শুক্রবার সকালে বউকে বললাম, আজ জুম্মা নামাজের পর শিল্পকলা একাডেমি যাবো, ওখানে একটা সাহিত্য গ্রুপের আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। অনেক নামীদামি লেখক লেখিকার পাশাপাশি সুন্দরী মেয়েরাও আসবে? ওদের সাথে সেলফি তুলবো।
বউ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ওসব সুন্দরী মেয়েরা তোমার মতো বান্দরমুখী চেহারার লোকের সাথে সেলফি তুলবে? ওদের রুচি হবে?? এমন কথা বলবে না বউ।আমার চেহারা কী এমন খারাপ! কত মেয়ে সেলফি তোলার জন্য আগ্রহ দেখায়,,,,,
খোমাটা আয়নায় ভালো করে দেখ,তারপর বুঝার চেষ্টা কর তোমার চেহারা কেমন।দুনিয়ায় একমাত্র আমি ছাড়া কোন মেয়ে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতো না,,, তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর ভাগ্য আমি রাজি হয়েছিলাম। চৌদ্দ না,আমার পনেরো গোষ্ঠীর সৌভাগ্য তোমার মতো বউ পেয়েছি। নামাজের পর পর যেন খাবার রেডি পাই।
বউ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, তোমাকে তো বলা হয়নি, আজ আমি বাসায় থাকবো না,আমার বান্ধবী মলি তিনদিন যাবৎ ফোন করছে, ওর বাসায় যেতে হবে। তিনদিন যাবৎ নাকি ওর বাম হাতের তালু চুলকাচ্ছে! ওকে দেখতে যেতে হবে। বেচারা এতো করে বলছে!না যাই কীভাবে?আজ বাসায় রান্নাবান্না হবে না।
বুঝলাম, যাতে অনুষ্ঠানে গিয়ে সুন্দরী মেয়েদের সাথে মিশতে না পারি এজন্য বউ এই কৌশল নিয়েছে!আমিও কম না,বউ যদি হয় শয়তানের ডিব্বা, আমি শয়তানের ড্রাম!! কী আর করা! একমাত্র শালাকে ফোন দিলাম,আমার সাথে যাওয়ার জন্য।মনে মনে পণ করলাম,বউ আমাকে না খাইয়ে রেখেছে,আমিও আজ ওর একমাত্র ভাইকে না খাইয়ে ঘুরাবো,না খাওয়া না খাওয়ায় কাটাকাটি! শালা বললো,ভাই আপনি রেডি হয়ে রাস্তায় পাচঁ মিনিট দাড়ান, আমি আধা ঘন্টা পর আসছি! না খেয়েই জুম্মা নামাজের পর রওনা দিলাম। শালা আমাকে পাঁচ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল, দেড় ঘন্টা পর উপস্থিত হলো!!
মনোয়ার মানিক সুজন এবং আহছান হাবিব রাফী নামে দুইজন আমাকে মেসেঞ্জারে জানালো,তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, পরিচিত হতে চায়।ইশরাত জাহান নিতা,আমার একজন প্রিয় লেখিকা, সে জানালো আমি যেন তার সাথে দেখা করি।মুক্তা নামের একজন মেয়ে জানালো, আমার সাথে পরিচিত হওয়ার খুব ইচ্ছে কিন্তু বোনের অসুস্থতার জন্য আসতে পারছে না। উত্তরা কসাই পট্টি থেকে একবোন বললো, দুই ছেলে মেয়ের কারনে সেও আসতে পারছে না, যদিও আসার ইচ্ছে প্রচন্ড। সে মজা করে বললো, তাকে যেন কিডন্যাপ করা হয়!!
শিল্পকলা একাডেমির প্রান্তরে সবেমাত্র ঢুকেছি। একজন সাদা শাড়ি পরিহিত ভদ্রমহিলাকে দেখলাম সে গাছে উঠার চেষ্টা করছে! হায় হায়! দিন দুপুরে আত্মহত্যা করতে চায় নাকি!! আমি দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখি, প্রিয় কবি লুনা লাবিব আপা! আমি বললাম, কাহিনি কী আপা? লুনা আপা বললেন, ছবির জন্য পোজ দিচ্ছি, ভাই!আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক,তাহলে ফাঁসি দিচ্ছে না!!
আমি অডিটোরিয়ামে চলে এলাম।সুজন এবং রাফী বারবার ফোন দিচ্ছে,ব্যাক্তিগত ভাবে কাউকে চিনি না।রাফী আমাকে নিয়ে একসাথে অনুষ্ঠান দেখবে। আমি আবার নীচে নেমে এসে রাফীকে আবিস্কার করলাম। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত সুন্দর একটা ছেলে। চাপ দাঁড়ি সাথে টুপি। মনে মনে ভাবলাম, একে ভেতরে নিয়ে আবার গণপিটুনি খাবো না তো! আজকাল কেউ কেউ দাঁড়ি টুপি মানেই জঙ্গি মনে করে!!
পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশি। সব মহিলা জম্মগতভাবেই সেলফি বিশেষজ্ঞ!! সবাই চিত হয়ে কাত হয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত। ছবি তোলার সময় কেউ ভি চিন্হ দেখাচ্ছে, কেউ কেউ জিভ বের করে ছবি তুলছে! আচ্ছা, জিভ বের করে ছবি তুললে কী হয়? কোন কোন পুরুষ মহিলা দলে ঢুকে মহিলাদের মতো ভঙ্গি করে ছবি উঠাচ্ছে! আমি হাঁদারাম দাঁড়িয়ে আছি। ওদের কর্মকান্ড দেখছি। কেউ আমাকে ছবি তুলতে ডাকে না।বউকে বলেছিলাম সুন্দরী মেয়েদের সাথে ছবি তুলবো, ইজ্জত বুঝি যায়!!
দূর থেকে দেখলাম ঝরনা আপা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। তাকে কি বলবো আমার সাথে ছবি একটা সেলফি তুলতে? মাইর দিবে না তো!! বউয়ের কাছে ইজ্জত পাংচার করা ঠিক হবে না। বুকে ফু দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ঝরনা আপার দিকে এগিয়ে গেলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম দৌড় দেওয়ার জায়গা আছে, বেশি রেগে গেলে ঝেড়ে দৌড় লাগাবো!! আশ্চর্য! আমি বলামাত্র ঝরনা আপা ছবি তোলার জন্য রেডি হয়ে গেলেন!! যাক বাবা, তাহলে দৌড়ানি খাচ্ছি না!!!
ইশরাত জাহান নিতা আপাকে কয়েকবার কল দিলাম। তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেলো। কনসার্ট শুরু হয়ে গেছে। গানের তালে সবাই নাচানাচি করছে। আমি চলে এলাম ফটো গ্যালারিতে। রায়হান ভাই সেখানে এক কাপ রসমালাই খাওয়ালেন। পেটে খিদে,আমি ডায়াবেটিসের রোগী,তারপরও বললাম,দে ভাই,আরেক কাপ দে!! বিখ্যাত ফটোগ্রাফার সাজু ভাই ছবি তুলে দিলেন। আনোয়ার ভাই আমাদেরকে নিয়ে গ্রুপ ছবি তুললেন।
সাতটার দিকে চলে এলাম নাট্যমন্ঞে।সেখানে মামুনুর রশীদের নাটক “রাঢ়াঙ” দেখার জন্য টিকিট কাটলাম। দুইটা টিকিটের দাম নিল চার,শ টাকা।ভিতরে ঢুকে দেখি, নাটক,’ইদিপাস’।কী আর করা!!মামুনুর রশীদের নাটক দেখা হলো না। নাটক সবে শুরু হয়েছে,ইশরাত জাহান নিতা আপা মেসেজ দিলেন, ভাই, আপনাকে খুঁজছি। আমি বললাম, নাটক দেখছি। তিনি পরপর কয়েকটা মেসেজ পাঠালেন। আমরা নাটক ফেলে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। শালাকে বসিয়ে রেখে তার সাথে দেখা করতে গেলাম।
মনে মনে পণ করে গেলাম, যেহেতু তার কারনে নাটক দেখা হলো না, তার কাছে টিকিটের চার,শ টাকা ফেরত চাইবো!তিনি আমাকে আমাকে দেখে এমন একটা সুন্দর হাসি দিলেন, টাকার কথা ভুলে গেলাম!! বউকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম, রাতে বাসায় খাবো না।আমি কে এফ সিতে ঢুকে দুইটা চিকেন লেগ পিস কিনলাম। আড়াইশ মিলি একটা ছোট্ট পেপসি ক্যান নিলাম। তারপর বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসে দেখি, বউ শুধু ডিম ভাজা দিয়ে টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে। একা খাবে বলে আর রান্না করেনি।আমি তার সামনে বসে লেগ পিস আর পেপসির ক্যান বের করলাম, তারপর খেতে শুরু করলাম। বউ রাগি রাগি মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাত্তা না দিয়ে খেতে শুরু করলাম। লেগ পিস খেয়ে পেপসির ক্যান মুখে দিয়ে আরাম করে খাচ্ছি!! হঠাৎ বউয়ের গলা শুনতে পেলাম, তোমার মতো হারামি আমি জীবনে দেখি নাই!!!