এক সকাল। আদুভাই প্রতিদিনের মতো রাস্তা ধরে হাঁটছিল। ঘর সংসার, সহায় সম্বলহীন এক ২৫/২৬ বছরের বেকার যুবক। শীতের সকাল বলে রাস্তায় লোকজন কম। একটি কাঠবোঝাই ট্রাক পাশ কেটে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে চলে যায়।
আদুভাই দেখতে পায়, ট্রাক থেকে একটি লাল রঙের পতাকা নীচে পরে যায়। সে দৌড়ে গিয়ে পতাকাটি হাতে তুলে নেয়। সে পতাকা হাতে ট্রাকের পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে। কিন্তুু দু’পায়ের মানব, ইঞ্জিনচালিত ট্রাকের সাথে দৌড়ে পেরে ওঠে না। সে ধীরগতিতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। ঠিক একই সময় পিছন দিক হতে প্রায় হাজার খানেক মানুষের একটি মিছিল আসতে থাকে। মিছিলটি আদুভাইয়ের খুব কাছাকাছি চলে আসে। মিছিলের প্রতিটি মানুষের হাতে ছিল ছাই রঙের পতাকা। আদুভাই লাল রঙের পতাকা হাতে, মিছিল থেকে খানিকটা এগিয়ে। সে লাল রঙের পতাকা হাতে আপন মনে হেঁটে চলেছে সামনের দিকে।
আর তার পিছন পিছন হাজার হাজার মানুষ হাঁটছে। হঠাৎ পিছন দিক হতে লোকজনের চিৎকার। দিক-বেদিক ছুঁটাছুঁটি। পুলিশের গাড়ির কর্কশ হর্ন। মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হচ্ছে। টিয়ার গ্যাসের কালো ধোঁয়া। এক খন্ড যুদ্ধ।
আদুভাই প্রাণে বাঁচতে দৌড়াতে লাগলো। কি হতে চলেছে তা তার জানা নেই। তার পা চলছে না। সে পড়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে মুহুর্তে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিলে অংশ গ্রহণকারী অনেকে পুলিশের ভ্যানে। পুলিশের কোন এক সদস্য আচমকা দেখতে পায়, ম্যানহলের ভেতর থেকে কিছু একটা বের হবার চেষ্টা করছে। পুলিশের গাড়ি ম্যানহলের কাছে যায়। ম্যানহলের ভেতর থেকে টেনে বের করে একজনকে। হাতে তার লাল পতাকা। পুলিশের বুঝতে দেরি হয় না, এই সেই কালপিট যে মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। বিরাট নেতা। হাজারো মানুষ তাকে অনুসরন করছিল। এখন সে ম্যানহলে। তারা আদুভাইকে টেনে হিচড়ে ভ্যানে তুলে । আদুভাই চিৎকার করে বলতে থাকে, “আমি মিছিলের কেউ নই। আমি একজন সাধারণ পথচলা পথিক। এই পতাকা ট্রাক থেকে পরে যায়। আমি কুড়িয়ে নেই। আমায় যেতে দাও।” আদুভাইয়ের চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পোঁছায় না। বাতাসে মিলিয়ে যায়। পুলিশের বোটের আঘাতে আদুভাই জ্ঞান হারায়। যখন জ্ঞান ফিরে এল, নিজেকে আবিষ্কার করলো এক অন্ধকার খুপরি ঘরে। একজন আদুভাই থেকে সে বনে যায় নেতা। জন্ম দেয় এক নতুন আদুভাই। রচিত হয় আরেক নতুন অধ্যায়।