অনুচিঠির লেখক

অনুচিঠির লেখক

-আপনি আজো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন??
-কারণ ছাড়াই।
-আপনার কাজ কর্ম কিছু নেই??
-হুম আছে।
-তাহলে এখানে আসেন কেন??
-এটা এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

-এটা বলতে?? কি এমন কাজ এখানে??
-আপনাকে দেখা।
-আমাকে দেখার কি আছে??
-সেটা বুঝতেই আসি।
-তাই বলে প্রতিদিন??
-হুম। কারণ আমি প্রতিদিন ব্যাহত হয়ে যাই।
-মানে??
-আপনাকে দেখার কারণ খুঁজতেই আসি এখানে। কিন্তু কখনো কারণ খুঁজে পাই না। আর সে জন্যই প্রতিদিন আসতে হয় কারণ খুঁজতে।

-এভাবে কথা বলতে আপনার বিরক্ত লাগে না??
-না। এতেও কেমন যেন একটা সুখ খুঁজে পাই।
-হইছে হইছে। আর অনুচিঠি দিতে হবে না।
-বুঝলাম না।
-আপনার দেওয়া চিঠি গুলো তো ছোট ছোট তাই এগুলোর নাম দিয়েছি অনুচিঠি।
-হাহাহা।
-হাসিটাও কাগজে লিখে দিতে হয়??
-বললাম না এতেই সুখ খুঁজে পাই।
-হুম বুঝলাম। আমি যাই আজকে।
-ভাল করে যাবেন।

মেয়েটা হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি মেয়েটার চলে যাওয়া দেখছি। মেয়েটার রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ বারের মতো তাকালো। হয়ত আমি আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি দেখে হাসছে। হঠাৎ করে মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি আমার হাতের খাতা আর কলমটার দিকে একবার তাকিয়ে বাসার দিকে রওনা করলাম।

ওর নাম ঐশী। এই নামটার জন্মস্থান কোথায় সেটা আমি জানি না। কারণ বাংলা ব্যাকরণে আমার জ্ঞান খুব একটা বেশি নেই। ঐশীকে আমি ভালবাসি। ও আমাকে ভালবাসে কি না জানি না। হয়ত বাসে। আবার না ও বাসতে পারে। তবে আমি বাসি অনেক। ঐশীকে আমি বিরক্ত করতাম না। কিন্তু ওর জন্য অপেক্ষা করতাম। ওর পিছন পিছনেও যেতাম না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। একদিন হঠাৎ ঐশী আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ও আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলো। আমি কেন ওর দিকে তাকিয়ে থাকি,নাম কি আমার?? কোথায় থাকি??আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমি হাবলার মতো ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছুই বলি নাই। ও ধরে নিলো আমি বোবা। আমার কানের সামনে এসে উচ্চস্বরে বলল…

-আপনি কি কথা শুনছেন না?? আপনি কি বোবা??

আমি ওর কথার উত্তরটা মুখ দিয়ে দিতে পারছিলাম না। ঐশীর হাতে একটা খাতা ছিলো। আমি খাতাটা কেড়ে নিয়ে ইশারাতে বললাম একটা কলম দিতে। ও সহজেই বুঝে গেল যে আমি কলম চাইছি। ওর কাছ থেকে কলমটা নিয়ে ওর খাতাতে বড় বড় করে লিখলাম…

-আমি বোবা না। কানেও কম শুনি না। আমি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। কিন্তু আপনার সামনে থাকলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। ও এরকম কান্ড দেখে বেশ অবাক হলো। ও আর কিছু বলেনি ওই দিন। কিন্তু একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলো আমার কাছে।। সেটা ছিলো…

-আপনি কি পাগল?? আমার কাছে এটার উত্তর ছিল….
-হ্যা। আমি পাগল।

কোন সত্যিকারের পাগল নিশ্চয়ই বলবে না যে সে পাগল। আমি মনে হয় একটা অসুস্থ পাগল। এরপর থেকেই ওর সাথে অনুচিঠিতে কথা হয়। আমি যখন ওর সামনে আসি হাতে খাতা, কলম থাকবেই। এখন আমার একটু সাহস বেড়েছে। ওর পাশে হাঁটি আমি। প্রথম প্রথম অনুচিঠিতে কথা বলায় বিরক্ত হতো ও। কিন্তু এখন আর বিরক্ত হয় না। কে জানে মনে হয় আমার প্রেমে পরেছে নয়তো আমার অনুচিঠির।

আজ একটা পাঞ্জাবী পরেছি। গাড় টাটকা লাল পাঞ্জাবী। হাতে একটা খাতা আর একটা কলম নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ঐশীর কলেজের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছি। হঠাৎ ঐশীকে দেখলাম কলেজ গেট দিয়ে বের হলো। ওকে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। কারণ আজ ঐশীও লাল রঙের সেলোয়ার কামিজ পরেছে। ঐশী আমাকে দেখতে পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। ওর মস্তিষ্ক এখন কি ভাবছে জানি না। তবে আমার যতটুকু মনে হচ্ছে আমাকে লাল পাঞ্জাবীতে খুব একটা ভাল দেখাচ্ছে না। আমি ওর সামনে গিয়ে কাগজে লিখলাম…

-অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কারণটা যদি বলতেন ভাল লাগতো। ও আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ ঘুরিয়ে বলল…
-আপনি আজ হঠাৎ পাঞ্জাবী পরলেন কেন? আর লাল কালারেরই বা কেন পরলেন??
-পাঞ্জাবী পরতে ইচ্ছা হলো তাই পরেছি। আর লাল কালারের পাঞ্জাবী পরার কারণ হলো আমার অন্য কোন কালারের পাঞ্জাবী নেই। এটাতে খুব একটা খারাপ লাগছে। তাই না??? ও আমার কথাটার উত্তর না দিয়ে বলল…

-চলুন হাঁটি। হাটতে হাটতে আমি ঐশীকে একটা অনুচিঠি দিলাম। সেটাতে লিখা ছিলো…
-আচ্ছা আমার কথা শুনতে ইচ্ছা করে না?? ও বলল…
-হুম। তবে আমি চাই আপনার আমার কথা শুরু করেন এমন একটা শব্দ দিয়ে যেটা শুনলে আমি অত্যন্ত বেশি খুশি হবো।
-সেটা আমি কি করে বুঝবো??
-তা তো আমি জানি না। মনে রাখবেন কেবল একটা শব্দ।

আজ সারারাত ঐশীর কথাটার মানে চিন্তা করেছি। কি এমন শব্দ বললে ও খুব বেশি খুশি হবে?? এমন কোন কৌতুক আছে যেটা এক শব্দের? আমি বরং কাল থেকে গুলিস্তানে বিভিন্ন হকারের দোকান গুলোতে ঘুরবো। কারণ সেখানে অনেক রকমের বই পাওয়া যায় যা পৃথিবীতে বেসম্ভব। যেমন ধরেন এক মাসে ডাক্তারি শিক্ষা, ঘরে বসে ড্রাইভিং শিক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি। আজ সারাদিন গুলিস্তানের অনেক বইয়ের দোকানে ঘুরেছি কিন্তু এক শব্দের কোন কৌতুকের বই পাইনি। মনে হয় আমার কপাল পোড়া। কখনো মনে হয় ঐশীর সামনে মুখ ফুটে কথা বলতে পারবো না। আজ তিন দিন পর ঐশীর সামনে আসলাম। ও আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে একটা কাগজে লিখে দিলাম…

-কি ব্যাপার?? আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছেন যে?? ও কাগজটা পড়ে হাঁটা থামিয়ে বলল…
-তিনদিন কোথায় ছিলেন??
-বাসায়। এক শব্দের কৌতুক খুঁজছিলাম।
-মানে??
-আপনি তো বললেন আপনাকে এক শব্দের মাধ্যমে খুশি করতে।
-তাই বলে কৌতুক?? বাস্তব কিছু দিয়ে খুশি করাতে পারবেন না??

আপনি সত্যিই একটা অসুস্থ পাগল। আপনার সাথে আমার কথা নেই। বলেই ও হনহন করে চলে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে দৌড়ে কাগজে সরি লিখে ওকে দিচ্ছি ও সেটা না পড়েই ফেলে দিচ্ছে। এবার আমি চিঠি লিখা বন্ধ করলাম। ও আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে বললাম…

-ভালবাসি।

আমার কথাটা শুনে ও দাঁড়িয়ে গেল।পিছন ফিরে তাকালো। ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না যে ও খুশি হয়েছে। তার মানে কি আমি বিফল?? ও আমার কাছে এরকম কিছু কি আশা করেনি?? আস্তে আস্তে ঐশী আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি আবার বললাম…

-ভালবাসি। ও আমার হাত থেকে খাতা আর কলমটা নিয়ে কি যেন লিখে একটা কাগজ ছিড়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম সেটাতে লিখা…

-আমিও।

সত্যিই একটা শব্দ দিয়েও অনেক খুশি করা যায় যেমনটা ঐশী আমাকে করেছে। আমি তখন বুঝলাম যে সব সময় কৌতুক ছাড়া ও মানুষকে খুশি করা যায়। আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম…

-ভালোই হয়েছে আর খাতা কলম নিয়ে ঘুরতে হবে না। ও রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…
-মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো। প্রতিদিন আমাকে অনুচিঠি লিখতে হবে।
-কিন্তু..
-কোন কিন্তু নয়।
-অন্তত আজকের দিনটা মুখে বলি।
-আচ্ছা আজ ছাড় দিলাম।

যাকগে একটু কষ্ট ওর জন্য করতে পারবো। আজ আমার অনেক দিনের জমানো কথা গুলো মন খুলে ওকে বলবো। ভবিষ্যতের গুলাও বলে ফেলবো ভাবতাছি। আবার তো কাল থেকে অনুচিঠির লেখক হয়ে যাবো। যা বলার আজই বলে নেই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত