শুনতে পাচ্ছো, আমি তোমার সেই অপরাজিতা বলছি। একদিন যাকে বাগান থেকে তুলে সাজিয়েছিলে ফুলদানীতে, যার সুবাসে হয়েছিলে সুরভিত, তারপর তোমার ভালো লাগার ঘোর কেটে গেলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিলে ডাস্টবিনে। হ্যা আমি সেই, তবে আজ সেই অপরাজিতা আর নেই; আমি জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া পরাজিত এক বিদ্রোহী নারী– রণাঙ্গনের সৈনিক।
মুহুর্তে চমকে ওঠে শান্তনু। কাকে দেখছে সে আজ। এতদিন অনুশোচনার আগুনে পুড়ে যাকে খুঁজে বেড়িয়েছে উন্মাদের মতো। যে তার অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে দিয়েছিল সাজানো বাগানের মতো করে। মধ্যরাতের রিমঝিম বৃষ্টির মতো প্রখর রোদে পোড়া জীবনকে করেছিলো সবুজ সতেজ।
আবেগ সিক্ত শান্তনুর কন্ঠ– এতদিন কোথায় ছিলে? ছোঁবে না।
আমায় প্রতিবাদ ঝরে পরে অপরাজিতার কন্ঠে।
– আমার কথা শোন, অনেক খুজেঁছি তোমায় তোমাকে পাইনি।
– বিশ্বাস করি না তোমাকে আর।
– শুধু একবার বিশ্বাস করে প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দাও।যে যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছি তা থেকে আমায় মুক্ত কর।
– বিশ্বাস তোমাকে? ক্রুর হাসিতে ফেটে পড়ে অপরাজিতা।
– আর ঠকতে চাই না, শুধু দেখতে এলাম কেমন আছো তুমি শান্তনু চৌধুরী।
– তুমি দেখো আজো আমি তোমারি আছি। তোমার স্মৃতিটাই বয়ে বেড়াচ্ছি। আজ একা আমি বড় ক্লান্ত। নিষঙ্গতা আমার সাথী। আঁধারের বেড়াজালে আটকে আছি। আমাকে আলোতে নিয়ে চল।
– আলো? সে আবার কে? অন্ধকার যার জীবনের আলো দখল করে রেখেছে সে আলো কোথায় পাবে। আমি তোমাকে কোথায় নিয়ে যাবো কে হও তুমি আমার?
– জানিনা কে কার কি হই। শুধু এটুকুই জানি তোমাকে ভালবেসেছিলাম বলে আর কাউকে ভালবাসতে পারিনি। আরতো অবশিষ্ট কিছু নেই কাউকে দেবার। আজো আছি তোমারি প্রতিক্ষায় হাত বাড়িয়ে দিলাম ফিরিয়ে দিওনা।অপরাজিতা!
অস্ফুট আর্তনাদে ঘোর ভাঙে শান্তনুর। কোথাও-তো কেউ নেই তাহলে এতক্ষণ কার সাথে কথা বললো কাকে দেখলো সে? কার কন্ঠ তার অন্তরে বেজে ওঠে বেহাগের করুন সুরে। কে এই মানবী? একি সত্যি, একি স্বপ্ন, না এ তার অবচেতন মনের ভাবনা?