আমি আন্টিদের বাসায় বেড়াতে আসলাম প্রায় দু বছর পর। রাতে ঘুম আসছিলো না। তাই ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। রাত তখন একটা বাজে। রাস্তায় তাকিয়ে দেখলাম একটা লোক একলা একলা কথা বলছে আর হাটছে। আমি বেশ অবাক হলাম। প্রথমে ভাবলাম ভুত না তো। আমার আবার ভূত দেখার বড্ড শখ। তাই নিচে গিয়ে রাস্তায় লোকটার পিছন পিছন যেতে লাগলাম।লোকটা এই এলাকার কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে মনে হলো। কিন্তু যখন ল্যাম্পোস্টের আলো তে লোকটার মুখ দেখলাম আমি তো একে বারেই শকড। এই তো দেখি শফিক ভাই। শফিক ভাই কে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। আমি আন্টিদের বাড়িতে আসলে ওনার সাথেই আড্ডা মারতাম। কিন্তু এত রাতে উনি কোথায় যাচ্ছে?? তাই আমি ডাকলাম…
-শফিক ভাই দাড়ান। আমার ডাক শুনে উনি দাঁড়িয়ে পরলেন। উনার হাতে সিগারেট। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম…
-শফিক ভাই কেমন আছেন??
-হুম আছি। কবে আসছো??
-আজই।
-এত রাতে এখানে কেন??
-আমারো তো একই প্রশ্ন। আপনি এত রাতে এখানে কেন?? আর হাত সিগারেট কেন?? আপনি তো এসব কখনো খেতেন না।
-তুমি বাসায় চলে যাও। আমার এক জায়গায় যেতে হবে।
-কোথায় যাবেন??
-পাশেই কবরস্থানে। নাবিলার কাছে।
-নাবিলা কে?? আর কবরস্থানেই বা কেন?? আমার কথাটা শুনে লোকটা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল…
-শুনবে তাহলে??
-হুম বলুন।
– হাটতে হাটতে বলি চলো।
আমি আমার পরিবারের ছোট ছেলে তুমি তো জানো।। বড় ভাইও আছে। গত বছর চাকরীর জন্য আমি ঢাকাতে চলে যাই । অনেক কষ্টে একটা ছোট খাটো জব নেই।। আমার সব দুঃখময় দিনগুলোর ভাগ নিতো আমার ভালবাসার মানুষটা। ওর বাড়ি আর আমার বাড়ি খুব একটা দূরে না। ওর সাথে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিলো।
আসলে ওর জীবনেও কষ্ট কম ছিলো না। ওর মা মারা যায় ছোটবেলাতেই।তারপর ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করে ফেলে। সেই সৎমায়ের অত্যাচার ওর প্রতিদিন সহ্য করতে হতো। কিন্তু ও কখনো ওর সৎমাকে নিজের আপন মায়ের চেয়ে কম ভাবতো না। আমি শফিক ভাইয়ের কথায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বললাম…
>ওনার নাম কি ছিলো ভাই?? তারপর ওনি বললেন…
-ওর নাম ছিলো নাবিলা। নাবিলা যখনি সুযোগ পেত আমাকে কল দিতো। একদিন আমাকে কল দিয়ে বলল…
-বাবা মা আমার জন্য বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
-মানে?? তুমি তোমার বাবাকে বুঝাও এখন বিয়ে করতে পারবে না।
-বাবাকে আমি বুঝালে কোন লাভ নেই কারণ মার কথার উপর বাবা কিছুই বলতে পারবে না।
-কি করবে তাহলে?? আমার বড় ভাই এখনো বিয়ে করেনি। সবে মাত্র একটা চাকরী নিয়েছি।
-তুমি বাসায় আসো।
তারপরের দিনই আমি বাড়িতে গিয়ে নাবিলার সাথে দেখা করি।ঐদিন নাবিলা আমাকে জাপটে ধরে প্রচন্ড কান্না শুরু করে দিলো। আমি বললাম…
-তুমি টেনশন করো না।
-আমাকে কালই দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।
তখন আমার মাথায় নানা রকম চিন্তার সৃষ্টি হচ্ছিলো। একদিকে আমার পরিবার আর অন্য দিকে নাবিলা। তারপর ঠিক করলাম নাবিলাকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাবো। কারণ নাবিলাকে একবার বিয়ে করে ফেললে পরিবার আমাদের মেনে নিবে। একটু কষ্ট হবে কিন্তু মানিয়ে নিতে পারবো। তারপরের দিনই সকালে ওকে নিয়ে আমি ঢাকায় চলে আসি। একটা কাজী অফিসে গিয়ে দুজন বিয়ে করে ফেলি। নাবিলার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার সুখকর ছিলো।একদিন আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে খেতে বসলাম। তখন ও বলল….
-তুমি চেঞ্জ হয়ে গেছো। ওর কথাটা শুনে আমি তেমন ভ্রুক্ষেপ করিনি। ও তারপর বিরক্ত হয়ে বলল…
-নতুন কারো প্রেমে পরেছো তাই না???
-মানে কি?? খেতেও দিবে না শান্তি মতো?? যত্তসব প্যারা। এটা বলেই আমি খাবার রেখে কাজে চলে যাই।নাবিলা অনেক বার সরি বলেছিলো কিন্তু রাগটা ভীষন পরিমাণ ছিলো তাই আর ওর কথা শুনিনি।
আমি কাজ থেকে এসে কড়া নাড়াচ্ছি।। কিন্তু ও খুলছে না। তারপর আমি ওর ফোনে কল দিলাম কিন্তু ধরছে না। আমি প্রায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটার সাথে এত রাগ করা ঠিক হলো না। ও যদি নিজের কোন ক্ষতি করে ফেলে তাহলে আমার কি হবে? এসব ভাবতে না ভাবতেই নাবিলা দরজা খুলে দিলো। আমি ভিতরে গিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় ছিল এতক্ষণ কোন উত্তর দেয়নি। বুঝলাম রেগে আছে আমার উপর। তাই আমি ওকে টেনে নিয়ে সোফাতে বসালাম। তারপর ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে বললাম…
-বউ মন খারাপ??
-না।
-তাহলে কি হয়েছে গো??
-কিছু না। আমার ঘুম পাইছে।
-মানে?? আমাকে খেতে বলবা না তুমি??
-রান্না হয়নি।
-কেন?? শরীর খারাপ তোমার??
-না। এমনি।
-আচ্ছা কাল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কথাটা শুনে নাবিলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। খুব খুশি হয়েছে ওর মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি। ওকে আমি তেমন কিছু দিতে পারিনি কারণ সামর্থ্য নেই। আমার কথাটা শুনে ও বলল…
-আসলে আমি এটাই চাইছিলাম। তোমার সাথে একটু বাইরে যেতে। সরাসরি বলতে পারছিলাম না তাই ঝগড়াঝাঁটি করে বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু তুমি বুঝোই না।
-হাহাহা। পাগলী আমাকে বললেই তো হয় ঘুরতে যাবে। আচ্ছা বলো কোথায় যাবে??
-গ্রামে।
কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। নাবিলার ইচ্ছাটা পুরণ করতে পারবো না। আর তাছাড়া ওর কাছে আমি কিছু কথা গোপন রেখেছিলাম কারণ ও শুনলে কষ্ট পাবে। আমরা পালিয়ে আসার পর আমার আম্মুকে কল দিয়েছিলাম। আম্মু আমাকে বলেছে যাতে আমার মুখ কোনদিন না দেখাই আর কোনদিন যাতে বাড়িতে না যাই।
-কি হলো নিয়ে যাবে না??
-নাবিলা আসলে আম্মু আমাকে আর বাড়িতে যেতে না বলেছে।
-কি?? কবে??
-আমরা চলে আসার পর পরই। আম্মু আমাদের মুখ দেখতে চায় না। কথাটা শুনে নাবিলার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বলল…
-আচ্ছা তাহলে আমাদের বাড়িতে যাবো।
-তোমার আব্বু আম্মু??
-আম্মু আমাকে নিজে থেকে কল দিয়ে বলেছে ওনাদের কোন আপত্তি নেই। তোমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছে।
-তাই নাকি??
-হুম। তারপর আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম। ও আমার গলায় ধরে বলল…
-রাতের খাবার খেতে চলো।
-রান্না নাকি করোনি তুমি??
-করেছি। তোমাকে রাজি করানোর জন্যই মিথ্যা বলেছিলাম। কথা গুলো শেষ করতেই শফিক ভাই হাসা শুরু করলো। তারপর আমার কাধে হাত রেখে বলল…
-তোমার ভাবি কত্ত দুষ্টু দেখলে?? আমাকে কিভাবে হাত করে ফেলল। আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম…
-তারপর কি হলো??
-আমরা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করি। গ্রামে আসতেই নাবিলার বাবা মা আমাকে অনেক আদর যত্ন করছে। আমরা যে পালিয়ে তাদের অমতে বিয়ে করেছি সেটা তাদের আপ্যায়ন দেখে বুঝা খুব কষ্টকর। নাবিলা সবাইকে আবার পাশে পেয়ে ভীষণ খুশি। কিন্তু ও যদি আমার বাড়িতেও বৌএর মর্যাদা পেত তাহলে এর চেয়ে শত গুণ খুশি হতো সেটা আমি জানি। ওখানে কিছুদিন থাকার পর আমরা আবার ঢাকায় চলে আসি। আমাদের সংসার সুখে শান্তিতে পুর্ন ছিলো। আমার টাকা দিয়ে সংসার খুব ভাল ভাবেই চলে যেত।
-আচ্ছা শফিক ভাই আপনার সব চেয়ে সুখের সময় কোনটা?? আমার প্রশ্নটা শুনে শফিক ভাই বলল…
-একদিন আমি অফিস থেকে এসে খেতে বসলাম ও দুটো বাসনে ভাত নেওয়ার পর আরেকটা বাসনেও অল্প করে ভাত রাখলো। আমরা মানুষ হলাম দুজন।কিন্তু আরেকজনের খাবার রেডি করলো কেন?? আমি একটু অবাক দৃষ্টিতেই ওর দিকে তাকালাম। ও আ আমার দিকে তাকিয়ে বলল…
-খাচ্ছো না কেন??
-বাসায় কি কেউ এসেছে??
-কই না তো।
-তাহলে এই বাসনে ভাত রাখলে কেন??
-কেউ আসেনি তো কি হয়েছে?? আসতেই বা কতক্ষণ??
-কি আবোলতাবোল বলতেছো??
-আমি ঠিকই বলছি। খাও তো। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে শোয়ার রুমে গিয়ে দেখলাম বিছানাতে তিনটা বালিশ। আমি নাবিলাকে ডাকলাম। ও এসে বলল…
-কি হয়েছে? ডাকছো কেন??
-এখানে বালিশ তিনটা কেন??
-ওমা। বালিশ তিনটা কেন হয় আবার?? প্রতিটা মানুষের তো একটা করে বালিশ লাগে তাই না?? আমি ওর কথার মানে বুঝতে পারছি না। ও কেমন রহস্যজনক কথা বলছে। তারপর আমি ওকে বললাম…
-আচ্ছা সব কিছু একটা বেশি বেশি কেন বুঝতে পারছি না। কেউ কি আসবে তোমাদের বাড়ি থেকে??
-না তো। আর বলো না। কাল আমাকে ডাক্তার সাহেব বলল একজন অতিথি আসবে আমাদের বাড়িতে। ভাল করে আপ্যায়ন করতে হবে।
-মানে?? কোথা থেকে আসবে??
-কি জানি। তবে শুনলাম প্রায় তিন মাস যাবত ও আসতে চাইছে।
-ডাক্তার সাহেব বলছে??
-হুম বললো তো।
কথাটা বলে ও রান্না ঘরে চলে গেল। আমি যেটা ভাবছি নাবিলা কি আমাকে সেটাই বুঝাতে চাচ্ছে?? আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম যে আমি বাবা হতে চলেছি। দৌড়ে গিয়ে নাবিলাকে কোলে নিয়ে বললাম…
-সত্যি???
ও আমার বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলল লজ্জায়। ঐদিন আমি সবচেয়ে সুখি ছিলাম। কথা গুলো বলেই শফিক ভাই চোখটা মুছলেন। অন্ধকারে হাটতে হাটতে কবরস্থানে এসে পরেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না উনি এখানে কেন আসলেন?? তারপর বললাম…
-শফিক ভাই ভাবি এখন কোথায়?? উনি হেসে বলল…
-ওই যে কবরটা দেখছো ওটাতেই ঘুমুচ্ছে তোমার ভাবি।
-মানে?? কিভাবে??
-ও যখন অন্তঃসত্ত্বার খবরটা শুনলো ও আমাকে একদিন বলল…
“বাড়িতে গিয়ে খবরটা দেওয়া দরকার।”আমি বাধা দেইনি। ওকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে। কাজের চাপে আমি যেতে পারিনি। রাতে শুয়ে আছি। বিয়ের পর এই প্রথম ওকে ছাড়া থাকতে হবে আমার। অনেকদিনের অভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটলো তো তাই ঘুম আসছিলো না। আমি তাই ফোন দিলাম ওকে রাত বারটার সময়।
-হ্যালো বউ।
-কি ব্যাপার এখনো ঘুমাওনি??
-ঘুম আসছে না।তুমি ঘুমাওনি??
-আমারো ঘুম আসছে না। কালই চলে আসবো আমি।
-হুম। চলে আসো। আমার ভাল লাগছে না।
-আচ্ছা বাবু আসবো। এখন ঘুমিয়ে পরো। ফজরের নামাজ পড়তে হবে। আর আমাকে জাগিয়ে দিও কল দিয়ে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমিও ঘুমাও।
এটা বলেই ফোন রেখে দিলাম। কিন্তু আমার আর ঘুম আসছে না। ফজরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে ওকে কল দিলাম। কিন্তু রিসিভ করছে না।প্রায় দশ বার দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে না। মনে হয় ঘুমিয়ে আছে তাই আমি ওর আম্মুর ফোনে কল দিলাম। ওর আম্মু ফোন রিসিভ করে বলল…
-হ্যালো বাবা শফিক। বলো।
-আম্মা নাবিলা এখনো ঘুম থেকে উঠছে না। নামাজের সময় হয়েছে তো। একটু উঠিয়ে দিন।
-আচ্ছা বাবা। একটু পর উনি আমাকে কল দিয়ে বলল…
-তুই আমার মেয়েকে কি বলছিস?? আমার মেয়েটা তোর জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেল। কথাগুলো উনি কান্না করতে করতে বলল। ওনার কথা বুঝতে না পেরে বললাম
-কি হয়েছে আম্মা?? কান্না করছেন কেন??
-এখন বুঝতে পারিস না?? আমার মেয়ে সুইসাইড করেছে কেন?
কথাটা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। হাত থেকে ফোনটা পরে গেল। নাবিলা নাকি আর নেই। সাথে সাথে ঢাকা থেকে নাবিলাদের বাসায় আসতেই দেখলাম অনেক মানুষ ভরা। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভিড় ঠেলে গিয়ে দেখলাম একটা লাশ শোয়ানো আছে। আমার হাত পা কাঁপছে। আস্তে আস্তে লাশের মুখ থেকে কাপড় সরাতেই আমার জ্ঞান নেই। আমি শফিক ভাইয়ের কথা গুলো শুনে বরফ হয়ে গেছি। লোকটা কাঁদছে। আমার চোখ দিয়েও পানি পরছে। আমি ওনার কাধে হাত দিতেই উনি বলল…
-সাজিদ ভাই বিশ্বাস করো। আমাদের সংসারে কোন অশান্তি ছিলো না। কোন অভাব অনটন ছিলো না। ভালবাসায় পরিপুর্ন ছিলো। তাহলে কেন ও সুইসাইড করবে?? ও সুইসাইড করেনি। ওকে খুন করা হয়েছে। ওর সৎমা সম্পত্তির লোভে ওকে খুন করেছে। আর সেটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই উনি সুইসাইড কাহিনী তৈরী করেছেন। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। আল্লাহ বিচার করবে। খুনির বিচার আল্লাহ করবে।
-জ্বী ভাই আল্লাহ সব দেখছে। চলুন বাসায়।
-তুমি যাও ভাই। আমি এখানেই থাকি নাবিলার সাথে। তুমি যাও।
-এখানে??
-হুম যাও।
আমি আর ওনাকে জোর করিনি। কবরস্থান থেকে চলে আসলাম। আমার গায়ের লোম গুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ভালবাসার মানুষকে হারিয়ে লোকটা আজ কি রকম হয়ে গেল। মানুষের কপালে শান্তি বেশিদিন থাকে না। কোন না কোন ভাবে সেটা হারিয়ে যাবেই।