘এখন আসে না?’ ‘না।’ ‘কেনো?’ ‘ছেড়ে দিয়েছে।’ ‘তোমাকেও কেউ ছেড়ে দিতে পারে? এমন পুরুষও পৃথিবীতে আছে?’ ‘আসলে ছেড়ে দেয় না। ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। যেমন তুমিও আজকের পর আমাকে ছেড়ে দিবে।’ আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘আমি তোমাকে কখনোই ছাড়বো না।’ ‘উহু, তুমি না ছেড়ে গেলে আমি পরবর্তীজনকে কলিজা খাওয়াবো কিভাবে?’ আমি হিমাকে ছেড়ে দিয়ে এক হাত দূরে গিয়ে বললাম, ‘মানে? তুমি কি বলতে চাচ্ছো?’হিমা খাটের উপর থেকে ডায়েরী নিয়ে একটা ছবি বের করে বলল, ‘এই যে তুমি একটু আগে এই পুরুষের কলিজা দিয়ে ডিনার করেছো৷ তোমার পরের পুরুষ তোনার কলিজা দিয়ে ডিনার করবে।’

ভয়ে আমার কপাল থেকে ঘাম ছুটতে লাগলো, ‘এসবের মানে কি হিমা? তুমি কি যত আজগুবি কথাবার্তা বলছো!’
হিমা ডায়েরীটা খাটের উপর রেখে ডায়েরীতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ‘আজগুবি কথা নয়। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। যেদিন থেকে আমার হাজবেন্ডকে মেরে লাশ লুকানোর জায়গা না পেয়ে মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলেছি। সেদিন থেকে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। মানব মাংস ছাড়া এখন আমার একটা দিনও চলে না। ফ্রিজের মাংস শেষ৷ কাল থেকে আবার ফ্রিজ ভরে উঠবে। আমি প্রতিদিন মানব মাংস খাবো৷ আর কলিজাটা রেখে দিবো, কোনো বোকা বউয়ের স্বামীর জন্য।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত