পটবেন প্লিজ

পটবেন প্লিজ

-শাকিল ভাইয়া কাল কিন্তু আপনাকে আমি দেখেছি।
-তাই নাকি?? কোথায়??
-এই তো ধানমন্ডি লেকে। সাথে একটা সুন্দরী মেয়েও ছিলো!
-বিশ্বাস করো ওটা আমার কাজিন। এর বেশি কিছু না।
-আমি আপনাকে কিছু বলেছি??
-না। তুমি তো জানো আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি। প্লিজ একবার পটে যাও।
-হইছে হইছে। আর চাপবাজি করতে হবে না। আমি যাই।

শাকিল ভাইয়া আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে।চাকরী নিয়েছে কিছুদিন হলো। বেশ সুদর্শন ছেলে। সেজন্যই তো যেখানে যাবে একটা মেয়ে পটিয়ে প্রেম শুরু করবে। মাঝে মাঝে উনি আমার সাথেই ফ্লার্ট করা শুরু করে দেয়। যেরকমটা একটু আগে করলো। আমাকে নাকি উনি ভালবাসেন। হাহাহা। ভালবাসলে অন্য মেয়েদের পিছনে ঘুর ঘুর করার দরকার আছে?? উনি আমার সাথে দুষ্টুমি করে সেটা আমি বুঝতে পারি। উনার সব কিছুই আমি জানি। কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করে, কয়টার সাথে ঘুরতে যায়, কোথায় যায় সবই খোঁজ রাখি। আচ্ছা আমি কেন উনার এত খোঁজ রাখি?? সেটা আমি জানি না তবে খোঁজ রাখতে ভাল লাগে। আমার নাম সুহানা! শাকিল ভাইয়া আমাকে সুহি বলে ডাকে। আমার নামটা নাকি অনেক বড়। আজব। উনি প্রতিদিন আমাদের বাসায় এসে আমার ছোট ভাইয়ের সাথে ফাজলামো করে। বলে আমি নাকি ওনার সাথে প্রেম করি। আমার কি খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই যে ওনার সাথে প্রেম করবো?? আজ তো আমাদের বাসায় এসে উনি আবার ফ্লার্ট করা শুরু করে দিলো। বলে….

-সুহি আমাকে তুমি ভাইয়া বলো কেন?
-তাহলে কি বলবো আপনাকে??
-রোমান্টিক কিছু বলবে। যেমন ধরো “জান”।
-হুম যান এখান থেকে।
-আরে এই এটা না তো! আমি যাওয়ার কথা বলিনি। -তাহলে?
-আচ্ছা তুমি আমাকে কলিজা বলবা।
-কোন কলিজা?? গরুর, মুরগীর নাকি খাশির কলিজা??
-ধুর। আচ্ছা আমাকে তুমি বাবু বলে ডাকবা।
-বাবু ডায়পার পরছো??
-তোমার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই।

এটা বলেই উনি রেগে চলে গেলেন। আমি তো হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করে ফেলছি। শাকিল ভাইয়া আজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। কি পরবো চিন্তা করতে করতে পরা আর হচ্ছে না। ওইদিন ওনার প্রেমিকাকে যখন দেখেছিলাম তখন মেয়েটা শাড়ী পরেছিলো। আচ্ছা আমিও কি শাড়ী পরবো?? মানাবে?? যাক গে। পরেই দেখি কি হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি আমাকে। নিজের প্রশংশা নিজেই করছি। খুব সুন্দরী লাগছে আমাকে। কিন্তু শাকিল ভাইয়া পছন্দ করবে তো?? উনি পছন্দ করলে আর না করলেই কি?? আমি আর শাকিল ভাইয়া এক রিক্সাতেই আছি। উনি খুব জড়সড়ভাবে বসেছে। আমার সাথে খুব একটা মিলে বসেনি। ব্যাপারটা খুব ভাল লেগেছে আমার। তাই আমি একটু দুষ্টুমি করে বললাম…

-প্রতিদিন তো ফ্লার্ট করার জন্য আমাকে কতো কিছু বলে ইম্প্রেস করেন। আজ আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই বসতে পারছেন না যে??

-আসলে আজ তোমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে। তাই সাহস পাচ্ছি না দুষ্টুমি করতে।

ওনার কথাটা শুনে মনে হচ্ছিলো আমি সৌরজগতে আছি। আমি উড়ছি। সারাদিন আমি এই কথাটাই ভাবছি। বাসায় এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখখানা কতবার দেখলাম তার ইয়ত্তা নাই। আচ্ছা উনি কি সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পরে গেছেন?? আজ আমাকে দেখতে এসেছে। লোকটাকে আমি চিনি। শাকিল ভাইয়ার বন্ধু। সবাই যখন কথাবার্তা বলা শেষে বলল…

-তোমরা আলাদা কথা বলে নেও। তখনি আমি লোকটাকে আলাদাভাবে বলি…
-আমি আপনার বন্ধু শাকিলের হবু বউ। সম্পর্কে আপনার ভাবি হই। আমরা অনেকদিন যাবত প্রেম করি।।কেউ কিন্তু জানে না।

শুনে লোকটার মুখখানি চুপসে গেল। তারপর আমাকে “ভাবি সরি।” এটা বলেই চলে গেল। তারপর আমার আর কিছু করতে হয়নি। লোকটা নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিলো। আমি তো খুশিতে আটখানা।আচ্ছা আপনারাই বলুন এখন কি বিয়ের বয়স হয়েছে?? সবেমাত্র অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ছি। আজ শাকিল ভাইয়া আমাকে ছাদে ডেকে পাঠালেন। উনি যখনি আমাকে ডাকেন আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। আজো খুশিখুশি ভাব নিয়ে ওনার সামনে গেলাম। তারপর উনি দিলেন এক ধমক। আমি ধমক শুনে দু হাত পিছিয়ে গেলাম ভয়ে। তারপর উনি বললেন…

-সব সময় দুষ্টুমি করি বলে মাথায় উঠে গেছো?? সব কিছুর একটা সীমা থাকে। এখন সারা এলাকা জানে আমার তোমার সাথে আমার রিলেশন। একবার ভেবে দেখেছো যদি তোমার অথবা আমার বাবা মার কানে এটা আসে তাহলে কি হবে?? সেদিকে খেয়াল আছে?? আরে বিয়ে যদি করতে না চাও আমাকে বলতে। আমিই তোমার বাবা মাকে বুঝাতাম। আমি মাথা নিচু করে সব শুনছিলাম। আমার বুক চিরে কষ্টগুলো বের হয়ে যাচ্ছিলো। চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিলো। আমি সব সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে অভ্যাস। কিন্তু ওনার সামনে সেটাও পারছিলাম না। সত্যিই তো এত বড় ভুল কেন করলাম আমি?? তারপর আমি বললাম…

-সরি। আমাকে মাফ করে দিবেন।

এটা বলেই দৌড়ে ছাদ থেকে চলে আসি। সারাদিন দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছি। ঠিক করেছি ওনার সাথে আর কথা বলবো না। বাবা আমাকে ডেকে পাঠালো! বাড়িতে আমি বাবার সাথে খুব প্রয়োজন না পরলে কথা বলি না। কারণ বাবাকে আমি খুব ভয় পাই।। আজ আমি বাবার সামনে গিয়ে দেখলাম বাবার চোখ বড় হয়ে আছে। রাগ মুখের ভাবে স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে। আমি বাবাকে বললাম…

-বাবা কিছু বলবে??
-তোকে এই বাড়িতে কেউ কিছু বলে না। সবার আদরের তুই। ঐ ছেলেটার সাথে নাকি প্রেম করিস?? বাবার কথা শুনে বুঝলাম বাবার কানেও এই মিথ্যা কথাটা চলে গেছে। আমি বাবাকে বললাম..
-বাবা আসলে…
-চুপ কর। আর মিথ্যা বলবি না। তুই আমার মুখে চুনকালি মারছিস। আর আমার সাথে কথা বলবি না। খুব শীঘ্রই তোর বিয়ে দিয়ে দিবো।
-বাবা বিশ্বাস করো। আমার কারো সাথে সম্পর্ক নেই।। প্লিজ বাবা শুনো।

বাবা শুনেনি। চলে গেলো। আম্মুকেও বুঝালাম কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আমি কেঁদে কেঁদে বললাম কিন্তু কেউ বিশ্বাস করলো না বাবা আমার জন্য একটা ছেলে খুঁজেছে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আমি চাইনি এখন বিয়ে করতে কিন্তু এখন করতে হবে। বাবা জোর করেই দিয়ে দিবে। এখন আর শাকিল ভাইয়াও আমার সাথে কথা বলে না। আমাদের বাড়িতেও আসে না। শুনেছি বাবা নাকি ওনাকে অনেক কিছুই বলেছে। আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আমাকে আমার খালাতো বোন আয়নার সামনে সাজিয়ে দিচ্ছে। আম্মু হঠাৎ এসে বলল…

-পাত্রপক্ষের যদি তোকে পছন্দ হয় তাহলে নাকি আজই কাবিন করে যাবে।
-কিন্তু আম্মু এত তাড়াতাড়ি কেন??
-তোর বাবাও সম্মতি জানিয়েছে।
-তুমি কিছু করো।
-তোর বাবাকে তুই খুব ভাল করে চিনিস। রেডি হয়ে থাক। ওরা এসে পরতেছে।

আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া আমার কাছে আর কোন পথ ছিলো না। আমি পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে।কেউ না বুঝার আগেই মুছে ফেলছি। ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা আমাকে কিছু প্রশ্ন করে এখন কেমন রহস্যময় চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি একটা খুনির পলাতক আসামি।ইচ্ছা করছে রান্নাঘর থেকে মরিচের গুড়ো এনে ছেলেটার চোখে ছুড়ে মারি।
হঠাৎ করে ছেলেটা বলল…

-আমি ওর সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। এটা শুনে বাবা বলল…
-আবার কথা বলার দরকার কি বাবা??

বাবা কথাটা কেন বলছে আমি জানি। যদি আবার অঘটন ঘটিয়ে ফেলি। কিন্তু ছেলেটা বলল আমার সাথে কথা বলবেই। বাবা আমার দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা আমার জন্য সতর্কীকরণ সেটা আমি বুঝলাম।
ছেলেটাকে আমার ঘরে নিয়ে আসার পর বসতে বললাম। তারপর ছেলেটা বলল…

-শাকিল ভাইকে বিয়ে করেও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন কেন?? কথাটা শুনে আমি হকচকিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর আবার বলল…
-আমি জানি আপনি আপনার ফ্যামিলির জোরাজুরিতে বিয়েতে রাজি হয়েছেন। আমি আপনার চোখের পানি দেখেছি। এবারো আমি নিশ্চুপ। কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। তারপর উনি আবার বলল…

-শাকিল ভাইয়া খুব ভাল মানুষ। উনার সাথে আমার অনেক আগে থেকে পরিচয়। ভাগ্যিস আজ রাস্তায় উনার সাথে দেখা হওয়ার পর যখন বললাম আপনাদের বাড়িতে যাচ্ছি তখন সব বলেছেন। নয়ত একটা দুর্ঘটনা ঘটেই যেত। তবুও ভয় পাবেন না। আপনার উপর কোন দোষ আসবে না। আপনার বাবাকে আমি নিজে বুঝিয়ে বলবো। সুখে থাকবেন। এটা বলেই লোকটা চলে গেল। কেন জানি আমি লোকটার সাথে কিছুই বলতে পারলাম না। আচ্ছা শাকিল ভাইয়া এটা বলল কেন? তার মানে কি উনিও আমার মতো আমার প্রতি কিছু একটা ফিল করে? আমি অনেক প্রেমিককে দেখেছি এভাবে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে। আমি বাবার সামনে দাঁড়ালাম। ছেলেটা বাবাকে কি বলেছে কে জানে। বাবা এসে আমাকে একটা চড় মেরে দিলো। আমাকে বাবা কোনদিন মারেনি। চড়টা দিয়ে বলল…

-তুই ঐ ছেলেকে বিয়ে করেছিস???
-না বাবা।
-তাইলে কি ও আমাকে মিথ্যা বলেছে?? আমার মান সম্মান সব শেষ করে ফেললি। আরে বিয়ে করার হলে আগে একবার বলতেই পারতি?? বাবা আর কিছু বলল না। আমি জানি বাবা কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু ছেলে হিসেবে কিন্তু শাকিল ভাইয়া খুব ভাল। আমি শাকিল ভাইয়াকে কল দিলাম। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম

-আপনি কোথায়?? উনি বললেন ছাদে। আমি দৌড়ে ছাদে গেলাম। শাকিল ভাইয়া আমাকে দেখে বলল….
-বিয়েটা ভেঙ্গেছে? আমি যে ওনার কাজে খুশি হয়েছি সেটা বুঝতে দিলাম না। খুব গম্ভীর ভাবে প্রশ্ন করলাম…
-এসব করার মানে কি?? আপনার জন্য আমি বাবার কাছে মার খেয়েছি। আপনি আমার এরকম ক্ষতিটা কেন করলেন??? উনি আমার কাছে এরকম কথা আশা করেনি সেটা ওনার মুখের হা দেখেই বুঝতে পারছি। তারপর বললেন…

-যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।

আমি ওনার কথাটা শুনে চলে আসতে যাবো এমন সময় উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমাকে টান দিয়ে ওনার কাছে এনে বলল…

-কোথায় যাচ্ছো?? আমি ভয়ে ভয়ে তোতলিয়ে বললাম…
-নি. নি. নিচে।
-বিয়েটা আমি তোমার জন্য ভাঙ্গিনি। আমার নিজের জন্যই ভেঙ্গেছি। আমি আবারো তোতলাতে তোতলাতে বললাম….
-মা. মা. মানে??
-তোমাকে অন্য কারো হতে দিবো না।
-ছা. ছা. ছাড়ুন।

এটা বলাতে উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমার তো হাত পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে পুরো শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। উনি আমাকে বলল…

-তুমি এভাবে কাঁপছো কেন??

আমি বলতে চাইলাম ‘এমনিতেই ‘ কিন্তু আমার মুখের আওয়াজ কোথায় গেলো? আমি কথাও বলতে পারছি না।
আমি ঘামতে শুরু করেছি। আমি চোখ বন্ধ করে আছি আর আল্লাহকে ডাকছি যাতে শাকিল ভাইয়ার থেকে বাঁচতে পারি। উনি আমার ভয় দেখে ছেড়ে দিলেন আর আমি সাথে সাথে এক দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলাম। আসার সময় উনি বলছিলো…

-ভয় পেয়ো না। বিয়ে এবার সত্যি সত্যিই হবে।

ঐদিনের পর আমি আর ওনার সামনে যাইনি।সত্যি সত্যিই তারপর আমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসলো। আজ সেই বিয়ের দু বছর পূর্ন হলো। আর সেজন্যই বিবাহ বার্ষিকীর আয়োজন করলাম। সাজিদ আমি যাই এখন। তোমার ভাই কোন অনুষ্ঠানে সুন্দরী মেয়ে দেখলে এখনো ফ্লার্ট শুরু করে দেয়। যাই একটু শাসন করে আসি। তুমি খাওয়া দাওয়া করে নাও।

-আচ্ছা ভাবী।

সুহানা ভাবীর প্রেম কাহিনীটা শুনার ইচ্ছা ছিলো তাই আজই শুনে নিলাম। আমার যদি একটা প্রেম কাহিনী না হয় তাহলে কিভাবে হবে?? যাই। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে বলবো…

-একটু পটবেন প্লিজ???

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত