রিটায়ার্ড

রিটায়ার্ড

দীর্ঘ পঁচিশ বছরের অধ্যাপনা থেকে রাই অবসর নিলো। যদিও আরো দুই বছর সে চাকরীটা করতে পারতো তবু….

রিটায়ার্ডমেন্টের টাকা ব্যাংকে রেখে বাকী জীবনটা হরিদ্বারের কটেজে কাটিয়ে দেবে লেখালেখি করে এটা রাইয়ের অনেকদিনের ইচ্ছে।

পরিকল্পনা মতই মেয়েদের কাছে কয়েক মাস থেকে যখন হরিদ্বার এলো রাই। কেয়ারটেকার ছেলেটি সব গুছিয়ে রেখেছে। মনে মনে ছেলেটির রুচির প্রসংশা করলো রাই। মেয়ে জামাইকে একটা থ্যাংকস দিতে হবে এমন একটি ছেলে জোগাড় করে দেবার জন্য, ভাবতে ভাবতে শাওয়ারে যায় রাই।

কেয়ারটেকার ছেলেটির নাম শুনে বেশ অবাক হয়েছিলো রাই। অপূর্ন! এমন নাম কারো হয়?

– কে রেখেছে রে এই নাম?

– মা।

– তোর মার নাম কি?

– কুন্তী।

– তুই পড়া লেখা করিস না?

– করি তো। এই তো এম.এস.সি দিলাম। মা অসুস্থ তাই পড়ার সাথে সাথে কাজও করি। গ্যারেজে কাজ করতাম। দাদা বললো, গ্যারেজ ছেড়ে এখানে এসে লেগে গেলাম।

– তোর বাবা নেই?

উত্তর না দিয়ে বাগানে জল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অপূর্ন!

কয়েকদিন ধরে অপূর্ন আসছে না।

বিকেল বেলা হাঁটতে বেরিয়ে রাইয়ের মনে হলো একবার অপূর্নের খোঁজটা নেয়া উচিত। একে তাকে জিজ্ঞাসা করে গলি পেরিয়ে বস্তিতে ঢুকে পড়ে রাই। বস্তির শেষ ঘরটা দেখিয়ে দেয় একজন। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। টিমটিম আলোয় রাই যে নারী মুখের মুখোমুখি হলো, রাই সমূলে কেঁপে উঠলো।

– অপু আর আপনার কটেজে কাজে যাবে না। আপনি অন্য কাউকে খুঁজে নেবেন দয়া করে।

রাই ফিরে আসে। বহুদিন আগে সত্যিটা বলতে না পারা করিমগঞ্জ, কুশিয়া বুকের ভেতর পাড় ভাঙে। সন্ধ্যার অন্ধকার গঙ্গার বাতাসে যেন গুঞ্জন ‘মেয়েটি না হয় ভুল করেছে কর্তা ওকে আপনি একঘরে করবেন না। সাজা হলে তো দুজনেরই হবে অভাগীটা তো কিছুতেই শয়তানটার নাম বলছেনা। একা মেয়ে তার উপর ছয়মাস, একঘরে করলে ওরা বাঁচবে না। কর্তা বাবু এত কঠিন হবেন না।’

পরেরদিন সকালেই রাই পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া হরিদ্বারের কটেজ ছেড়ে ফিরে যায়।

কয়দিন পর…..

কুন্তীর নামে একটি ভারী খাম আসে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত